Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবনের জন্য || Mrinmoy Samadder

জীবনের জন্য || Mrinmoy Samadder

সালটা ঊনিশশো সাতাশি। আশীষ এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। আশীষের ভালো ফল নিয়ে সবাই আত্মবিশ্বাসী ছিল। প্রথম বিভাগে পাস করবেই সাথে স্টারও পেয়ে যেতে পারে। আশীষের বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ারে। তখনো আলিপুরদুয়ার জেলার স্বীকৃতি পায়নি। স্কুলের শিক্ষকরাও আশীষকে খুব ভালবাসতো ওর মধুর স্বভাব এবং পড়াশুনার জন্য। শিক্ষকদেরও খুব প্রত্যাশা ছিল আসিস এর ওপর।
টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। এখন নিয়মিতভাবে রিভিশন দিচ্ছে আশীষ।
কিন্তু প্রকৃতি বোধহয় আশীষের অলক্ষ্যে হেসেছিল। তখন দুদিন বাকি ওদের পরীক্ষার। শুরু হলো বৃষ্টি। অঝোর ধারায় হয়ে চলেছে। কোন বিরাম নেই সেই বৃষ্টির। চারিদিক সাদা হয়ে গেছে বৃষ্টির কারণে। খবর আসতে লাগল আলিপুরদুয়ারের নিচু অংশে জল জমে গেছে। বিভিন্ন নদীর জল বেড়ে গেছে। তোর্সা,কালজানি,রায়ডাক ভয়াবহভাবে ফুলে উঠেছে। এছাড়া অন্যান্য ছোট ছোট নদীগুলো ফুঁসছে এই বৃষ্টির জলে। কিন্তু বৃষ্টির কোন খামতি নেই। চব্বিশঘন্টা কেটে গেলেও বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ নেই।
এদিকে বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে গিয়ে বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে গেছে। সেইকারণে বিদ্যুৎ নেই সারা আলিপুরদুয়ার জুড়ে। আশীষের বাবা মায়ের মাথায় চিন্তার রেখা পড়েছে। একদিন পরেই মাধ্যমিক শুরু হবে অথচ প্রকৃতির এ কি খেলা! সবাই কিভাবে পরীক্ষা দিতে যাবে? পরীক্ষা আদৌ হবে তো! কারণ আলিপুরদুয়ারের নিচু অংশের লোকজনকে বিভিন্ন স্কুলে নিয়ে আসা হয়েছে উদ্ধার করে।
দুদিন আগেও যেসব অঞ্চল সবুজে ভরে ছিল আর এখন সেইসব অঞ্চল যেন এক একটি নদী। বৃষ্টি অনবরত হয়ে চলেছে। বিকেলের দিকে খবর জানানো হলো এই বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখা হল। পরে তারিখ জানানো হবে। আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আশীষের বাবা মা।
এদিকে বৃষ্টির তেজ দুপুরের পর থেকে বেড়েছে অনেকটাই। এদিক ওদিক থেকে খবর আসতে লাগল আলিপুরদুয়ার শহরের মধ্যেও জল ঢুকে গেছে। অনেক বাড়িতে জল জমে গেছে। বিকেলের দিকে আশীষের বাবা বেরোলেন বাইরে রাস্তায় ছাতা মাথায় দিয়ে। আধঘণ্টার মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। ফিরেই আশীষের মাকে বললেন তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নাও। বন্যার জল আমাদের পাড়ায় ঢুকলো বলে।
সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আশীষ হারিকেনের আলোয় পড়ছিল আর আশীষের মা রান্নার জোগাড়যন্ত্র করছিলেন। এমন সময় ঘরের দরজায় ছলাৎছলাৎ শব্দ শুনতে পেলেন। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলেন ঘরের মধ্যে হু হু করে জল ঢুকছে। আর বন্ধ দরজায় আঘাত লেগে আওয়াজটা আসছে। আশীষের বাবা ওর মাকে নিয়ে জিনিসপত্র কিছু হাতে নিয়ে বাড়ির ছাদে চলে গেলেন সাথে আশীষ। আগে থেকেই আশীষের বাবা ছাদে একটা ত্রিপল টাঙিয়ে রেখেছিলেন। ওরা তিনজন সেই ত্রিপলের নিচে আশ্রয় নিল। খাওয়া-দাওয়া সব মাথায় উঠল।
অনেক রাতের দিকে আশীষের বাবা নিচের দিকে তাকালেন, দেখলেন নিচের তলা পুরো জলে থৈথৈ করছে। ওদের ভয় করতে শুরু করল যদি জল আরো বাড়ে ওদের ছাদেও জল চলে আসবে। ওরা সাথে করে কেরোসিন তেলের ডিবেটা সাথে নিয়ে এসেছিল। তাই হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে রেখেছিল।
ভোরের দিকে তিনজনেরই চোখটা লেগে গেছিল। এমনি সময়ে একটা হিস্ হিস্ আওয়াজ শুনে ওরা লক্ষ‍্য করল দুটো বিষাক্ত বড় গোখরো সাপ জল বেয়ে ওদের ছাদে উঠে এসেছে। সাপগুলো ত্রিপলের নিচে একটা কোনায় কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে।
জীবন বাঁচাবার অধিকার সবারই আছে। আশীষরা সেদিন বুঝতে পেরেছিল। কি অদ্ভুত সহাবস্থান। দিন কয়েক পর জল নেমে যেতেই কারুর কোনরকম ক্ষতি না করে সাপগুলো চলে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress