ডরোথী -2
রেভারেন্ড চলে গেছে লন্ডনএ,এফ আর,সি,এস করতে।আঙ্কেল অনেকক্ষণ চলে গেছে অনেক ক্ষণ হয়ে গেছে। এই প্রথম এসেছে রেভ্ এর অবর্তমানে এই বাড়িতে। রেভারেন্ড গেছে,এফ আর,সি,এস করতে ।পাশ করে ডাক্তার হয়ে গেছে ।ডরোথীকে আকৃষ্ট করে সে ভুলে গেছে ।ডরোথী রেভ্ এর ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিয়েছে।তাই রেভ্ কে ভোলার চেষ্টা করছে ।ঠিক করেছে বাবা মায়ের মতো এই চা বাগানের কাজেই উৎসর্গ করবে ।বি.ই করে ও অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকানোর ইচ্ছে হয়নি ।
কোন ও খবর নেই রেভ্ এর ।সেই চোদ্দ বছর বয়সটা থেমে গেছে। দিনে দিনে গাঢ়ো হয়েছে ডরোথীর ভালোবাসা । তাই বুঝি মনে ধরেনি অন্য কারোকে। গৌহাটীতে বি ই করার সময় কম প্রোপোজাল তো আসেনি। কারো কেই মনে ধরেনি,সেই একুশের যুবকের ,ওর শরীরের ওপরে ঝুঁকে পড়া মুখটা আবছা করে দিয়েছে অন্য মুখের মিছিল ।মনে পড়ে- “-এ ডে উইল কাম হোয়েন উই উইল এনজয় দিস”। হাসি পায় ডরোথীর অল্প বয়সের সব কথা রেভ্ ভুলে গেছে ।চোখটা কেমন ঝাপসা লাগে। পুরুষ কি এমন ই হয়?কৈ,আঙ্কেল তো সারা জীবন আন্ট এর কথা মনে করেই কাটিয়ে দিলেন । রেভ্ হয়তো আন্ট এর চরিত্রটা ই পেয়েছে।
ডরোথী ভাবে “গড্ ইজ গুড্ “।নইলে সেদিন রেভ্ এর দ্বারা কোন ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারতো ।রেভ্ বলেছিল,”আই ডু লাভ ইউ “।
এতক্ষণ কোন চিন্তায় ডুবে ছিল ডরোথী! চিন্তা টা হোঁচট খেল বিনার কথায় । দেখলো সেখ এর একটা গেঞ্জি পাজামা নিয়ে টয়লেট এ ঢুকে গেল । হট ওয়াটার ট্যাপ খুলে স্নান সেরে নিলো।বেশ ফ্রেশ লাগছে । এখানে সবকিছুতেই রেভ্ ।
বীনা গরম গরম খাবার দিলেও খেতে পারলো না ডরোথী।বাবাকে ফোন করে জানালো – বাড়ির সামনে জলে জমে গেছে। তাছাড়া হেভি সাওয়ার । যাবো কি করে? ডেভিড বললেন,- স্টে দেয়ার।ডোন্ট ওয়ারি।বৃষ্টি না কমলে এসো না।
ডরোথী বুঝতে পারছে না। মাথা প্রচন্ড ভার ।শুয়ে পড়লো তাড়াতাড়ি ।রেভ্ এর বিছানায়। বহু বছর রেভ্ আসে নি । কিন্তু মনে হচ্ছে কালই শুয়েছিল । হাসি পায় ডরোথীর। রেভ্ থাকলে অবশ্যই ডরোথী এখানে থাকতো না। চোখ যেন আঠায় জুড়ে যাচ্ছে । এ কী ঘুম!নাকি শরীর খারাপ!মাথায় যন্ত্রণা। শরীর যেন অনুভূতি হীন। শুধু কষ্টের সাথে শরীর ভেসে চলেছে। ভার- ভার – অতলে নেমে যাচ্ছে। কে? বাবা?না আঙ্কেল?রেভ্ কি?প্রবল শীত। চোখের জলে সব ঝাপসা। দেখতে পায় না ডরোথী। অনুনয় করে রেভ্ কে। যেন ওকে ছেড়ে না যায় ,আন্ট এর মতো । সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাঁর কল্পিত রেভ্ কে।রেভ্ যেন ওর শরীর দলিত মথিত করছে । তারই মধ্যে রেভ্ এর চরম প্রতিশ্রুতি। রেভারেন্ড ব্যানার্জির এক্সপার্টাইজের গুনে ইথারে ভাসা ডরোথীর ভালোবাসার চরম সার্থকতা। তরঙ্গে তরঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে ডরোথী। এই শীত। এই গরম। শরীরের কাপড় ফেলে দিচ্ছে। আবার শীত। কে যেন খাইয়ে দিচ্ছে। কপালে হাত দিচ্ছে। ডরোথী যেন অন্য জগতে বিলীন। ঘুমের আবেশে শোনে, কে যেন বলছে- “ডোন্ট ওয়ারি।আই অ্যাম উইথ ইউ।” আবার ও তলিয়ে যেতে যেতে শোনে রাগের গলা “হোয়াই ডোন্ট ইউ টেল মি বিফোর,দ্যাট ইউ ওয়্যার ইল? বোঝার চেষ্টা করতে করতে আবার তলিয়ে যায় ডরোথী। কপালে স্নেহের পরশ।মনে হয় বাবার হাত । না আঙ্কেল এর হাত।
ভোর বেলায় সাড়া শরীরে ব্যথা নিয়ে চোখ খোলে ডরোথী। বিছানাটা যেন বেশি লন্ড ভন্ড । এভাবে তো ডরোথী কখনো শোয় না। ক’দিন ধরে এখানে আছে কে জানে?গায়ের কম্বল সড়িয়ে তাজ্জব ।এ কী, ওর জামা কে খুলে ছিল?মনে সন্দেহ দানা বাঁধে । নিশ্চয়ই কেউ বিছানায় ছিল। যে ওর শরীর দলিত মথিত করেছে। ওকে যত্ন করেছে শরীর খারাপের সময়। যাকে কখনো বাবা মনে হচ্ছিল কখনো রেভ্ বলে মনে হচ্ছিল। কে সে?চিন্তায় উথাল পাথাল হচ্ছে ।গেট্ এর কাছে ই কুসুম লালের সাথে দেখা। ওর কাছে ই শোনা ডরোথী এখানে তিন দিন আছে । – মিসিবাবা আপ চল কে মৎ যাইয়ে গা। আপ কি তবিয়ত বহত খারাপ। ইয়ে সাইকল লে যাইয়ে ।
কথা না বাড়িয়ে ডরোথী সাইকেল চালিয়ে বাড়ি গেল। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রাতে রেভ্ এর স্পর্শ । সত্যি ই কি সপ্ন দেখছিল?আর রেভ্ এর গলার আপন করা ধমক!
ভাবলে ভয় হয়। কারণ জ্ঞান হবার পর সেদিন সকালে ওর বেশবাস যা ছিল তাতে একটা হিম স্রোত বয়ে যায় শিরদাঁড়ায়। সেই সময়ের স্বপ্ন? ভয় দূর করতে পারে না। এখন মনে হয় অসুস্থ সময়ের স্বপ্ন গুলো বাস্তব ছিল। সে নিজেই অজান্তে কারোকে এনকারেজ করেছে। সে যেই হোক তার কোন দোষ নেই। জ্বরের ঘোরে রেভ্ ভেবেই ডরোথী তাকে কাছে টেনে নিয়েছে একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে ।বিয়ে আর সম্ভব নয়। রেভ্ এর কাছে তো মুখই দেখাতে পারবে না ।
যা ভেবেছিল তাই ঠিক মনে হচ্ছে। ভয়টা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ডরোথীর বিষন্নতা পামেল কে বিচলিত করেছে । মেয়ের মন জানতে চেয়ে ও জানতে পারেন নি। ডরোথীকে পামেলা বলেছেন রেভ্ এর সাথে কথা বলতে। ডরোথী ভাবে ঘটনাটা রেভারেন্ড এর দ্বারা হলে তো কোন অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এতো অজানা কোন একজনের দ্বারা হয়েছে। রেভ্ যে এতে নেই তাতে ডরোথীর এক কানা কড়ি ও সন্দেহ নেই । ডরোথীর প্রশ্ন,”হু ইজ হী?তবে কি রেভ্ এর সূত্রে অনেকেরই আগমন হয় এ বাড়িতে?কিন্তু অসুস্থতার সুযোগ কে নিতে পারে?যাইহোক তার কোন দোষ নেই এ ব্যাপারে । কারণ স্বপ্ন টা এখন ও মনে আছে । ডরোথী রেভ্ কে কাকুতি মিনতিকরেছিল,। ডরোথীকে যাতে ফেলে না যাওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরেছিল সেই মানুষটাকে ।
ডরোথী বাগানে চেয়ারে বসে আকাশ দেখতে দেখতে এসব ভাবছিল। দূরের চা বাগানের কুলি মেয়ে রা পিঠে ঝুড়ি নিয়ে পাতা তুলতে যাচ্ছে। গাছে গাছে কোকিল ডাকছে। সবুজে সেজে উঠেছে চার দিক। কিন্তু ডরোথীর মন ছুটে চলেছে ফেলে আসা দিনে।