Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঢাকা রহস্য উন্মোচিত || Sujan Dasgupta » Page 3

ঢাকা রহস্য উন্মোচিত || Sujan Dasgupta

পরের দিন বিকেলে আবার মামুদ আর তারেক এলো। মামুদ একটা সিডি নিয়ে এসেছে। আমার ল্যাপটপটা অফিসে ফেলে এসেছি। প্রমথ ওরটা বার করে দিল, কিন্তু খুবই ব্যাজার মুখে। ওর সবসময়েই ভীতি ওর কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকবে – বিশেষ দেশী ভাইদের কোনও ডিস্কেট বা সিডিকে ও বিশ্বাস করে না। আমাদের সবার কম্পিউটারই নাকি ভাইরাসে জর্জরিত, আর আমরা সেটা জানিওনা। তবে আজকে ওর নিজের একটা আগ্রহ ছিল বলেই দিল, কিন্তু তার আগে ধমকের সুরে বলল, “ভাইরাস ফাইরাস নেইতো মামুদ, তোমাদের দেশেতো ওগুলো কিলবিল করে।”
আমার কথাটা শুনে লজ্জা লাগলো। বললাম,”কি বলছিস যাতা !”
“কেন, কথাটা ভুল বললাম। কি তারেক ভুল বললাম কথাটা আমি?”
তারেক অতিশয় ভদ্র ছেলে। বলল, “আরে না দাদা, ভুল বলবেন কেন। তবে মামুদের সিডি-তে ওসব পাবেন না।”
“কেন, মামুদকে ভাইরাসরা ভয় পায়?”
আমি বললাম, “তুই চুপ করবি?”

মামুদ সিডি থেকে বেছে একটা ছবি বার করল। পার্টির আয়োজন যখন শুরু হচ্ছে – সেই সময়কার ছবি। টেবিল আর চেয়ারগুলো পাতা হয়েছে টেনিস কোর্টে। প্রতিটা টেবিলে সবুজ রঙের চাদর পাতা আর তারওপর বড় সাদা ফুলদানী। সেখানে সেখানে রঙ-বেরঙের একগুচ্ছ করে ফুল।
“আপনার বাবা কোন টেবিলে বসেছিলেন স্যার ?”
মামুদ দেখালো টেবিলটা। ওটা গাড়ি-বারান্দার খুব কাছে। ওখান থেকে উঠে একটু গেলেই কোর্ট থেকে বেরিয়ে যাবার গেট। সেখানে গাড়ি-বারান্দা পেরোলেই বাড়ির বারান্দা।
“দাঁড়ান এই ছবিটায় আরেকটু ভালো করে দেখতে পাবেন, বলে মামুদ আরেকটা ছবি বার করল।”
বেশ বড় গোল টেবিল। চারিদিকে গোটা দশেক চেয়ার সাজানো।
“আপনার বাবা ঠিক কোথায় বসেছিলেন স্যার ?”
“আমি সিওর নই। হয় এই চেয়ার অথবা তার পাশেরটা,” একটা চেয়ার দেখিয়ে মামুদ বলল।
“আই সি। আচ্ছা স্যার, আর কে কে ওঁর সঙ্গে বসেছিলেন?”
মামুদ একটু চিন্তা করে বলল, “আম্মা, কবীর সাহেব, আজিজুলচাচা, মিস্টার খান। কয়েকটা চেয়ার ফাঁকা ছিল মাঝে মাঝে জামলচাচা ওখানে বসছিলেন। আমিও দুয়েকবার গিয়ে বসেছি। অন্যান্য নিমন্ত্রিতরাও মাঝে মাঝে এসে বাবার সঙ্গে বসে গল্প করে যাচ্ছিলেন।”
“যাঁদের কথা বললেন, তাঁরা কি করেন?”
“আজিজুলচাচা বাবার থেকেও বয়সে বড়। স্কুলে বাবার মাস্টারমশাই ছিলেন। খুব ভালো লোক, তবে কানে খুব কম শোনেন। কবীর সাহেব এক সময়ে বাবাদের পার্টনার ছিলেন। কয়েক বছর আগে বাবা আর জামালচাচার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে চলে যান। নিজে একটা বিজনেস শুরু করেন। সেই বিজনেস অবশ্য ভালো চলে নি। পার্টির কয়েক মাস আগে বাবার কাছে এসে ক্ষমাটমা চেয়ে আবার বিজনেসে জয়েন করতে চান বলে জানান। জামালচাচা ওঁকে ফেরত্ নিতে চাইছিলেন, কিন্তু বাবার আপত্তি ছিল। কবীর সাহেব আম্মাকে এসে ধরেছিলেন। আম্মাও বাবাকে অনেকবার বলেছিল ওঁকে পার্টনার করে নিতে। বাবা শেষমেষ বোধহয় রাজি হয়েছিলেন। তবে এই ফিরে আসা নিয়ে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু কবীর সাহেব মাঝে মাঝেই বাবার কাছে এ নিয়ে তদবির করতে আসতেন।”
“মিস্টার খানকে কি বিশেষ সম্মান দেবার জন্য আপনার বাবার টেবিলে বসানো হয়েছিল স্যার ?”
“তা নয়। সবাই ঘুরে ঘুরে নানান চেয়ারে বসছিলেন। আম্মা, কবীর সাহেব আর আজিজুলচাচা সব সময়েই বাবার টেবিলে ছিলেন। মিস্টার খান খানিক বাদে এসেছিলেন।”
একেনবাবুর কানে কথাটা কত গেলো বুঝলাম না, কারণ উনি মন দিয়ে ছবিটা দেখছেন আর মাথা নাড়তে নাড়তে বলছেন, “ভেরি ইণ্টারেস্টিং স্যার, ভেরি ইণ্টারেস্টিং।”
আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, “কি এতো ইণ্টারেস্টিং?”
“এই ফুল যে বাংলাদেশে হয় স্যার – আমার জানা ছিল না।”
কথাটা শুনে মামুদ খুশি হল। “আপনি বেশ ফুল চেনেন দেখছি!”
“তা স্যার একটু একটু চিনি। টবের এই আবছা গোলাপী ফুলগুলোতো মনে হচ্ছে হাইড্রেঞ্জিয়া – তাই না?”
“ঠিকই ধরেছেন।”
আমি প্রশ্ন করলাম, “কোনগুলোর কথা বলছেন?”
“এই যে স্যার, দেখুন।”
দেখলাম অসংখ্য পাপড়িতে ঠাসা বেশ বড় গোল গোল সাদা আর আবছা গোলাপি রঙের ফুল। টবের পর টবে ফুটে আছে। মধ্যে কয়েকটা অন্য ধরণের গাছ, তবে দুটো গাছ ছাড়া লম্বায় হাইড্রেঞ্জিয়ার থেকে তারা ছোট। বড় দুটো গাছের একটা আমি চিনতে পারলাম – ম্যাগ্নোলিয়া। আমাদের ক্যাম্পাসেই একটা আছে – আমার অফিস ঘর থেকে দেখা যায়। কিন্তু টবেও যে সেটা হয়, তা জানা ছিল না। টব দুটো অবশ্য খুবই বড়।
“হাইড্রেঞ্জিয়ার কম টব নেই আপনাদের বাগানে। এই ছবিতেইতো অন্ততঃ গোটা পঁচিশেক দেখছি।”
“হ্যাঁ, এটা বাবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া নেশা। প্রতি বছর টবে তিরিশটা করে হাইড্রেঞ্জিয়া গাছ করতেন – এটা আমি জন্মকাল থেকে দেখে আসছি।”
“কোত্থেকে গাছগুলো পেয়েছিলেন?”
“এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে আমার বাবার আব্বার সময় থেকে। তিনি ছিলেন গাছপাগল লোক – জমিদার নগেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর খুব বন্ধু ছিলেন। আপনারা হয়তো ওঁর নাম জানেন না, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও নগেন্দ্রনারায়ণের একটা পরিচিতি আছে। পৃথিবীর নানা জায়গা উনি থেকে বীজ আর চারা সংগ্রহ করে একটা চমৎকার বাগান করেছিলেন। বাবার আব্বাকেও তার কিছু কিছু বীজ আর চারাগাছ দিয়েছিলেন। তবে বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু হাইড্রেঞ্জিয়া আর কয়েকটা গাছ এখনও আছে।”
“আপনার শখ নেই স্যার ?”
মামুদ একটু চুপ করে বলল, “আমিতো এখন এখানে। আর আম্মার সেরকম শখ নেই।”
“টু ব্যাড স্যার, এরকম চমৎকার গাছগুলো – দেখেও আনন্দ।”
“তা ঠিক, তবে নেশা না থাকলে এগুলো করা কঠিন। শীতের দেশের পেরিনিয়াল গাছগুলোকে আমাদের দেশে বাঁচিয়ে রাখা সোজা ব্যাপার নয়।”
“আমিও তাই ভাবছিলাম স্যার, এই গাছগুলোকে গ্রীষ্মকালে কোথায় রাখেন?”
“বাবা অনেক পয়সা নষ্ট করেছেন এগুলোর পেছনে। গাছের জন্য বাড়ির পেছনে ঘর বানিয়েছেন। এককালে বরফ দিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখা হত, পরে এয়ার কণ্ডিশানার এলো। নেশাগ্রস্থ না হলে এগুলো করা যায়?”
“অ্যামিজিং স্যার, ট্রুলি অ্যামেজিং। কোনওদিন যদি ঢাকায় যাওয়া হয়, তাহলে একবার আপনাদের বাড়ি গিয়ে গাছগুলো দেখবো।”
“অবশ্যই যাবেন।”
“বাড়ির আর কোনও ছবি এই সিডি-তে আছে স্যার ?”
“একটা নয়, অনেক। দাঁড়ান দেখাচ্ছি। এখানে আসার মাস দুয়েক আগে বেশ কিছু ছবি আমি তুলেছিলাম। তাতে বাড়ির ভিতরকার ছবি, সামনের রাস্তা, বাগান – কিছুই বাদ দিই নি। দাঁড়ান, কোন ফোল্ডারে রয়েছে দেখি। ও হ্যাঁ, এইখানে।” বলে ফোল্ডারটা খুলে একটা ছবি ক্লিক করল।
“এই যে দেখুন, এটা হল গাড়িবারান্দা দিয়ে বাড়িতে ঢুকলে সামনের যে বারান্দাটা চোখে পড়ে। সোজা যে দরজাটা, সেটা বাবার অফিস ঘরে যাবার। এখন ৯০ ডিগ্রী ঘুরে ডানদিকের যে দরজাটা – সেটা দিয়ে ঢুকলে একটা লম্বা হল পাবেন। তার বাঁ পাশে ছটা পরপর গেস্ট রুম – প্রত্যকটার সঙ্গেই অ্যাটাচড বাথরুম। আর ৯০ ডিগ্রী উল্টো ঘুরে বাঁ দিকের দরজা দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই লিফ্ট। তারপর উপরে যাবার সিঁড়ি; পাশেই ছেলেদের জন্য একটা বাথরুম। তারপরে একটা বড় হলঘর। বৃষ্টি হলে সেখানেই পার্টিগুলো হয়। হলঘরের শেষে মহিলাদের জন্য একটা বাথরুম। তারপর একটা ছোট কিচেন – পার্টির সময়ে শুধু ওটা ব্যবহার করা হয়। হলঘরটা শেষ হয়েছে সিঁড়ির ঘরে। ওখানেই সার্কিট ব্রেকার বক্সটা। একেবারে শেষে একটা সাইডের দরজা। কাজের লোকরা ওটা দিয়েই বাড়িতে ঢোকে, ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় যায়। গেস্টরুমের হলঘরের শেষেও একটা দরজা আছে। কাজের লোকদের ঢোকার জন্য। উপরে যাবার একটা সিঁড়ি ছিল, কিন্তু সে দরজাটা সব সময়ে বন্ধ থাকে। দোতালাটা শুধু আমাদের আর আত্মীয়স্বজন কেউ এলে তাদের জন্য কয়েকটা ঘর রয়েছে। এখানে একটা হল ঘরের, আলাদা ছবিও আছে। দাঁড়ান দেখছি কোথায়।”
“এক কাজ করা যাক স্যার,” একেনবাবু বললেন, “এই সিডিটা আমি রেখে দি, পরে ধীরে সুস্থে আমি দেখবো।”
মামুদ লজিত হয়ে বলল, “আপনি বোধহয় খুব বিরক্ত করে দিয়েছি – তাই না?”
“মোটেই না স্যার। তবে এগুলো অনেক সময়ে দিয়ে দেখতে হবে। আপনার যদি সিডিটা রেখে যেতে কোনও আপত্তি না থাকে, তাহলেই ……।”
“কী আশ্চর্য, আপত্তি থাকবে কেন?”
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”
“আর কিছু জানতে চান?” মামুদ ওঠার আগে জিজ্ঞেস করল।
“না স্যার, আপাততঃ এই যথেষ্ট। এই সিডি-টাতো দিয়ে গেলেন। একটু ভালো করে দেখি। চোখে দেখার মতো বড় কিছু নেই স্যার।”

মামুদ আর তারেক চলে যাবার কিছুক্ষণ পর আমি আর প্রমথ একেনবাবুকে চেপে ধরলাম, “কি বুঝলেন মশাই?”
“হয়তো নর্মাল ডেথই স্যার। তবে গোলমাল কিছু থাকলেও আশ্চর্য হব না।”
“বাঃ, খুব প্রোফাউণ্ড স্টেটমেণ্ট,” প্রমথ খোঁচা দিয়ে বলল।
“তারমানে কেসটা আপনি নিচ্ছেন?” আমি বললাম।
“কিসের কেস স্যার ?”

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *