তোমার কুশল আমি জানি না এখন। বড় যোগাযোগহীন
আছি ইদানীং
এ এমনই যুগ, যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে হচ্ছে যত
সহজ ততই যোগাযোগহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। তুমি
এ মুহূর্তে কি করছো, কোন শহরের ফ্ল্যাটে আছো
তোমার বিবাহোত্তর রূপ নিয়ে নিজস্ব সংসারে,
আগেকার মতো আজও আমাকে তোমার
মনে পড়ে কিনা,-
জানি না কিছুই। আগেকার মানে কবেকার? বলো
তুমি কি এখনও
আমাকে অত্যন্ত ভেবে রাত্রির চিতায় জ্বলজ্বলে
যৌবন পোড়াও হে সুচেতা?
এই প্রশ্নে কুয়াশার আবছায়া মেদুরতা আছে, অতিদূর
অরণ্যের হরিণ্যের চঞ্চলতা আছে,
ঝিলের কোমল আলোড়ন আছে, আছে
পরিত্যক্ত বসতির স্তব্ধতা এবং
পুরনো আন্ধারে কোনো গহনা নৌকার যাত্রাধ্বনি।
একদা আমিও ভাবতাম
কখনও আমাকে যদি ছেড়ে চলে যাও দূর দেশে
আমার সকল প্রত্যাশাকে মরীচিকা করে, তবে
আমি বন্ধ ঘরে মরে পড়ে থকবো একাকী
কিংবা উন্মত্ততা
আমাকে দখন করে ফেলবে নিমেষে,
অথবা আমার কাছ থেকে কর্কশ অংকের কর
আদায় করবে অসুস্থতা অবিরত। কিন্তু আমি
আত্মহননের আফিমে হইনি বুঁদ
নাবালক পুরুষের মতো।
হে দয়িতা সুচেতা আমার
সে কবে হয়েছে দেখা, রাত্রির প্রথম যামে কথোপকথন
আর লোকচক্ষুর আড়ালে
নাগরিক ক্ষণিক ভ্রমণ আর থরথর তোমার শরীর
কিছু কল্পনায় আর কিছুটা বাস্তবে
ছুঁয়ে ছেনে বাউণ্ডুলে কবির গভীর পংক্তিমালা আহরণ
কিছু তার মনে পড়ে, কিছু বিস্মৃতির কাছে আমি
রেখেছি বন্ধক। মনে পড়ে, মাঝে-মাঝে তোমাকেই
মনে পড়ে সকাল সন্ধ্যায়
দুপুরে কি মধ্যরাতে, অকস্মাৎ বাড়াই দু’হাত
তোমার একান্ত দিকে, কখনও-কখনও পদ্য লিখি
তোমারই উদ্দেশে, রাত জেগে তোমার মধুর নামে চিঠি
লিখে ডাকঘরে যাই বারেবারে, অথচ করি না
পোস্ট কোনো পত্র ঠিক ডাক-টিকিটের অভাবে কখনও।
যৌবসাজ খসে গেছে, আমার যৌবন সে কখন
আহত চিলের মতো আর্তনাদ করতে-করতে
অসহায় পড়ে গেছে জন্মন্ধ ডোবায়। আমি আজ
অতীত চিবোই শুধু যে অতীত আমরা দু’জন
অন্তরঙ্গ করেছি রচনা
কখনও ড্রইং রুমে, কখনও-বা খোলা মাঠে, লাল বারান্দায়,
কোনো-কোনো রাতে
স্বপ্নিল মোটরকারে সান্নিধ্যের বৈদূর্যমণির
বিপুল আভায় উদ্ভসিত, চুম্বনের সঙ্গীতে অধীর হয়ে,
রাত্রির অসিত মখমলে গাল রেখে
বসে-থাকা, প্রকৃত হার্দিক কথা ভুলে যাওয়া আর
চুপচাপ চেয়ে-থাকা দিয়ে।
আজ ব্যর্থতার ভস্মারাশি আমাকে ফেলেছে ঢেকে,
আবার কখনও আমি ভস্ম ঝেড়ে অবিনশ্বর পাখির মতো
সূর্যোদয় আর পদ্মপ্রসূত আভার সম্মিলনে
গীতময় হবো কিনা, স্পষ্টতই আমি তা জানি না।