Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ত্রিধারা -12

অনেক দিন আগে একবার আমার মা রমলার ঠাকুমার সঙ্গে গিয়েছিল ওর ঠাকুমার মামারবাড়ি।কাঙালি ভোজন দেখেছিল আমার মা।
কি সব সম্পর্ক বলছো। সব তো খিচুড়ি পেকে
যাচ্ছে।
অত সম্পর্ক ভাবতে যেও না।কাঙালি ভোজনের
কথাটা শোন।
হ্যাঁ মানে ওই সাতের দশকে তখন কলকাতায় অনেক মন্দিরে,বড়লোক বাড়িতে কাঙালি ভোজন হতো।
মা তখন সেকেন্ডারিতে পড়ে। ওর ঠাকুমা আমার মাকে নিয়ে গেছিলেন।সঙ্গে আর কেউ যেতে রাজি হয় নি।ঠিক হলো তিন দিন পর ফিরবেন। যাই হোক,সে বাড়িতে যাওয়া মাত্র একজন বৃদ্ধমহিলা মাকে খুব আদর করে এক ডিস মিষ্টি খেতে দিলেন।মা তো অবাক সে মস্ত বড় তিনতলা বাড়ি দেখে। বাড়ির লোকগুলো বেশ অন্যরকম। মায়ের সঙ্গে ঠিক মেলে না। বাড়িটা বিশাল সুন্দর সাজানো-গোছানো গেঁটে সিংহ দুয়ার দাড়োয়ান পাহারায়।দুপাশে ফুলের বাগান।সেখানে মালিরা জল দিচ্ছে। মা তো বাড়িতে ঢুকে অবাক। এতো লোকজন মহাসমারোহ।
ঠাকুমার দিদা পাতলা চেহারার দেখতে সুন্দরী, কিন্ত মনে কোন অহংকার ছিল না। ঠাকুমারও বড়লোক বাড়ির মেয়ে বলে কোন দেমাক ছিল না।তাদের বাড়ির পরিবেশ,আভিজাত্য,কালচার ভিন্নরকম, সসম্ভ্রান্ত। মা মনে মনে ভেবেছিল এমন বড়োলোক তবে এদের বলা হয় নাকি? মায়ের সঙ্গে সেদিন অনেকেরই আলাপ হয়েছিল। সেখানে সবাই কি সুন্দর দেখতে কি ভালো ব্যবহার। পিসি মাসি তাদের ছেলেমেয়ে আরো কিছু ছেলেমেয়ের সঙ্গে খেলায় মেতেছিল মা। একদিন কীর্তন,রামকুমারের গান, একদিন পরিবারের সকলের নাচ গান থিয়েটর ।
এরপরদিন হয়েছিল কাঙালী ভোজন ।সেটা দেখতেই তো মায়ের সেখানে যাওয়া । পরদিন সকাল থেকেই শুরু হল রান্না।খিচুড়ি আর সঙ্গে সব্জি দিয়ে শাকের ঘ্যাঁট।এই ছিলো খাবার। দুপুর বারোটা ঘড়িতে বাজতেই ভিখারীদের আনাগোনা শুরু হলো। ধীরে ধীরে বাগানটা ভিখারিতে ভরে উঠল।দারোয়ান তাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিল।
এখন তো সেই রকম ভিখারি আর দেখাই যায়না।
দু একজন মাঝে মাঝে বাটি হাতে ভিক্ষা করে।
জানো সেসময়,আমাদের কলকাতার বাড়িতেও নিয়মিত ভিখারি আসতো।রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াতো,বা রাস্তার ধারে বাটি নিয়ে বসে থাকতো।ইস্কুল যাওয়ার সময় দেখতাম হেদুয়ার উল্টোদিকে ফুটপাথের ধারে আগুন জ্বেলে ভাত রান্না করছে ভিখারিরা।মুরগীর ফেলে দেওয়া পা ছাল ছাড়িয়ে রান্না করে খেতেও দেখেছি তাদের। তারা সব এখন কোথায় গেল কে জানে।
তবে সেটা ভালোই হয়েছে।
যাই হোক মা দেখল যেন দুনিয়ার ভিখারি একজায়গায় জড়ো হয়েছে। মা ভাবছিল এতো ভিখারি আছে দেশে?
তারপর তাদের মুখোমুখি দুটো লাইন করে বসানো হলো।ওদের বাড়ির সামনে রাস্তা জুড়ে ওরা খেতে বসলো।প্রত্যেকের সামনে দেওয়া হল শালপাতার থালা।তারপর নৌকা ভরে খিচুড়ি ডাবু হাতায় পরিবেশন করা হল খুব যাত্নে।নানান বয়সের মানুষ এসেছিল ছেঁড়া মলিন পোশাকে।তারা কি যে দরিদ্র তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।খিচুড়ি দেওয়া মাত্র তারা গোগ্রাসে খেতে লাগলো। বারবার দিয়েও তাদের পেট যেন ভরেই না।খিদের জ্বালায় খেয়েই যাচ্ছিল ওরা। সেদিন মা দেখেছিল কি বীভৎস দারিদ্রের ক্ষুধা। এরকম কয়েক ব্যাচ যে বসলো,তা আর মায়ের ঠিক মনে নেই।মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। ওদের যত্নে সত্যিই ওরা গলা পর্যন্ত খেয়ে খুব খুশি হয়েছিল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় শেষ হল ওদের খাওয়া। একটি ভিখারিও অভুক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে যায় নি। এভাবেই কাঙালী ভোজন শেষ হয়েছিল সেই দিন।
তবে কি জানো রোজদিন পেট ভরে না খেয়ে একদিন গলা অবধি খেয়ে অনেকেই কলেরায় ভুগে মারা যেত অনেকেই। তবুও ওরা খেত সেদিন।মৃত্যুর চেয়ে খিদের জ্বালা বেশি ।এখনও মানুষ বোঝে না খিদের জ্বালার কাছে পাপ,পুন্য বোধ সব তুচ্ছ। আমরা অনেকে খাবার নষ্ট করি,স্বাস্থ্যের খাতিরে ডায়েট করি। কিন্তু পৃথিবীতে যারা খাদ্যের জন্য হাহাকার করে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিই না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *