Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অয়ুর পায়ের যন্ত্ৰণা

অয়ুর পায়ের যন্ত্ৰণা অসম্ভব বেড়ে গেছে। সে কিছুক্ষণের জন্যে জেগেছিল, ব্যথার তীব্রতায় অস্থির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করল। নীম পরীক্ষা করে দেখল পা-টি-নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেটা তেমন ভয়াবহ নয়, কিন্তু ভয়াবহ হচ্ছে শরীরের অন্যান্য কোষগুলিও নষ্ট হতে শুরু করেছে। তার মায়েরও এ রকম হয়েছিল। এমন কিছু কি নেই, যা দিয়ে তীব্র ব্যাথার উপশম হয়? নীম অস্থির হয়ে উঠল। কিছু একটা করা প্রয়োজন, কিন্তু কিছু কি সত্যি করা যায়?

তারা এখানে একা। অসাধারণ চিন্তাশক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা কিছুই করতে পারে নি। দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী তারা একটি প্রাণহীন গ্রহে ঘুরে বেড়িয়েছে। শুধু ঘুরে বেড়ানো। উফ, শক্তি ও ক্ষমতার কী নিদারুণ অপচয়।

এর কি শরীর খুব খারাপ?

নীম দেখল, স্রুরা। এই লোকটির সঙ্গে অয়ুর ভালো চেনাজানা হয়েছে।

নীম বলল, ও মারা যাচ্ছে।

সে কি!

আমাদের মা নিজেও এভাবেই মারা গিয়েছিলেন।

নিশ্চয়ই এর চিকিৎসা আছে।

থাকলেও আমাদের জানা নেই।

আমি আমাদের মেডিকেল টিমকে বলছি, এসে দেখতে।

আমার মনে হয় না, এতে কোন লাভ হবে। আমাদের শরীরের সঙ্গে তোমাদের কোনো মিল নেই।

না থাকুক, আমি ওদের আনছি।

নিওলিথি সভ্যতার উপর লেখা বইটি আয়তনে ছোট। বৈজ্ঞানিক তথ্য বলতে বিশেষ কিছু নেই। কোনটি কবে আবিষ্কার হয়েছে, কোনটির কী রঙ, যে গ্রহগুলিতে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাদের আবহাওয়া, মাটির গঠনপ্রকৃতি–এই সব বিশদ করে লেখা। কোনোটিতেই লেখা নেই ঘরগুলির ভেতরটা কেমন, যে আলো ঘর থেকে আসছে তার উৎস কী? তরঙ্গদৈর্ঘ্যইবা কী? বইটি লেখা হয়েছে সুখপাঠ্য উপন্যাসের কায়দায়, যেখানে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি। তবে দুটি জিনিস জানা গেছে। (১) নিওলিথি সভ্যতা যেসব গ্রহে পাওয়া গেছে, সেসব গ্রহের প্রতিটিতে দুটি করে সূর্য আছে। (২) যে সৌরমণ্ডলে নিওলিথি সভ্যতা আছে, সেই সৌরমণ্ডলের কাছাকাছি আছে একটি ব্ল্যাক হোল।

বই পড়া শেষ হওয়ামাত্র ক্যাপ্টেন জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগল বইটি?

লী বলল, বইটি ভালো। আমি এখন জানতে চাই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে। ব্ল্যাক হোল জিনিসটি কি?

ব্ল্যাক হোল হচ্ছে একটি অন্ধকার নক্ষত্র যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সীমাহীন। যে মাধ্যাকৰ্ষণ শক্তি অতিক্রম করে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না, আটকা পড়ে থাকে।

লী খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, যদি তাই হয়, তাহলে যেখানে ব্ল্যাক হোল থাকবে, সেখানে অনেক অদ্ভুত কাণ্ড হবে।

ক্যাপ্টেন কৌতূহলী হয়ে বললেন, কী ধরনের অদ্ভুত কাণ্ড।

ব্ল্যাক হোল হবে একটি টানেল। যার দুমাথায় সময় হবে দুরকম। তাই না?

ক্যাপ্টেন অবাক হয়ে তাকালেন। এত অল্প তথ্যের উপর নির্ভর করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা অসম্ভব ব্যাপার। তাঁর একটু ঈর্ষা বোধ হল।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান জীববিদ্যা বিভাগের দেয়া কার্ডটি বেশ কয়েক বার পড়লেন–

বহুপদ প্রাণী

সভ্যতা শ্ৰেণী : অজানা।

সমাজ শ্ৰেণী : অজানা।

বুদ্ধিমত্তা : হলডেন টেস্ট না-বাচক

অবস্থান : নক্ষত্র FOv, বর্ণালি লাল ও নীল, আর = ৯.৭১৭, থিটা = ০০.০৭১, ফাই = ২১০,২০৩৭, গ্রহ = ছয়, বয়স = ১১৪×১০১৭ সেকেন্ড।

বায়োলজী : Si, S. Se. Cl. Ge. He. Cu. নিউট্রন স্ফটিক আচ্ছাদন ধাতু ও সিলিকন সংকর চৌম্বকীয় আধান।

এ প্রাণীটির চিকিৎসা করার পথ কোথায়? ব্যথা কমাবার জন্য স্নায়ুকে অবশ করে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু স্নায়ুর গঠন-প্রকৃতি জানা নেই। জানতে হলে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে তার ব্যবস্থাও গ্যালাক্সি ওয়ানে নেই।

স্রুরা গম্ভীর হয়ে বলল, সি কিছুই করবার নেই।

না, কিছুই করবার নেই।

পা কেটে বাদ দেওয়া যায় না?

না সম্ভব নয়। এদের শরীর সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।

খুবই দুঃখের ব্যাপার, ডাক্তার।

হ্যাঁ, দুঃখের।

ক্যাপ্টেন ডেকে পাঠিয়েছেন স্রুরাকে।

তাঁর ঘরের সামনে একটি লাল তারা। প্রথম শ্রেণীর জরুরী অবস্থা ছাড়া তাকে বিরক্ত করা যাবে না। নিশ্চয়ই কোনো জটিল বিষয় নিয়ে তিনি ব্যস্ত। দরজায় নক করতেই ক্যাপ্টেন বললেন, ভেতরে এস স্রুরা। স্রুরা অবাক হয়ে দেখল, ক্যাপ্টেনের চোখে-মুখে ব্যস্ততার কোনো চিহ্ন নেই। শান্ত মুখভঙ্গি।

স্যার, আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?

হ্যাঁ, এসো।

কি ব্যাপার স্যার?

তোমার বন্ধুটি শুনলাম অসুস্থ।

জ্বি স্যার।

আমাদের মেডিকেল বোর্ড কিছু করতে পারছে না।

জ্বি না স্যার।

তোমার সঙ্গে এই প্রাণীগুলির বেশ ভালো সম্পর্ক আছে, ঠিক না?

অঙ্কুর সঙ্গে আমার প্রায়ই কথাবার্তা হয়।

তোমাকে ওরা বন্ধু হিসেবে নিয়েছে মনে হয়।

স্যার, তা তো বলতে পারব না।

ক্যাপ্টেন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, প্রাণীগুলি যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে না।

স্যার, আমি বুঝতে পারছি।

স্রুরা!

জ্বি স্যার।

ওরা যদি নিচে ফিরে যেতে হয়, সে ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। ডঃ জুরাইনকে খোজার জন্যে আমাজের দ্বিতীয় একটি দল নামবে। ওদের সঙ্গে যেতে পারে।

ওরা নিচে যেতে চায় না।

কি করে বুঝলে?

আমি ওদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার। ওরা গ্রহে ফিরে যেতে চায় না। সেখানে ওদের কিছুই করার নেই, ওরা আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়। আমাদের সঙ্গে থেকে ওরা নিজেদের সম্পর্কে জানতে চায়। ওদের ধারণা, ওরা অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে।

আমার নিজেরও সে রকম ধারণা।

আমি কি স্যার যেতে পারি?

হ্যাঁ যাও।

স্রুরা চলে যেতেই কম্পিউটার সিডিসি বলল, আপনি যা করছেন, তা কিন্তু নিজ দায়িত্বে করছেন।

একটি প্রথম শ্রেণীর মহাকাশযানের পরিচালককে অনেক কিছুই নিজ দায়িত্বে করতে হয়।

স্যার, আপনি কি সত্যি সত্যি প্রাণীগুলিকে মেরে ফেলতে চান?

হ্যাঁ।

এবং আপনার ধারণা, আপনার এ পরিকল্পনার কথা প্রাণীগুলি টের পাবে না?

না, পাবে না। মনের কথা বুঝতে হলে প্রাণীগুলিকে অনেক কাছাকাছি রাখতে হয়। আমি যখন বই পড়ছিলাম, তখন লী নামের প্রাণীটি আমার গা ঘেঁষে ছিল।

আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। এদের সাহায্যে আমরা নিওলিথি সভ্যতার রহস্য বের করতে পারতাম।

তুমি একটি সম্ভাবনার কথা বলছ, আমি ভাবছি একটি মহাকাশযানের নিরাপত্তার কথা। এর আগেও দুটি প্রথম শ্রেণীর মহাকাশযান নষ্ট হয়েছে। তুমি জান কি জন্যে হয়েছে, ঠিক না?

সিডিসি চুপ করে রইল। কিম দুয়েন ক্লান্ত স্বরে বললেন, ওদের ক্ষমতা অসম্ভব বেশি। তুমি কি জান, ওরা সিলঝিনের ন ফুট পুরু একটি খণ্ড ফুটো করে ফেলেছে।

জানি, ধাতুবিদ্যা বিভাগ থেকে ওদের সিঝিন খণ্ডটি দেয়া হয়েছিল।

হ্যাঁ। আর তুমি নিশ্চয়ই জান—আমাদের গ্যালাক্সি-ওয়ানের বাইরের আবরণটি দু ফুট পুরু সিলঝিনের তৈরি।

ওর বাইরে অবশ্যি শক্তিবলয় আছে।

তা থাকুক। ওরা ইলেকট্রিসিঁটি নিয়েও নাড়াচাড়া করেছে, করে নি?

করেছে।

তাহলে আমি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করি, তুমি আমাকে দোষ দেবে?

সিডিসি উত্তর দিল না। ক্যাপ্টেন বললেন, বল, আমাকে তুমি দোষ দেবে?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress