Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জয় পরাজয় || Panchkari Dey » Page 3

জয় পরাজয় || Panchkari Dey

দশম পরিচ্ছেদ


আমার যখন জ্ঞান হইল, তখন আমি অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া দেখিলাম, আমি আমার আত্মীয় নীলরতন বাবুর বাড়ীতে আমার নিজের ঘরে শয়ন করিয়া আছি। নীলরতন বাবু আমার বিছানার নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন; আর আমাদের ডাক্তার বাবু আমার বিছানায় বসিয়া আমার নাড়ী দেখিতেছেন। আমার সংজ্ঞা লাভ হইয়াছে দেখিয়া তিনি বলিলেন, “ভয় নাই, অমর বাবু, সপ্তাহ মধ্যে ভাল হইয়া উঠিবেন।”

আমি বলিলাম, “তাহাই করিয়া দিন, আমার অনেক কাজ আছে।”

ডাক্তার বাবু হাসিয়া বলিলেন, “এখন ও সব ভাবিবেন না, বেশি কথা কহিবেন না, বিশ্রাম করুন। আমি চলিলাম।”

সপ্তাহ মধ্যে আমি সুস্থ হইলাম না। সম্পূর্ণরূপে ভাল হইয়া উঠিতে আমার প্রায় পনের দিন লাগিল। এই পনের দিন আমি কেবল ডাকাতির বিষয় ভাবিলাম; তবে মিথ্যাকথা বলিব না, এই ডাকাতির বিষয় ভাবিতে ভাবিতে কুঞ্জের কথাও ভাবিয়া ফেলিতাম; তাহার সরলতামাখা সুন্দর মুখখানি আমার হৃদয়ে অঙ্কিত হইয়া গিয়াছিল। তাহার বিশাল চক্ষুদ্বয় যেন আমার হৃদয়াকাশে দুইটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় স্নিগ্ধ কিরণ বর্ষণ করিত—আমি তাহাকে ভালবাসিয়াছিলাম।

ইহাতে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই নাই, সে আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছিল। ভাল হইলেই সন্ধান করিয়া তাহার সহিত দেখা করিব—পাষণ্ড লোচনের উপযুক্ত দণ্ড দিব, মনে মনে এইরূপ একটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিলাম।

সুস্থ হইলে আমি জানিতে পারিলাম যে, সেদিন কুঞ্জ কিয়দ্দূর গিয়া ফিরিয়া চাহিয়াছিল। আমাকে বসিয়া পড়িতে দেখিয়া সে সত্বর আমার নিকটে ছুটিয়া আসিয়াছিল। সে আমাকে অজ্ঞান দেখিয়া হোটেলওয়ালাকে ডাকিয়া আমার নাম ঠিকানা বলিয়া নীলরতন বাবুর বাড়ীতে আমাকে পাঠাইয়া দিতে বলিয়াছিল। তাহাই চক্রবর্ত্তী সেই নীলরতন বাবুকে সংবাদ দেয়। নীলরতন বাবু তৎক্ষণাৎ হোটেলে আসিয়া আমাকে পাল্কী করিয়া বাড়ী লইয়া যান্।

চক্রবর্ত্তী মধ্যে মধ্যে আমার সংবাদ লইতে আসে। তাহার হোটেল বাসকালে আমি আহত হইয়াছিলাম বলিয়া, সে আমার উপর বিশেষ সহানুভূতি প্রকাশ করিত। সকলকেই বলিত, “এ-ও সেই বেদে বেটাদের কাজ—বেটারা যত অনিষ্টের মূল—তবে সেদিন সেই বেদের মেয়েটা আমাকে ডেকে না দিলে অমরবাবুর দেহত্যাগ হইত।”

আমি একটু ভাল হইলে যখন একদিন চক্রবর্ত্তী আসিল তখন আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “চক্রবর্ত্তী মহাশয়, সেই কাঁইয়াটার চেহারা কেমন বলিতে পারেন।”

চক্রবর্ত্তী তাহার যেরূপ রূপ বর্ণন করিল, তাহাতে তাহাকে চিনিবার কোন উপায় নাই। চক্রবর্ত্তীর বর্ণনা মাড়োয়ারী বেনিয়া মাত্রেরই উপরে প্রয়োগ করা যায়। আমি তাহাতে সন্তুষ্ট হইতে পারিলাম না দেখিয়া সে বলিল, “তার বাঁ দিক্কার চোখের উপরে একটা কাটা দাগ আছে।”

আমি সোৎসাহে বলিয়া উঠিলাম, “হাঁ, এখন কতক সন্ধান হইতে পারে।”

তাহার পর আমি যেদিন ভাল হইয়া উঠিলাম, সেইদিনই আবার ডাকাতির সন্ধান আরম্ভ করিলাম। তবে ইহাও বলি, কুঞ্জের সন্ধান করিতে লাগিলাম; শুনিলাম, তাহারা কলিকাতার দিকে গিয়াছে—বোধ হয়, এতদিনে নাগাদ হুগলীতে পৌঁছিয়াছে; তাহা হইলে তাহারা কলিকাতার দিকে গিয়াছে। কলিকাতায় গেলে কুঞ্জের সঙ্গে দেখা হইতে পারে। ফতে আলি দারোগাও কলিকাতায় ফিরিয়া গিয়াছেন। তাঁহার সঙ্গে দেখা করা আমার একান্ত প্রয়োজন; আমি যাহা কিছু জানিতে পারিয়াছি, তাহা অনতিবিলম্বে তাহাকে বলা আবশ্যক; তাহাতে তাহারও অনুসন্ধানের সুবিধা হইবে ডাকাতও শীঘ্র ধরা পড়িবে। এই সকল ভাবিয়া আমি কলিকাতা যাওয়া স্থির করিলাম। পরদিনই কলিকাতা রওনা হইলাম।

একাদশ পরিচ্ছেদ


কলিকাতায় অমূল্য বাবু বলিয়া আমার একজন বিশেষ বন্ধু ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী লোক, টাকা- পয়সা যথেষ্ট ছিল। আমি তাঁহার বাড়ীতে বাস করিব স্থির করিয়াই রওনা হইলাম।

রওনা হইবার পূর্ব্বেই আমি ফতে আলি দারোগাকে যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, এবং যাহা যাহা আমি জানিতে পারিয়াছিলাম, সমস্ত লিখিয়া তাঁহাকে এক পত্র লিখিয়াছিলাম। আমি যে কলিকাতায় যাইতেছি, তাহাও জানাইয়াছিলাম।

আমি কলিকাতায় আসিয়া অমূল্য বাবুর বাড়ীতে উঠিলাম। তিনি বহুদিন পরে পুরাতন বন্ধু পাইয়া বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করিলেন, যত্ন অভ্যর্থনার কোন ত্রুটি হইল না।

আহারাদির পরই আমি ফতে আলি দারোগার সহিত দেখা করিতে চলিলাম। তিনি আমাকে অতি সমাদরে বসাইলেন; তৎপরে তথা হইতে অন্যান্য সকলকে বিদায় করিয়া দিয়া বলিলেন, “অমর বাবু, তুমি অনেক ভুগিয়াছ—বিশেষতঃ এই ব্যাপারে।”

আমি হাসিয়া বলিলাম, “যদি মাথায় লাঠী পড়ার বিষয় বলেন, তবে প্রাণে বাঁচিয়া গিয়াছি, এইমাত্র। যাহা হউক, আমি যে অনেকখানি সন্ধান পাইয়াছি, এ কথা আপনাকে স্বীকার করিতে হইবে।”

“দু’ হাজারবার স্বীকার করি। এ মামলার তদারকে যে তোমার সাহায্য পাইয়াছি, ইহাতে আমি বিশেষ খুসী হইয়াছি। যাহা হউক, যে লাঠী চালাইয়াছিল, আমি তাহাকে পাইয়াছি।”

তাঁহার এই কথায় আমি আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলাম, কোন কথা বলিলাম না; কিন্তু তিনি পরে যাহা বলিলেন, তাহাতে স্পষ্ট বুঝিলাম, তিনি নিজে মস্ত ভুল করিয়াছেন।

তিনি বলিলেন, “যখন তোমার পত্র পাইলাম, আর কাঁইয়ার কথা জানিলাম, তখনই বুঝিলাম কে লাঠী চালাইয়াছিল।”

“আপনি কাহাকে সন্দেহ করেন?”

“এ কথা কি তোমার মত বুদ্ধিমানের জিজ্ঞাসা করা উচিত? সেই কাঁইয়া—কাঁইয়া—ভিকরাজ— কাঁইয়া ফেরিওয়ালা।”

“তবে আপনি বলেন, সেই কাঁইয়াই আমার মাথায় লাঠী মারিয়াছিল?”

“সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ আছে—সে প্রথমে মাটী খুড়িয়া গহনার বাক্স বাহির করিয়া জহরতগুলা লইয়া যায়; তাহার পর সোনাগুলা লইবার জন্য দ্বিতীয়বার আসে, তোমাকে গাছতলায় দেখিতে পায়, তাহার পর যাহা হইয়াছিল, তুমি তাহা বেশ জান।”

এই বলিয়া ফতে আলি খুব হাসিতে লাগিলেন। যদি কুঞ্জের নিকটে না শুনিতাম যে, লোচন আমাকে আঘাত করিয়াছিল, তাহা হইলে হয় ত আমি ফতে আলির কথা বিশ্বাস করিতাম; কিন্তু সকল কথা একেবারে এই পণ্ডিত দারোগাকে বলা উচিত নহে মনে করিয়া আমি কেবলমাত্র বলিলাম, “সম্ভব।”

ফতে আলি বলিলেন, “এই ভিকরাজ সব করিতে পারে।”

“আপনি তাহাকে পাইয়াছেন?”

“হাঁ, তোমার চিঠীতে তাহার চেহারার বর্ণনা ছিল, তাহাতেই তাহাকে সন্ধান করিয়া বাহির করিতে পারিয়াছি, বাঁ ভ্রূর উপরকার দাগেই বেটা ধরা পড়িয়াছে।”

“এ কোথায় থাকে?”

“বাঁশতলার গলিতে, রোকড়ের একটা দোকান আছে; তবে ভিতরে ভিতরে চোরাই মাল কেনা আর বেচাই ব্যবসা।”

“তাহা হইলে সে চোর-ডাকাতের একজন মহাজন।”

“হাঁ, অনেকদিন হইতে আমাদের নজর ইহার উপরে আছে, তবে প্রমাণ অভাবে কিছুই করিতে পারি নাই।”

“তাহাকে গ্রেপ্তার করিয়াছেন?”

“না, এখনও করি নাই। এখনও তাহার বিরুদ্ধে বেশি কোন প্রমাণ নাই; বিশেষতঃ সে যদি ধরা পড়ে, তাহা হইলে দলের লোক সাবধান হইয়া পলাইবে—তাহাদের কাহাকেও আর ধরিতে পারিব না।”

“এ কথা আপনি ঠিক বলিয়াছেন। তবে তাহার সঙ্গে আমি একবার দেখা করিতে চাই। দেখা করিলে সে হয় ত কোন কথা বলিয়া ফেলিতে পারে। আর আমরাও এমন কোন প্রমাণ পাইতে পারি, যাহাতে তাহাকে ধরিতে আর কোন আপত্তি থাকিবে না।”

“বেশ কথা, আজ সন্ধ্যার পর দেখা করিব; কিন্তু অমর বাবু, আমি খুব খুসী হইয়াছি।”

“কি বিষয়ে?”

“ঘটীর বিষয়ে তোমার খুব বাহাদুরী আছে।”

আমি হাসিয়া বলিলাম, “ইহাতে বড় বেশি বাহাদুরী নাই, কতকটা অনুমানের উপর নির্ভর করিয়াছিলাম।”

দারোগা সাহেব উঠিয়া সানন্দে আমার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, “না হে বাপু না—এই ঘটীর ব্যাপার অন্যান্য ডাকাতিতে আছে কি না, দেখিবার জন্য আমি এক লোক পাঠাইয়াছিলাম—সে গিয়া যেখানে যেখানে ডাকাতি হইয়াছিল, তাহার নিকটস্থ সরাইখানায় ঘটী অনুসন্ধান করিয়া ঘটীর নীচে লেখা দেখিয়াছে। এখন স্পষ্ট বোঝা যাইতেছে, রাত্রে ডাকাতি করিয়া ডাকাত কাছে কোনখানে মাল পুতিয়া রাখিত; পরে ভদ্রলোক সাজিয়া নিকটস্থ সরাইখানায় ঘটীর নীচে সঙ্কেতে মাল যেখানে পুতিয়াছে, তাহা লিখিয়া যাইত; পরে গুণধর ভিকরাজ কাঁইয়া ফেরিওয়ালা সাজিয়া সেই সরাইখানায় যাইত, আর ঘটীর নীচে হইতে সঙ্কেত পড়িয়া যথাসময়ে মাল তুলিয়া লইয়া কলিকাতায় ফিরিত— বেটাদের বুদ্ধি আছে, এ কথা স্বীকার করি। এও স্বীকার করি, তোমারও বুদ্ধি আছে—পুলিসে চাকরী লও না কেন—উন্নতি করিতে পারিবে; যাহাতে উন্নতি হয়, সে বিষয়ে আমি খুব দৃষ্টি রাখিব।”

এইরূপ সুদীর্ঘ বক্তৃতার পর “আজ সন্ধ্যার সময়,” বলিয়া ফতে আলি দারোগা চলিয়া গেলেন; আমিও বাসার দিকে চলিলাম।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ


আমার কাছে সকল কথা শুনিয়া অমূল্য বলিল, “আমিও তোমার সঙ্গে যাইব—মজা কি হয়, দেখিতে চাই।”

আমি বলিলাম, “ফতে আলি কি বলিবে, বলিতে পারি না; বোধহয়, কিছু আপত্তি করিবে না।”

“আপত্তি করে, চলিয়া আসিব।”

“তবে ঠিক হইয়া থাকিয়ো, সন্ধ্যার সময়ে যাইব।”

“ঠিক আর কি হইব, তবে কেবল একবার দেখিয়া লইতে হইবে, রিভল্বারটা ঠিক আছে কি না।”

“রিভলবার! রিভার কেন হে?”

“রাত্রে বদমাইসের আড্ডায় যাইতে হইবে—সাবধানে মার নাই।”

আমি হাসিয়া বলিলাম, “পুলিসের দারোগা সঙ্গে থাকিবে।”

অমূল্য গম্ভীরভাবে বলিল, “পুলিসের দারোগাকে যে রেহাই দিবে, তাহা তোমাকে কে বলিল?” আমি আর কোন কথা কহিলাম না। সন্ধ্যার পরে আমরা দুইজনে ফতে আলি দারোগার বাড়ীর দিকে চলিলাম।

বাঁশতলার গলিতে পৌঁছিতে প্রায় রাত্রি আট্‌টা বাজিল। সৌভাগ্যের বিষয়, ফতে আলি অমূল্যকে সঙ্গে লইতে কোন আপত্তি করিলেন না। হাসিয়া বলিলেন, “বাবুর একটু পুলিসের কাজ দেখিতে ইচ্ছা হইয়াছে—ভাল—ভাল।”

আমরা একটা ছোট দোকান ঘরে প্রবেশ করিলাম। সেখানে একটা হিন্দুস্থানী বালক বসিয়াছিল, সে আমাদিগকে দেখিয়া উঠিয়া বাড়ীর ভিতরে পলাইবার চেষ্টা করিল। কিন্তু ফতে আলি ছুটিয়া গিয়া দুই হাতে তাহার গলাটা টিপিয়া ধরিলেন; বলিলেন, “ভিকরাজ কোথায়?”

বালক রুদ্ধপ্রায় কন্ঠে বলিল, “বলছি—সে—সে—গলা ছেড়ে দাও—দম বন্ধ হ’য়ে গেল যে!”

“বল্ বেটা,” বলিয়া ফতে আলি তাহার গলা ছাড়িয়া দিলেন।

সে বলিল, “কর্তা এখন ভিতরের ঘরে একজনের সঙ্গে কথা কহিতেছেন।”

দারোগা নিঃশব্দে গিয়া ভিতর দিকের দরজাটা একটু ঠেলিয়া দেখিলেন; তৎপরে ফিরিয়া মৃদুস্বরে বলিলেন, “এক বেটা বেদে; এখন গিয়াছে, এস।”

বেদের নাম শুনিয়া আমার লোচনের কথা মনে পড়িল; কিন্তু আমি কিছু বলিবার পূর্ব্বেই ফতে আলি আমায় বলিলেন, “এস।” আমরা দুইজনে তাঁহার সঙ্গে ভিতরের গৃহে প্রবিষ্ট হইলাম। দেখিলাম, একজন মাড়োয়ারী বসিয়া খাতা-পত্র দেখিতেছে, তাহার বাম ভ্রুর উপরে যথার্থ একটা দাগ আছে। সে সত্বর উঠিয়া দুই হস্ত বাড়াইয়া সসম্মানে অভ্যর্থনা করিয়া আমাদিগকে বলিল, “দারোগা সাহেব, আসুন—আসুন।” তাহার পর আমাদের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “ইহাঁরা আপনার বন্ধু—বসুন, বসুন, বাবু সাহেব।”

আমরা সকলে বসিলাম। তখন ফতে আলি দারোগা বলিলেন, “আমরা তোমাকে সেই ডাকাতির সম্বন্ধে দুই-একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই।”

ভিকরাজ হাসিয়া বলিল, “সে কি দারোগা সাহেব? ডাকাতির আমি কি জানি? আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না—সাহেব। আমি এমন পাগল নই যে, ফাঁসী-কাঠে মাথা দিই।”

আমি বলিলাম, “অনেক সময়ে এ ভয় থাকে না।”

ভিকরাজ মাথা নাড়িয়া বলিল, “না মশায়, মাড়োয়ারীরা এত গোলযোগে যায় না—বেচে-কেনে খায় এইমাত্র। আমি এইখানেই কাজ করি, এখান হইতে এক পাও নড়িনি।”

আমি বলিলাম, “মুর্শিদাবাদের হোটেলে মধ্যে মধ্যে মহাশয়ের যাওয়া আসা আছে?”

“মুর্শিদাবাদ—নাম শুনিয়াছি, কখনও দেখি নাই।”

আমি কি জিজ্ঞাসা করিব, সহসা স্থির করিতে পারিলাম না, শেষে বলিলাম, “আপনি যদি এখান হইতে কোনখানেই যান না, তবে আপনার বেদেদের সঙ্গে পরিচয় হইল কিরূপে?”

ভিকরাজ কহিল, “টাকা ধার দেওয়া কাজে অনেক রকম লোকের সঙ্গে আলাপ হয়—বোধ হইতেছে, যেন আপনিও একদিন আমার কাছে কতকগুলা গহনা বাঁধা দিতে আসিয়াছিলেন।”

ফতে আলি আমার দিকে চাহিলেন। আমি প্রথমে ভিক্রাজের কথায় নিতান্ত অপ্রস্তুত হইয়াছিলাম; কিন্তু শীঘ্রই বেটার বদমাইসী মলব বুঝিয়া বলিলাম, “মহাশয়কে বেশ চিনিয়াছি।”

তখন সে রাগতভাবে বলিল, “আপনি কি আমাকে ডাকাতের দলের লোক বলিতে সাহস করেন?”

আমি অবিচলিভাবে বলিলাম, “হাঁ, খুবই সাহস করি; আমাকেও আজকাল ঘটীর নীচের সঙ্কেত পড়িবার জন্য ঘুরিয়া বেড়াইতে হইতেছে।”

এই কথায় যেন সে কিছু বিচলিত হইল। মুহূর্তের জন্য যেন ভীতির চিহ্ন তাহার মুখে দেখা দিল। সে আরও রাগত হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল “মিথ্যাকথা।”

আমিও উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলাম, “মিথ্যাকথা নয়—বেদের সঙ্গে তোমার বন্দোবস্ত আছে— সেই বেদে একটু আগে তোমার সঙ্গে দেখা করিতে আসিয়াছিল।”

এই সময়ে একটা দ্বার একটু খুলিল; বোধ হয়, আমাদের কথাবার্তা শুনিয়া ভিতরস্থ ব্যক্তি ‘আমরা কে’ দেখিবার জন্য দরজা একটু খুলিল; আমি স্পষ্ট তাহার মুখ দেখিতে পাইলাম—সে লোচন।

ভিকরাজ অতিশয় ক্রুদ্ধস্বরে বলিল, “আপনার সব মিথ্যাকথা, কোন বেদে আমার সঙ্গে দেখা করিতে আসে নাই।”

“বটে, এই যে তেমার ঘরে সে এখনও বর্ত্তমান রহিয়াছে।”

এই বলিয়া আমি লম্ফ দিয়া সেই দ্বারের দিকে ছুটিলাম; কিন্তু সহসা কে আলো নিবাইয়া দিল। কে একজন অন্ধকারে আমাকে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিয়া বাহিরের দিকে ছুটিল—আমিও ছুটিলাম আমার পশ্চাতে অমূল্য ও ফতে আলি ছুটিলেন। কিন্তু আমরা বাহিরে আসিয়া লোচনকে আর দেখিতে পাইলাম না।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ


আমার অবিমৃশ্যকারিতার জন্যই সমস্ত কাজ পণ্ড হইল; আমি ব্যস্ত হইয়া লোচনকে ধরিতে না গেলে, তাহারা কিছুই জানিতে পারিত না; এখন বোধ হয়, ভিকরাজ ও লোচন উভয়েই সরিয়া পড়িবে, ইহাদের দুইজনকে ধরা কষ্টকর হইবে।

যখন আমরা লোচনকে পাইলাম না, তখন ফতে আলি বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “কাজটা মাটী করিলে হে? অত ব্যস্ত হইবার কি দরকার ছিল?”

আমি আমার দোষ স্বীকার করিলাম; বলিলাম, “এখন বুঝিতেছি, কাজটা ভাল হয় নাই।”

“এখন আর কালবিলম্ব না করিয়া এখনই এই মাড়োয়ারী বদমাইসটাকে ধরা যাক্।” আমি ইহাতে আপত্তি করিয়া বলিলাম, “যদি এখন আমরা ইহাকে ধরি, তবে দলের সকলে সাবধান হইয়া সরিয়া পড়িবে। তাহা হইলে লোচনকে বা সেই ঘোড়সোওয়ার ডাকাতকে বা তার দলের অন্য কাহাকেও ধরা যাইবে না।”

“হাঁ, এ কথাও ঠিক বটে—তবে আমার মাথা-মুণ্ডু এখন আমি কি করিব?”

আমি হাসিয়া বলিলাম, “ব্যস্ত হইবেন না, আমরা এই ডাকাতের দলকে নিশ্চয়ই ধরিতে পারিব।”

“আগে হইতেই সাবধান হইয়া গেল।”

“আমরা দিনরাত চুপ্ করিয়া থাকিলে ভাবিবে যে, আমরা ইহাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাই নাই, তাহাই চুপ্ করিয়া আছি—তখন আবার কাজ আরম্ভ করিব।”

“এ পরামর্শ মন্দ নয়—এখন কিছুদিন এ বিষয়ে চুপ করিয়াই থাকা যাক্।”

এই পরামর্শ স্থির করিয়া আমরা বাড়ীর দিকে ফিরিলাম, দারোগাও নিজের বাড়ীর দিকে চলিলেন। সাতদিন আমরা এ বিষয়ে আর কিছুই কারলাম না। কোন কাজ না থাকায় আমি কলিকাতার দ্রষ্টব্য স্থান সকল দেখিয়া বেড়াইতে লাগিলাম।

একদিন সন্ধ্যার সময়ে বাড়ীতে ফিরিয়া আসিলে অমূল্য বলিল, “অমর, ডাকে তোমার একখানা চিঠী এসেছে–তোমার বাক্সের উপর রাখিয়া দিয়াছি।”

পত্র! কে লিখিল? আমি ব্যগ্র হইয়া সত্বর গিয়া পত্রখানি লইয়া খুলিলাম। যাহা পড়িলাম, তাহাতে বিশেষ বিস্মিত হইলাম। পত্রে লেখা আছে;—

“অমর বাবু,

আপনার মাদুলী কে চুরি করিয়াছিল, যদি জানিতে চাহেন, তবে বেলা দুইটার সময়ে তালতলা কানাই বেনের দোকানে যাইবেন।

আপনার একজন হিতাকাঙক্ষী”

আমার গলায় ঔষধশুদ্ধ একটা সোনার মাদুলী একগাছা সোনার হারের সঙ্গে বরাবরই ছিল। মাথায় লাঠী লাগায় যেদিন আমি গাছের নীচে অজ্ঞান হয়ে পড়ি, সেইদিন সেই হার চুরি যায়। আমি নিশ্চিন্ত জানিতাম যে, লোচন আমার মাথায় লাঠী মারিয়া অজ্ঞান করিয়া এ সোনার হার আমার গলা হইতে চুরি করিয়াছিল; সুতরাং আজ এরূপ চিঠী পাইয়া আমি প্রথমতঃ ইহার মর্ম্ম কিছুই বুঝিতে পারিলাম না; তবে সন্দেহ হইল, ইহার ভিতরে কিছু-না-কিছু দূরভিসন্ধি আছে—ডাকাতি ব্যাপারের সঙ্গে নিশ্চয়ই ইহার কোন-না-কোন সম্বন্ধ আছে। এই সকল ভাবিয়া ফতে আলি দারোগার সহিত পরামর্শ করিতে গেলাম।

তাঁহার হাতে পত্রখানি দিয়া বলিলাম, “এখন আপনি কি মনে করেন, দারোগা সাহেব?”

তিনি পত্রখানি পড়িলেন; পড়িয়া উল্টাইয়া পাল্টাইয়া বিশেষরূপে পত্রখানি দেখিতে লাগিলেন; তাহার পর আমার দিকে চাহিয়া গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “অমর বাবু, কে এ পত্র লিখিয়াছে?’

“পত্রে কাহারও নাম নাই।”

“তবু কে লিখিয়াছে, মনে কর?”

“আমি ত এখন কিছুই মনে করিতে পারিতেছি না।”

“এ মাদুলীর কথা তুমি আগে আমায় বল নাই কেন?”

“সামান্য কথা বলিয়া বলি নাই।”

‘কোথায় চুরি গিয়াছিল?”

আমি সমস্ত বলিলাম। শুনিয়া তিনি বলিলেন, “কে চুরি করিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়?”

“আমার বিশ্বাস, সেই লোচন বেদের কাজ।”

“কোন রকমে, কোথায় গলা থেকে ছিঁড়ে পড়ে যেতেও তো পারে।“

“না, আমি যখন সেই গাছতলায় যাই, তখন সেই হার আমার গলায় ছিল। যে আমাকে মারিয়াছিল, সেই লইয়াছিল–সেই বেদে লোচনেরই কাজ।”

“তাই যদি হয়, তবে বুঝিতে হইবে যে, বেদের কোন শত্রু এই পত্র লিখিয়াছে। বেদের প্রাণে অনুতাপ হওয়ায়, সে যে নিজে এই পত্র লিখিয়াছে, তাহা কখনও হইতে পারে না।”

“নিশ্চয়ই—তাহাই। বোধ হয় বখরার সময় কম পাইয়াছে বা অন্য কোন কারণে লোচনের উপর রাগিয়াছে, তাহাই তাহাকে ধরাইয়া দিবার জন্য আমাকে বেনামী চিঠী লিখিয়াছে।”

“তাহা হইলে তোমার বিশ্বাস যে, লোচন কাল সেখানে থাকিবে?”

“খুব সম্ভব, না হইলে সময় লিখিবে কেন? বোধহয় সে-ই, বেনের কাছে মাদুলী বাঁধা দিয়াছে, অথবা মাদুলী তাহার কাছে বেচিতে আসিবে। যাহাই ২উক, আমি কাল দুইটার সময়ে সেই কানাই বেনের দোকানে যাইব।”

ফতে আলি গম্ভীরভাবে বলিলেন, “না, এ কাজের ভার আমার উপর থাকিল। কি হয় সংবাদ দিব, যদি লোচনের নিকট এই মাদুলী পাই, তাহাকে গ্রেপ্তার করিব।”

এ প্রস্তাবে আমি আপত্তি করিতে পারিলাম না। যদিও আমার স্বয়ং যাইবার ইচ্ছা বলবতী ছিল, তবুও আমাকে বাধ্য হইয়া ফতে আলির কথা শুনিতে হইল। তিনি ফিরিয়া আসিয়া কি সন্ধান দেন, তাহা জানিবার জন্য নিতান্ত উৎসুক হইয়া রহিলাম।

চতুৰ্দ্দশ পরিচ্ছেদ


পরদিন বেলা তিনটার সময়ে আমি যথার্থই নিতান্ত উদ্বিগ্ন ও উৎসুক হইয়া উঠিলাম। অমূল্য আমার নিকটেই বসিয়াছিল, অথচ আমি তাহার সহিত কথা কহিতেছিলাম না। আমি নীরবে বসিয়া আছি, দেখিয়া সে সহসা বলিয়া উঠিল, “অমর, চিঠীখানার মলব কিছু বুঝিয়াছিলে?”

আমি তাহার স্বরে চমকিত হয়ে বলিলাম, “কেন, কি বুঝিব?”

‘তোমাকে শেষ করিবার জন্য বেশ জাল পাতিয়াছিল।”

“কি রকম?”

“তুমি যে বলিতেছ, দলের লোকের কেহ লিখিয়াছে, এ সর্বৈব ভুল; বেদেদের মধ্যে বন্ধুত্বটা খুব জমাট—সহজে ভাঙে না।”

“তবে তুমি কি বল?”

“আমি বলি, তোমাকে খুন করিবার জন্য এই বন্দোবস্ত। যেমন তুমি দোকানে যাইবে, অমনি আবার দুই এক ঘা লাঠী।”

“দিনের বেলা—কলিকাতা শহরে?”

“এমন প্রায়ই ঘটে; নিজে যাও নাই, ভালই করিয়াছ।”

“তুমি যাহা ভাবিতেছ, তাহা ঠিক নয়।”

“তবে আমার ভুল হইতে পারে। দেখ, তোমার ফতে আলি দারোগা প্রভুর কি হয়।”

এই বলিয়া অমূল্য কি কাজে বাহির হইয়া গেল। আমি দারোগার জন্য উৎকণ্ঠিত হৃদয়ে বসিয়া রহিলাম।

আমাকে আর অধিকক্ষণ কষ্ট পাইতে হইল না। বেলা সাড়ে চারিটার সময়ে দারোগা সাহেব আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আমি ব্যগ্র হইয়া বলিলাম, “আসুন—আসুন—বসুন। আমি আপনার জন্য বড় ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলাম।”

“হইবারই কথা,” বলিয়া দারোগা বসিলেন।

আমি বলিলাম, “দোকানে কি লোচনকে দেখিতে পাইলেন?”

“ব্যস্ত হইয়ো না, যাহা শুনিবে, তাহাতে চমকিয়া উঠিবে।”

“কি বলুন।”

“আমি কানাই বেনের দোকানে যখন গেলাম, তখনও তিনটা বাজে নাই, বেটা লোক যে ভারী বজ্জাত, তা তার চেহারা দেখিয়াই বুঝিলাম; এমন অনেক চেহারা আমার দেখা আছে।”

“তাহার পর এ লোকটা কি বলে?”

“বাপু, ব্যস্ত হইয়ো না। এ লোক সহজে কোন কথা বলিতে চায় না, তখন বাধ্য হইয়া ফতে আলি দারোগার পরিচয় দিতে হইল। যাহা সকলের হয়, ইহারও তাহাই হইল, পুলিসের নামে অনেক বেটাই জল হয়।”

“তার পর মাদুলী সম্বন্ধে সে কি বলিল?”

‘পনের টাকায় মাদুলী ইহার কাছে বাঁধা আছে—খাতা-পত্র সব দেখাইল।”

“লোচনই কি বাঁধা দিয়াছিল?”

“ঐখানেই তোমার মস্ত ভুল; এই সময়ে তিনটা বাজিল। তিনটার সময়ে আজ মাদুলী খালাস করিয়া লইবার কথা ছিল, কাজেই যে পত্র লিখিয়াছিল, সে এ কথা জানিত। যেমন তিনটা বাজা, অমনই যে মাদুলী বাঁধা দিয়াছিল, সে খালাস করিতে আসিল।”

“কে সে—লোচন নয়”?

“না, হে না—একটি মেয়ে।”

আমি অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া বলিয়া উঠিলাম, “একটি মেয়ে! সে কি! তার নাম কি?”

ইহার উত্তরে দারোগা সাহেব দরজার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “ওগো বাছা, এইদিকে একবার এস।”

একটি বালিকা গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। তাহাকে দেখিয়া আমি সবেগে উঠিয়া দাঁড়াইলাম সে কুঞ্জ।

আমার বাকরোধ হইল, কুঞ্জ নীরবে সলজ্জভাবে অবনতমস্তকে দাঁড়াইয়া রহিল। ফতে আলি শিশ্ দিতে লাগিলেন।

তাঁহার এই ব্যবহারে ক্রোধেই হউক, আর যে কারণেই হইক, আমি অত্যন্ত বিচলিত হইলাম; তখনই কতকটা আত্মসংযম করিলাম; বলিলাম, “কুঞ্জ, এ মাদুলী তুমি কোথায় পাইলে?”

তাহার উত্তর দিবার পূর্ব্বে ফতে আলি বলিল, “সে অনেক কথা, শোন সব—আমি এখনই আসিতেছি, এইখানে একটু কাজ আছে।”

এই বলিয়া দারোগা প্রস্থান করিলেন। আমি কুঞ্জের নিকটস্থ হইয়া বলিলাম, “তুমি যাহা আমার জন্য করিয়াছিলে, তাহা আমি ভুলি নাই— জীবনে কখনও ভুলিব না।”

কুঞ্জের বিশাল চোখ দুটি জলে ভরিয়া গেল; তাহার মুখ লাল হইল। সে অতি মৃদুস্বরে বলিল, “আপনি যে অনুগ্রহ করিয়া আমাকে মনে রাখিয়াছেন, এখন এরূপভাবে কথা কহিতেছেন, ইহাই যথেষ্ট; আমি মনে করি নাই, এখানে আপনার সঙ্গে দেখা হইবে।”

“কি হইয়াছে, আমাকে সমস্ত বল।”

“আপনার মাদুলী আমি চুরি করিয়াছি বলিয়া পুলিসে আমাকে ধরিয়াছে।”

“না—না—তুমি চুরি করিবে, এ কথা কেহ মনেও করে না—এ সেই লোচনের কাজ।”

“আপনি ঠিক বলিয়াছেন, লোচনই মাদুলী লইয়াছিল; কিছুদিন আগে সে আমাকে কানাই বেনের দোকানে সেটা বাঁধা রাখিয়া দশ টাকা আনিতে বলে; আমি জানিতাম না, এ মাদুলী আপনার। আজ আবার সে আমাকে সুদে আসলে টাকার হিসাব দিয়া তিনটার সময়ে মাদুলী খালাস করিয়া আনিতে বলে। আমি সেখানে গেলে এই পুলিসের দারোগা সাহেব আমায় ধরেন।”

আমি ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “তিনি তোমার উপর কোন অত্যাচার করেন নাই ত?”

“না—না—তিনি বড় ভদ্রলোক—তিনি আমার সকল কথা শুনিয়া আমাকে এখানে লইয়া আসিয়াছেন—বোধ হয়, তিনি আমার কথা বিশ্বাস করিয়াছেন।”

“নিশ্চয়, এখন বুঝিতে পারিতেছি, লোচনই তোমাকে চোর বলিয়া ধরাইয়া দিবার জন্য আমাকে বেনামী চিঠী লিখিয়াছিল। আমি দোকানে নিজে না গিয়া দারোগাকে পাঠাইয়াছিলাম।”

“চিঠীর কথা শুনিয়াছি, আমার উপরে তাহার রাগ কেন?”

“তুমি আমায় সাহায্য করিয়াছিলে বলিয়া।”

“এখন—এখন—দারোগা বাবু কোথায়—আমি এখন যেতে পারি?”

“তোমাকে আর আমি বেদেদের দলে যাইতে দিব না—“

এই সময়ে ফতে আলি তথায় আসিয়া বলিলেন, “না, এখনও তোমাকে দিন-কত থাকিতে হইবে। ডাকাতের দলটা আগে ধরা চাই।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *