Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তসলিমার জন্যে পঙ্‌ক্তিমালা || Shamsur Rahman

তসলিমার জন্যে পঙ্‌ক্তিমালা || Shamsur Rahman

তসলিমা, প্যারিসের কিয়দ্দূরে একটি মনোরম
সবুজ-ওড়না জড়ানো শান্ত এলাকায়
এক রাত্তিরে তুমি ছুটে এলে এই অসুস্থ, ভাঙাচোরা
আমার কাছে। আমি জানি, তুমিও ভালো করেই জানো,
তসলিমা, যে যাই ভাবুক, তোমার আমার সম্পর্ক
চাওয়া-পাওয়ার কোনও বুনিয়াদে স্থাপিত নয়।

তসলিমা, তুমি যে বিষাক্ত শরাহত কাতর
হরিণীর মতো তা বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি। হ্যাঁ, তুমি
নাছোড় আকুলতায় হাজির হয়েছিলে, ঘন ঘন সিগারেট ফোঁকা
তোমার মনের আবহাওয়াকে নগ্ন করে
তুলছিল; বেদনা দরবারী রাগ হয়ে
ছড়িয়ে পড়ছিল তোমার সত্তাকে ঘিরে। তোমার দুটি চোখ
বিস্তারিত বর্ণনাকে টপকে এক সীমাহীন যন্ত্রণার
ইতিহাসকে প্রকাশ করছিল আশ্চর্য ভঙ্গিতে।
খ্যাতির জৌলুশ এখানে বলডান্স মগ্ন তোমার সঙ্গে,
চারপাশে থেকে তোমার দিকে এগিয়ে আসছে শ্যাম্পেনের
বোতল, পানপত্র, ভোগবাদী দর্শনের টানাহ্যাঁচড়ায়
তসলিমা, তুমি ক্লান্ত, ক্লান্ত, বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছ,
দেখতে পেয়ে আমার মনে বিষণ্নতার লতাগুল্ম ঝুলে রইল।
ভীষণ ব্যস্ত তুমি, যেন কোনও অতিশয় মূল্যবান রঙিন মাছ
আটকা পড়েছ জটিল জালে। তোমার ছটফটানি
আমি প্রত্যক্ষ করি তরুণ বন্ধুর পাশাপাশি বসে তার ড্রইংরুমে।

না তসলিমা, তোমার আর কোনওদিনই খাওয়া হবে না
মায়ের হাতে রাঁধা ভাপ-ওঠা লাল চালের ভাত,
টাট্‌কি মাছের ভর্তা, শিং মাছের ঝোল; তোমার না আর
কোনওদিন উত্তর আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে
তোমার অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাবেন না, তোমার
কল্যাণের জন্যে খোদার আরশে মাথা লুটিয়ে
পড়ে থাকবেন না। না তসলিমা, মার সঙ্গে
তোমার কস্মিনকালেও আর দেখা হবে না। এ কথা অনেক আগেই
জেনে গেছ তুমি। তোমার সুতীক্ষ্ম বোধ তোমাকে
অনেক কিছুকেই খোলা রাস্তায় ন্যাংটো করতে শিখিয়েছে।

তসলিমা, তোমার কি মনে পড়ে সেইসব আগুনে ঝলসানো
দিনগুলোর কথা, যখন তুমি, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, আমি
কতিপয় তরুণ তরুণী ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছি
তোমার ফ্ল্যাটে আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরে
তোমার সম্ভাব্য বিপদের কথা আঁচ করে। প্রতিটি
মুহূর্ত আমাদের কেটেছিল আশঙ্কায়, আতঙ্কে এবং
শাসন-না-মানা এক ধরনের আনন্দে। সেই অতিবাহিত সময়
আজও মনে যুগপৎ বেদনা ও আনন্দের প্রহর ডেকে আনে
রাখালিয়া সুরের মতো। তসলিমা, তুমি সেই সুরে
ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হও মৈয়মনসিং-এর কোনও পুকুরঘাটে,
ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, আড়িয়ালা খাঁর তীরে, ফেব্রুয়ারির বইমেলায়
কলকাতার কফিহাউসে কলেজ স্ট্রিটে।

তসলিমা, তুমি সেই রাতে শুধু আমাকে দেখার জন্যেই
ছুটে আসোনি প্যারিসের কিয়দ্দূরে এক শান্ত এলাকায়। লুকিও না,
সত্যি কথাটি বলেই ফেলো তুমি তো স্পষ্টভাষিণী। আসলে
তুমি আমার কাছে এসেছিলে ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদী, রাস্তার
ধুলোর ঘ্রাণ শুঁকে নিতে, কান পেতে শুনতে
বাংলাদেশের হৃৎস্পন্দন, তুমি বিদেশে স্বদেশকে আলিঙ্গন
করতেই এসেছিলে ছুটে গোল্লাছুট খেলতে আসা বালিকার ধরনে।
অথচ এই দেশ থেকেই তোমাকে কতিপয় অন্ধ, নির্বিবেক, নিষ্ঠুর লোক
হিঁচড়ে টেনে বের করে দিলো দু’দেশের সীমানা-চিহ্নিত
কাঁটাতারের ওপারে, যেখানেও আখেরে ঠাঁই হলো না তোমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *