Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জিজ্ঞাসা (তৃতীয় ভাগ)

দেখতে দেখতে মায়া জীবনের ১৭টা বসন্ত পাড় করে এসেছে। আজ ওর জন্মদিন ১৮ তে পা দিল মায়া। এই পর্যন্ত তো সব ঠিকঠাকই চলছিল। দাদু দিদার চোখের মনি সে। যেমন দেখতে তেমনি গুনি। দাদু দিদাকে মা বাবা বলেই ডাকে মায়া, এতে মায়া ও তার না বোঝা মা বাবাকে বুঝতে পারে ! মলিনা দেবী আর জগদীশ বাবু তাদের হারানো সন্তানকে ফিরে পায়। কিন্তু ইদানিং জগদীশ বাবুর শরীর বিশেষ একটা ভালো যাচ্ছে না। ওদিকে মায়ার চিন্তা ও ওদের অস্থির করে তুলেছে। সায়ন্তন ও সেই ঘটনার পর আর কোনোদিন ও বাড়িতে আসেনি। ফোনে ফোনেই যোগাযোগ রেখেছে সে মার সাথে।
পরের দিন সকালেই হঠাৎ জগদীশ বাবুর শরীর খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট টা খুব বেড়ে যাওয়ায় তাকে ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। ফ্ল্যাটের কয়েকজন ওদের খুব সাহায্য করে, এমনিতে ও ফ্ল্যাটের সবার সাথে ওদের সম্পর্কটা বেশ সুন্দর। তাই খুব একটা অসুবিধে কিছু হয়নি। মুখার্জি গিন্নির ছেলে বেশ স্বহৃদয় ব্যাক্তি, উনিই এগিয়ে এসে সব করেছেন, মায়াকে ও বেশ স্নেহ করেন উনি। সেদিন বিকেলে ভিজিটিং আওয়ার্স পর সোমনাথ বাবু মায়াকে বলে তুই মাসিমাকে নিয়ে বাড়ি যা, আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে তারপর ফিরবো।
আমি মাকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিচ্ছি! আমি তোমার সাথে থাকি।
না তার দরকার হবে না মাসিমাকে একা ছাড়া ঠিক হবে না, তুই যা।
আচ্ছা বলে চলে গেল মায়া।
হসপিটাল থেকে ফিরে মায়া বলল মা কিছু টিফিন করে দি খাবে? সকালে তো ঠিকমতো কিছু খাওয়া হয়নি।
না ভালো লাগছে না! রাতে একবারে হাল্কা কিছু খেয়ে নেব।
তাহলে এক কাপ চা দেব ?
হ্যাঁ তা দিতে পারিস, মাথাটা ধরেছে খুব।
হঠাৎ দরজায় বেলের আওয়াজ! তুমি বসো মা আমি খুলছি।
কিরে? মায়া তোর মা কোথায়?
ঐ তো ও ঘরে বসা। তুমি যাও! মার খুব মাথা ধরেছে তাই চা বসিয়েছি, তুমি খাবে? মুখার্জি দিদা!!!!
নারে! সমুটা ফিরল ওর জন্য বানালাম সাথে আমি ও একটু খেয়ে এলাম। এখন আর খাব না।
ওওও মামু ফিরে গেছে? দিদা ডাক্তার কি বলল? কিছু বলেছে তোমায়? যাই চা টা দিয়ে আমি গিয়ে কথা বলে আসি।
না না দাঁড়া মা, তোর যেতে হবে না ওই আসছে একটু ফ্রেশ হয়ে।
আচ্ছা, আমি তাহলে চা টা বানিয়ে ফেলি, বলে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল মায়া।
মুখার্জি গিন্নি এবার বলল সায়ন কি আর ফোন করেছিল? কোনো খবর জানো?
না, সে তো খুব একটা যোগাযোগ রাখে না দিদি। আজ প্রায় মাস দুয়েক হল। অতোটুকু দুধের শিশুর উপর রাগ করে সেই যে বাড়ি ছাড়ল!! আজ এই মেয়েটা না থাকলে কি করতাম একা?
থাক সায়নের মা এসব নিয়ে আর কষ্ট পেও না। তবে একবার ওদের জানাও।
জানিয়ে কি করব বলুন তো? সে কি আসবে? এত বছরে যদি ও কখনো যোগাযোগ করেছে কিন্তু ভুলেও কখনো বাবার কথা জানতে চায়নি!!! আমি ও বলিনি উনি না করে দিয়েছিলেন।
চোখের জল যেন বাঁধ মানলো না মিনতি দেবীর।
এর মধ্যে মায়া চা হাতে ঘরে ঢুকে যাওয়ায় মিনতি দেবী যেন নিজেকে একটু সামলে নেবার চেষ্টা করল। তুই একটু বস মা!!! সেই সকাল থেকে ছুটছিস তুই।
তুমি চিন্তা করো না মা আমি ঠিক আছি।
ঠক্ ঠক্, দরজায় আওয়াজ!! দেখ মা সমু এসেছে হয়তো, ও আসবে বলছিল।
মায়া গিয়ে দরজা খুলে দিল। কিরে? মাসিমা কোথায়?
ঐ তো ঐ ঘরে দিদার সাথে বসে কথা বলছে। তুমি যাও। আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।
নারে আর এখন চা খাব না। মা আসার আগে দিয়ে এসেছে। তুই ব্যাস্ত হোস না।
বলে সোমনাথ বাবু ঐ ঘরে গিয়ে ঢুকলো। মাসিমা!
হ্যাঁ বাবা এসো, দিদি বলছিল তুমি আমাকে কি যেন বলবে?
তেমন কিছু না আপনি ভয় পাবেন না। আমি শুধু বলছিলাম আপনি সায়ন্তনকে একবার ফোন করে সব জানান। ওর জানা দরকার।
কেন বাবা? ডাক্তার কি ভয়ের কিছু বলেছেন?
আসলে ঠিক ভয় নয়। বয়স তো হয়েছে, পরে হয়তো বলবে আপনারা ওকে কিছুই জানানি। আপনি এখুনি একটা ফোন করূন।
বেশ কিছুক্ষণ ফোনটা বাজার পর ওপার থেকে উত্তর এলো!! হ্যালো! একটু সায়ন্তনের সাথে কথা বলা যাবে?
হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে বলছেন?
আমি ওর মা! ওর বাবা খুব অসুস্থ হসপিটালে ভর্তি ওকে সেটাই জানানোর ছিল।
ঠিক আছে আমি জানিয়ে দেব।
আচ্ছা!! আপনি কে জানত পারি?
আমি ওর বৌ।
বৌমা? তুমি! বাবু ঘরে নেই? তোমরা কেমন আছো? আমার দাদুভাই কেমন আছে?
ও ছেলেকে নিয়ে একটু বেরিয়েছে। আর আমার ছেলের খবর আপনি কেন নিচ্ছেন মা? ও তো আপনাদের কেউ হয়ই না।
একথা কেন বলছ বৌমা? তোমরাই তো ওকে আমাদের থেকে সরিয়ে রাখলে। ওকে ওর বাপ ঠাকুরদার ভিটে চিন্তেই দিলে না। ওকে ওর ঠাকুমা দাদুকে চিন্তে দিলে না। ওর জন্মের একমাস বাদে বাবু আমাদের ফোন করে জানালো, কতবার আমি নিজে যেতে চাইলাম তোমরা কোনো আগ্রহ দেখালে না। আর এখন বলছ ও আমাদের কেউ না।
থাক মা!! আমি আপনার সাথে কোনো কথা এই নিয়ে বলতে চাই না! আপনার ছেলে ও সেটা চায় না। আপনি ফোন করেছিলেন আমি জানিয়ে দেব সেটা। রাখছি তাহলে একটু কাজ আছে।
হ্যাঁ রাখ।
সবাই চুপ ঘরময় এক নিঃস্তব্ধতা।
আমি এই কারণেই ওদের কিছু জানাতে চাইনা দিদি। এতগুলো বছরে ও ওদের মনোভাব বদলালো না। মানুষটা এই কষ্টে আরো শেষ হয়ে গেল। ছোটো বেলায় বাবু না খাওয়া পর্যন্ত সে ও খেত না। জ্বর হলে নিজে রাত জেগে বসে থেকেছে। সেই ছেলে আজ ১৭ বছরে একবারের জন্য বাবার কথা জানতে চায়নি। বলেই আর নিজেকে সামলাতে রাখতে পারেন নি মিনতি দেবী। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন।
চুপ করো সায়নের মা চুপ করো ,কেঁদো না। ও ঘরে মেয়েটা সব শুনছে। ওর মনের উপর যে চাপ যায় সেটা বোঝ, ও বড় হয়েছে সবই বোঝে! ওর কথাটা ও একটু ভাব। সেই কোন কালে মা বাবাকে হারিয়েছে, বেচারি বুঝলোই না মা বাবা কি? তোমাদের আঁকরেই তো আছে, এখন যদি ও তোমাদের ও ভালো থাকতে না দেখে ও কিরে ভালো থাকবে ?
আপনি চিন্তা করবেন না মাসিমা সায়নকে জানানোর দরকার ছিল আপনি জানিয়েছেন! ও যদি নাও আসে তাতে কিছু আটকাবে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। নিন তো এখন উঠুন সারাদিন অনেক ঝক্কি গেছে আজ একটু তাড়াতাড়ি খাওয়ার খেয়ে শুয়ে পড়ুন। আমারও উঠি। চলো মা।
হ্যাঁ চল। তুমি চিন্তা করো না আমরা তো আছি। মায়া ও মায়া!!….
পাশের ঘর থেকে ছুটে এলো মায়া…. বলো দিদা।
নে মা!! মা কে খেতে দে তুই নিজে ও খা একটু বিশ্রাম নে তোরা।
হ্যাঁ দিদা। মামু সত্যি বলো না বাবা কেমন আছে? তোমারা মামাকে কেন ফোন করলে? আমি জানি মামা আমার জন্যই এ বাড়িতে আসে না।
থাম তুই তাদের ইচ্ছে হয়নি তাই আসেনি এতে তোর কি দোষ? কে তোকে বলেছে এসব।
আমি জানি দিদা, আমাকে ছোটো বেলায় মা বাবা এখানে নিয়ে এসেছিল বলেই মামা, মামি কেউ এখানে আসে না।
এসব নিয়ে তুই একদম ভাববি না। যা এখন নিজেও কিছু খা মাকে ও দে। যা মা।
মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল, পরের দুদিনে ও সায়ন্তনের কোনো ফোন না আসায় হসপিটালে বসেই মলিনা দেবী বললেন দেখলে তো কেন কিছু জানাতে চাইনি আমি?
থাক মাসিমা এখন চলুন মেসোমশাইকে দেখে আসি! আপনি আর মায়া জান, আমি আর মা পরের বার যাবো।
কিগো কেমন আছো আজ? একটু কি ভালো লাগছে?
অনেক চেষ্টার পর জগদীশ বাবু মুখ থেকে শুধু একটাই শব্দ বেরোলো মায়া? ওকে একটু দেখে রেখো!!! চোখের কোনোয় জলে ভরে উঠল জগদীশ বাবুর।
বাবা ও বাবা এই তো আমি!!! দেখ ! তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও বাবা তোমাকে ছাড়া যে ঘরটা বড় ফাঁকা লাগে। চোখের জল বাঁধ মানলো না মায়ার ও।
সমু ও সমু বাবা ডাক্তার কি বলছে? ওনাকে যে আজ আমার একটুও ভালো লাগলো না। অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু কিছুই বলতে পারল না।
আপনারা বাড়ি যান আমি কথা বলেই আসছি ডাক্তারের সাথে।
কিন্তু বাবা মনটা যে বড় কু গাইছে!!! আমি একটু থাকি। বড় অস্থির লাগছে আজ।
মাসিমা আপনার ও বয়স হয়েছে এতো ঝক্কি, শরীর মানবে কেন? আপনি ও যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে মেয়েটার কথা একটু ভাবুন তো। মা তুমি ওনাদের নিয়ে বাড়ি যাও।
তিন চার দিন এভাবেই কাটলো।
সমু?
ও মা হ্যাঁ বলো।
বলছিলাম যে ডাক্তার কি বলছে রে? আমারো তো দেখে ভালো লাগছে না। ওদিকে সায়নটা ও তো এখনো একটা ফোন করল না। মলিনার দিকে তাকানো যায় না। একমাত্র মেয়ে অকালে চলে গেল, ছেলেটা একটা খোঁজ ও নেয় না!! এখন যদি ভালোমন্দ কিছু ঘটে যায় এই সমত্ত মেয়ে নিয়ে কি করবে ও?
সবই তো বুঝলাম মা, কিন্তু আমি এখানে কি করতে পারি বলতো? সায়নের নম্বর নিয়ে ফোন একটা করাই যায় কিন্তু সেটা ও কতটা ভালোভাবে নেবে? সেটাই প্রশ্ন। মেসোমশাই এর শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তার তো কোনো আশাই দিচ্ছে না।
পরের দিন দুপুরে ওরা খেতে বসেছে এমন সময় হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।
মায়া দেখতো কার ফোন? হাসপাতাল থেকে নাকি?
হাঁটুর ব্যাথাটা বড্ড বেড়েছে রে।
তুমি বসো মা!! আমি যাচ্ছি তো। হ্যালো,
আমি সায়ন মা।
একটু ধরুন মাকে দিচ্ছি। মা তোমার ফোন।
মলিনা দেবী বুঝতে পারল ফোনটা সায়নের।
হ্যালো:
হ্যাঁ মা আমি সায়ন বলছি!
বল… কেমন আছিস তোরা?
আমরা ভালোই আছি!! রিতা বলল তুমি ফোন করেছিলে।
হ্যাঁ, কিন্তু সেতো দিন তিন চারেক আগে।
হ্যাঁ আসলে নানান কাজে ও ভুলে গেছিল।
একটা মানুষ হসপিটালে ভর্তি আর সেটা জানাতেই ভুলে গেল? আর মানুষটা অন্য কেউ নয় সায়ন উনি তোর বাবা।
সে কথা থাক!!! এখন কেমন আছে সেটা বল? ডাক্তার কি বলছে? ও হ্যাঁ ভালো কথা কিছু টাকা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমার এ্যাকাউন্ট নম্বরটা একই আছে তো? যদি পরে আরো কিছু লাগে জানিও পাঠিয়ে দেব।
টাকার জন্য তোকে খবরটা আমি দিনি বাবু। তোর টাকার প্রয়োজন আমাদের নেই। তুই একবার আসবি না?
না আসলে আসবো না তা নয়, ছুটি পাওয়াটা একটা সমস্যা দেখছি কি করা যায়! এখুনি কিছু বলতে পারছি না।
ও আচ্ছা, ভালো থাকিস।
হুমমম রাখছি মা।
ভালো লাগলো রে জেনে আমি যে তোর মা সেটা এখনো তোর মনে আছে। রাখি সাবধানে থাকিস।
বিকেলে মলিনা দেবীর পায়ের ব্যাথাটা বেশ বাড়ে যে কারণে সেদিন আর হসপিটালে যাওয়া হয়নি। মায়া গেছিল সোমনাথ বাবুর সাথে! ওরা যখন জগদীশ বাবুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তখন ওনার বেশ বাড়াবাড়ি, ওনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডাক্তার আর নার্স। সোমনাথ বাবুকে দেখে ডঃ বোস জানালেন!! সরি মিস্টার মুখার্জি আর কিছু করা গেল না আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু উনি ওষুধে রেসপন্স করছেন না। এখন শুধু অপেক্ষা ভগবানকে ডাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
কিন্তু ডাক্তার বাবু ওনার সুস্থ হওয়া খুবই দরকার ওনার পরিবারের জন্য ওনার ওয়াইফ ও অসুস্থ নাতনিটা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি!!! কি হবে এদের?
আমি সব বুঝতে পারছি মিস্টার মুখার্জি কিন্তু একটা সীমার পর আমরা ডাক্তাররা ও খুব অসহায় ভগবানকে ডাকা ছাড়া আমাদের ও কিছু করার থাকে না। ওনার বয়সটা ও একটা ম্যাটার।
সব শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মায়া।
থাম পাগলি থাম থাম করছিস কি? তুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস? মাসিমাকে কে দেখবে? ওনার ও তো বয়স হয়েছে। বাবা অসুস্থ জানিনা সুস্থ করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব কিনা? সংসারের হালতো এখন তোকেই ধরতে হবে। যেটাই হবে সেটাকে ফেস করতে হবে। চোখের জল মোছ!! চল।
এদিকে ওদের আসতে দেরী দেখে মলিনা দেবী ও অস্থির হয়ে উঠলেন। সমানে ঘর আর বার করতে লাগলেন।
হঠাৎ দরজায় বেলের আওয়াজে ছুটে গেলেন। দরজা খুলে দেখলেন মায়া দাঁড়িয়ে।
কিরে! এত দেরী ? সোমনাথ আসেনি? তোকে একা পাঠিয়ে দিলে? ও ডাক্তারের সাথে কথা বলে তারপর আসবে? কিরে ওমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে কেন আছিস তুই? কিছু তো বল। কেমন আছে উনি?
তুমি ভিতরে চলো মা!! সব বলছি!! বাবা কালকের থেকে ভালো আছে। মামু আমার সাথেই ফিরেছে ঘরে গেছে। তুমি এতো চিন্তা করো না মা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি যাই হাত মুখ ধুয়ে একটু চা করি। বিকেল থেকে নিঃশ্চই কিছু খাওয়া হয়নি তোমার।
সেদিন মলিনা দেবী প্রায় সারা রাত জাগা দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি সে। মায়া ও জেগে বসে রইলো মার পাশে। সকালের দিকে মলিনা দেবীর চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় দরজার বেলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬টা। কিরে এত সকালে তো নমিতা কাজে আসে না। তাহলে কে এলো? একটু দেখ মা! তাড়াতাড়ি যা।
মায়া গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখলো মুখার্জি গিন্নি আর সোমনাথ বাবু দাঁড়িয়ে। তার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। ধপ করে বসে পড়ল সামনের সোফায়।
ওদিক দিয়ে মলিনা দেবী ডাকতে থাকলেন! কিরে কে এলো? মায়া…. কিরে উত্তর কেন দিচ্ছিস না? বলতে বলতে উঠে এলো। দিদি তুমি সমু ? তোমরা এতো সকালে!!! মায়া !! ও কেন কাঁদছে? কি হয়েছে কেউ কিছু কি বলবে? আমায়?
আপনি শান্ত হোন বসুন এখানে। এত অস্থির হলে কি করে বলবো? আসলে হসপিটাল থেকে ফোন করেছিল ওরা। মেসোমশাই!!! সোমনাথ বাবু যেন আর কিছু বলে উঠতে পারছে না।
কি হলো ওরা ফোনে কি বলল? মায়া কেন কাঁদছে? কি হলো? কেউ কিছু বলবে আমায়?
মলিনা দাদা আর নেই।
এ তুমি কি বলছো দিদি…. না না এটা হতে পারে না। আমার কি হবে? এই মেয়েটার কি হবে। উনি যে সবকিছু ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
যাই হোক বডি আনা হলো হসপিটাল থেকে, সায়ন্তনকে জানানো হলে সে বলল তার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই শেষ কৃত্য যেন করে ফেলা হয়। সব কিছু মিটে গেল ভালোয় ভালোয়।
জগদীশ বাবুর মৃত্যুতে মায়ার জীবনের আরো একটা অধ্যায় যেন শেষ হলো।

Pages: 1 2 3 4 5 6

1 thought on “জিজ্ঞাসা || Pritha Chatterjee”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress