সকালবেলা ব্রেকফাস্ট টেবিলে
সকালবেলা ব্রেকফাস্ট টেবিলে ভাল করে আলাপ হল লিটল ভাইসরয় হোটেলের মালিক পিয়ের লাফর্গের সঙ্গে। বৃদ্ধটি আজও প্রথম দিকে গোমড়া-মুখো ছিলেন। কিন্তু কাকাবাবু তাঁর সঙ্গে ভাব জমাবার চেষ্টায় অনবরত হোটেলটার প্রশংসা করে যেতে লাগলেন। একসময় বৃদ্ধটি ঝাঁঝের সঙ্গে বলে উঠলেন, ওহে। ইন্ডিয়ান, এখন আর এই হোটেলটা কী দেখছ! আগে যদি দেখতে, তখন বুঝতে এই হোটেলটা কত ভাল ছিল! আমি নিজেই হোটেলটার সর্বনাশ করেছি।
সকালবেলা চারদিক এত সুন্দর দেখাচ্ছে যে, কোথাও ভয়ের চিহ্নমাত্র নেই। রোদ্দুর খুব নরম, সামনের জলাভূমিতে এখন কয়েকটা হরিণ ছাড়া অন্য
কোনও প্ৰাণী নেই। অনেক রকম পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। একটা পাখি কাছের কোনও গাছ থেকে খুব জোরে জোরে পিরুরুং পিরুরুং শব্দে ডাকছে, কিন্তু পাখিটা দেখা যাচ্ছে না।
সন্তুরা বসেছে খোলা জায়গায় টেবিল-চেয়ারে। বাতাসে একটু শীত-শীত ভাব।
কাল রাতে জন্তু-জানোয়ারদের হাঁটা-চলা ও নিশ্বাসের শব্দ শুনে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকলেও একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিল সন্তু। যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন বেশ রোদ উঠে গেছে।
চোখ মেলেই সে পাশের খাটের দিকে তাকিয়ে দেখেছিল, কাকাবাবু সেখানে নেই। তার বুকটা ধক করে উঠেছিল। তক্ষুনি ছুটে বাইরে এসে সে দেখতে পেয়েছিল, খানিক দূরে, তাদের আগেকার তাঁবুর সামনে, বাইরে একটা চেয়ার নিয়ে এসে কাকাবাবু শান্তভাবে বসে আছেন।
সন্তু কাছে যেতেই কাকাবাবু বলেছিলেন, আমার সন্দেহটা খুব একটা মিথ্যে হয়নি রে, সন্তু। কাল রাত্তিরে আমাদের এই তাঁবুতে কয়েকজন অতিথি এসেছিলেন। কাল এক সময়ে বেশ জোর দু পশিলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, তুই টের পাসনি। সেই বৃষ্টির জন্যই অতিথিরা তাঁবুর মধ্যে তাঁদের পায়ের ছাপ রেখে গেছেন। যা, দেখে আয়?
সন্তু সেই তাঁবুর মধ্যে ঢুকে দেখল দুটি বিছানাই লণ্ডভণ্ড। কারা যেন বালিশ, তোশক উলটেপালটে কী খোঁজাখুঁজি করেছে। মেঝেতে দড়ির কার্পেটে দু-তিন রকম জুতোর ছাপ। কাকাবাবুর সুটকেসটা হাট করে খোলা।
সন্তু আবার বেরিয়ে আসতেই কাকাবাবু বললেন, দেখলি তো! তা হলে কাল তাঁবু বদলে ঠিকই করেছিলাম, বল? যাক, এ সম্পর্কে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
ব্রেকফার্স্ট খেতে এসে প্রথমেই ম্যানেজার ফিলিপের সঙ্গে দেখা। সে বলেছিল, গুড মর্নিং স্যার। কাল ঘুমটুম কি হয়েছিল একটুও? নিশ্চয়ই সারা রাত জেগে ছিলেন?
কাকাবাবু বলেছিলেন, আরও একটা অসুবিধে হয়েছিল। কী করে যেন তাঁবুর মধ্যে কয়েকটা মাছি ঢুকে পড়েছিল।
ফিলিপ অবাকভাবে বলেছিল, মাছি! রাত্তিরবেলা মাছি?
কাকাবাবু বলেছিলেন, হ্যাঁ, মাছি! আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই সেট্সি মাছি। নাম শুনেছি তো আগেই। কিন্তু কী রকম দেখতে ঠিক জানি না। ওগুলো সেট্সি মাছি হলে ওদের কামড়ে ঘুম-রোগ ধরত। তাই ভয় পেয়ে আমরা অন্য একটা তাঁবুতে চলে গেলাম। সাঁইত্রিশ নম্বরে। আমাদের মালপত্রগুলো ওখানে সরাবার ব্যবস্থা করে দিও।
ফিলিপ বলেছিল, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। তোমরা তাঁবু বদলে খবু ভাল করেছ। যদি সেট্সি মাছি এসে থাকে, খুবই বিপদের কথা। কিন্তু এখানে তো ওই মাছি নেই। আচ্ছা, আমি ভাল করে চেক করে দেখছি!
তারপর কাকাবাবু এসে বসেছিলেন পিয়ের লাফর্গের টেবিলে।
পিয়ের লাফাৰ্গ ওই কথা বলার পর কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, মিঃ লাফাৰ্গ, আপনার হোটেল যখন ভালই চলছিল, তখন আপনি এটা অন্যের হাতে দিলেন কেন?
বৃদ্ধ লাফাৰ্গ বললেন, বলতে পারো, সেটা আমার হঠকারিতা! অনেক বছর ধরে বেশ ভালভাবে হোটেল চালিয়েছি। তারপর ভাবলুম, বুড়ো হয়েছি, এখন আমার ছেলের হাতে হোটেলের ভার দিয়ে আমি ছুটি নেব। ছেলে বড় হয়েছে। লেখাপড়া শিখেছে, কিন্তু আমার প্রস্তাব শুনেই সে বলল, ওই জঙ্গলে গিয়ে আমি হোটেল চালাব? কক্ষনো না! ছেলে একটা চাকরি নিয়ে চলে গোল আমেরিকা। তাতে আমার রাগ ধরে গেল। আমিও ঠিক করলুম, হোটেল বিক্রি করে দেব!
কাকাবাবু বললেন, আপনার ছেলে যদি না আসতে চায়, তা হলে আর কতদিন আপনি এই হোটেল চালাবেন? বেচে দেওয়াটাই তো ঠিক কাজ হবে।
লাফগ বললেন, আমি বেচে দেবার কথা ঘোষণা করতে না করতেই ওই নিনজানে আর দেশাই নামে দুটো লোক আমার সঙ্গে দেখা করল। তারা হোটেলটি কিনবে, কিন্তু তার আগে তারা ছমাস নিজেরা চালিয়ে দেখবে, হোটেলটা কেমন চলে। তারপর দর ঠিক হবে। আমাকেও সেই প্ৰস্তাবে রাজি হতে হল।
কোন রাজি হলেন?
আমার আর উপায় ছিল না। ওই নিনজানে লোকটার। এখানকার সরকারের কতব্যক্তিদের সঙ্গে জানাশুনো আছে। আর ওই অশোক দেশাইয়ের ক্ষমতা অনেক। এদের কথা না শুনলে এরা এমন একটা কিছু করবে,যাতে আমি আর এই হোটেল বিক্রি করার কোনও খদেরই পাব না। এমনকী যে-কোনও ছুতোয় আমাকে মেরে ফেলতেও পারে।
মেরে ফেলবো?
সেটা আর এমন আশ্চর্য কী কথা! এখন দেখছি, এরা ইচ্ছে করেই হোটেলটা খারাপভাবে চালাচ্ছে। যাতে টুরিস্ট বেশি না আসে। কাল মাঝরাতে উঠে দেখি কী, কোথাও আগুন জ্বলছে না। আমার আমলে এটা ভাবাই যেত না। এই রকম করলে টুরিস্ট আসবে কেন? ছমাস বাদে। ওই নিনজানে আর দেশাই আমাকে বলবে, তোমার হোটেল ভাল চলে না। অতএব দাম কমাও! হয়তো অর্ধেকও দাম দেবে না।
মিঃ লাফাৰ্গ, তুমিও ব্যবসায়ী, ওরাও ব্যবসায়ী, ব্যবসার ক্ষেত্রে এরকম দরাদরি তো চলেই?
এটা দরদরি নয়, স্রেফ জোচুরি। আমি ওদের ফাঁদে পড়ে গেছি।
কিন্তু দুজন টুরিস্ট এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, সে-কথাটা তো ঠিক। তাতে এই জায়গাটা সম্পর্কে বদনাম তো রটাবেই।
শোনো, ওহে ভারতীয়, এবারে আমি জার্মানিতে গিয়েছিলুম ওই ব্যাপারেই খোঁজখবর নিতে। যে দুজন টুরিস্ট অদৃশ্য হয়ে গেছে, তারা জাতে জার্মান, তাদের পরিচয় আমি জানতে গিয়েছিলুম। কী জানলুম ভাবতে পারো? ওই লোক দুটো ছিল ভাড়াটে গুণ্ডা, যাদের বলে মার্সিনারি, টাকার বিনিময়ে যে-কোনও দেশে গিয়ে ওরা যুদ্ধ করে, মানুষ খুন করে।
ম্যানেজার যে বলল, ওদের একজন ছিল গায়ক আর একজন অধ্যাপক?
তা হলে এখানে খাতায় নাম লেখার সময় ওরা মিথ্যে পরিচয় দিয়েছিল। আমি ওদের সম্পর্কে ঠিক খবর নিয়েছি। ওদের সঙ্গে সবসময় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্ৰ থাকত। সুতরাং, ওরা হঠাৎ জন্তু-জানোয়ারের মুখে প্ৰাণ দেবে, তা কি বিশ্বাস করা যায়?
তা হলে ওরা গেল কোথায়? নিজেরাই ইচ্ছে করে কোথাও লুকিয়ে আছে?
এখানে খোলা জায়গায় কোনও মানুষ চব্বিশ ঘণ্টাও বেঁচে থাকতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।
আচ্ছা, মিঃ নিনজানে আর মিঃ দেশাইয়ের অন্য কী কী ব্যবসা আছে, তা তুমি জানো? আমি যতদূর জানি, ওরা আগে কখনও হোটেল চালায়নি।
পিয়ের লাফর্গ হঠাৎ থেমে গিয়ে কাকাবাবুর মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আবার সন্তুকে দেখলেন। তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এতসব কথা আমাকে জিজ্ঞেস করছ, কেন? তুমি কে?
কাকাবাবু হেসে বললেন, আমি একজন টুরিস্ট। আমার ভাইপোকে নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছি। তোমাকে এসব জিজ্ঞেস করেছি, নিছক কৌতূহলে। তুমি এই হোটেলের মালিক, তুমি অনেক কিছু জানবে।
আমি কাগজে-কলমে এখনও এই হোটেলের মালিক হলেও আমার কথা কেউ শুনছে না। এই হোটেলে যা সব কাণ্ডকারখানা চলছে, তা তোমার না। জানাই ভাল, জানলে তুমি বিপদে পড়ে যাবে।
আমার বিপদে পড়া অভ্যোস আছে। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই কিছু না কিছু ঘটে যায়।
টাকা-পয়সার ক্ষতি যা হবে হোক। কিন্তু আমার এত পরিশ্রমে গড়া হোটেলটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেটাই আমি সহ্য করতে পারছি না।
হোটেলটার যদি এরকম বদনাম হয়, তা হলে ভবিষ্যতেও তো আর লোক
আসতে চাইবে না। যারা এখন এই হোটেলটি চালাচ্ছে, তাদেরও তো এই দিকটা চিন্তা করা উচিত। হোটেলের ম্যানেজারটি তো বেশ কাজের লোক মনে হল।
হ্যাঁ, এই নতুন ম্যানেজারটা কাজের লোক তো বটেই। তবে, হোটেল চালানোর চেয়ে অন্য অনেক ব্যাপারে তার উৎসাহ বেশি! তবে, তোমাকে আবার বলছি, তুমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে যেও না।
মাথা থাকলেই মাথা ঘামাতে হয়, এই তো মুশকিল!
তুমি হ্যারি ওটাংগোর নাম শুনেছ? তার ভাগ্যে কী ঘটেছিল জানো?
এবারে কাকাবাবু চমকে উঠলেন। কয়েক মুহূর্ত ওই বুড়ো হোটেল-মালিকের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, হ্যারি ওটাংগো…হ্যাঁ, তার কথা আমি জানি। কারিযুকির কথাও আমি জানি। আমি ওইরকমই কিছু সন্দেহ করেছিলাম। তুমি মনে করিয়ে দিলে, সেজন্য ধন্যবান। অনেক ধন্যবাদ!
বৃদ্ধটি বললেন, আমি তোমাকে সাবধান করছি, এখানকার কোনও ব্যাপারে মাথা গলিও না। তুমি বিদেশি, তুমি কিছুই করতে পারবে না। বেড়াতে এসেছি, বেড়াও, ফিরে যাও!
বৃদ্ধ টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেলেন। কাকাবাবু এক মনে কফিতে চুমুক দিতে লাগলেন।
পাশের টেবিলে আমেরিকান ছেলেমেয়ে দুটি বসেছে। কাল ওরা খুব হাসিখুশি ছিল, আজ সকালে বেশ গভীর। কেউ কোনও কথা বলছে না। ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে নাকি?
সন্তু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, গুড মর্নিং। কাল রাত্তিরে ঘুম হয়েছিল?
মেয়েটি বলল, মর্নিং! হ্যাঁ, না, ঠিক ঘুম হয়নি; অনেকক্ষণ জেগে ছিলাম, তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম…তোমরা কাল রাত্তিরে তাঁবুর মধ্যে একটা মিষ্টি-মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিলে?
সন্তু বলল, মিষ্টি গন্ধ? কই, না তো!
আমেরিকান ছেলেটি বলল, গন্ধটা আমিও পেয়েছি। এ-রকম কোনও জন্তু আছে কি না জিজ্ঞেস করতে হবে, যার গা থেকে মিষ্টি-মিষ্টি গন্ধ বেরোয়। ওই গন্ধটা নাকে আসার পর আমার গা গুলোচ্ছিল, সকালেও বমি-বমি পাচ্ছে।
মেয়েটি বলল, আমার তো কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। চলো, আজই চলে যাই।
ছেলেটি বলল, দ্যাখো, একটু বাদে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আজকের দিনটা অন্তত থাকি।
মেয়েটি টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেই ছেলেটও তার সঙ্গে সঙ্গে ফিরে গেল কাকাবাবু কোটের পকেট থেকে একটা বই বার করে পড়তে লাগলেন মন দিয়ে। দূরে আর-একটা টেবিলে ম্যানেজার ফিলিপের সঙ্গে গুনার ওলেন গল্প করছেন। সন্তুকে তিনি হাতছানি দিয়ে ডাকলেন।
সন্তু উঠে গেল ওদের টেবিলে। ম্যানেজার ফিলিপ একটা চেয়ার টেনে বসতে দিল তাকে।
গুনার ওলেন হাসতে হাসতে বললেন, বুড়ো হোটেল-মালিকের সঙ্গে এতক্ষণ কী কথা হচ্ছিল তোমাদের? আমি তো ওই বুড়োটার কাছে ঘেঁষি না। বড় বেশি কথা বলে।
ফিলিপ বলল, উনি লোক ভাল। তবে ইদানীং মাথায় একটু গোলমাল হয়েছে বোধহয়। হোটেলটা বিক্রি করার ব্যবস্থা করে উনি কিন্তু বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। কদিন বাদে আমাদের সরকার এমনিই এটা দখল করে নিত, তখন উনি একটাও পয়সা পেতেন না।
পিয়ের লাফাৰ্গকে সন্তুর বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাঁর সম্পর্কে এইসব কথা শুনতে সন্তুর ভাল লাগল না।
সে জিজ্ঞেস করল, আজ সকালে বেড়াতে যাওয়া হবে না?
ফিলিপ বলল, আমাদের গাড়িগুলো এয়ারস্ট্রিপে গেছে, আজকের অতিথিদের আনবার জন্য। ওগুলো ফিরলেই তোমাদের পাঠানো হবে। তোমার কাকাবাবুকে বলো, আজ আমি নিজে তোমাদের নিয়ে যাব। যা দেখাব, তা আর কেউ দেখাতে পারবে না। এক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নিও!
গুনার ওলেন জিজ্ঞেস করলেন, ইয়ংম্যান, তোমার কাকাবাবু কী করেন? মানে ওঁর পেশা কী?
কাকাবাবু সবাইকে বলেন যে উনি আগে ছিলেন জিওলজিস্ট, পা ভেঙে যাওয়ার জন্য আগে-আগে রিটায়ার করেছেন। সন্তুও সেই কথাটাই বলল।
গুনার ওলেন একবার ফিলিপের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলেন। সন্তুর মনে হল, এরা দুজন এতক্ষণ কাকাবাবু সম্পর্কেই আলোচনা করছিল। একজন খোঁড়া লোক সব ব্যাপারে এত খোঁজখবর নিচ্ছে দেখে লোকের তো কৌতূহল হবেই।
ওদের সঙ্গে আর কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফিরে এল সন্তু। সামনের জলাভূমিতে এখন অনেক জন্তু এসে গেছে। কালকে ছিল একদল মোষ, আজ আর একটাও মোষ নেই, তার বদলে রয়েছে অনেকগুলো শুয়োর আর বেবুন।
গাড়ির শব্দে বোঝা গেল, এয়ারস্ট্রিপ থেকে আজকের যাত্রীরা এসে গেছে। সন্তু নদীর দিকের পথটার দিকে চেয়ে রইল। মিনিট দশেক বাদে মাসাইগার্ডরা। পাঁচ-ছজন যাত্রীকে নিয়ে এল। তাদের মধ্যে একজনকে কেমন যেন চেনা-চেনা মনে হল। কোথায় যেন দেখেছে, কোথায় যেন দেখেছে! লোকটি একজন লম্বা-মতন ভারতীয়।
লোকটি নিজে থেকেই এগিয়ে এসে কাকাবাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে হাসি-মুখে বলল, কেমন আছেন, মিঃ রায়চৗধুরী? বলেছিলাম না। আবার দেখা হয়ে যেতে পারে!
তক্ষুনি সন্তুর মনে পড়ে গেল, এই লোকটিই প্লেন থেকে নামবার সময় কাকাবাবুর ব্যাগটা হাতে নিয়েছিল। এর নাম পি. আর. লোহিয়া।
কাকাবাবু হাত তুলে নমস্কার জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আবার দেখা হয়ে গেল। আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ।
লোকটি চমকে উঠে বলল, চিঠি? তার মানে? কিসের চিঠি? কাকাবাবু বললেন, আপনি হোটেলে আমার নামে যে এক লাইন চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লোকটি বলল, আমি আপনাকে চিঠি পাঠিয়েছি? কই, না তো! সে চিঠিতে আমার নাম ছিল?
কাকাবাবু হেসে বললেন, না, তা হলে বোধহয় অন্য কেউ পাঠিয়েছে। যাই হোক, আবার আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে খুশি হলাম, মিঃ লোহিয়া! আপনি ক্লান্ত আছেন নিশ্চয়ই, যান, এখন বিশ্রাম নিন!
লোহিয়া বললে, আসবার সময় প্লেনটা অনেকবার ডিগবাজি খেয়েছে, ওয়েদার খারাপ ছিল নাইরোবির দিকে। তারপর এখানে এসে আর নামতে পারে না, এক পাল বুনো মোষ ঘুরে বেড়াচ্ছিল এয়ারস্ট্রিপে।
কাকাবাবু বললেন, কাল ছিল হাতি, আজ মোষ! সিংহ থাকলে নাকি নামাই যায় না!
লোহিয়া একটু দূরে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। ঘুরে তাকাল কাকাবাবুর দিকে। তাকে খুব চিন্তিত মনে হল। আবার ফিরে এসে সে জিজ্ঞেস করল, মিঃ রায়চৌধুরী, আপনাদের এখানে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো?
কাকাবাবু বললেন, না, না, কোনও অসুবিধে নেই। আমি আর সন্তু দিব্যি আছি। এখানে?
লোহিয়া আবার চলে যেতে গিয়েও পারল না। আবার থমকে দাঁড়িয়ে সে হাতছানি দিয়ে বলল, মিঃ রায়চৌধুরী, অনুগ্রহ করে এখানে একটু শুনবেন?
বোঝা গেল, সে কাকাবাবুকে আরও কিছু বলতে চায়, কিন্তু সন্তুর সামনে বলতে অসুবিধে হচ্ছে।
কাকাবাবু উঠে গেলেন তার কাছে। সন্তু অন্য দিকে মুখ ফিরিয়েও কানখাড়া করে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছু শোনা গেল না।
একটু বাদে কাকাবাবু হাসি মুখে ফিরে এসে শুধু বললেন, হুঁঃ!
পি. আর. লোহিয়া চলে গেল অফিস-ঘরের দিকে। একটু পরে ম্যানেজার ফিলিপ এসে বলল, চলো, এবার তোমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
কাকাবাবু বললেন, তুমি ব্যস্ত মানুষ। তুমি নিজে যাবে কেন? যে-কোনও একজন ড্রাইভারকে দিয়ে দিলেই তো হয়।
ফিলিপ বলল, তুমি আমাদের স্পেশাল গেস্ট। আমার মালিকরা খবর পাঠিয়েছে যে, তোমাদের যত্নের যেন কোনও ক্রুটি না হয়। আমার হাতে এখন অন্য কাজ নেই, আমি নিজেই তোমাদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাব।
কাকাবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তা হলে চলো, যাওয়া যাক।
নদী পর্যন্ত জঙ্গলের পথটা আজ ফাঁকা, একটাও জন্তু-জানোয়ার নেই। দুজন মাসাইগার্ড অবশ্য ওদের পৌঁছে দিয়ে গেল নৌকো পর্যন্ত। নৌকোতে উঠে দেখা গেল, খানিকটা দূরে তিনটে হাতি নদীর ধারে দাঁড়িয়ে জল খাচ্ছে, একটা হাতি শুড়ে করে জল ছেটাচ্ছে চারদিকে।
কাকাবাবু ফিলিপকে বললেন, নৌকোটা একটু থামাও, ওদের ভাল করে দেখি!
ফিলিপ অবজ্ঞার সঙ্গে বলল, ও-রকম আরও অনেক দেখতে পাবে। হাতির কি অভাব! এদিকে হাতি খুব বেড়ে গেছে!
এ-পাশে এসে দেখা গেল, গাড়ির চারপাশে এক পাল জেব্রা, তারা গাড়ির গন্ধ শুকছে। তাদের তাড়াতেও হল না, মানুষ দেখেই তারা ল্যাজ তুলে ছুটে পালাল।
চারখানা গাড়ির মধ্যে একটা গাড়ির গায়ে চাপড় মেরে ফিলিপ বলল, এইটাই সবচেয়ে ভাল, তোমরা দুজনে সামনের সিটে বোসো, ভাল দেখতে পাবে।
গাড়িতে স্টার্ট দিয়েই ফিলিপ বেশ জোরে চালাতে শুরু করল। পথ ছেড়ে সোজা মাঠের মধ্যে। এবড়ো-খেবড়ো মাঠ, মাঝে-মাঝে গর্ত, তাতে ফিলিপের ভূক্ষেপ নেই। তার গাড়িটাও খুব শক্তিশালী, গাঁকি-গাঁকি করে ছুটছে।
প্ৰথমে কিছুই দেখা যায় না। ধুধু করছে মাঠ, মনে হয় দিগন্ত পর্যন্ত আর কিছুই নেই। আসলে মাঠটি ঢেউ-খেলানো। একবার একটু উঁচু জায়গাতে উঠতেই দেখা গেল একদিকে পিলপিল করছে জন্তু। কয়েক হাজার তো হবেই। গাড়িটা সেদিকে নিয়ে যেতে বোঝা গেল, সেই জন্তুগুলি অধিকাংশই জেব্রা আর ওয়াইল্ড বিস্ট। তারা মাঝে-মাঝে ঘাস খাচ্ছে আর একটু-একটু করে এগোচ্ছে। সন্তু একসঙ্গে এত গোরু-ছাগলও কোনওদিন দ্যাখেনি।
কাকাবাবু বললেন, সব জন্তুগুলোর মুখই একদিকে. সেটা লক্ষ করেছিস সন্তু?
ফিলিপ বলল, তুমি ঠিক ধরেছ, রায়চৌধুরী। এইসব জন্তুরা আসছে। তানজানিয়ার সারিংগেটি জঙ্গল থেকে। জন্তু-জানোয়াররা তো কোনও দেশের সীমানা মানে না। পাসপোর্টেরও পরোয়া করে না। প্ৰত্যেক বছর এই সময় এই জন্তুগুলো তানজানিয়া থেকে কেনিয়ায় ঢুকে লেক ভিক্টোরিয়ার দিকে যায়। প্ৰায় এক হাজার মাইল।
সন্তু চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, এক হাজার মাইল? সত্যি?
ফিলিপ বলল, হাঁ সত্যি। যাবার পথে কতগুলো যে মরে তার ঠিক নেই। তবুওরা যাবেই।
কেন যায়?
যায় ঘাসের খোঁজে। যখন যেখানে বৃষ্টি হয়, সেখানে ঘাস ভাল হয়। ওরা সেটা জানে। কত কাল ধরে যে ওরা এই একই পথ ধরে যাচ্ছে তা কে জানে?
ওরা গাড়ি দেখে ভয় পায় না?
গাড়িকেও ওরা একটা জন্তু মনে করে নিশ্চয়ই। অনেক গাড়ি দেখে-দেখে ওরা বুঝে গেছে যে, এই শব্দ-করা জন্তুগুলো ওদের কোনও ক্ষতি করবে না। যেমন ওরা হাতি দেখলে ভয় পায় না। কিন্তু সিংহ বা লেপার্ড দেখলে দৌড়বে?
ফিলিপ আবার গাড়িতে স্টার্ট দিতেই সন্তু বলল, এখানে দাঁড়িয়ে আর একটু দেখব।
ফিলিপ বলল, এরকম আরও কত দেখতে পাবে। এদের সংখ্যা লক্ষ-লক্ষ। চলো, আগে গণ্ডার খুঁজে দেখা যাক। সিংহ, হাতি এসবও অনেক দেখতে পাবে, কিন্তু গণ্ডার সহজে দেখা যায় না। গণ্ডার খুব কমে এসেছে।
মাঝে-মাঝে ছোট-ছোট পাহাড় রয়েছে, সেই পাহাড়ের গায়ে-গায়ে জঙ্গল। কোনও জঙ্গলই তেমন ঘন নয়। এইরকম একটা জঙ্গলে দেখা গেল গোটা-পাঁচেক জিরাফ ঘুরছে। জিরাফরা বোধহয় গাড়ির মতন জন্তুকে পছন্দ করে না, গাড়ি দেখেই তারা দৌড়তে শুরু করল, লম্বা-লম্বা পা ফেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল একেবারে।
ফিলিপ বলল, ওরা কিন্তু আমাদের দেখে ভয় পায়নি। জিরাফরা নিরিবিলি থাকতে ভালবাসে। অন্য কোনও জন্তুর সঙ্গে মেশে না। তুমি দেখবে, হরিণ, মোষ, জেব্রা পাশাপাশি ঘুরছে, কিন্তু জিরাফরা এরকম কোনও দলে থাকে না।
একটু দূরে দেখা গেল এক পাল হরিণ। ছোট-বড়, নানারকম। কোনওটার মাথার শিং প্যাঁচানো-প্যাঁচানো, কোনওটার ছাগলের মতন।
কাকাবাবু বললেন, আমরা সবগুলোকেই হরিণ বলি। কিন্তু এদের আলাদা-আলাদা নাম আছে। ওই ছোটগুলো…
কাকাবাবুকে বাধা দিয়ে ফিলিপ বলল, হ্যাঁ, ওই ছোটগুলো বুক বাক, গায়ে সাদা-সাদা দাগ। ওই দিকে দ্যাখো গেজেল, ওরা ভেড়ার থেকে বড় হয় না। ওর চেয়ে বড়গুলো ইমপালা, কী সুন্দর শিং দেখেছ, ওরা লাফাতেও পারে দারুণ জোরে। আর যেগুলোর দেখছি নীলা-নীল রং, ওদের বলে টোপি।
একটা সিগারেট ধরিয়ে ফিলিপ বলল, চারদিকে লক্ষ রাখো, এখানে নিশ্চয়ই কোথাও সিংহ দেখা যাবে। সিংহ ওই ইমপালা হরিণ খেতে খুব ভালবাসে। অবশ্য ওদের মারা খুব শক্ত।
ফিলিপ আস্তে-আস্তে গাড়ি চালাতে লাগল। একটু দূরেই দেখা গেল একটা বড় গাছের ছায়ায় শুয়ে আছে দুটো লেপার্ড। ঠিক যেন দুটো হলদে-কালো রঙের বড় আকারের বেড়াল।
ওদের দেখেই সন্তু বলে উঠল, কী সুন্দর ফিলিপ বলল, হ্যাঁ, সুন্দর বটে, কিন্তু এরকম হিংস্র প্রাণী খুব কমই আছে। এই লেপার্ডের চামড়ার খুব দাম।
গাড়িটা এক জায়গায় থামিয়ে ফিলিপ বলল, দাঁড়াও, এবারে একটা মজা দেখা যাবে। হরিণের পালটা আসুক?
হরিণের পালটা ছিল একটা টিলার ওপারে। একটু পরেই তারা এদিকে চলে এল। সঙ্গে-সঙ্গে লেপার্ড দুটো তাড়া করে গেল তাদের।
ফিলিপও তার গাড়িটা ছোটাল ওদের পেছন-পেছন।
লেপার্ডের তাড়া খেয়ে হরিণগুলো ছুটিল পাঁই-পাঁই করে।
কোনও-কোনওটা তিড়িৎ-তিড়িং করে লাফাতে লাগল। সন্তুর প্রায় দম বন্ধ হয়ে এল, এই বুঝি কোনও হরিণ ধরা পড়ে যায়!
সে চোখ বুঝতে যাচ্ছিল, এমন সময় ফিলিপ হো-হো করে হেসে উঠল। কাকাবাবুও হাসলেন। সন্তু দেখল যে, লেপার্ড দুটো দৌড় থামিয়ে এক জায়গায় ধপাস করে শুয়ে পড়ে জিভ বের করে হাঁফাচ্ছে।
হরিণের পালটাও খানিকটা দূরে থেমে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে লেপার্ড দুটোকে।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কী হল?
ফিলিপ বলল, এই লেপার্ডগুলো সাঙ্ঘাতিক জোরে দৌড়ীয়, কিন্তু ওদের দাম বেশি নেই, খানিকটা গিয়েই হাফিয়ে যায়। হরিণরা তা জানে। হরিণদের দম বেশি, তাই ওরা খানিক দূরে দাঁড়িয়ে লেপার্ড দুটোকে লোভ দেখাচ্ছে।
সন্তু বলল, ঠিক যেন একটা খেলা চলছে।
কাকাবাবু বললেন, আসলে কিন্তু খেলা নয়। একসময় একটা না একটা হরিণ মারা পড়বেই। লেপার্ড দুটো তো আর উপোস করে থাকবে না। কিন্তু সেই দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। চলো, অন্য দিকে যাই।
এরপর হাতির দঙ্গল, উটপাখি, নেকড়ে, হায়না, দু জায়গায় দুটো সিংহ পরিবার, এই সবই দেখা হল, কিন্তু গণ্ডার আর চোখে পড়ে না। অথচ ফিলিপ জেদ ধরেছে, গণ্ডার সে দেখাবেই। প্রায় দু ঘণ্টা ধরে সে গাড়ি চালাচ্ছে, হোটেল থেকে চলে এসেছে বহু দূরে।
কাকাবাবু এক সময় বললেন, থাক, আজ আর গণ্ডার খোঁজার দরকার নেই।
ফিলিপ বলল, দেখি না। আর-একটু দেখি। পাওয়া যাবে ঠিকই।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, এখন পর্যন্ত মাসাইদের গ্রাম তো একটাও দেখলাম না।
ফিলিপ বলল, আমাদের হোটেল থেকে মাইল দু-একের মধ্যেই একটা আছে। ওরা অবশ্য অনেকটা সভ্য হয়ে গেছে। আর অন্য মাসাইরা তো এখনও প্রায় যাযাবর। এক জায়গায় কিছুদিন ঘর বেঁধে থাকে, তারপর আবার অন্য কোথাও চলে যায়।
মাসাইরা তো যোদ্ধার জাত। ওদের সঙ্গে কখনও তোমাদের ঝগড়া-টগড়া হয়নি? ওদের এলাকার মধ্যেই তো তোমরা হোটেল খুলছ।
না, ঝগড়া হবে কেন? আমাদের হোটেলেই তো কয়েকজন মাসাই-ছেলে কাজ করে, দ্যাখোনি?
হ্যাঁ, দেখেছি। কিন্তু ওদের সঙ্গে তো কথা বলাই যায় না। ওরা ইংরিজি জানে না একেবারে।
ইংরিজি জানলেও হোটেলের গেস্টদের সঙ্গে ওদের বেশি কথা বলা নিষেধ। তুমি ওদের কাছে কী জানতে চাও?
আগে মাসাইরা ইচ্ছেমতন জন্তু-জানোয়ার মারত। ওদের ছেলেরা একটা সিংহ কিংবা হাতি মারতে না পারলে বিয়ে করতেই পারত না। এখন সরকার থেকে ওদের শিকার করা নিষেধ করে দিয়েছে। সেটা ওরা কতটা মেনে নিয়েছে?
কিচ্ছু মানেনি। ওরা এখনও কত জন্তু-জানোয়ার মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছে!
ওরা মারে, আর সেইসব জন্তু-জানোয়ারের চামড়া কারা বিক্রি করে?
রায়চৌধুরী, তুমি কি এইসব নিয়ে গবেষণা করার জন্যই ইন্ডিয়া থেকে এসেছ নাকি?
না, না, না, নিছক কৌতূহল।
সব ব্যাপারে সকলকে বেশি কৌতূহল দেখাতে নেই, তা জানো না?
ওইটাই তো আমার রোগ। আমার বড় বেশি কৌতূহল।
তুমি আমাদের বুড়ো হোটেল-মালিকের কাছে হ্যারি ওটাংগো বিষয়ে কী বলছিলে?
তুমি তা শুনলে কী করে? আমরা তো খুব আস্তে-আস্তে কথা বলছিলুম।
একজন বেয়ারা তোমাদের কফি দিতে এসেছিল। তোমাদের ধারণা সে ইংরিজি জানে না! সে আমাকে সব বলে দিয়েছে।
তুমি হ্যারি ওটাংগোকে চিনতে? তার নাম উচ্চারণ করা অপরাধ নাকি?
তুমি বিদেশি, আমাদের ব্যাপারে নাক গলানো তোমার পক্ষে নিশ্চয়ই অপরাধ!
শোনো, ফিলিপ, তোমার দেশের ব্যাপারে আমি একটুও নাক গলাইনি, ততবড় লম্বা নকও আমার নেই। আমি মাথা ঘামিয়েছি। আমার এক বন্ধু সম্পর্কে। হ্যারি ওটাংগো আমার বন্ধু ছিলেন। কোনও বন্ধুর বেলায় স্বদেশি-বিদেশির প্রশ্ন ওঠে না। আমার একটা মাথা যখন আছে, তখন তা আমি মাঝে-মাঝে ঘামাবাই।
তা হলে তোমার মাথাটা যাতে বেশিক্ষণ না থাকে, সেই ব্যবস্থা করা দরকার।
ফিলিপ ঘচ্ করে ব্রেক কষে পকেট থেকে একটা রিভলভার বার করে সন্তুর কানে ঠেকাল। তারপর হুকুমের সুরে বলল, তোমার পকেটে কী কী আছে বার করো। কোনওরকম চালাকি করবার চেষ্টা করলে এই ছেলেটার মাথার খুলি উড়িয়ে দেব!
সন্তু খুব একটা ভয় পেল না। এরকম অভিজ্ঞতা তার আরও দুএকবার হয়েছে। সে কাকাবাবুর দিকে তাকাল।
কাকাবাবু বললেন, আমার পকেটে কোনও অস্ত্র নেই। বিদেশে আসার সময় আমি কোনও অস্ত্ৰ বহন করি না। কেন পাগলামি করছ, ফিলিপ। ব্যক্তিগতভাবে আমি তোমার তো কোনও ক্ষতি করতে চাই না। হ্যারি ওটাংগোকে যে আগে খুন করে তারপর হায়েনাদের পালের সামনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তা আমি জানি। কয়েক বছর আগে কারিয়ুফি নামে নেতার ভাগ্যেও ওই ব্যাপার ঘটেছিল, তাই না? কিন্তু এতে তোমার তো কোনও হাত নেই। আমি এখানে এসেছি, যো-জামনি টুরিস্ট দুজন উধাও হয়ে গেছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর করতে। যদি সে-রহস্যের সমাধান করতে পারি, তা হলে তোমাদের হোটেলেরই তো উপকার হবে।
আমাদের হোটেলের উপকার করবার জন্য তোমার সাহায্য কে চেয়েছে?
তোমার মালিকরা আমাকে সেইজন্যই পাঠিয়েছে।
আমার মালিকরাই খবর পাঠিয়েছে, তোমরা যাতে মাসাইমারা থেকে আর ফিরে না যাও সেই ব্যবস্থা করতে।
তোমার মালিকরা? মানে দেশাই। আর নিনজানে? ও! সেইজন্যই তুমি কাল রাত্তিরে লোক পাঠিয়েছিলে আমাদের ক্লোরোফর্ম ফিয়ে অজ্ঞান করে বাইরে নিয়ে গিয়ে কোথাও ফেলে দিতে? আমরা তাঁবু পালটে ছিলুম বলে আর খুঁজে পায়নি।
আজকের ব্যবস্থাটা অনেক ভাল। একেবারে পাক্কা! নামো, গাড়ি থেকে নামো!
এখানে গাড়ি থেকে নামব? তুমিই তো বলেছিলে এখানে গাড়ি থেকে নামা বিপজ্জনক। তা ছাড়া নিয়ম নেই।
নামো চটপট নামো, ন্যাকামি কোরো না?
এখানে নামব, তুমি বলছি কী ফিলিপ? হোটেলে ফিরে চলো, আমাদের খিদে পেয়েছে।
খাওয়া আর তোমাদের এ-জীবনে জুটবে না। তোমরা এখন কাদের খাদ্য হবে, তাই-ই চিন্তা করো?
সন্তু এক ঝটিকায় মাথাটা সরিয়ে নিয়ে ফিলিপের হাত চেপে ধরতে গেল। কিন্তু ফিলিপ অত্যন্ত সতর্ক। সে রিভলভারের নলটা কাকাবাবুর দিকে ঘুরিয়ে অন্য হাতে একটা প্ৰচণ্ড থাপ্পড় কষাল সন্তুর গালে। তারপর গর্জন করে বলল, নামো। আমি ঠিক পাঁচ গুনব। তার মধ্যে না নামলে…এক. দুই. তিন…।
কাকাবাবু গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। ফিলিপ তারপর সন্তুকে এক ধাক্কা দিয়ে প্রায় ফেলেই দিল নীচে। নিজেও নেমে এসে কাকাবাবুর সারা গা চাপড়ে দেখল, কোথাও কোনও অস্ত্ৰ লুকনো আছে কি না। সে কিছুই পেল না।
এক পা সরে গিয়ে সে বলল, আমি এখনই তোমাদের দুজনকে গুলি করে খতম করে দিতে পারি। কিন্তু শুধু শুধু আমি গুলি খরচ করি না। তোমাদের এখানে ফেলে রেখে যাব, এখান থেকে হোটেল প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মাইল দূরে। সেখানে তোমরা কিছুতেই পায়ে হেঁটে ফিরে যেতে পারবে না। তার আগেই কোনও জন্তু-জানোয়ারের সামনে পড়ে তোমরা শেষ হয়ে যাবে। আমি ফিরে গিয়ে বলব, তোমরা হিরে খোঁজার লোভে জোর করে এক জায়গায় নেমেছিলে, তারপর…
কাকাবাবু বললেন, জার্মান টুরিস্ট দুজনকেও বুঝি এরকম করেছিলে?
শাট আপ! তোমাদের সঙ্গে আর আমি একটাও কথা বলতে চাই না।
কাকাবাবু এবারে ফিলিপের চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, শোনো ফিলিপ, তুমি সন্তুকে চড় মেরেছ। বিনা দোষে ওর গায়ে যে হাত তোলে তাকে আমি কিছুতেই ক্ষমা করি না। আমার হাতে শাস্তি সে পাবেই।
ফিলিপ অট্টহাসি করে উঠে বলল, তুমি পাগল হয়ে গেছ দেখছি! তুমি কি ভূত হয়ে আমাকে শাস্তি দিতে চাও নাকি? আজকের দিনটাই তোমার জীবনের শেষ দিন।
আমাকে বাদ দিয়ে তুমি এক ফিরে গেলেই পি. আর. লোহিয়া তোমাকে অ্যারেস্ট করবে। তাকে আমি সব বলে এসেছি।
ফিলিপ মুখ ভেংচিয়ে বলল, একজন ইন্ডিয়ান আমার হোটেলে বসে আমাকে অ্যারেস্ট করবে, এত সাহসী! এখানে আমিই রাজা। আমি ফিরে গিয়েই দেখছি সে কেমন লোক?
ফিলিপ এক পা এক পা করে পিছিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।
কাকাবাবু চেঁচিয়ে বললেন, আমার ক্রাচদুটো অন্তত দিয়ে যাও!
গাড়িতে স্টার্ট দেবার পর মুখ বাড়িয়ে ফিলিপ বলল, লেপার্ড তাড়া করলে তুমি ক্ৰাচে ভর দিয়ে বেশি দূর যেতে পারবে না?
গাড়িটা খানিকটা চলতে শুরু করে তারপর ওদের গোল করে ঘিরে দুতিনবার চক্কর দিল। যেন ফিলিপ মজা দেখছে। তারপর হুশ করে ছুটে গেল দিগন্তের দিকে। একটুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল একেবারে।
সন্তু হাঁটু গেড়ে বসে আছে, তবু এখনও যেন সে পুরো ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। লোকটা সত্যি তাদের ফেলে চলে গেল? আফ্রিকার এই হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ভরা প্রান্তরে? কাকাবাবু ওদের কী ক্ষতি করেছেন? কাকাবাবু শুধু ওটাংগো না কাটেংগো কী যেন একটা নাম বলছিলেন। তাতেই ওরা রেগে রেগে উঠছিল। অশোক দেশাইয়ের কাকার নেমন্তন্নতে তারা এখানে বেড়াতে এসেছে, আর সেই অশোক দেশাই তাদের মেরে ফেলতে বলেছে?
কাকাবাবু সন্তুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, বদমাইশটা তোর কানের ওপর অত জোরে মোরল, তোর কানের ক্ষতি হয়নি তো? শুনতে পাচ্ছিস ঠিকঠাক?
সন্তুর একটা কান ভৌভোঁ করছে, তাতে কিছু আসে যায় না। লোকটা তাকে গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেবার সময় তার হাঁটুতে একটু চোট লেগেছে, তাতেও কিছু আসে যায় না। কিন্তু এরপর কী হবে?
সন্তু বিহ্বল চোখে চারদিকে তাকাল। এখানে জঙ্গল প্ৰায় নেই বলতে গেলে, মাঝে-মাঝে একটা-দুটো বড় গাছ, আর সব দিকে ধুধু করছে মাঠ। মাঝে-মাঝে ছোট ছোট টিলা। কোথাও কোনও জন্তু-জানোয়ার দেখা যাচ্ছে না। মাথার ওপর ঝকঝকি করছে সূর্য।
কাকাবাবু সন্তুর হাত ধরে তুললেন। তারপরই একটু ফিকেভাবে হেসে বললেন, তুই ভয় পেয়ে গেলে নাকি রে, সন্তু? দ্যাখ, এর আগে আমরা কতবার কতরকম বিপদের মধ্যে পড়েছি। সব সাঙ্ঘাতিক সাঙ্ঘাতিক মানুষকে শেষ পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আফ্রিকায় এসে জন্তু-জানোয়ারের মুখে প্ৰাণ হারাব? তা হতে পারে না। দ্যাখ না, একটা কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
সন্তু তবু কথা বলছে না দেখে কাকাবাবু তাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, এই সন্তু, কী হল রে তোর? ভয় পেয়ে চুপ করে বসে থাকলে তো বাঁচা আরও শক্ত হয়ে যাবে! চল, হাঁটতে শুরু করি।
সন্তুর চোখে জল এসে গেল। যদিও সে ভয় পায়নি, সে ভাবছে। অন্য কথা। তার দুখানা শক্তসমর্থ পা আছে, সে দরকার হলে ছুটতে পারবে। কিন্তু কাকাবাবুর যে ছোটার ক্ষমতাও নেই।
জামার হাতায় চোখ মুছে সে বলল, কাকাবাবু, তোমার ক্রাচ দুটোও নিয়ে গেল, তুমি হাঁটবে কী করে?
হ্যাঁ, দ্যাখ তো, লোকটা শুধু বদমাইশ নয়, তার ওপর আবার কী কৃপণ। অন্তত ক্ৰাচ দুটো তো দিয়ে যেতে পারত! থাক গে, কী আর করা যাবে। বাচ্চা বয়েসে তুই ককফাইট খেলিসনি? একটা পা মুড়ে আর-একটা পায়ে লাফিয়ে-লাফিয়ে খেলতে হয়! সেই টেকনিকেই আমি হাঁটব।
কাকাবাবুর একটা পায়ে একেবারেই জোর নেই। মাটিতে ভর দিয়ে কোনওমতে দাঁড়াতে পারেন, কিন্তু হাঁটা অসম্ভব। লাফিয়ে-লাফিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে তিনি ডেকে বললেন, সন্তু, আয়, এইভাবেই যেতে হবে।
সন্তু এবারে দৌড়ে এসে বলল, কাকাবাবু, তুমি আমার কাঁধে ভর দিয়ে চলো।
না রে, তাতে দুজনেই হাফিয়ে যাব। আমি লাফিয়ে-লাফিয়েই যাব, খানিকটা বাদে-বাদে দম নেবার জন্য দাঁড়ালেই হবে। তার আগে আমাদের প্ল্যানটা ঠিক করে নিই। একদিকে খুব ভাগ্য ভাল, এখন মাত্র বেলা সাড়ে এগারোটা বাজে। অনেকক্ষণ দিনের আলো পাওয়া যাবে। অনেকেই বলেছেন, এখানকার জানোয়াররা পারতপক্ষে মানুষকে মারে না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব খাদ্য আছে। বড়-বড় জানোয়ার দেখলে আমরা কোনও গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ব। ভয় হচ্ছে সাপ আর বন্য কুকুরের পালকে। দিনের আলোয় সাপের জন্য নজর রাখতে হবে সব সময়। আর বন্য কুকুরের ব্যাপারটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
কাকাবাবু, আমরা কোন দিকে হাঁটব?
যে-কোনও একদিকে একেবারে সোজা। বেঁকলে চলবে না। এখানে সাতটার সময় সন্ধে হয়। খুব আস্তে হাঁটলেও ঘণ্টা সাতেকে আঠারো-কুড়ি মাইল হাঁটা যায়। আর তার মধ্যে কোথাও না কোথাও মানুষের দেখা পাবই। লিট্ল ভাইসরয় ছাড়াও এখানে কিছু দূরে দূরে ছড়ানো আরও তিন-চারটি হোটেল আছে শুনেছি।
কাকাবাবু এমনভাবে কথা বলছেন, যেন সিংহ, লেপার্ড, হাতি, হায়েনা, সাপ, ওয়াইল্ড ডগাস ভরা এই বিশাল প্রান্তর পার হওয়া এমন কিছুই শক্ত ব্যাপার নয়। যেন এটা একটা মজার অ্যাডভেঞ্চার।
কাকাবাবু, ওটাংগো না কাটেংগা কী যেন একটা লোকের নাম বলছিলে ওই ফিলিপকে, সে কে?
হ্যারি ওটাংগো! তুই নাম শুনিসনি? না, তোর জানার কথা নয়। আট বছর আগে উনি একবার ইন্ডিয়াতে গিয়েছিলেন, তখন আমার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল। হ্যারি ওটাংগো আফ্রিকার একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। এক সময় ছিলেন উকিল, তারপর সে পেশা ছেড়ে দিয়ে যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখতেন, সেখানেই ছুটে যেতেন বাধা দিতে। তিনি আবার ছিলেন বিশ্ব বন্যপ্ৰাণী সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি। আফ্রিকায় এমন অনেক রকম জন্তু-জানোয়ার এখনও আছে, যা পৃথিবীর আর অন্য কোনও দেশে নেই। কিন্তু এখানকার কিছু-কিছু লোভী ব্যবসায়ী মাংস ও চামড়া বিক্রি করার জন্য সেইসব পশুদের মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছিল। জানিস তো, হাতির দাঁতের অনেক দাম, একটা হাতি মারলে তার দাঁত দুটো বিক্রি করেই অনেক টাকা পাওয়া যায়। সেই লোভে মারা হচ্ছিল হাতি। যদিও এই সব পশু শিকার করা এখন নিষিদ্ধ।
কাটেংগা বুঝি সে-সব থামাতে গিয়েছিলেন?
কাটেংগা নয়, ওটাংগো। তিনি কেনিয়ায় এসে অনেক খোঁজখবর নিয়ে দেখলেন যে, এখানকার কয়েকজন বড় বড় ব্যবসায়ী আর সরকারি কর্মচারী, দুএকজন মন্ত্রীও আছে, গোপনে গোপনে এই পশু-নিধনের কারবার চালাচ্ছে। ইওরোপ-আমেরিকার কয়েকটি কোম্পানি তাদের কাছ থেকে সেইসব কেনে। ওটাংগো ঘোষণা করলেন, কারা কারা এই বে-আইনি, নৃশংস ব্যবসা চালাচ্ছে, তাদের নাম তিনি প্ৰকাশ করে দেবেন। পরদিন কী হল জানিস? নাইরোবি শহর থেকে মাত্র তেইশ মাইল দূরে হ্যারি ওটাংগোর ছিন্নভিন্ন শরীরটা পাওয়া গেল। একপাল হায়েনা তাঁর অনেকখানি মাংস খেয়ে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজে বেরোল যে, মিঃ ওটাংগো কোনওক্রমে হায়েনার পালের মুখে পড়ে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু অনেকেরই ধারণা, ওঁকে কেউ আগে থেকে খুন করে হায়েনাদের সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে।
ওঁকে কারা খুন করতে পারে, তা তো বোঝাই যায়।
হ্যাঁ, বোঝা যায় তো বটেই। কিন্তু সেই দলটা এত শক্তিশালী যে, কেউ তাদের নাম প্ৰকাশ করতে সাহস করে না। সব জায়গাতেই ওরা টাকা খাইয়ে রাখে।
ওই ম্যানেজার ফিলিপটাও তা হলে ওই দলে?
ও একটা চুনোপুটি। আসল চাই হল অশোক দেশাই। আর নিনজানের মতন লোকেরা। অশোক দেশাইয়ের আছে টাকার জোর। আর নিনজানের আছে সরকারি মহলে প্রতিপত্তি। পুলিশও ওদের ধরতে সাহস করবে না। এখন বুঝতে পারছিস তো, ওরা কেন হোটেলটা কিনতে চাইছে?
কেন?
এরকম জায়গায় একটা হোটেল হাতে থাকলে এখান থেকে অনেক জীবজন্তু মেরে পাঠাবার সুবিধে। হোটেলটা ভাল না চললেও অন্যদিকে ওদের লাভ হবে অনেক। বুড়ো সুইস সাহেবটার ওপর চাপ দিয়ে ওরা হোটেলটার দামও কমিয়ে ফেলবে অনেক।
তা হলে নাইরোবি শহরে থাকতে দুপুরে কে আমাদের টেলিফোনে ভয় দেখাল, আর কে-ই বা ওই চিঠিটা পাঠাল।
একটু দাঁড়া, বড্ড হাঁপিয়ে গেছি রে সন্তু! ওই দ্যাখ…
সামনের দিকে তাকিয়ে সন্তু কেঁপে উঠল।