Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জোজো অদৃশ্য || Sunil Gangopadhyay » Page 7

জোজো অদৃশ্য || Sunil Gangopadhyay

এর পর পাঁচদিন কেটে গেল, তবু জোজোর কোনও সন্ধান পাওয়া গেল। তার মুক্তিপণ দাবি করে কোনও চিঠিও এল না। জোজো যেন সত্যি অদৃশ্য হয়ে গেছে।

সাকসের ম্যানেজার জহুরুল আলম ধরা পড়ে গেছে বজবজের কাছে। তাকে অনেক জেরা করেও লাভ হল না কিছু। লোকটি জেদি ধরনের, চ্যাটাং-চ্যাটাং কথা বলে। অনেক বছর ধরে সে সার্কাস চালাচ্ছে, কিন্তু এ-পর্যন্ত পুলিশের খাতায় তার নাম ওঠেনি। সে বারবার বলতে লাগল, আমার কাছে কত ছেলে এসে কাজ চায়, চাকরি চায়, আমি শুধু-শুধু একটা ছেলেকে লুকিয়ে রাখব কেন?

সার্কাসের অন্য লোকেরাও সাক্ষী দিল যে, ম্যাজিশিয়ান এক্স তাদের দলের কেউ নয়। সে একজন সহকারী নিয়ে কাকদ্বীপেই ম্যাজিক দেখাবার জন্য যোগ দিয়েছিল। সে কোথায় চলে গেছে, কেউ জানে না।

যে-লোকটি বাঘের খেলা দেখায়, তার জ্বর হয়েছিল। বাঘগুলোকে খাঁচায় ভরে লরিতে তোলার সময় তার উপস্থিত থাকার কথা, কিন্তু সে থাকতে পারেনি সেদিন। তার ধারণা, কেউ ইচ্ছে করেই একটা বাঘের খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিল।

ঘুমপাড়ানি গুলি খাইয়ে কাবু করার পর সেই বাঘটাকে এখন রাখা হয়েছে। কলকাতার চিড়িয়াখানায়। তাকে আর সার্কাস দলে ফেরত পাঠানো হবে না।

জোজোর বাবা ফিরে এসেছেন কাশী থেকে। সন্তু আশা করেছিল, তিনি একটা যজ্ঞিড়ুমুরে মন্ত্র পড়ে ছুড়ে দেবেন, অমনই সেটা গড়াতে গড়াতে গিয়ে খুঁজে বার করবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হল না। কাকাবাবু আর সন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করায় তিনি বললেন, তোমাদের কোনও দোষ নেই। আমি জানতাম, এক সময় এরকম একটা কিছু হবেই। অনেকদিন ধরেই ওরা জোজোকে নিজেদের দলে ভেড়াবার চেষ্টা করছে। আমাকে জব্দ করার ফন্দি, বুঝলেন তো!

কাকাবাবু খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ওরা মানে কারা? জোজোকে কারা আটকে রেখেছে আপনি জানেন?

জোজোর বাবা আস্তে-আস্তে মাথা নেড়ে বললেন, জানি। পুলিশের সাধ্য নেই তাকে খুঁজে বার করার। আমার সঙ্গেই ওদের বোঝাপড়া হবে।

কাকাবাবু বিনীতভাবে বললেন, ব্যাপারটা ঠিক কী আমাকে একটু বুঝিয়ে দেবেন? কারা এবং কীজন্য জোজোকে ধরে নিয়ে যাবে?

জোজোর বাবা বললেন, নেপালের দিকে হিমালয়ে কালী মহিষানি নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে একদল সাধু থাকে, তাদের বলে হিঙ্গুরানি সম্প্রদায়। ওদের যে হেড, সেই দুসেরিবাবার সঙ্গে আমার একবার খুব তর্ক হয়েছিল। দুসেরিবাবার নামের মানে তিনি প্রত্যেকদিন দু সের চাল, অর্থাৎ প্রায় দুকেজি চালের ভাত খান। দু কেজি চালে এইরকম পাহাড়ের মতন ভাত হয় থালার ওপর, তিনি অনায়াসে খেয়ে নিতেন, যদিও চেহারাটা রোগা পাতলা। সেই দুসেরিবাবার সঙ্গে আমার শাস্ত্র নিয়ে তর্ক হয়, তিনি হেরে যান। সেখানে অনেক পণ্ডিত ছিল, তাদের সামনে হেরে গিয়ে দুসেরিবাবা খুব অপমানিত বোধ করেন। তর্ক কিন্তু আমি শুরু করিনি। আমি তর্ক করতে ভালও বাসি না। সেই থেকে হিঙ্গুরানি সাধুরা আমার ওপর খুব চটে আছে। আমাকে জব্দ করার চেষ্টা করছে। ওরাই জোজোকে ধরে রেখেছে।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, সেই হিমালয় থেকে সাধুরা এসে জোজোকে ধরবে কী করে?

জোজোর বাবা বললেন, ওরা তো গঙ্গাসাগর মেলার সময় স্নান করতে আসে। কিছুদিন থেকে যায়। কাকদ্বীপের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে নিশ্চয়ই। তবে ওই সাধুরা খুনি নয়, জোজোকে মেরে ফেলবে না। সে ভয় নেই। আমাকেও ওখানে নিয়ে যাবে।

কাকাবাবু বললেন, সেই সাধুদের আপনার ওপর রাগ আছে বুঝলাম। কিন্তু অন্য কোনও দলও তো জোজোকে ধরে রাখতে পারে।

জোজোর বাবা হেসে বললেন, একটা সতেরো বছরের ছেলেকে শুধু-শুধু কে ধরে রাখতে যাবে বলুন! আমি বড়লোক নই, আমার কাছ থেকে টাকা-পয়সাও পাবে না। রায়চৌধুরীবাবু, আপনি চিন্তা করবেন না। জোজোকে আমিই ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব।

জোজোর মা অবশ্য এসব কথা মানছেন না। তিনি কান্নাকাটি শুরু করেছেন।

সে বাড়ি থেকে বেরোবার পর সন্তু বলল, কাকাবাবু, ওই সাধুরা যেখানে থাকে, সেই জায়গাটার নাম কালী মহিষানি। টাক মাথা লোকটা লিখেছিল মহিষ কালী। দুটোতে মিল আছে না!

কাকাবাবু বললেন, হুঁ! আর পরের লেখাটা!

সন্তু বলল, ওখানে ওই নামে কোনও বাজার থাকতে পারে।

কাকাবাবু বললেন, সব গুলিয়ে যাচ্ছে। একদিকে হিমালয়, আর একদিকে বাংলাদেশের একটা ছোট শহর। কক্সেসবাজারে একবার যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু সেখানকার পুলিশ আমাকে চেনে না, তাদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাব না..

সন্তু বলল, ম্যাজিশিয়ানের মুখে মুখোশ ছিল, সেটা খুলে ফেললে তাকে চেনবার কোনও উপায় নেই। আর তার অ্যাসিস্ট্যান্টের মাথায় একটাও চুল নেই, ভুরু নেই। সে যদি পরচুলা পরে নেয়, আর নকল ভুরু লাগায়, তা হলে তারও চেহারা একেবারে বদলে যাবে। এরা এখন আমাদের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও বুঝতে পারব না।

কাকাবাবু বললেন, টাক-মাথা লোকটাকে পালাতে দেওয়াটা চরম ভুল হয়ে গেছে। ওর পেট থেকে আমি সব কথা বার করে আনতাম! চল, একবার অসীম দত্তর বাড়ি যাই। নতুন কোনও খবর পাওয়া যায় কি না!

দরজা খুলে দিল অলি। কাকাবাবু আর সন্তুকে দেখে তার মুখোনা যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে পরে আছে একটা গোলাপি রঙের স্কার্ট, মাথার চুলে রিবন বাঁধা। চোখ গোল-গোল করে ফিসফিসিয়ে বলল, কাকাবাবু, আমি

জোজোকে আবার দেখেছি!

কাকাবাবু বললেন, তাই নাকি? কখন দেখলে? স্বপ্নে?

অলি বলল, না, জেগে-জেগে। একটা সাদা দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, একটু পরে হঠাৎ দেখতে পেলাম। একেবারে স্পষ্ট। এবারে জোজোকে চিনতে পেরেছি।

কী করে চিনলে?

বাবার কাছে এখন জোজোর ছবি আছে। সেই ছবি আমি দেখেছি তো, ছবির সঙ্গে হুবহু মিলে গেল।

কোথায় দেখলে? সেই অন্ধকার ঘরে?

না, না, এবার অন্য জায়গায়। সমুদ্রের মাঝখানে একটা দ্বীপ, সেই দ্বীপে কোনও মানুষ নেই, একেবারে ফাঁকা, সেই দ্বীপের ঠিক মাঝখানে একটা মস্ত বড় বাড়ি, সাদা রঙের বাড়ি, অনেক ঘর, সেই বাড়ির একটা ঘরে রয়েছে জোজো!

সন্তু হোহো করে হেসে উঠল।

অলি রাগ রাগ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, এই, তুমি হাসলে যে?

সন্তু বলল, তোমার নাম রূপকথা, তুমি সত্যিই নতুন-নতুন রূপকথা বানাও!

অলি বলল, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছ না? সন্তু বলল, যে দ্বীপে একটাও মানুষ থাকে না, সেখানে অতবড় একটা বাড়ি কে বানাবে?

অলি তবু জোর দিয়ে বলল, কে বানিয়েছে জানি না, কিন্তু ওরকম বাড়ি সত্যিই আছে। আমি দেখেছি।

সন্তু বলল, সেখানে আর কেউ থাকে না। শুধু জোজো একা?

অলি বলল, জোজো ছাড়া আর কোনও লোক দেখিনি। জোজো ঘুমিয়ে আছে।

সন্তু মুচকি হেসে বলল, ঘুমন্ত রাজপুত্ত্বর। সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি বদল করে তাকে জাগাতে হবে।

কাকাবাবু ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, অলিদিদি, পৃথিবীতে অনেক সমুদ্র আছে। হাজার-হাজার দ্বীপ আছে। এই দ্বীপটা কোথায় বলতে পারো?

অলি আস্তে-আস্তে মাথা দুলিয়ে বলল, না। তা জানি না। আমি দেখলাম ধু ধু করছে সমুদ্র, মাঝখানে একটা দ্বীপ—

সন্তু বলল, সমুদ্র কখনও ধু ধু করা হয় না। ধু ধু করা মাঠ, ধু ধু মরুভূমি হয়। বাংলাও জানো না!

অলি বলল, সমুদ্র তা হলে কী হয়?

সন্তু বলল, বলতে পারো অকূল সমুদ্র। কিংবা, জল শুধু জল, দেখে দেখে চিত্ত মোর হয়েছে বিকল!

কাকাবাবু হাসতে-হাসতে বললেন, ওসব কথা এখন থাক। অলি, এক। কাপ চা খাওয়াতে পারো?

এই সময় অসীম দত্ত ঘরে এসে বললেন, অলি তোমাদের সেই স্বপ্ন দেখার গল্পটা বলেছে? এ-মেয়েটাকে নিয়ে যে কী করি! জেগে-জেগে স্বপ্ন দেখে!

কাকাবাবু বললেন, ভালই তো। কত লোক স্বপ্ন দেখে মনেই রাখতে পারে! অসীম, আর কোনও খবর পেলে?

অসীম দত্ত বললেন, সেরকম কিছু না। বীরভূমে ইলামবাজারের কাছে। দুটো লোক একটা ছ বছরের ছেলেকে চুরি করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। পাড়ার লোক ওই লোক দুটোকে পিটিয়ে প্রায় মেরেই ফেলত, পুলিশ এসে পড়ায় প্রাণে বেঁচে গেছে। সে-দুটো সাধারণ ছিচকে চোর, এর আগেও জেল খেটেছে। এরা কি একই দলের হতে পারে?

কাকাবাবু বললেন, মনে হয় না। এরকম তো প্রায়ই শোনা যায়।

অসীম দত্ত বললেন, তুমি যদি চাও, লোকদুটোকে কলকাতায় আনাতে পারি। তুমি জেরা করে দেখতে পারো। কিংবা, তুমি বীরভূমে যাবে?

কাকাবাবু বললেন, ওদেরই বরং কলকাতায় আনাও।

তারপর চা খেতে-খেতে কিছুক্ষণ গল্প হল। এক সময় ঝনঝন করে বেজে উঠল টেলিফোন।

অসীম দত্ত রিসিভার তুলে বললেন, ইয়েস, অসীম দত্ত স্পিকিং… কে? সিরাজুল চৌধুরী? কী খবর সিরাজুল, অনেক দিন পর… কার ছেলে? কী হয়েছে? …কবে হল? …ডিটেইল দাও তো… ভেরি স্ট্রেঞ্জ, আমাদের এখানেও এরকম হয়েছে…

প্রায় দশ মিনিট কথা বলার পর অসীম দত্ত টেলিফোন ছাড়লেন। কাকাবাবুর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বললেন, অদ্ভুত, অদ্ভুত! কে ফোন করেছিল জানো? সিরাজুল চৌধুরী, আমার অনেকদিনের বন্ধুমানুষ, বাংলাদেশের পুলিশের একজন বড়কতা, সে আমাকে একটা অনুরোধ জানাল। ব্যাপার হয়েছে কী, ঠিক জোজোর মতনই বাংলাদেশে একটি ছেলে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

কাকাবাবু সোজা হয়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন, তার বয়েস কত?

অসীম দত্ত বললেন, সতেরো বা আঠেরো। একজন বড় ব্যবসায়ীর ছেলে, লেখাপড়াতেও ভাল। ব্যাপারটা নিয়ে ওখানে খুব হইচই পড়ে গেছে। ছেলেটির নাম রশিদ হায়দার, ডাকনাম নিপু।

কী করে অদৃশ্য হল?

ওই একই ভাবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে খানিকটা দূরে এক জায়গায় ম্যাজিক দেখানো হচ্ছিল। মানুষ অদৃশ্য করার ম্যাজিক। ওই নিপু বিজ্ঞানের ছাত্র, সে বিশ্বাস করেনি। উঠে গিয়ে বলেছিল, আমাকে অদৃশ্য করুন দেখি। ব্যস, সঙ্গে-সঙ্গে সে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর ফিরে আসেনি।

সেই ম্যাজিশিয়ানের মুখে মুখোশ ছিল?

সেটা জিজ্ঞেস করিনি। পরের দিন যখন ছেলেটির খোঁজ পড়ল, ততক্ষণে ম্যাজিশিয়ান তাঁবু গুটিয়ে সরে পড়েছে। ছেলেটাকেও পাওয়া যাচ্ছে না, ম্যাজিশিয়ানও ধরা পড়েনি।

তোমাকে ফোন করে জানাল কেন? তোমার কাছে পরামর্শ চাইছে?

না, তা নয়। সিরাজুলের ধারণা, ওই ম্যাজিশিয়ানটি ইন্ডিয়ান। কিংবা তা যদি নাও হয়। ওই ছেলেটাকে স্মাগল করে পশ্চিমবাংলায় আনা হয়েছে। একদল ক্রিমিনাল বাংলাদেশ থেকে ছেলেমেয়েদের ধরে ধরে পশ্চিমবাংলায় নিয়ে আসে। এখানকার কিছু ক্রিমিনালদের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ আছে। সেইসব ছেলেমেয়ে এখান থেকে বম্বে নিয়ে গিয়ে আরব দেশে পাচার করে দেয়।

হ্যাঁ, এরকম শুনেছি। কিন্তু সে তো ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে যায়। ওখানে গিয়ে ভিক্ষে করায় কিংবা উটের পিঠে চাপিয়ে দৌড় করায়।

বড়বড় ছেলেমেয়েদেরও নিয়ে গিয়ে ধনী শেখদের বাড়িতে কাজ করায়। একবার কোনও বাড়িতে ঢুকলে আর বেরোতে পারে না। এরকম ক্রিমিনালদের গ্যাং আগে এখানে ধরাও পড়েছে। সিরাজুল আমাকে অনুরোধ করল, যে-কোনও উপায়ে নিপুকে খুঁজে বার করতেই হবে। আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে, জোজোকেও আরব দেশে পাঠিয়ে দেয়নি তো?

অলির দিকে তাকিয়ে সন্তু বলল, ধু ধু করছে মরভূমি, তার মধ্যে একটা সাদা বাড়ি, এটা হতেও পারে।

অলি জোর দিয়ে বলল, না, আমি সমুদ্রই দেখেছি! কাকাবাবু বললেন, কালই আমি চট্টগ্রাম যাব। তুমি সিরাজুল চৌধুরীকে একটা খবর দিয়ে দাও!

অসীম দত্ত বললেন, তুমি চট্টগ্রামে গিয়ে কী করবে? বরং ওই ক্রিমিনালদের একটা ঘাঁটি আছে দমদমের দিকে, খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে একবার রেড করে দেখলে হয়।

কাকাবাবু বললেন, সেসব কাজ তুমি করো। আমি চিটাগাং একটু বেড়িয়ে আসি। অনেকদিন বাংলাদেশে যাইনি। সন্তুও যাবে আমার সঙ্গে।

অলি সঙ্গে-সঙ্গে বলে উঠল, আমিও যাব! অসীম দত্ত বললেন, এই রে!

কাকাবাবু সস্নেহে অলির মাথায় হাত রেখে বললেন, সেখানে তো তোমায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। সেটা অন্য দেশ, সেখানে যেতে পাসপোের্ট, ভিসা লাগে।

অলি ঝাঁকুনি দিয়ে মাথা সরিয়ে নিয়ে বলল, ওসব জানি না। আমি যাবই। জানি, কাকাবাবু ওখানে জোজোকে খুঁজতে যাচ্ছেন!

কাকাবাবু বললেন, শোনো, শোনো অলি, জোজোর বাবা বলেছেন তিনিই। জোজোকে খুঁজে বার করবেন। আমাদের আর দায়িত্ব নেই। বাংলাদেশে আমি বেড়াতেই যাচ্ছি।

অলি বলল, ওসব আমি বুঝি। আমাকে ঠকানো হচ্ছে। আমার পাসপোর্ট করে দাও, আমি যাব!

অসীম দত্ত বললেন, কী পাগলামি করছিস অলি? পাসপোর্ট কি সহজে হয় নাকি? অনেকদিন লাগে। শুধু-শুধু জেদ করে লাভ নেই।

এবার অলির চোখে জল এসে গেছে। সে বলল, ওই সন্তুর পাসপোর্টটা আমাকে দিয়ে দাও। ও যাবে না, ওর বদলে আমি যাব।

অসীম দত্ত আর সন্তু হেসে উঠল।

অসীম দত্ত বললেন, সব পাসপোর্টে ছবি থাকে। অন্যের পাসপোর্ট নিয়ে গেলে কী হয় জানিস না? পুলিশ ক্যাঁক করে ধরে জেলে পুরে দেবে।

অলি বলল, স্মাগলাররা যে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসে, তাদের তো পাসপোর্ট থাকে না? আমিও সেইভাবে যাব!

অসীম দত্ত বললেন, আরে স্মাগলাররা বেআইনি কাজ করে, আমরা কি তা করতে পারি? অবুঝ হোসনি লক্ষ্মীটি!

অলি এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।

কাকাবাবুর তা দেখে খুব কষ্ট হল। তিনি বললেন, অলি, এবারে সত্যিই তোমাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে, আমি কথা দিচ্ছি, এর পর আমি যেখানে যাব, তোমাকে নিশ্চয়ই নিয়ে যাব। তোমার বাবাকে বলে দিচ্ছি, এর মধ্যে তোমার পাসপোর্ট করিয়ে রাখবে।

অলি এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল, অকূল সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ, তার মাঝখানে একটা সাদা বাড়ি..।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress