যেখানে দাঁড়াও তুমি সেখানেই অপার্থিব আলো।
তুমি হেঁটে যাচ্ছো, আমি বহু দূর থেকে দেখেছি, তোমার স্যাণ্ডল
থেকে পুঞ্জপুঞ্জ জোনাকিশিখার মতো গলে পড়ছে আলো,
কংক্রিট, ধুলোবালি, ঝরা পাতা রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে অলৌকিক হীরে মুক্তো
সোনা প্রবাল পান্নায়। তোমার স্যাণ্ডলের ছোঁয়ায় সোনা-হয়ে-যাওয়া
এক টুকরো মাটি আমি সেই কবে থেকে বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি দিনরাত।
যে-দিকে তাকাও তুমি সেদিকেই গুচ্ছগুচ্ছ আশ্চর্য গোলাপ।
একবার, চোতমাসের প্রচণ্ড দুপুরে, তুমি দাঁড়ালে পথের পাশে।
তোমার পেছনে একটি মরা গাছ–হাড়ের মতো শুকনো ডাল, জংধরা
পেরেকের মতো সংখ্যাহীন কাঁটা ছাড়া কিছুই ছিলো না তার।
তোমার আঁচল উড়ে গিয়ে যেই স্পর্শ করলো সেই মরা গরিব গাছকে
অমনি তার কাঁটা আর শুকনো ডাল ঢেকে দিয়ে থরেথরে
ফুটে উঠলো লাল লাল আশ্চর্য গোলাপ।
যে-দিকে ফেরাও মুখ সেদিকেই আবির্ভূত অমল সুন্দর।
কলাভবন থেকে বেরোচ্ছিলে তুমি–হঠাৎ দুটো গুণ্ডা, হয়তো তোমার
সহপাঠী, হোন্ডায় চেপে এসে থামলো তোমার পাশে। তুমি ফেরালে মুখ
ওদের কুৎসিত মুখের দিকে;–আমি দেখলাম ওদের ঘা
আর দাগ-ভরা মুখ নিমেষেই হয়ে উঠলো দেবদূতদের
মুখের মতোন জ্যোতির্ময়।
যে-দিকে তাকাও তুমি সেদিকেই অভাবিত অনন্ত কল্যাণ।
বাসস্টপে পড়ে-থাকা কুষ্ঠরোগীটির মুখের দিকে তুমি তাকিয়েছিলে
একবার। তখন কুষ্ঠরোগীটিকে মনে হয়েছিলো
রূপসীর করতলে পড়ে আছে রজনীগন্ধার বৃষ্টিভেজা অমল পাপড়ি।
তুমি তো তাকাও সব দিকে; শুধু তুমি আমার মুখের দিকে,
মানুষের দুরূহতম দুঃখের দিকে, এক শতাব্দীতে
একবারো–ভুলেও–তাকালে না।