Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » টেনিদা আর সিন্ধুঘোটক || Narayan Gangopadhyay » Page 6

টেনিদা আর সিন্ধুঘোটক || Narayan Gangopadhyay

সিনেমা দেখতে গিয়েছিলুম-বেশ ভালো একটা উপদেশপূর্ণ ইংরেজী বই, এইসব বলে-টলে তো কোনওমতে বাড়ির বকুনির হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেল। কিন্তু মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে রইল। বলতে ভুলে গেছি, গাড়িতে বসেই মুখের রং-টংগুলো ঘসেটসে তুলে ফেলেছিলুমআর বাড়িতে ঢুকেই সোজা বাথরুমে ঢুকে একদম সাফসুফ হয়ে নিয়েছিলুম। ভাগ্যিস, অত রাতে কারও ভালো করে নজরে পড়েনি, নইলে শেষ পর্যন্ত হয়তো একটা কেলেঙ্কারিই হয়ে যেত।

কিন্তু ব্যাপারটা কী হল? কেন আমাদের অমন করে ধরে নিয়ে গেল সিন্ধুঘোটক, কেনই বা মুখে রং মেখে রং সাজাল, আর জয় মা তারা স্টুডিয়োর ভেতরেই বা এ সব কাণ্ড কেন ঘটে গেল—সে-সবের কোনও মানেই বোঝা যাচ্ছে না! আরও বোঝা যাচ্ছে না, দাড়ি লাগিয়ে অবলাকান্ত কেনই বা আমাদের বিনে পয়সায় পৌঁছে দিলে, আমরা বিজয়কুমারের নস্যির কৌটো লোপাট না করেই পালিয়ে এসেছি জেনেও হাতে পেয়ে সে আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করল না কেন!

ভীষণ গোলমেলে সব ব্যাপার। মানে, সেই সব অঙ্কের চাইতেও গোলমেলে—যেখানে দশমিকের মাথার ওপর আবার একটা ভেঙ্কুলাম থাকে, কিংবা তেল মাখা উঁচু বাঁশের ওপর থেকে এক কাঁদি কলা নামাতে গিয়ে একটা বাঁদর ছ ইঞ্চি ওঠে তো সোয়া পাঁচ ইঞ্চি পিছলে নেমে আসে!

সকালে বসে বসে এই সব যতই ভাবছি, ততই আমার চাঁদির ওপরটা সুড়সুড় করছে, গলার ভেতরটা কুটকুট করছে, কানের মাঝপথে কটকট করছে আর নাকের দুপাশে সুড়সুড় করছে। ভেবে-চিন্তে থই না পেয়ে শেষে মনের দুঃখে টেবিল বাজিয়ে বাজিয়ে আমি সত্যেন দত্তের লেখা বিখ্যাত সেই ভুবনের গানটা গাইতে শুরু করে দিলুম :

ভুবন নামেতে ব্যাদড়া বালক
তার ছিল এক মাসি,
আহা—ভুবনের দোষ দেখে দেখিত না
সে মাসি সর্বনাশী।
শেষে–কলাচুরি মুলোচুরি করে বাড়ে
ভুবনের আশকারা,
চোর হতে পাকা ডাকাত হল সে
ব্যবসা মানুষ মারা–

এই পর্যন্ত বেশ করুণ গলায় গেয়েছি, এমন সময় হঠাৎ তেতলা থেকে অ্যাঁয়সা মোটা ডাক্তারি বই হাতে নিয়ে মেজদা তেড়ে নেমে এল।

—এই প্যালা, কী হচ্ছে এই সকালবেলায়?

বললুম, গান গাইছি।

—এর নাম গান? এ তো দেখছি একসঙ্গে স্টেনগান, ব্রেন-গান, অ্যাঁন্টি-এয়ারক্রাফট গান—মানে স্বর্গে মা সরস্বতীর গায়ে পর্যন্ত গিয়ে গোলা লাগবে।

আমি বললুম, তুমি তো ডাক্তার—গানের কী জানো? এর শেষটা যদি শোনোতা আরও করুণ। বলে আবার টেবিল বাজিয়ে যেই শুরু করেছি–

ধরা পড়ে গেল, বিচার হইল
ভুবনের হবে ফাঁসি,
হাউ হাউ করে লাড়-মুড়ি বেঁধে
ছুটে এল তার মাসি—

অমনি বেরসিক মেজদা ধাঁই করে ডাক্তারি বইয়ের এক ঘা আমার পিঠে বসিয়ে দিলে। বিচ্ছিরি রকম দাঁত খিঁচিয়ে বললে, আরে, যা খেলে কচুপোড়া। মাথা ধরিয়ে দিলি তো! লেখা নেই, পড়া নেই, বসে বসে ষাঁড়ের মতো চ্যাঁচাচ্ছে।

-বা-রে, এই তো সব আমাদের স্কুলে সামার ভ্যাকেশন শুরু হল, এখুনি পড়ব?

–তবে বেরো, রাস্তায় গিয়ে চ্যাঁচা।

আমি গাঁ-গাঁ করে বেরিয়ে এলুম রাস্তায়! এসব বেরসিকদের কাছে সঙ্গীতচর্চা না করে আমি বরং চাটুজ্যেদের রকে বসে পটলডাঙার নেড়ী কুকুরগুলোকেই গান শোনাব।

কিন্তু গান আর গাইতে হল না। তার আগেই দেখি টেনিদা হনহন করে আসছে। আসছে আমার দিকেই।

আমায় দেখেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললে, প্যালা, কুইক কুইক। তোর কাছেই যাচ্ছিলুম-চটপট চলে আয়।

—আবার কী হল?

টেনিদা বললে, সিন্ধুঘোটক।

—অ্যাঁ! কপাৎ করে আমি একা খাবি খেলুম : সিন্ধুঘোটক? কোথায়?

–আমাদের বাড়িতে। বৈঠকখানায় বসে আছে।

—অ্যাাঁ।

তখুনি দু চোখ কপালে তুলে আমি প্রায় রাস্তার মধ্যেই ধপাস করে বসে পড়তে যাচ্ছিলুম, টেনিদা খপ করে আমাকে ধরে ফেলল। বললে, দাঁড়া না, এখুনি ঘাবড়াচ্ছিস কেন? চলে আয় আমার সঙ্গে–

চলেই এলুম।

বুকের ভেতরটা হাঁকপাঁক করছিল। কিন্তু এই বেলা সাড়ে নটার সময়—টেনিদাদের বাড়ির বৈঠকখানায় বসে, সিন্ধুঘোটক আমাদের আর কী করবে?

কিংবা, এসব মারাত্মক লোককে কিছুই বিশ্বাস নেই, রামহরি বটব্যাল কিংবা যদুনন্দন আঢ্যের গোয়েন্দা উপন্যাসে দিনে-দুপুরেই যে কত বড় দুর্ধর্ষ ব্যাপার ঘটে যায় সে-ও তো আর আমার অজানা নেই।

আমি আর একবার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলুম, টেনিদা সঙ্গে দস্যুদল—মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র

–কিছু না–কিছু না, একেবারে একা।

–পুলিশে খবর দিয়েছ?

—কিছু দরকার নেই। তুই আয় না—

জয় মা তারা বলতে গিয়ে সেই অলক্ষুণে স্টুডিয়োটাকে মনে পড়ল, সামলে নিয়ে বললুম, জয় মা কালী—আর ঢুকে পড়লুম টেনিদাদের বাড়িতে।

আর ঢুকেই দেখি-চেয়ারে বসে সিন্ধুঘোটক।

সেই চেহারাই নেই। গায়ে মুগার পাঞ্জাবি, হাতে গোটাকয়েক আংটি, একমুখ হাসি। বললে, এসো প্যালারাম এসোতোমার জন্যেই বসে আছি।

আমি হাঁ করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলুম। তারপর ভয়টা কেটে গেলে জিজ্ঞেস করলুম, আপনি—আপনি কে?

–আমার নাম হরিকিঙ্কর ভড় চৌধুরী। মনোরমা ফিল্ম কোম্পানির নাম শুনেছ তো? আমি সেই ফিল্ম কোম্পানির মালিক।

—কিন্তু কাল রাতে আমাদের নিয়ে আপনি এসব কী কাণ্ড করলেন?

–খুলে বললেই সবটা বুঝতে পারবে। এসে বোসো বলছি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress