জলে ভেসে একটি রূপার থালা এসে গেছে সোনার শহরে।
নাগরিক, সামরিক নির্বিশেষে রিলিফে নিযুক্ত মানুষ
চতুর্দিকে ভিড় করে দেখছে থালাটা
ভাসছে নৌকার মতো জিন্নাহ অ্যাভিন্যুতে।
যেন নতুন শহরে এসে গ্রামের যুবক দু’চোখে অবাক মেখে
দেখছে শহর, রাজধানী; খুঁজছে গুলিস্তান, শবনম এবং রাজাকে।
সেনাবাহিনীর লোক চতুর্দিকে ভিড় করে আছে,
দু’হাতে রিলিফ নিয়ে আসছে সমাজসেবী,
ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ।
বেয়াদপ এই থালা গ্রাম্য কৌতুক ভেবে হাসছে একাকী,
সূর্যের নিক্ষিপ্ত আলো প্রত্যাখ্যান করছে কেবল।
থালাটা ভাসছে জলে, যেন কোনো স্পীডবোট
গভীর-গভীরতর শহরের অনেক গভীরে যেতে হবে তাকে।
যেন মূর্খ অভিভূত জীবনানন্দের চাষা জানে না নিজের সাধ্য,
শুধু যেতে চায় অভিযোগ সাথে করে গণভোটে নির্বাচিত
নেতার মতন হয়ে ভেসে ভেসে রাজার সভায়।
চারদিক থেকে লোক এসে দেখছে থালাটা,
বাংলাদেশের মতো শান্ত স্থির রূপার থালাটা
কী করে এমন হলো?
তখন ট্রাফিক এসে টোকা দিলো থালাটার গায়,
শব্দ হলো, জলতরঙ্গের মতো মিহি সুর।
বাটাল, হাতুড়ি দিয়ে মনে হলো কারা যেন
হাজার হাজার অশ্বক্ষুর কেটে দিচ্ছে,
রবিবারে রেসকোর্সে দৌড়াবে সবাই।
সীতার মুখের মতো এই থালা কে জানে কে ছিল কার ঘরে?
কে জানে কে ঘরের চৌকাঠে থালাটি সমুখে নিয়ে
বসতো কোথায়? কে জানে কী স্বপ্ন ছিলো, সংসার শৈশব ছিল
আনন্দের সুখ-স্মৃতি মাখা; অথচ সে চিনে নিলো ঢাকা।
আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি তাকে,
এই থালা, যেন উলঙ্গ সুন্দরী নারী
হেঁটে হেঁটে শহরের ফুটপাত ধরে যাচ্ছে কোথাও।
স্বাধীনতা, মানবতা এবং সভ্যতা;
শব্দ ক’টি চোখে নিয়ে থালাটা ভাসছে একা।
আমার রূপার থালা, যে কখনও আসেনি শহরে;
প্লাবন এনেছে তারে সাগরের মতো বড়ো
জলের সংসারে, গেলাসের পাশে।
থালাটা এগিয়ে যাচ্ছে নির্বিকার সম্রাটের দিকে।