জোৎস্না আলোকে
সেদিন চৈত্র মাসে তারাদের সাক্ষী রেখে ভালোবাসার খোঁজে তোমার পাশে বসে ছিলাম গঙ্গার তীরে। গোধূলির শেষ আলো আকাশকে রাঙিয়ে আবিরের রং ছিটিয়ে দিয়েছিল দিয়েছিল জলের স্রোতে। সূর্য সারাদিন পরিশ্রম করে দিনের শেষে গেছে বিশ্রামে। সন্ধ্যামালতীর হালকা গন্ধে, বেল ফুলের সৌরভ মেখে সন্ধ্যামণি খোলা চুলে নেমে এসেছিলো মর্ত্যে। আকাশ তার উদারতার পরিচয় দিয়ে থালার মতো চাঁদকে দিয়েছিলে পাঠিয়ে। মাঠ অরণ্য যেখানে অন্ধকার তার কালো রঙে ঘিরে রাখে সেখানেও জোছনার আলো ঠেলে প্রবেশ করেছিল। তুমি আমি বসে ছিলাম নদীর পাড়ে জ্যোৎস্নার আলো গায়ে মেখে। ওপার হতে ঘণ্টাধ্বনি এপারে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে যাচ্ছিল। মাঝি তখনও নৌকা বেয়ে চলেছে নিস্তব্ধ জলে। চায়ের দোকান ভরে উঠেছে প্রকৃতি প্রেমিক’এর ভিড়ে। পলাশের রং দুপুরের শোভা কে বাড়িয়ে দিয়ে প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল। তুমি আমি বসে আছি গা ঘেঁষে। গুন গুন করে গাইছ রবীন্দ্র সংগীত। মাঝে মাঝে এক ফেরিওয়ালা সামনে এসে হাঁক পাড়ছিল। খোলা আকাশে তারারা চাদরের মতো ঘিরে রেখেছে। ফুচকা ওয়ালা, চপের দোকান ঘিরে রেখেছে নদীর পাড়। জ্যোৎস্নার আলো মন্দিরের চূড়োগুলোকে ঝলমলে করে তুলেছে। প্রতিটি সিঁড়িতে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের ভিড়। কিছুক্ষণ বসা, গল্পএরপরে বাইকের আওয়াজ টা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। নদীর পাড়ে বস্তি অপেক্ষা দোকান বাজার মানুষের ভিড় এখন বেড়েছে। বাদুড় উড়ে এসে বসছে বটফল খেতে। কখনো কখনো কাকগুলো রাতের অন্ধকারে ডানা ঝাপটাচ্ছে। গাছের পাতা নড়ছে না। গরম বাতাস ঘাম ঝরাচ্ছে। আমাদের কত কথা বলার ছিল। তোমার পাশে বসলে আর মনে থাকে না। মন্দির মসজিদ সমস্ত কিছুর ধ্বনি জ্যোৎস্নার আলোয়, নদীর টলমলে জলে একই সঙ্গে ধ্বনিত হচ্ছে। আলোকের ঝর্ণাধারায় বাংলার সরু মেঠো পথ, ধানের গোলাসকলের মনেতে অপূর্ব গানে হিল্লোল তোলে। থালার মতো চাঁদটা বাঁশ বাগানের মাঝে।। ধীরে ধীরে ভোরের আলোর সঙ্গে মিশে যায়। নদীর পাড়ে বসে ভুলে গিয়েছিলাম আমরা এখানে বসে এই রূপ আস্বাদন করছি। হাঁটতে হাঁটতে চাঁদকে আমাদের সঙ্গী করে ফেলেছি। আমাদের সাথে সাথে সেও চলেছে নারকেল গাছ ঘেরা আমাদের কুটিরে।