Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

স্কাউটশিপের এনথ্রোমিটারের কাঁটাটি

স্কাউটশিপের এনথ্রোমিটারের কাঁটাটি লাল ঘরে। যার অর্থ এ গ্রহে মানুষের পক্ষে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধু মানুষ নয়, অক্সিজেন নির্ভর কোনো প্রাণীর পক্ষেই সম্ভব নয়। এখানে বাতাসে আছে মিথেন এবং হাইড্রোজেন। খুব অল্প মাত্রায় হাইড্রোজেন সালফাইড। কোথাও কোনো পানির চিহ্ন নেই। বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বেরিলিয়াম কণা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটিও বিচিত্র।

গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কে তথ্যাবলি মহাকাশযানের ভূতত্ত্ব বিভাগের কম্পিউটারে আসতে শুরু করেছে। কম্পিউটার রিপোর্ট পাওয়ার পরই স্কাউটশিপটি মাটিতে নামবে। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ঠিক করা হবে স্কাউটশিপটির অবতরণের জায়গা। ঠিক করা হবে শিপটর চারপাশে শক্তিবলয় থাকবে কি না। স্কাউটশিপে শক্তিবলয় তৈরি করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার। পারতপক্ষে তা করা হয় না।

স্কাউটশিপটি ভূমি স্পর্শ করবার আগে আগে কম্পিউটার থেকে বলা হল শক্তিবলয় তৈরি করতে। জনি বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল, হঠাৎ করে শক্তিবলয় তৈরি করতে হবে কেন? কম্পিউটার সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, তোমরা যে জায়গায় নেমেছ, সেখানে অত্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন হচ্ছে। এর কারণ আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। সে জন্যেই এই সাবধানতা।

মহাকাশযানের এই কম্পিউটারটি পুরুষকণ্ঠে কথা বলে। গলার স্বর কর্কশ। সাধারণত কম্পিউটারগুলি কথা বলে মেয়েদের গলায় মিষ্টি স্বরে। কিন্তু গ্যালাকটিক মহাকাশযানগুলির জন্যে ভিন্ন ব্যবস্থা। সেখানে কম্পিউটারগুলি কথা বলে গম্ভীর সুরে–যেন ৫০ বছর বয়সী অঙ্কের প্রফেসর কথা বলছেন। কারণ সম্পূৰ্ণ মনস্তাত্ত্বিক। গ্যালাকটিক মহাকাশযানগুলি দীর্ঘ সময় মহাশূন্যে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য বার কম্পিউটারকে এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা ক্রু মেম্বারদের মতের সঙ্গে মেলে না। কম্পিউটারের ভারী আওয়াজ তখন প্রভাব ফেলে। মেয়েলি গলার মিষ্টি কথা যত সহজে অগ্রাহ্য করা যায়, একটি বৃদ্ধের গম্ভীর গলার আওয়াজ তত সহজে করা যায় না।

জনি বলল, কম্পিউটার সিডিসি। বায়ুর চাপ কেমন?

১.৫ এাটমোসফিয়ার খুব বেশি নয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ০.৮৭G, তোমাদের কোনো বিশেষ ধরনের স্পেস স্যুট পরতে হবে না। স্কাউটশিপে যা আছে তাতেই চলবে।

কোনো প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এটি একটি মৃত জগৎ। কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই।

তুমি কি নিশ্চিত?

জীববিদ্যা বিভাগ আমাকে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে বলতে পারি যে, কার্বন বা সিলিকনভিত্তিক কোনো প্রাণের সৃষ্টি হয় নি।

উদ্ভিদ?

উদ্ভিদ নেই। বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড নেই, যা খানিকটা নিশ্চিতভাবেই বলে, উদ্ভিদ বা প্রাথমিক স্তরের কোনো জীব এখানে নেই।

তাহলে আমরা এখানে যাচ্ছি কী জন্যে?

বৈজ্ঞানিক কৌতূহল।

বৈজ্ঞানিক কৌতূহল তো আমরা মহাকাশযানে বসে থেকেই মেটাতে পারতাম। এখানে আমার নামার প্রয়োজন কি?

তোমার কি এখানে নামতে ভয় করছে?

জনি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, না। কোনো একটি বিচিত্র কারণে তার সত্যি সত্যি ভয় করছিল। স্কাউটশিপটি অবতরণের জায়গা থেকে প্রায় সাত শ ফুট উপরে স্থির হয়ে আছে। শক্তিবলয় তৈরি হতে সময় লাগবে। ততক্ষণ জনির চুপচাপ অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই। সে ডায়াল ঘুরিয়ে মহাকাশযানের অধিনায়ক কিম দুয়েন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করল।

হ্যালো কিম দুয়েন।

হ্যালো জনি।

কতক্ষণ লাগবে শক্তিবলয় তৈরি হতে?

নির্ভর করে কী ধরনের শক্তিবলয়, তার উপর।

প্রায় দুঘণ্টা ধরে বসে আছি আমি। এত দেরি হচ্ছে কেন?

3M শক্তির বলয় তৈরি হচ্ছে, এতে সময় লাগে জনি। তুমি কি আর কিছু বলবে?

হ্যাঁ বলব। আমার সঙ্গে আরো এক জন কারোর থাকা দরকার।

কি ব্যাপার, জনি, একা-একা ভয় লাগছে?

ভয়ের প্রশ্ন নয়। প্রথম অবতরণ কখনো একা না করার নির্দেশ আছে।

তুমি একা নামছ না। তোমার সঙ্গে আছে L2F12.

কিম দুয়েন, এটি তো একটা রোবট।

রোবট হলেও এতে একটি সিডিসি কম্পিউটারের মস্তিষ্ক আছে। নয় কি?

হ্যাঁ, তা আছে।

তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন?

ভয় পাচ্ছি, এমন কথা তো বলি নি।

বলার অপেক্ষা রাখে না জানি। আমাদের এখানে আমরা তোমার হার্টবিট এবং ব্লাডপ্রেসার মাপতে পারছি।

কিম দুয়েন ফুর্তিবাজের ভঙ্গির্তে হেসে উঠল। জনি চুপ করে রইল।

হ্যালো জনি, ঠিক এই মুহূর্তে তোমার ব্লাডপ্রেসার কত জানতে চাও?

জনি ডায়াল—সুইচ অফ করে দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। তার ভয় করছে ঠিকই, কিন্তু তার পেছনে কারণ আছে। মুশকিল হচ্ছে, কারণটি কাউকে বলা যাচ্ছে না। বলামাত্রই একটি মেডিকেল টিম বসবে। এক জন সাইকিয়াট্রিস্টকে বলা হবে জনি কুলম্যান, জু নাম্বার তিনশ; ভূতত্ত্ববিদ ও স্কাউট অভিযাত্রীর উপর একটি পূর্ণ মেডিকেল রিপোর্ট লিখতে। এসব হতে দেয়া যায় না।

জনি।

জনি কুলম্যান দেখল, সিডিসি রোবটটির মস্তিষ্ক চালু করা হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে শক্তিবলয় তৈরি শেষ হয়েছে, স্কাউটশিপ এখন নিচে নেমে যাবে। জনি কুলম্যান রোবটটির দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে বলল,

হ্যালো সিডিসি।

তুমি কি ভয় পাচ্ছ জনি? তোমার হার্টবিট স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।

জনি শান্ত স্বরে বলল, আমি ভয় পাচ্ছি।

কারণটি কি আমি জানতে পারি?

জানতে পার। যেহেতু তুমি যাচ্ছ আমার সঙ্গে, সেহেতু তোমাকে আমার বলা উচিত।

বল। আমি শুনছি।

স্কাউটশিপে নিচে নামার সময় আমার মনে হল, এক জন কেউ যেন আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।

হুঁ। সেটির একটি ছবিও যেন আমার মনে এল।

ছবিটি কি রকম?

কুৎসিত। জিনিসটির অনেকগুলি পা আছে।

তুমি দেখতে পেলে জিনিসটিকে।

না। ছবিটি আমার মনে হল।

আর কি জান জিনিসটি সম্পর্কে?

ওর নাম জানি।

নামটিও তোমার মনে হল?

হ্যাঁ।

কী নাম।

অয়ু।

স্কাউটশিপটি ভূমি স্পর্শ করা মাত্র সিডিসি বলল, তুমি মহাকাশযানে ফিরে যাবার পর অবশ্যই এক জন সাইকিয়াট্রিক্টের সঙ্গে দেখা করবে। জনি কথা বলল না। সিডিসি বলল, তুমি রাগ করলে না তো আবার। তোমরা মানুষরা অকারণেই রাগ কর। জনি চুপ করে রইল।

মহাকাশযান সময় ১৪টা ৩০ মিনিটে তারা দুজন স্কাউটশিপ থেকে বের হয়ে এল। প্ৰকাণ্ড সব পাথরে ঢাকা ঘন কৃষ্ণবর্ণের ধূলিকণা চারদিকে। একটি মৃত পৃথিবী, কঠিন এবং কিছু পরিমাণে ভয়ঙ্কর।

জনি স্কাউটশিপকে পেছনে ফেলে পঁচিশ গজের মতো এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। একটি সবুজাভ পাথরের আড়াল থেকে এটি কী বের হয়ে আসছে? স্পেস-স্যুটের আরামদায়ক শীতলতার মধ্যেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল।

জিনিসটি কুৎসিত। এগারোটি পা মাকড়শার মতো চারদিকে ছড়িয়ে আছে। শরীরের তুলনায় প্রকাণ্ড একটি মাথা। মাথার দুপাশে গাছের ঘন শিকড়ের মতো কী যেন বের হয়ে আছে, যেগুলি সারাক্ষণই এদিক-ওদিক নড়ছে। জিনিসটির কোনো চোখ নেই, মুখ নেই। গায়ের বর্ণ ধূসর নীল। জনি কুলম্যান জরুরি সুইচ টিপল। হ্যালো। হ্যালো। হ্যালো মহাকাশযান গ্যালাক্সি-ওয়ান। হ্যালো। সিডিসি, সিডিসি। হ্যালো সিডিসি।

জনি তার ডান হাতের আণবিক রাস্ট থ্রোয়ার কার্যকর করে জিনিসটির দিকে তাকাল, যেটি প্রায় এক শ গজ দূরে পা ছড়িয়ে বসে আছে। মাথার দুপাশের শিকড়ের মতো জিনিসগুলি ঘূর্ণায়মান গতিতে অতি দ্রুত ঘুরছে। জনি কুলম্যান কুল-কুল করে ঘামতে লাগল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress