মনে পড়ে সেই সব গলি-খুঁজি শুরু আছে, শেষ নেই
গুলি সুতোর মতন শুধু খুলে যায়, সেখানে পাঁচফোড়নের
গন্ধ, ঢাকা বারান্দা
থেকে কেউ ছুঁড়ে দেয় কাঁঠালের ভূঁতি, বাঁশের খাঁচায়
পোষা ময়না
কৃষ্ণ কথা কয় অতি কর্কশপুরে, একতলা থেকে
তিনতলায় কেউ কারুকে
তার চেয়েও উঁচু গলায় ডাকে, এক রক থেকে আরেক
রকে লাফিয়ে যায়
হুলো, জানলার পর্দা সরিয়ে চেয়ে থাকা এক বন্দিনী
রাজকন্যার কাজল
টানা চোখ, সেই চোখে দূর প্রতিবিম্বিত অশ্রু।
কোনো কোনো বাড়ির দরোজা
মাসের পর মাস বন্ধ, একটা বড় তালার চারপাশে
মাকড়সার জাল, আবার
কোনো কোনো বাড়ির দরজা হাট করে খোলা
ভেতরে কোনো জন-মনুষ্যের শব্দ নেই,
শুধু ধুলোয় রয়েছে পায়ের ছাপ আর ভাঙা আয়নার কাচ
হঠাৎ দুপদাপ করে
দৌড়ে গেল একদল ছেলে। ঘুড়ি ধরার জন্য তাদের চোখ
আকাশের দিকে যদিও
এই গলি থেকে আকাশ দেখা যায় না, একটি মেয়ে
তারপরেই ধীর পায়ে
মিলিয়ে গেল অন্যদিকে। দেখলেই মনে হয় যেন সে
আজই ফ্রক ছেড়ে
শাড়ি পরেছে, সে কেন চকিতে একবার ক্রুদ্ধ ভাবে
তাকিয়ে নিল আমার দিকে, কী আমার
দোষ কে জানে! একটি বাড়ির চৌকাঠ গড়িয়ে আসে
জল, ভেতরে ঘেউ ঘেউ করছে
কুকুর, হঠাৎ এক বৃদ্ধ হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন মা কালীর নামে।
তার ঠিক পরেই
দুদিকের দুই অলিন্দ থেকে দুই জমকালো শাড়ি
ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয় পরনিন্দে, কলের
গানে ভেসে আসে কানা কেষ্টর কীর্তন, সেই সঙ্গে
কোন বাচ্চা পড়ুয়া পাল্লা দিয়ে
মুখস্থ করে পাণিপথের যুদ্ধ, নিচু পাঁচিলের ওপর
গোলা পায়রাদের প্রেম,
মাথার ওপর ঝন ঝন করে নিঃসঙ্গ চিলের ডাক…
গলি ক্রমে সরু হয়ে আসছে। ক্রমশই অন্ধকার, তবু
কেউ যেন হাতছানি দিয়ে
ডাকে, পেছনে ফিরে তাকাতে গা ছমছম করে…
তেপান্তরের মাঠ নয়, নাইরোবির
জঙ্গল নয়, উত্তর কলকাতার গলির গোলকধাঁধায়
আমি পথ হারিয়ে ফেলি,
আমি ফিরে যাই কৈশোর থেকে বাল্যে, আরো
পিছনে…