Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঝড়ের রাত || Roma Gupta

ঝড়ের রাত || Roma Gupta

মাতলা নদী সংলগ্ন গ্ৰামে বিপত্নীক মেহের আলির বাস। কাছেই সুন্দরবন। কাঁকড়া আর মাছ ধরেই জীবনযাপন। ছেলে নাসির আলি ক’দিনের জ্বরে বিছানায়। ছেলের বৌ রুকসানা বাপের বাড়ি ছিল। স্বামীর অসুস্থতার খবর পেয়ে বাবা – মা’কে সঙ্গে নিয়ে চলে আসে। বেহাই – বেহান আসাতে মেহের আলি ব্যস্ত হয়, কী দিয়ে আথিতেয়তা করবে। ছেলেটা অসুস্থ থাকায় বাজার- হাট করা সম্ভব হয়নি। ঘরে তেমন কিছু নেই – কী রান্না করবে ? তাই চললো নদীতে কাঁকড়া আর মাছের উদ্দেশ্যে। ছেলে বললো, আব্বু এই বিকেলে যেওনা। ঝড়ের মাস মে মাস। ঝড়- বৃষ্টি এলে বিপদে পড়বে। মেহের আলি বলে বেহাই বেহান এসেছে, কালকেই চলি যাবে বলতিছে ; তুই ভাবিসনা আমি যাবো আর আসবো। শুনে বেহাই রহিম বলে, চলেন আমিও সঙ্গে যাইমু। দুজনে ডিঙ্গাতে করে মাঝ নদীতে জাল ফেলে, পারে ঘুরছে কাঁকড়ার খোঁজে। এদিকে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সকলে হাঁক দেয় ঝড় আসতিছে মেহের জাল গুটায় নে। মেহের দেখে জাল ভারী হয়েছে , মাছ ভালোই উঠেছে। জাল তুলতে না তুলতেই প্রচন্ড বেগে ঝড়- বৃষ্টি শুরু। সঙ্গে ঘনঘন বজ্রপাত। নদী উত্তাল। ঘন অন্ধকারে কিছুই দেখা যায়না। ডিঙি উল্টে যায় এমন অবস্থা। কোনোমতে দাঁড় শক্ত করে ধরে মেহের আলি, সামনে একটা লঞ্চ দেখে লঞ্চের শিকলের সঙ্গে ডিঙা কাছি দিয়ে বাঁধলো। জাল নিয়ে সাঁতরে আসার উপায় নেই। জলের তোড়ে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। বেহাই তেমন সাঁতার জানেনা। অগত্যা দুজনে ডিঙায় বসে ভিজছে।

ঝড়ের তান্ডবে গাছ উপড়ে পড়ছে। হরিণ দৌড়াদৌড়ি করছে। বাঘ, কুমিরের ভয়ে বিষম উৎকন্ঠিত। একসময় চোখে পড়লো দু’টো বাঘ সাঁতরে ওপারে যাচ্ছে, চোখদুটো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে। ভয়ে শিউরে ওঠে তারা। বনদেবীকে স্মরণ করে,”রক্ষা করো মাগো”। ঠিক তক্ষুনি ডিঙ্গি প্রচন্ড দুলে উঠলো। যেন কিছু লাফিয়ে পড়লো। টর্চ জ্বেলে দেখে একটা শিশুবাঘ। মা’কে হারিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে এসেছে আশ্রয়ের খোঁজে। রাত বেড়েছে, তুফান চলছেই। মেহেরের ছেলে চিন্তায় অস্থির। পড়শীদের জানায় বাবা ঘরে ফেরেনি। সকলে বললে, হাঁক দিয়ে বললাম ঝড় আসতিছে মেহের চলি আয় , শুনলো কই তোর বাপ! এত রেতে কোনো ঠাঁই পেইছে নিশ্চয়। ভোর না হলে অন্ধকারে খুঁজে পাবো কোথাকে! ভোররাতে চারজন মশাল জ্বালিয়ে নদীতটে গিয়ে চীৎকার করে মেহের কোথাকে আছিস, সাড়া দে। মেহের – রহিম চেঁচিয়ে বলে, লঞ্চের গায়ে ডিঙাতে আছি। সকলে এসে ওদের উদ্ধার করে। শিশুবাঘটিকে দেখে সবাই অবাক! একে একা ফেলে যাওয়া ঠিক হবেনা, কুমিরে খাবে। হঠাৎ কানে এলো বাঘের গর্জন। তাকিয়ে দেখে ওপারে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে বাঘ। সকলে কেরোসিন ঢেলে মশালের আগুন বাড়িয়ে নিলো। একজন বললো চল ওপারে ছেড়ে আসি শিশুবাঘকে। অন্যরা বললো, যেচে প্রাণ দিবি? এইসময় লঞ্চচালক এসেছে ঝড়ে লঞ্চের অবস্থা দেখতে। সকলকে লঞ্চে নিয়ে সে ডিঙা টেনে ওপারে নিতেই শিশুবাঘ লাফিয়ে চলে যায় বনের ভিতর। বৃষ্টি তখনও হালকা পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *