Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চিড়িয়াখানা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 9

চিড়িয়াখানা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

মুস্কিল মিঞার ভ্যানে চড়িয়া আমরা স্টেশন যাত্ৰা করিলাম। নিশানাথবাবু ত্ৰিয়মাণভাবে আমাদের বিদায় দিলেন। নেপাল গুপ্তর সঙ্গে ওই ব্যাপার ঘটিয়া যাওয়ার পর তিনি যেন কচ্ছপের মত নিজেকে সংহরণ করিয়া লইয়াছিলেন।

ডাক্তার ভুজঙ্গধর আমাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠিয়া বসিলেন‌, বলিলেন,–’চলুন‌, খানিকদূর আপনাদের পৌঁছে দিয়ে আসি।’

গাড়ি ফটকের বাহির হইয়া চলিতে আরম্ভ করিলে ডাক্তার বলিলেন,–‘ব্যোমকেশবাবু, আপনার সব প্রশ্নের জবাব আমি দিয়েছি‌, কিন্তু আমার গোড়ার প্রশ্নের জবাব আপনি দিলেন না।’

ব্যোমকেশ বলিল,–’কোন প্রশ্ন?’

‘মোটর রহস্যের কিনারা হল কি না।’

ব্যোমকেশ বলিল,–’না। কিছুই ধরা-ছোঁয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার কোনও ধারণা আছে না কি?’

‘ধারণা একটা আছে বৈ কি। কিন্তু বলতে সাহস হচ্ছে না। আমার ধারণা যদি ভুল হয়‌, মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হবে।’

‘তবু বলুন না শুনি।’

‘আমার বিশ্বাস এ ওই ন্যাপলা বুড়োর কাজ। ও নিশানাথবাবুকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছে। লোকটা বাইরে যেমন দাম্ভিক‌, ভেতরে তেমনি পেঁচালো।’

‘কিন্তু নিশানাথবাবুকে ভয় দেখিয়ে ওঁর লাভ কি?’

‘তবে বলি শুনুন। নেপালবাবুর ইচ্ছে উনিই গোলাপ কলোনীর হর্তাকর্তা হয়ে বসেন। কিন্তু নিশানাথবাবু তা দেবেন কেন? তাই উনি নিশানাথবাবুর বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধ লাগিয়েছেন‌, যাকে বলে war of nerves. নিশানাথবাবুর একে রক্তের চাপ বেশি‌, তার ওপর যদি স্নায়ুপীড়ায় অকৰ্মণ্য হয়ে পড়েন‌, তখন নেপালবাবুই কত হবেন।’

কিন্তু নিশানাথবাবুর স্ত্রী রয়েছেন‌, ভাইপো রয়েছেন। তাঁরা থাকতে নেপালবাবু কর্তা হবেন কি করে?’

‘অসম্ভব মনে হয় বটে‌, কিন্তু–অসম্ভব নয়।’

‘কেন?’

‘মিসেস সেন নেপালবাবুকে ভারি ভক্তি করেন।’

কথাটা ভুজঙ্গধরবাবু এমন একটু শ্লেষ দিয়া বলিলেন যে‌, ব্যোমকেশ চট্‌ করিয়া বলিল,–’তাই নাকি! ভক্তির কি বিশেষ কোনও কারণ আছে?’

ভুজঙ্গধরবাবু একপেশে হাসি হাসিয়া বলিলেন,–’ব্যোমকেশবাবু্‌, আপনি বুদ্ধিমান লোক‌, আমিও একেবারে নিবোধ নই‌, বেশি কথা বাড়িয়ে লাভ কি? হয়তো আমার ধারণা আগাগোড়াই ভুল। আপনি আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন‌, আমার যা ধারণা আমি বললাম। এর বেশি বলা আমার পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়-আচ্ছা‌, এবার আমি ফিরব। ওরে মুস্কিল‌, তোর পক্ষিীরাজ একবার থামা!’

ব্যোমকেশ বলিল,–’একটা কথা। মুকুলও কি বাপের দলে?’

ডাক্তার একটু ইতস্তত করিয়া বলিলেন,–’তা ঠিক বলতে পারি না। তবে মুকুলেরও স্বার্থ আছে। ‘

গাড়ি থামিয়াছিল‌, ডাক্তার নামিয়া পড়িলেন। মুচকি হাসিয়া বলিলেন,–’আচ্ছা‌, নমস্কার। আবার দেখা হবে নিশ্চয়।’ বলিয়া পিছন ফিরিয়া চলিতে আরম্ভ করিলেন।

আমাদের গাড়ি আবার অগ্রসর হইল। ব্যোমকেশ গুম হইয়া রহিল।

ডাক্তার ভুজঙ্গাধরের আচরণ একটু রহস্যময়। তিনি নেপালীবাবুর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলিলেন‌, কিন্তু মুকুল বা দময়ন্তী দেবী সম্বন্ধে প্রশ্ন এড়াইয়া গেলেন কেন?…কী উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের সঙ্গে এতদূর আসিয়াছিলেন?…তাঁহার থিওরি কি সত্য‌্‌, নেপালবাবু মোটরের টুকরো উপহার দিতেছেন। …সুনয়না তো এখানে নাই। কিম্বা আছে‌, রমেনবাবু চিনিতে পারেন নাই। …মোটরের টুকরো উপহারের সহিত সুনয়নার অজ্ঞাতবাসের কি কোনও সম্বন্ধ আছে?

স্টেশনে পৌঁছিয়া টিকিট কিনিতে গিয়া জানা গেল ট্রেন আগের স্টেশনে আটকাইয়া গিয়াছে‌, কতক্ষণে আসিবে ঠিক নাই। ব্যোমকেশ ফিরিয়া আসিয়া ভ্যানের পা-দানে বসিল‌, নিজে একটি সিগারেট ধরাইল এবং মুস্কিল মিঞাকে একটি সিগারেট দিয়া তাহার সহিত গল্প জুড়িয়া দিল।

‘কদ্দিন হল বিয়া করেছ মিঞা?’

মুস্কিল সিগারেটকে গাঁজার কলিকার মত ধরিয়া তাহতে এক টান দিয়া বলি—কোন্‌ বিয়া?’

‘তুমি কি অনেকগুলি বিয়ে করেছ নাকি?’

‘অনেকগুলি আর কৈ কর্তা। কেবল দুইটি।’

‘তা শেষেরটিকে কবে বিয়ে করলে?’

‘দ্যাড় বছর হৈল।’

‘কোথায় বিয়ে করলে? দ্যাশে?’

‘কলকাত্তায় বিয়া করছি কর্তা। গফুর শেখ চামড়াওয়ালা–কানপুরের লোক‌, কলকাত্তায় জুতার দোকান আছে—তার বিবির বুন হয়।’

‘তবে তো বড় ঘরে বিয়ে করেছ।’

‘হ। কিন্তু মুস্কিল হৈছে‌, উয়ারা সব পচ্চিমা খোট্টা–বাংলা বুঝে না; অনেক কষ্টে নজর জানেরে বাংলায় তালিম দিয়া লইছি।’

‘বেশ বেশ। তা তোমার আগের বৌটি মারা গেছে বুঝি?’

‘মারা আর গেল কৈ? বাঁজা মনিষ্যি ছিল‌, মানুষটা মন্দ ছিল না। কিন্তু নতুন বেঁটারে যখন ঘরে আনলাম‌, কর্তাবাবু কইলেন‌, দুটা বৌ লৈয়া কলোনীতে থাকা চলাব না। কি করা! দিলাম পুরান বৌটারে তালাক দিয়া।’

এই সময় হুড়মুড় শব্দে ট্রেন আসিয়া পড়িল। মুস্কিল মিঞার সহিত রসালাপ অসমাপ্ত রাখিয়া আমরা ট্রেন ধরিলাম।

ট্রেনে উঠিয়া ব্যোমকেশ আর কথা বলিল না‌, অন্যমনস্কভাবে বাহিরের দিকে তাকাইয়া বসিয়া রহিল। কিন্তু রমেনবাবু্‌, গাড়ি যতাই কলিকাতার নিকটবর্তী হইতে লাগিল‌, ততাই উৎফুল্প হইয়া উঠিলেন। আমরা দু’জনে নানা গল্প করিতে করিতে চলিলাম। একবার সুনয়নার কথা উঠিল। তিনি বলিলেন,–’আদালতে হলফ নিয়ে যদি বলতে হয়‌, তবে বলব সুনয়না ওখানে নেই। কিন্তু তবুও মনের খুৎখুতুনি যাচ্ছে না।’

আমি বলিলাম,–’কিন্তু সুনয়না ছদ্মবেশে ওখানে আছে এটাই বা কি করে হয়? রাতদিন মেক-আপ করে থাকা কি সম্ভব?

রমেনবাবু বলিলেন,–’সুনয়না ছদ্মবেশে কলোনীতে আছে একথা আমিও বলছি না। ওখানে স্বাভাবিক বেশেই আছে। কিন্তু সে ছদ্মবেশ ধারণ করে সিনেমা করতে গিয়েছিল‌, আমি তাকে ছদ্মবেশে দেখেছি‌, এটা তো সম্ভব?

এই সময় ব্যোমকেশ বলিল,–’ঝড় আসছে!’

উৎসুকভাবে বাহিরের দিকে তাকাইলাম। কিন্তু কোথায় ঝড়! আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র নাই। সবিস্ময়ে ব্যোমকেশের দিকে ফিরিয়া দেখি সে চোখ বুজিয়া বসিয়া আছে। বলিলাম,–’ঝড়ের স্বপ্ন দেখছি নাকি?’

সে চোখ খুলিয়া বলিল,–’এ ঝড় সে ঝড় নয়—গোলাপ কলোনীতে ঝড় আসছে। অনেক উত্তাপ জমা হয়েছে‌, এবার একটা কিছু ঘটবে।’

‘কি ঘটবে?’

‘তা যদি জানতাম তাহলে তার প্রতিকার করতে পারতাম।’ বলিয়া সে আবার চোখ বুজিল।

শিয়ালদা স্টেশনে যখন পৌঁছিলাম তখন রাস্তার আলো জ্বলিয়াছে। রমেনবাবুর সহিত ছাড়াছাড়ি হইবার পূর্বে ব্যোমকেশ বলিল,–’আপনাকে আর একটু কষ্ট দেব। সুনয়নার দুটো স্টিল-ফটো যোগাড় করতে হবে। একটা কমলমণির ভূমিকায়‌, একটা শ্যামা-ঝি’র।’

রমেনবাবু বলিলেন,–’কালই পাবেন।’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *