দুর্গা মালোর কাণ্ড
দুর্গা মালোর কাণ্ড দেখে হাঁদু মুগ্ধ। রসো পান্তিকে একটা কনুইয়ের গুতো দিয়ে বলল, “দেখলেন! দেখলেন! দুর্গা মালোর কাজটা দেখলেন!”
রসো সবই দেখেছে। কিন্তু খুশি হয়নি। সে শিল্পী মানুষ, কাঁচা হাতের কাজ দেখলে খুশি হয় না। কিন্তু সে-কথা হাঁদুকে বোঝাবে কে? সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “দেখলুম!”
হাঁদু গদগদ স্বরে বলল, “আহা, আজ আমার দুটো চোখ সার্থক হল! কী বুকের পাটা, কী হাতের কারসাজি, কী চটপটে কাজ! মশাই, নাড়া বাঁধতে হয় তো ওই দুর্গা মালোর কাছে। এত লোকের চোখের সামনে কেমন লাখ টাকার জিনিস হাপিস করে হাসতে হাসতে চলে গেল! একেই বলে ওস্তাদ।”
রসো বুঝতে পারছে, হাঁদুকে আর রাখা যাবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে শুধু বলল, “গুনে দেখেছি, দুর্গা মালোর এই সামান্য কাজে মোট সাতটা ভুল। বড্ড কাঁচা হাত রে।”
“দুর মশাই, আপনার কেবল কথার ফুলঝুরি। এই আমি আপনার শাগরেদিতে ইস্তফা দিয়ে চললুম দুর্গা মালোর কাছে। লাথি খাই, ঘাড়ধাক্কা খাই, তবু পা জড়িয়ে পড়ে থাকব দুর্গা মালোর আখড়ায়।”
এই বলে হাঁদু হনহন করে দুর্গা মালোর পা জড়িয়ে ধরতে বেরিয়ে পড়ল।
কিন্তু দুর্গা মালোর পা জড়িয়ে ধরার জন্য যে আরও অনেকে লাইন দিয়েছে সেটা হাঁদুর জানা ছিল না।
খানিকটা ছুটবার পর দুর্গা মালো যখন দেখল, আর কেউ তার পিছু নেয়নি, তখন সে নিশ্চিন্ত হয়ে একটা দোকানে বসে জিলিপি খেল। মনটা খুশিতে ভরা, একখানা দোতলা বাড়ি, বিঘেদশেক জমি আর দু’বিঘের মতো পুকুর– এ হলেই তার আপাতত হয়ে যাবে। খেতে ফসল, পুকুরে মাছের চাষ। আর চাই কী! তারপর ছোটখাটো কাজ ছেড়ে একটা ডাকাতির দল খুলে ফেলবে। সূক্ষ্ম হাতের কাজ খারাপ নয় বটে, কিন্তু ডাকাতিতেই হল আসল সুখ। জিনিসপত্রগুলো সাবধানে গামছায় বেঁধে কোমরে এঁটে নিল দুর্গা, তারপর বেরিয়ে পড়ল।
একটা জোয়ান লোক হঠাৎ ছলোছলো চোখে তার সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে বলল, “ওস্তাদ, শ্রীচরণে একটু ঠাঁই দিতে হবে যে!”
দুর্গা সতর্ক হয়ে এক পা পিছিয়ে বলল, “কে রে তুই?”
“অধমের নাম পীতাম্বর। আজ স্বচক্ষে যা দেখলাম এরপর নিজের ওপর ঘেন্না ধরে গেছে। পায়ে ঠেলবেন না ওস্তাদ, চাই কী
আপনার ঘর ঝটপাট, বাসন মাজা সব করতে রাজি আছি।”
দুর্গা খুশির হাসি হেসে বলল, “আরে হবে, হবে। দু’দিন সবুর কর। একটু গুছিয়ে টুছিয়ে নিই তারপর দল খুলব। তখন আসিস।”
“না ওস্তাদ, এ সুযোগ আর পাব না। আপনি আমাকে কি আর তখন মনে রাখবেন? সে হবে না, এখনই শ্রীচরণে ঠাঁই দিতে হবে।” বলেই নোকটা দড়াম করে পায়ের ওপর পড়ে দুটো পা চেপে ধরল।
“আহা, করিস কী, করিস কী রে আহাম্মক!”
আর একটা লোক হঠাৎ পাশ থেকে উদয় হয়ে বলল, “আহা হা পীতাম্বর, ও কী হচ্ছে? তুমি দু-দুটো পা দখল করে থাকলে আমরা যাব কোথায়?” বলে এ লোকটাও পা চেপে ধরে ডুকরে উঠল, “মারুন, কাটুন, যা খুশি করুন, চরণ আর ছাড়ছি না গুরু!”
দুর্গা ফাঁপরে পড়ে আঁকুপাঁকু করছে। এমন সময়ে আরও একজন উদয় হল, কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে মিহিন সুরে বলল, “সীতার বনবাস দেখেও এমন কাঁদিনি, আজ আপনার হাতের কাজ দেখে আনন্দে যত কেঁদেছি। স্বপ্ন দেখলাম নাকি বুঝতে পারছি না। ওরে বাপু, পা দু’খানা দখল করে থাকলে আমাদের কি চলে!”
এ লোকটা পা দখল করতে না পেরে হাঁটু জাপটে বসে পড়ল। দুর্গা মালো চেঁচাতে লাগল, “ওরে ছাড়, ছাড়! কথা দিচ্ছি তোদের দলে নেব।”
এমন সময় আরও পাঁচ-সাতজন একসঙ্গে বলো দুর্গা মালো কি জয়… বলো দুর্গা মালো জিন্দাবাদ… বলো দুর্গা মালো জগতের আলো..’ বলতে বলতে এসে একেবারে ঘিরে ফেলল দুর্গাকে। একজন কোমর জড়িয়ে ধরল, আর একজন পেট, আর দু’জন দু’হাত ধরে ঝুলে পড়ল, একজন গলা পেঁচিয়ে ঘাড় এমন টাইট মারল যে, দুর্গার দম বন্ধ হয়ে এল।
“ওরে করিস কী? করিস কী?”
কে শোনে কার কথা! হাতগুলো ক্রমে সাঁড়াশির মতো চেপে ধরছে। চোখ উলটে দুর্গা গোঁ গোঁ করতে লাগল। তারপর আর তার জ্ঞান রইল না।
একটু দূর থেকে দৃশ্যটা খুব মন দিয়ে দেখছিল হাঁদু। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর লোকগুলো খুব যত্ন করে দুর্গা মালোকে মাটিতে শুইয়ে দিল। একজন কোমর থেকে গামছাটা খুলে নিল। আর একজন দুর্গার ট্যাঁক আর পকেটে যা ছিল বের করে নিল। তারপর ধীরেসুস্থে ভিড়ের মধ্যে একে একে মিশে গেল। হাঁদু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর গুটি গুটি ফিরে চলল রসো পান্তির কাছে।
.
“আহা মশাই, খোকাটিকে অমন ঢেকেঢুকে নিচ্ছেন, ওর দমবন্ধ হয়ে যাবে যে!”
নবকান্ত থমকে দাঁড়িয়ে টেকো আর গুফো লোকটার দিকে চেয়ে বলল, “কীসের খোকা? কার খোকা?”
“আপনার চাঁদরের তলায় ওটি খোকা নয়?”
“আজ্ঞে না।”
“তা হলে কী বলুন তো! জুতোর বাক্স নাকি?”
“আজ্ঞে না।”
“তা যা-ই হোক, সাবধানে নেবেন। বড্ড চুরি-ছিনতাই হচ্ছে এই ঝিকরগাছার হাটে। এই তো শুনলুম একটু আগে নবীন পাকড়াশির দোকান থেকে ক্যাশবাক্স উধাও হয়েছে। দেশটা চোরে-ডাকাতে ভরে গেল মশাই।”
“তা হবে।”
“শুধু কি চোর! শুনলেন না একটু আগে মাইকে বলছিল, শীতল দাসের খুনি শ্যামাপদ নাকি জেল থেকে পালিয়ে এই দিকেই এসেছে। ধরে দিতে পারলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার।”
শীতল দাসের খুনি শ্যামাপদ শুনে নবকান্তর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। একটু আগে না একটা লোক তাকেই শ্যামাপদ বলে ভুল করেছিল! কী সর্বনাশ! সে কি শ্যামাপদর মতো দেখতে নাকি!
ক্ষীণ স্বরে নবকান্ত বলল, “তাই নাকি?”
“তবে আর বলছি কী! ভয়ংকর খুনি মশাই। হাটসুষ্ঠু লোক তো পুরস্কারের কথা শুনে কাজ কারবার ফেলে এখন শ্যামাপদকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে!”
“অ্যাঁ।”
“দু’গাড়ি পুলিশও এসে নামল একটু আগে। ওই উত্তর দিক থেকে তারা মার্চ করতে শুরু করেছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই মারতে মারতে দারোগাবাবুর সামনে নিয়ে গিয়ে ফেলছে।”
নবকান্ত ভারী কাহিল বোধ করতে লাগল। অবশ হাতে ধরা বাক্সটা ভারী ঠেকছে। নবকান্ত লোকটার দিকে চেয়ে বলল, “মশাই, আমার একটা উপকার করতে পারেন?”
“বিলক্ষণ! উপকার করতে আমি খুব ভালবাসি।”
“আমার বড্ড জ্বর আসছে। এই বাক্সটা একটু গচ্ছিত রাখবেন? আমি গোবিন্দপুরের নবকান্ত রায়। দয়া করে যদি কখনও পৌঁছে দেন।”
লোকটা বলল, “এ আর বেশি কথা কী! আপনি রওনা হয়ে পড়ুন বাক্স ঠিক সময়মতো পৌঁছে যাবে।”
নবকান্ত আর দাঁড়াল না। তিরবেগে হাট ছাড়িয়ে মাঠে গিয়ে পড়ল। তারপর দৌড়।
.
শো শেষ হয়েছে, ভজহরির দুই শাগরেদ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। একটু বাদে তাঁবুটা গুটিয়ে নিয়ে রওনা দিলেই হয়। বাইরে গোরুর গাড়িও তৈরিই আছে।
একটা লম্বা-চওড়া লোক এসে ভজহরির সামনে দাঁড়াল। “ভজহরিবাবু, নমস্কার।”
ভজহরি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “আজ্ঞে, নমস্কার।”
“গঙ্গাধরপুরের কুমার বাহাদুর আজ আপনার খেলা দেখে খুব খুশি হয়েছেন।”
গঙ্গাধরপুর নামটা শুনেই ভজহরির বুকের ভেতরে হৃৎপিণ্ডটা একটা লাফ মারল। অস্ফুট গলায় ভজহরি বলল, “গঙ্গাধরপুর!”
“যে আজ্ঞে। বহু বছর আগে আপনি গঙ্গাধরপুরের রাজবাড়িতে খেলা দেখিয়ে সবাইকে তাজ্জব করে দিয়েছিলেন, মনে আছে?”
ভজহরি চোখটা নামিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল, “তা হবে হয়তো! কত জায়গাতেই তো খেলা দেখিয়েছি!”
“সে যাই হোক, কুমার বাহাদুরের খুব ইচ্ছে আপনি আর একবার গঙ্গাধরপুরের রাজবাড়িতে খেলা দেখাবেন। এই যে, এই দুশো টাকা আগাম রাখুন। খেলা দেখানোর পর আরও হাজার টাকা।”
ভজহরি হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বলল, “না মশাই, এখন বয়স হয়েছে, আর ছোটাছুটি পোয় না। কুমার বাহাদুরকে আমার নমস্কার জানাবেন। আমি এবার রিটায়ার করব। আমাকে ছেড়ে দিন।”
লোকটা মৃদু হেসে বলল, “তাই কি হয়? কুমার বাহাদুর যা ইচ্ছে করেন তা না করে ছাড়েন না। আপনি গুণী মানুষ, এই হাটে বাজারে তাঁবু খাঁটিয়ে খেলা দেখানো কি আপনার কাজ! কুমার বাহাদুরকে খুশি করতে পারলে আপনার বরাত খুলে যাবে।”
ভজহরি মাথা নেড়ে বলল, “না মশাই, না। আমি পেরে উঠব না। আমাকে মাফ করবেন।”
“কুমার বাহাদুরের অনুরোধটা রাখলে ভাল করতেন।” বলে লোকটা চলে গেল।
লালু আর নদুয়া বলে উঠল, “এঃ ওস্তাদজি, ভাল দাঁওটা ছেড়ে দিলেন!”
ভজহরি জবাব দিল না। তার মনটা বড় খারাপ লাগছে। ঘণ্টাখানেক বাদে দুটো গোরুর গাড়িতে জিনিসপত্র চাপিয়ে তারা রওনা হয়ে পড়ল। সামনের গাড়িতে ভজহরি, পিছনেরটায় লালু আর নদুয়া। ভজহরির গ্রাম কাছেই। এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ার কথা।
ভজহরি গোরুর গাড়ির ছইয়ের মধ্যে শুয়ে চোখ বুজে নানা কথা ভাবছিল। মোহরের লোভ যে কী সাঙ্ঘাতিক তা ভজহরি ভালই জানে। বহু বছর আগে গঙ্গাধরপুরের রাজবাড়িতে খেলা দেখাতে গিয়ে তার সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে স্পষ্ট দেখেছিল, বারোজন রাজা ঝলমলে পোশাক পরে দরবার ঘরের আসরের বাঁ দিকটায় বসে তার খেলা দেখছেন। যেসব খেলা সেদিন সে দেখিয়েছিল সেইসব খেলার অনেকগুলোই ভজহরির নয়। কোনও প্রেতাত্মা সেদিন ভর করে থাকবে তার ওপর। খেলা শেষ হওয়ার পর একে একে উঠে এসে তাকে একটা করে মোহর বকশিশও দিয়ে গেলেন তাঁরা। তারপর দরবার ঘরের বাঁ দিকে একটা সরু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলেন। একটা ভারী বাহারি নকশাদার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলেন। স্বচক্ষে দেখা। কিন্তু পরে দেখা গেল, সব অদৃশ্য। সিঁড়ি নেই, দরজা নেই। একজন রাজকুমার তাকে বললেন, “আসরে নাকি কোনও রাজাগজাও ছিলেন না।” ভজহরি এত অবাক হয়েছিল যে বলার নয়।
পরে অনেক রাতে বাড়ির এক আধপাগলা বুড়ো চাকর এসে তাকে চুপি চুপি বলে, “তেনাদের আর কেউ দেখতে পায় না, কিন্তু আমি পাই।”
“ওঁরা কারা?”
“সে তোমার শুনে কাজ নেই। মোহর তো পেয়েছ, এবার সরে পড়ো।”
“ওঁদের বুঝি অনেক মোহর আছে?”
“মেল মোহর হে, মেলা মোহর। আমাকেও দেন যে, এই অ্যাত মোহর। মোহরের বাক্স মাথায় দিয়েই তো আমি শুই, কেউ জানে না।”
পরদিন ভোরবেলাতেই সরে পড়ল ভজহরি, তারপর মোহর ভাঙিয়ে মেলা টাকা পেয়ে ক’দিন খুব ফুর্তি করে বেড়াল। জলের মতো বেরিয়ে গেল টাকা।
মাসছয়েক বাদে আবার টানাটানি শুরু হল। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তখন ধীরে ধীরে শয়তান ভর করল মাথায়। বুড়ো চাকরটা না বলেছিল তার কাছে অনেক মোহর! মোহরের বালিশে মাথা রেখে শোয়।
মাথার ওই শয়তানই একদিন ভজহরিকে ফের টেনে নিয়ে গেল গঙ্গাধরপুরে। নিশুত রাতে রাজবাড়িতে ঢুকতে তার অসুবিধেও হল
কিছু। ম্যাজিশিয়ানরা অনেক কৌশল জানে।
দরবার ঘরের এক কোণে চাকরটা শুয়েছিল। ভজহরি গিয়ে তার মাথার তলা থেকে বাক্সটা সরিয়ে ওই মাপের একটা বাক্স খুঁজে দিতে পেরেছিল ঠিকই, কিন্তু সেই সময়ে চাকরটা হঠাৎ জেগে তাকে জাপটে ধরে ‘চোর চোর’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। ভজহরি দেখল, তীরে এসে তরী ডুবে আর কী! সে চট করে বালিশটা তুলে চাকরটার মুখে ঠেসে ধরেছিল। বুড়ো মানুষটা এক মিনিটের মধ্যেই নেতিয়ে পড়ে গেল। ভজহরি আর দাঁড়ায়নি।
গোরুর গাড়ির দুলুনিতে একটু তন্দ্রা এসেছিল ভজহরির। হঠাৎ তন্দ্রা ভেঙে গাড়োয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কী রে, এত দেরি হচ্ছে কেন?”
গাড়োয়ান বলল, “রাস্তা খারাপ আছে বাবুমশাই, একটু ঘুরে যাচ্ছি।”
ভজহরি আবার চোখ বুজল। গঙ্গাধরপুরের কথা মনে পড়তে মনটা বড় ভার হয়ে যায়। ভয় ভয় করে। খুনটা কেউ টের পায়নি বটে, পুলিশও ধরতে আসেনি, তবু বড় গ্লানি হয়। বাক্সটা চুরি করেছিল বটে, কিন্তু তার ভোগে লাগেনি। যেদিন বাক্স নিয়ে বাড়ি ফিরল সেদিন রাতেই তার বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। মোহরের বাক্সসমেত সবকিছু নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। ভজহরি পাগলের মতো ডাকাতদের পিছু ধাওয়া করেছিল।
পরে জানা গিয়েছিল, সেই ডাকাতদলটা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করে এ-ওর হাতে জখম হয়ে মারা যায়। খালধারে পড়ে ছিল সবকটা। মোহরের বাক্স ফের উধাও। তারপর কী হয়েছে তা আর জানে না ভজহরি। জেনে আর কী হবে! দিন ফুরিয়ে আসছে।
ভজহরি চটকা ভেঙে বলল, “কী রে, আর কত দূর! এ যে রাত ভোর করতে চললি।”
“এসে গেছি কর্তা, আর একটুখানি পথ।”
ভজহরি ঘুমিয়ে পড়ল।
যখন জাগল তখন ভজহরি অবাক হয়ে দেখল, চারদিকে আলো ফুটি ফুটি। ভোর হচ্ছে। গাড়িও থেমেছে। গাড়োয়ান গাড়ি থেকে নেমে গোরুদুটোকে খুলে দিয়ে বলল, “নামুন কর্তা, এসে গেছি।”
ভজহরি অবাক হয়ে চারদিকে চেয়ে বলল, “এ কোথায় এনে ফেললি! এ তো আমার গাঁ গৌরীপুর নয়।”
গাড়োয়ান বলল, “এ হল গঙ্গাধরপুর। আর এটা হল রাজবাড়ি।”
কালকের সেই দশাসই লোকটা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলল, “আসুন ভজহরিবাবু, আসুন। আমাদের সৌভাগ্য।”
ভজহরি সভয়ে বলল, “আমি এখানে কেন?”
“এখানে না এসে যে আপনার উপায় ছিল না ভজহরিবাবু। সেই খেলাটা আর একবার দেখাতে হবে যে!”