Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

রু করলো ঠাকুমার কাছে , – -ওঠাকুমা তোমার বিয়ের গল্প করো না । দাদুভাই তোমাকে কি বলেছিল ? -শুনবি ? তাহলে শোন ।

বরোদা সুন্দরী নাতনি কে নিজের গল্প বলতে থাকেন । সূর্য নারায়ণ সংস্কৃতে বিদ্যা বিনোদ উপাধি লাভ করেন তখন তাঁর বয়স সাতাশ । এবং হাওড়ার একটা স্কুলে সংস্কৃতের হেড পন্ডিত হন । হঠাৎ ই সদ্য তাঁর স্ত্রী মারা যান । তখন দেশে ব্রিটিশ রাজ চলেছে । একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিলেন কলকাতার শোভা বাজারে । দেশের বাড়ি থেকে কদাচ কেউ আসতেন । সূর্য নারায়ণের দিদি ভাইকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন । তাঁরাও গুরু বংশের । যাইহোক দিদির কথা মতো সূর্য নারায়ণ এসে পৌঁছলেন সে বাড়ির ঘাটলায় । সেখানে একটি কুমারী কন্যা বয়স হবে তেরো । খিরকির দরজা দিয়ে স্নান করে ভিজে গামছা গায়ে দিচ্ছে । তাঁর শরীরে তখনও ভরন্ত যৌবনাগম হয়নি । তবু ও থমকে গেল সূর্য নারায়ণ । চোখ ফেরানো যায় না । অবাক সূর্য সেমিজের ওপরে ভিজে শাড়ির ফের । ফর্সা টকটকে রং তায় পেছন ছাড়িয়ে চুলের ঢল নেমেছে নিচে । এমন যৌবনের সৌন্দর্য এই প্রথম দেখলেন সূর্য । কার সঙ্গে যেন কথা কইছে । তাঁর মুক্তোর মতো দাঁতের ঝলক । ডাগর চোখে ঘন পল্লব । চোখ ওপরে তুললে ই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে হয় । এ নিশ্চয়ই সে নয় । যাইহোক সেই মেয়ে খিড়কির দোর দিয়ে ঢুকে গেল ভেতরে । তখন ও সেই মেয়েটি রয়েছে । তাকে ই জিজ্ঞাসা করলেন সূর্য নারায়ণ । -এই যে এ বাড়িতে ঢুকলো মেয়ে টি তাঁর বাবার নাম কি ?

নাম শুনে হতবাক সূর্য নারায়ণ । দিদির কাছে শোনা বাবা মা চিন্তিত মেয়ের বিয়ের বয়স পার হচ্ছে দেখে কিন্তু বাবার এক গোঁ শিক্ষিত পাত্র চাই । সেটা পাওয়া যায় নি । ভিন দেশের হল ও আপত্তি নেই । সূর্য খিড়কির দোর দিয়ে ই ভেতরে গেলেন । সেই রূপসী এসে দাঁড়ায় । এখন অঙ্গ সাজে তার আরো সৌন্দর্য । পাকা কথা দিয়ে দিন ক্ষন ঠিক করে সূর্য নারায়ণ ফিরতি নৌকায় চড়লেন ।

দেরী করলেন না একেবারে বিয়ে করে ফিরলেন ।

বিয়ের পরদিন তারপাশা স্টীমার স্টেশন এ এসে স্টীমার এ করে সূর্য নারায়ণ মাদারীপুরের টুবিয়া গ্রামে ঘর আলো করা বৌ বরোদা সুন্দরীকে নিয়ে আসেন । সে ও যেমন তেমন আসা নয় অনেক হ্যাপা পেরিয়ে ই পৌঁছতে পারলেন । বর্ষা কাল তাই নৌকো করে একেবারে মাদারীপুর থেকে বাড়ির দাওয়ায় হাজির হলেন সূর্য । কারণ বর্ষার দিনে ওখানে হাঁটার পথ থাকে না । এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যেতে ও নৌকা করেই যেতে হয় । নতুন বৌ কে বরণ করলেন বড়দি । সঙ্গে পাড়ার মাসী পিসিরা ও ছিলেন । তখন ব্লাউজের চল ছিল না দেশে গ্রামে । কিন্তু মামার দৌলতে বরোদার দু তিনটে সেমিজ এসেছে । সেমিজের ওপরে সাধারণ ভাবে শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দেবার পর শাড়িটা টেনে গা ঢেকে বসে আছে নতুন বৌ । বারবার সূর্য ঐ ঘরে ঢুকছেন । মুখ খানা দেখার তর সইছে না । ভাবছেন ঘর আলো করা বৌ তার । কোলকাতায় তার এতো জজমান আছে কোথাও তো এতো সুন্দরী নজরে পড়েনি । গলায় চওড়া বিছে হার , হাতে লাল শাঁখা পলার পাশে মকর মুখ বালা , চেয়ে দেখার মতো । কে কার অলংকার বোঝা দায় । -সূর্য তুমি এ ঘর থেকে যাও তো । দেরি সইছে না বুঝি ? এখন আমাদের গল্প করতে দাও । রাতে তুমি অঢেল সময় পাবে । সূর্যর নজর যায় নতুন বৌ এর দিকে । তার নত মাথা আরো নত হয়ে গেছে । তবুও এই কথায় স্বামীর এখন কার মুখখানা না দেখে থাকতে পারে না বরোদা । সে দিকে নজর ফেলে দেখল সেই মানুষটা বৌদিদের তাড়নায় আরক্ত মুখে অন্য ঘরে চলে গেল ।

আজ ফুল সজ্জার দিন । কতো ক্ষন আর বরোদা বসে থাকবে ? কখন যে কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাও জানে না বরোদা । চোখ মেলে দেখল একজোড়া চোখ তার মুখের পড়ে আনত । লজ্জা পেয়ে গেল বরোদা । এ মা ঘুমিয়ে পড়েছে সে । ছি ছি কি মনে করবে এঁরা । ধরমর করে উঠে বসতে যায় বরদা । কিন্তু তার আগেই সূর্যের দখলে চলে যায় বরদার এতদিনের সঞ্চিত ধন । যা সে যক্ষের মতো আগলে রেখেছিল । তখন শুধু ই অজানা ভোগের স্রোতে হাবুডুবু খাচ্ছে বরদা । সেই রাতেই প্রায় চোদ্দ বছরের বরোদার কুমারীত্ব হরণ করেন সূর্য নারায়ণ । তারই সাথে নিজেকে ও পুরোপুরি বিকিয়ে দিলেন স্ত্রীর কাছে ।

পরদিন ভোরেই উঠেছে বরোদা । কিন্তু উঠোন পেরিয়ে রান্না ঘরে যেতে হলে নৌকো করেই যেতে হবে তাই নতুন বৌকে কেউ রান্না ঘরে যেতে দেয়নি । বরোদার কাজ শুধুই ঘর গোছানো । সূর্য কখন বেড়িয়ে গেল তাও দেখেনি । জলের মধ্যে সব ঘর বাড়ি দেখা যাচ্ছে দূরে দূরে ।

এদের বাড়ি পাকা নয় , কাঠের পাটাতনই ঘরের মেঝে । চার দিকে গাছ গাছালির বেড় দেওয়া । দু দিকে দুখানা করে ঘর । উঠোনের মাঝখানে বাড়ির গদাধরের মন্দির । সেটা পাকা নয় প্রায় চার ফুট উঁচু ছাব্বিশ টা কাঠের গুড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এই ঠাকুর ঘর । মন্দিরে ওঠার দু দিকে কাঠের সিঁড়ি । প্রায় আটটা সিঁড়ি বেয়ে তবে মন্দিরে ঢোকা । ঘরগুলো সব দক্ষিণ পুব মুখী । উত্তর পশ্চিম মুখী ঘরও আছে । মাঝের আঙিনায় গদাধরের মন্দির । নানা দেশের লোক স্বপ্নাদেশে এখানে ছুটে আসে । সন্ধ্যা বেলা বরোদার ভাসুর পুজো করে এলেন । জা মারা যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেননি । যাইহোক রাতে আর রান্না হলোনা । পুজোর ভোগ প্রসাদ সবাই খেলেন । সাতদিনে পত্নী প্রেমে মুগ্ধ হয়ে সূর্য নারায়ণকে চলে যেতে হল তাঁর কর্ম ক্ষেত্র কলকাতায় । বরোদা গ্রামের সকলকে নিয়ে মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে । মাসে একবার করে স্বামী আসেন । স্বামীর মন আরও দখল করে নেন বরদা তার হাতের রান্নায় । কখন ও দৈ ইলিশ । কখনো নারকোল চিংড়ি । আবার নিরামিষে তিত কুমড়ি । দারুণ , খেয়ে সবাই হাত চাটে । বারে বারে কলকাতা থেকে আসায় অনেক খরচা সূর্য নারায়ণ দাদাকে বলেন কায়দা করে । কিন্তু দিদি নতুন বৌ কে কলকাতায় ছাড়তে ভয় পায় । এক মাসের অদর্শনের খিদে , পিপাসা কি দু দিনে মেটে ? কিন্তু দিদির কথা শুনতেই হয় । সময় মতো সূর্যকে একাই চলে যেতে হল কলকাতায় ।

এদিকে গ্রামের বাড়িতে নতুন বৌদির হাতের রান্না খেয়ে পাড়া তুতো বৌদির গুণমুগ্ধ দেওরদের আসা যাওয়া বাড়লো । এরই মধ্যে জলধর বৌঠানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ । কারণ অল্প বয়সী বৌঠান দিল খোলা । আর প্রশংসা শুনলেই নানা রকমের সুখাদ্য এসে যায় । এমনই এ তল্লাটে নাম করা পেটুক ঐ জলধর । নেমন্তন্ন বাড়ি খেতে বসলে খাওয়া আর শেষ হয় না আন্না করে খায় । লোকে হাসা হাসি করে । বৌঠান জলধরের খাওয়ায় উৎসাহিত হতেন । এ ভাবে ই চলে গেল একটা বছর । এরই মধ্যে বরোদার প্রথম কন্যার জন্ম হলো । স্বামীর প্রেমের কিন্তু এক বিন্দু ও ঘাটতি হলো না । বাড়ির সকলের কাছে রূপে গুনে লক্ষী ও রসিক দিল খোলা বৌ দেখতে দেখতে চতুর্থ সন্তান ভোলার জন্ম দিলেন । এতসব গুন ছাড়া ও ছিলেন অসীম সাহসী । ওখানে চোরের উৎপাৎ ছিল । বরোদা স্বামীর খড়ম পায়ে হেঁটে বেড়াতেন । যখন বাইরে চোর আসার শব্দ পেতেন । যেন ভাসুর বাড়ি আছেন । চোর ও সেই শব্দে পালিয়ে যেত । একদিন মাঝরাতে চোর ঢুকেছে সিদ্ কেটে । ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন বরোদা । হঠাৎ গলায় টান পড়েছে । ঘুমের মধ্যে তিনি ভাবলেন ছোট ছেলে হয়তো দুধ খাওয়ার জন্য টানা টানি করছে । পড়ে বুঝতে পারেন কি হচ্ছে । কারণ বেশ ব্যথা লাগছে । তখনই হারটা টেনে ধরলেন । সাত ভরির মোটা বিছে হার । অর্ধেকের বেশি চোরের হাতে চলে গেল । বাকিটা তার হাতে রয়ে গেল । তারমানে অর্ধেক টা নিয়ে চোর পালিয়েছে । সকালে আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন যে তাঁর হাতে বানানো এক বাটি রস পুলি চেটে পুটে শেষ করা । কাজটা কার হতে পারে ? সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো রাতের কথা । বুঝে ফেলেছেন চুরিটা কার কাজ । বেশ কিছুদিন জলধর আসেনি । সেদিন হঠাৎ এসে হাজির । জলধর বৌঠানের দিকে তাকাতে পারছিল না । বরোদা ও গম্ভীর ছিলেন । তারপর বরোদা বলেন -ঠাকুর পো আমি কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম ? জলধরের বোকার মতো দৃষ্টি বৌঠানের দিকে । বরোদা আবার বলেন -তোমার টাকার দরকার ছিল তুমি আমাকে বলতে পারতে ।

জলধর হাঁ করে তাকিয়ে আছে বৌঠানের দিকে । তারপর ঝপাৎ করে বৌঠানের পায়ে পড়ে গেল । বরোদা সুন্দরী ওকে মাফ্ করে দিয়েছেন । ওর টাকার দরকার মনে করে স্বামীকে বলে চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন ।

পিসির বেশী কাছের বলে বরোদা সুন্দরী তাঁর চতুর্থ পুত্র ভোলাকে জ্যাঠা মশাই আর পিসির কাছে দেশের বাড়িতে রেখে , অন্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে কলকাতার বাস শোভাবাজারের একখানা চারতলা বাড়িতে গিয়ে ওঠেন । বাড়ি ওয়ালা সূর্য নারায়ণের জজমান ছিলেন । সেটাই বরোদার ছেলে মেয়ের বাড়ি হয়ে গেল । মালিক সূর্য নারায়ণকে বাড়িটা লিখে দিতে চেয়েছিলেন । বলেন কোর্টে দাঁড়িয়ে মিথ্যে সাক্ষী দিতে হবে । সেটা সূর্য নারায়ণের মতের বিরুদ্ধে ছিল । তাই তিনি সাক্ষী দেননি বাড়ির লোভে ।

মাঝে মাঝে দেশের বাড়ি যাওয়া হয় সেজ ছেলে পরিমলকে দেখতে । পরিমল ওর বাবা মা কে চিনতো না । জ্যাঠা আর পিসিই ওর আপন বলে জানতো । জ্যাঠার নেওটা ছিল ছোট্ট পরিমল । জ্যাঠা পুজো করতে গেলে সংগে বকবক করতে করতে চলত পরিমল । বাড়িতে গদাধর থাকার জন্য আতপ চালের ভাত আর ঘি ছাড়া কিছুই জুটতো না তার । তাই পুজোর পরে সে বাড়ির গিন্নিমারা পরিমলকে তৃপ্তি করেই খাইয়ে দিতেন । জ্যাঠামশাই এর আনন্দে চোখে জল এসে যেত । পরিমল ও খুশি কেন না এই খাওয়া টা একেবারে অন্য রকমের । বাড়িতে যে দিন খৈ , মুড়ি ভাজা হয় সেদিন ভাত ও রান্না হয় না । সেদিন সকলেই ফল আর খৈ মুড়ি খেয়ে থাকত । পিসিমা এক ফাঁকে মুড়ি আর নারকোল নাড়ু দিয়ে যেত । আদর করে পিসি আর জ্যাঠা ভোলা বলে ডাকতো পরিমলকে । ভোলা দারুণ উপভোগ করত ঐ দিন টা । খেতে খেতে এক সময় ধানের গোলায় কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । পিসিমা এক ফাঁকে ভোলাকে কোলে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিতেন বিছানায় । এইভাবেই ভোলা বাড়তে থাকে গ্রামে । যারা বাইরে বেরিয়ে কাজে যেতেন সাঁঝের আগেই ঘরে ফিরে আসতেন । পুর্নিমার সময় চাঁদের আলোয় একটু সুবিধা হতো ।

কলকাতা থেকে বাবা মা এলে ভোলা তাদের চিনতো না । মায়ের সন্তান দূরে থাকাতে মা কে চেনে না এটায় ওপরে হাসলেও মনে কষ্ট হতো বরোদার । তাই ভোলা কে স্কুলে ভর্তি করবেন বলে কলকাতা নিয়ে এলেন । কলকাতা এসে ভোলার শিশু কালের সব আনন্দ বন্ধ হয়ে গেল । স্কুলে ভর্তি হলে ও সেই টুবিয়া র আনন্দ পাওয়া যায় না । কিন্তু একেবারে বন্ধ হলো না । মাঝে মাঝে টুবিয়া গিয়ে সেই পুরনো বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে এর ওর বাড়ির মুরগি চুরি করে পিকনিক করা । কখনো কখনো ডাব ফুটো করে পাট কাঠি দিয়ে ডাবের জল শুষে খাওয়া । অবশ্য লোহার শলাকা দিয়ে ডাব ফুটো করে নিতে হতো । গ্রামের দৌরাত্ব্য শেষ হলো । কোলকাতার রিপন স্কুলে ভর্তি হলো ভোলা ও তাঁর ওপরের ভাই । দু ভাই হেঁটে যাতায়াত করত স্কুলে । বাবার কড়া শাসনে মানুষ ছেলে মেয়েরা ।

আস্তে আস্তে বরোদার ছেলে মেয়ে রা বড়ো হয়ে গেল । সূর্য নারায়ণ স্ত্রী কে দেবী জ্ঞানে মানতেন । বাবাকে দেখে দেখে ছেলে মেয়ে রা ও মা কে ভক্তিশ্রদ্ধা করতো । চোখের দৃষ্টিতেই বোঝা যেত ওদের মা ওদের কাছে অমৃত সমান নাম । সূর্য নারায়ণের কাছে সন্তানরা শিখেছিল মা মূল্যবান । তাই শিশু কালের থেকে ছেলেমেয়েরা মেনে এসেছে । প্রতিটি সন্তান যখন মায়ের সাথে কথা বলেছে তখন তাদের দৃষ্টিতে ভালবাসার হাসিতে ভরা । মায়ের মুখে ও তেমনি হাসি অনেকেরই তা দুর্লভ । মায়ের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হবে সেটা সূর্য নারায়ণ সন্তান দের দিয়েছিলেন । মাঝে মাঝেই ওরা যখন দেশের বাড়ি যেত ভোলার আনন্দ ধরে না । বর্ষা কালটাই ওখানে কষ্ট । নইলে ভোলার প্রাণ ঐ গ্রামের সব গাছ পালা । ছুটে বেড়ায় ভোলা ভয় ডর হীন হয়ে । সাপের মাথায় পা পড়লে পা উঠাতো না । পা দিয়ে মাথাটা থেঁতলে পিষে ফেলতো । তবে পায়ে পেঁচানো লেজ টা খুলে ফেলত ।

গ্রামের বড়োরা কেউ করিম চাচা , কেউ হারান জ্যাঠা সবাই ওকে ভালো বাসতেন । ওদের ছেলে মেয়েরাও ভোলার বন্ধু । দুষ্টুমি করলে তাঁরা শাসন ও করতেন । বাবার যেমন বকুনি দেবার অধিকার ছিল তেমনি ওদের ও সেই অধিকার ছিল । সেখানে হিন্দু মুসলিম বলে কিছু ই ছিল না । সূর্য নারায়ণের বয়স হয়ে গেলে দেশের বাড়িতে থাকবেন ঠিক করলেন । হাওড়ার একটা স্কুলে হেড পন্ডিত ছিলেন । ভোলা ও ঐ স্কুলে পড়েছে । শোভা বাজার থেকে হেঁটে হাওড়া সেতু পার হয়ে তবে স্কুলে যাওয়া । তখন ঝোলা সেতু ছিল হাওড়া সেতু । গঙ্গায় মাঝে মাঝে সমস্ত জলযান বন্ধ করে সেতু জুড়েদেওয়া হতো । তখন ই লোক পারাপার হতো । ওদিকে ভোলার মেজদা তখন ব্যবসা শুরু করে আসামে । দেশের সব টান চুকিয়ে সূর্য নারায়ণ ও চলে আসেন আসামে । ওদিকে ভোলা ইঞ্জিনিয়ারিংএর একটা ট্রেনিং নিয়ে চাকরি পেয়ে গেছে রেলওয়ে তে । তখন ভারত ভাগের আগে অবশ্য রেল কম্পানি বলা হত । দেশে থাকতে ই সূর্য নারায়ণ নিজের ইচ্ছায় ভোলার জন্য পাত্রী পছন্দ করেন । সেই পাত্রীর সাথেই ভোলার বিয়ে হয় । তখন ও দেশের বাড়িতেই থাকতেন সূর্য নারায়ণ । লক্ষীমন্ত বৌ এসেই শ্বশুর শ্বাশুরির সেবা যত্নের অভাব রাখেনি । এরই মধ্যের ভোলার আসামে বদলি হয়ে গেল । অতএব বৌ নিয়ে আসামের বঙ্গাইগাঁও চলে আসেন । -সুছন্দা , ঠাকুমা কে ধাক্কা দিতে থাকে । – ও ঠাকুমা তোমার কি হয়েছে ? বিড় বিড় করছো তখন থেকে ? শরীর ঠিক আছে তো ?

এবার বরোদা সুন্দরী ধাতস্থ হন । কোথায় চলে গিয়েছিলেন ? কোথায় গেল তাঁর সেই ভালোবাসার মানুষ টা ? ফিরে এলেন বর্তমানে । নাতনি সুছন্দাকে হেসে বললেন -তোর ঠাকুরদা মানে আমার বরের সঙ্গে প্রেম করছিলাম । -সুছন্দার মনে পরে বাবা ও একদিন সেই বাংলা -দেশের কথা বলছিলেন । সেই প্রথম চাকরির কথা । -ইংরেজ দের ভালো ব্যবহারের কথা । -এরপর প্রথম চাকরি র কথা ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *