Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » টক ঝাল মিষ্টি || Sanjib Chattopadhyay

টক ঝাল মিষ্টি || Sanjib Chattopadhyay

টক ঝাল মিষ্টি

প্রথমে দেখা হল। তারপর প্রাণ আঁকুপাঁকু। তারপর দেখাদেখি, ঘোরাঘুরি। মাইলের পর মাইল কথা। অর্থহীন হাসাহাসি। হাত ধরাধরি। নাকানাকি। বেড়াবেড়ি। তারপর বিয়ে। গুচ্ছের লোকের গুঁতোগুতি। কেউ আনল ফোল্ডিং ছাতা, কেউ শাড়ি, কেউ ননস্টিক প্যান, কেউ এক পয়সার সোনার নাকছাবি।

ভাড়া-করা বিয়েবাড়িতে প্রবল হুল্লোড়। বাকসে চাপাসুরে গান। ক্যাটারারের উর্দি-পরা কর্মীর দল সেই ভিড়ে উল-বোনা কাঁটার মতো মানুষের ফাঁসের মধ্যে দিয়ে অক্লেশে চলে-ফিরে বেড়াচ্ছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে হাতের ট্রে মাথার উপর তুলে মাথার পর মাথা ‘পাস’ করাচ্ছে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটছে না।

মেয়েদের ঠোঁট দগদগে লাল। মোমপালিশ মুখ। খড়খড় শাড়ি, লেপ্টে থাকা শাড়ি, অদৃশ্য শাড়ি। ব্লাউজের নানা ধরন। কোনওটার পিঠের দিকটা স্মৃতিটুকু থাক’। কোন অতলে তার সীমারেখা পরিহিতাই জানেন। কোনও ব্লাউজ সামনের দিকে এতটাই দুঃসাহসী যে, পুরুষদের মাথা ‘সিগন্যাল ডাউন’। দৃষ্টির রেলগাড়ি পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

একালের শিশুরা টিভির কৃপায় অতি-পর্ক। বাপ-মাকেই জ্ঞান নিতে হয়। এমন সব পোশাক পরেছে, যা সেকালের পাগল-পাগলিরাই পরত। এখন ছেলেমেয়েরা খুব আদরে থাকে। ইউনিট ফ্যামিলি। সন্তান সংখ্যা কম। একটা কি দুটো। ফলে চেহারা সব ফুটবলের মতো। সেই চেহারায় মেয়েদের পরিধানে টাইট পোশাক। এর আবার সব নাম আছে।

আমেরিকা থেকে মুম্বই, মুম্বই থেকে কলকাতা। এইরকম সব নাম, ‘হিপ-হাগিং’, ‘ব্রেস্ট প্রেমোটিং’। এক কিশোরী পাজামার মতো কী একটা পরেছে।

তলার দিকটা ফালাফালা করে কাটা। যেন কেউ চিরে দিয়েছে। এটা হল বটম, আর টপটা হল সিল্কের স্যান্ডো গেঞ্জি। এই পোশাকের নাম হল ‘ক্লাউন কাট’।

এই সিরিজে আর একটা ধরন আছে—’আন্ডার কাট’। সেটা কী ফ্যাশান, যাঁরা জানেন তাঁরাই জানেন, মাছ যেমন জলে সাঁতার কাটে সেইভাবে এই মানবপুকুরে তারা ঘাই মেরে বেড়াচ্ছে। উঠতি বয়সের ছেলে আর মেয়েরা আগামী বিবাহের মহড়া দিচ্ছে। প্রবীণ-প্রবীণারা দেখেও। দেখছেন না। যুগ একেবারে কেলেঙ্কারি রকমের বদলে গিয়েছে। কেউ কারও কথা শুনছে না। বলে, কেউই কাউকে কিছু বলছে না। সবাই ড্যাব ড্যাবা চোখে, জগতের গ্যালারিতে বসে জীবনের তামাশা দেখছে।

কেউ হয়তো এইরকম বলছেন, ‘ওটা কার মেয়ে?

‘আমাদের প্রমোদের মেয়ে।’

‘অ্যাঁ। এতটা এগিয়েছে?

‘মেয়েরা ভীষণ স্পিডে এগোচ্ছে ভাই।’

‘কোন দিকে?’

‘সে আমি বলতে পারব না।’

‘ওই কালো পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা কে? খুব লপচপ করছে।’

‘চিনতে পারছ না, মননজের ছেলে। টেলি-সিরিয়ালে অভিনয় করে। ওই সিরিয়ালটা তুমি দেখো না?’

‘কোনটা?’

‘এক আকাশে অনেক তাঁরা। পাঁচ বছর ধরে চলছে, আমার মেয়ের বিয়ে হল, নাতি হল, সে স্কুলে ভরতি হল। এখনও চলছে!’

‘চলবেই তো! আকাশে কত তারা আছে জানো? তা চুলগুলো অমন ঝুলঝাড়ুর মতো হয়ে আছে। কেন?’

‘ওটা লেটেস্ট। টম হ্যাঙ্ক কাট।’

‘সে আবার কী? আমাদের সময় ছিল ইটালিয়ান কাট।’

‘টম হ্যাঙ্ক একজন বিলিতি স্টার। ও তাকে নকল করছে।’

‘আসল হতে আপত্তি কী?’

‘কাটবে না। গানের রিমেকের মতো। লতাকণ্ঠী, কিশোরকণ্ঠ।’

‘সব দু-নম্বরি।’

এরই মধ্যে একজনের উৎপাতে সকলেই অতিষ্ঠ। তিনি একটা ভিডিয়ো ক্যামেরা নিয়ে যার-তার ঘাড়ে পড়ছেন।

হঠাৎ শোরগোল, ‘গেল, গেল, গেল, গেল, রিনামাসির পরচুল খুলে নিয়ে গেল।’

ক্যামেরার তারে জড়িয়ে পরচুল উৎপাটিত। করুণ মাথার চেয়ে ভদ্রমহিলার মুখচ্ছবি আরও করুণ।

কী ছবি তুলছে বল তো! ঘুরে ঘুরে সেই একই দৃশ্য। ফুলমাসি এতখানি হাঁ করে মুখে পানের খিলি পুরছে। মহিলাসক্ত জগাদা মেয়েদের সঙ্গে ফাজলামো করছে। তারের চেয়ারে ফুলের গয়না পরে নববধূ সেঁটে বসে আছে। মাথার চুলে রজনীগন্ধার পোকা ঘুরঘুর করছে। বধূ সাজানোর কোম্পানি ঝাড়া চারঘণ্টা সাজিয়েছে। চুলে শ্যাম্পু মেরেছে তিনবার। ফল বেরোচ্ছে। ফিচিত, ফিচিত হাঁচি। বর বড় উতলা হয়েছেন। বন্ধুদের ছোটাছুটি—অ্যান্টি-অ্যালার্জিকের তল্লাশে।

একজন অভিজ্ঞ বললেন, ‘ডোন্ট ডু দ্যাট, ডোন্ট ডু দ্যাট, বউ ঘুমিয়ে পড়বে। হাঁচতে দাও। কাশি হলে দেখা যাবে।’

‘ছেলেটি কী করে জানো? বউ মেন্টেন করতে পারবে তো?’

‘আজকালকার ছেলেরা কী করে বোঝা মুশকিল! আমাদের কালে বলা যেত। শুনেছি চাওমিন কাউন্টার আছে, খুব বিক্রি। মেয়েটি খদ্দের ছিল, প্রেম হল, পাকল, বিয়ে হল। কাউন্টারের রাস্তার দিক থেকে ভেতরের দিকে চলে এল।’

‘সে ভালো। এইবার চিলি চিকেনও বিক্রি হবে। একেই বলে, জীবনের সস! সুইট অ্যান্ড সাওয়ার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *