Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জ্যোৎস্নারাত্রে || Jyotsnarate by Rabindranath Tagore

জ্যোৎস্নারাত্রে || Jyotsnarate by Rabindranath Tagore

শান্ত করো , শান্ত করো এ ক্ষুব্ধ হৃদয়
হে নিস্তব্ধ পূর্ণিমাযামিনী । অতিশয়
উদ্‌ভ্রান্ত বাসনা বক্ষে করিছে আঘাত
বারম্বার , তুমি এসো স্নিগ্ধ অশ্রুপাত
দগ্ধ বেদনার ‘পরে । শুভ্র সুকোমল
মোহভরা নিদ্রাভরা করপদ্মদল ,
আমার সর্বাঙ্গে মনে দাও বুলাইয়া
বিভাবরী , সর্ব ব্যথা দাও ভুলাইয়া ।

বহু দিন পরে আজি দক্ষিণ বাতাস
প্রথম বহিছে । মুগ্ধ হৃদয় দুরাশ
তোমার চরণপ্রান্তে রাখি তপ্ত শির
নিঃশব্দে ফেলিতে চাহে রুদ্ধ অশ্রুনীর
হে মৌনরজনী! পাণ্ডুর অম্বর হতে
ধীরে ধীরে এসো নামি লঘু জ্যোৎস্নাস্রোতে ,
মৃদুহাস্যে নতনেত্রে দাঁড়াও আসিয়া
নির্জন শিয়রতলে । বেড়াক ভাসিয়া
রজনীগন্ধার গন্ধ মদির লহরী
সমীরহিল্লোলে ; স্বপ্নে বাজুক বাঁশরি
চন্দ্রলোকপ্রান্ত হতে ; তোমার অঞ্চল
বায়ুভরে উড়ে এসে পুলকচঞ্চল
করুক আমার তনু ; অধীর মর্মরে
শিহরি উঠুক বন ; মাথার উপরে
চকোর ডাকিয়া যাক দূরশ্রুত তান ;
সম্মুখে পড়িয়া থাক্‌ তটান্তশয়ান ,
সুপ্ত নটিনীর মতো , নিস্তব্ধ তটিনী
স্বপ্নালসা ।

হেরো আজি নিদ্রিতা মেদিনী ,

ঘরে ঘরে রুদ্ধ বাতায়ন । আমি একা
আছি জেগে , তুমি একাকিনী দেহো দেখা
এই বিশ্বসুপ্তিমাঝে , অসীম সুন্দর ,
ত্রিলোকনন্দনমূর্তি । আমি যে কাতর
অনন্ত তৃষায় , আমি নিত্য নিদ্রাহীন ,
সদা উৎকণ্ঠিত , আমি চিররাত্রিদিন
আনিতেছি অর্ঘ্যভার অন্তরমন্দিরে
অজ্ঞাত দেবতা লাগি — বাসনার তীরে
একা বসে গড়িতেছি কত যে প্রতিমা
আপন হৃদয় ভেঙে , নাহি তার সীমা ।
আজি মোরে করো দয়া , এসো তুমি , অয়ি ,
অপার রহস্য তব , হে রহস্যময়ী ,
খুলে ফেলো — আজি ছিন্ন করে ফেলো ওই
চিরস্থির আচ্ছাদন অনন্ত অম্বর ।
মৌনশান্ত অসীমতা নিশ্চল সাগর ,
তারি মাঝখান হতে উঠে এসো ধীরে
তরুণী লক্ষ্মীর মতো হৃদয়ের তীরে
আঁখির সম্মুখে । সমস্ত প্রহরগুলি
ছিন্ন পুষ্পদলসম পড়ে যাক খুলি
তব চারি দিকে — বিদীর্ণ নিশীথখানি
খসে যাক নীচে । বক্ষ হতে লহো টানি
অঞ্চল তোমার , দাও অবারিত করি
শুভ্র ভাল , আঁখি হতে লহো অপসরি
উন্মুক্ত অলক । কোনো মর্ত দেখে নাই
যে দিব্য মুরতি আমারে দেখাও তাই
এ বিশ্রব্ধ রজনীতে নিস্তব্ধ বিরলে ।
উৎসুক উন্মুখ চিত্ত চরণের তলে
চকিতে পরশ করো ; একটি চুম্বন
ললাটে রাখিয়া যাও , একান্ত নির্জন
সন্ধ্যার তারার মতো ; আলিঙ্গনস্মৃতি
অঙ্গে তরঙ্গিয়া দাও , অনন্তের গীতি
বাজায়ে শিরার তন্ত্রে । ফাটুক হৃদয়
ভূমানন্দে — ব্যাপ্ত হয়ে যাক শূন্যময়
গানের তানের মতো । একরাত্রি-তরে
হে অমরী , অমর করিয়া দাও মোরে ।

তোমাদের বাসরকুঞ্জের বহির্দ্বারে
বসে আছি — কানে আসিতেছে বারে বারে
মৃদুমন্দ কথা , বাজিতেছে সুমধুর
রিনিঝিনি রুনুঝুনু সোনার নূপুর —
কার কেশপাশ হতে খসি পুষ্পদল
পড়িছে আমার বক্ষে , করিছে চঞ্চল
চেতনাপ্রবাহ । কোথায় গাহিছ গান ।
তোমরা কাহারা মিলি করিতেছ পান
কিরণকনকপাত্রে সুগন্ধি অমৃত ,
মাথায় জড়ায়ে মালা পূর্ণবিকশিত
পারিজাত — গন্ধ তারি আসিছে ভাসিয়া
মন্দ সমীরণে — উন্মাদ করিছে হিয়া
অপূর্ব বিরহে । খোলো দ্বার , খোলো দ্বার ।
তোমাদের মাঝে মোরে লহো একবার
সৌন্দর্যসভায় । নন্দনবনের মাঝে
নির্জন মন্দিরখানি — সেথায় বিরাজে
একটি কুসুমশয্যা , রত্নদীপালোকে
একাকিনী বসি আছে নিদ্রাহীন চোখে
বিশ্বসোহাগিনী লক্ষ্মী , জ্যোতির্ময়ী বালা —
আমি কবি তারি তরে আনিয়াছি মালা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress