Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

এবার কি কর্তব্য বলুন

০৯.

এবার কি কর্তব্য বলুন?

কথাটা বলে বিকাশ সেন প্রত্যাশাপূর্ণ দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল।

কটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।

অপেক্ষা করতে হবে! কেন?

প্রশ্নটা করে বিকাশ সেন কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল।

কার হত্যাকারী এখন তার চতুর্থ শিকারটিকে খতম করার প্ল্যান করছে-কী ভাবে এবার নীল রুমাল হাতে আগন্তুকের আবির্ভাব ঘটবে–

কিন্তু–

ভয় নেই বিকাশ, এবারে অত সহজে তাকে কাজ হাসিল করতে দেওয়া হবে না।

.

সত্যি-সত্যিই দেখা গেল কিরীটী যেন নীল রুমালের দ্বারা হত্যাকাণ্ডগুলির ব্যাপারে একেবারে হাত ধুয়ে বসে আছে। ও যেন ভুলেই গেছে ব্যাপারটা।

দিন দুই পরে আবার সে দুদিনের জন্য ট্রাঙ্ককল পেয়ে দিল্লী থেকে ঘুরে এল।

আরও দিন দুই পরে।

গত সন্ধ্যা থেকেই অসময়ে আকাশে মেঘ জমে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, ফলে শীতটাও যেন হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।

কিরীটী গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে আরাম করে বিছানার ওপর বসে বসেই গরম গরম কফি পান করছিল।

এমন সময় জংলী এসে ঘর ঢুকল, বাবুজী! কি রে? বিকাশবাবু!

কিরীটী আর মুহূর্ত দেরি করে না। সঙ্গে সঙ্গে কফি শেষ করে কম্বলটা গা থেকে ফেলে উঠে দাঁড়াল। পাশে খাটের বাজু থেকে গরম ড্রেসিং গাউনটা টেনে গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা এসে বসবার ঘরে ঢুকল।

কি খবর বিকাশ-সকাল বেলতেই—

যা হবার তা হয়ে গেছে মিস্টার রায়। হতাশার সুরে বলে উঠল বিকাশ সেন।

সত্যি!

হ্যাঁ, নীল রুমাল আবার ফাঁস লাগিয়েছে–

কোথায়?

বালিগঞ্জে বোস অ্যান্ড কোং জুয়েলারি শপের প্রোপ্রাইটার—

কে, শিবানন্দ?

হ্যাঁ, শিবানন্দ বসু। বিকাশ বলে।

আশ্চর্য! ভাবতে পারিনি, সে এত তাড়াতাড়ি আবার নীল রুমাল হাতে নিয়ে আবির্ভূত হবে। এবারে আমার ক্যালকুলেশনটা দেখছি ভুল হয়ে গেল।

ভুল হয়ে গেল।

হ্যাঁ। ভেবেছিলাম, হত্যাকারী এবারে আরও সতর্ক হবে। কিন্তু দেখলাম, হাতের পাঁচ আর সে হাতে রাখতে চায় না—আগেভাগে মিটিয়ে দিয়ে প্রোগ্রামটা তার খতম করতে চায়। তা সংবাদটা পেলে কখন? কার কাছে?

রথীন তালুকদার তো এখানকার থানার ও. সি.-সেই-ই আমাকে ঘণ্টাখানেক আগে জানাতেই সেখানে গিয়ে ব্যাপারটা চাক্ষুষ দেখে সংবাদটা দিতে আমি ছুটে এসেছি আপনার কাছে।

রথীনবাবু কখন জানতে পারলেন?

শেষ রাত্রে।

কি করে জানলেন?

Some unknown person ভোররাত সাড়ে তিনটে নাগাদ তাকে ফোন করে সংবাদটা দেয়–

কি সংবাদটা দিয়েছিল?

Rather interesting! ফোনে তাকে বলে, ও মশাই থানা-অফিসার, ঘুমোচ্ছেন এখনও? আপনার এলাকায় যে নীল রুমাল ফস পরিয়েছে—বোস অ্যান্ড কোং জুয়েলারি শপের প্রোপ্রাইটারকে। বলেই ফোন কনেকশান কেটে দেয়। বুঝতেই পারছেন, এ শহরের সব থানা-অফিসারদের মধ্যে আমাদেরও এ নীল রুমালকে কেন্দ্র করে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল—প্রত্যেকেই যেন আমরা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। তাই ফোনটা পাওয়া মাত্রই রথীন কালবিলম্ব না করে তখুনি ছুটে যায়।

তারপর?

দোকানঘরের কোলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া ছিল না, রথীন দুজন কনেস্টবল নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখল, ঘরের ভেতরে আলো জ্বলছিল–

দারোয়ান-কোন দারোয়ান ছিল না?

না, দোকানে রাত্রে যে দারোয়ানটি পাহারায় থাকত, তার কোন পাত্তাই নেই। পরে অবিশ্যি তাকে মুখ ও হাত-পা-বাঁধা অবস্থায় দোকানের পেছনে একটা ঘরে পড়ে থাকতে দেখা যায়-গোঁ গোঁ করছিল, যাক যা বলছিলাম, দোকানের কোলাপসিবল গেটটায় তালা দেওয়া ছিল না, কেবল টানা ছিল।

রতীনবাবু কি করলেন?

ওই সময় সুব্রত এসে ঘরে ঢুকল।

বিকাশ বলতে থাকে, সে গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকল ভেতরে আলো জ্বলতে দেখে। দোকানের মধ্যে সব আললাগুলো জ্বলছে। তীব্র চোখ-ঝলসানো আলোতেই চোখে পড়ল, কাউন্টারের সামনেই শিবানন্দ বসুর মৃতদেহটা পড়ে আছে। তার গলায় ফাঁস দেওয়া একটি আকাশ-নীল রঙের রুমাল।

রুমালটা দেখেছেন আপনি?

হ্যাঁ, সেই একই ধরনের রুমাল। এবং রুমালের কোণে ইংরাজি সাঙ্কেতিক অক্ষর 4 লেখা এবারে।

মৃতদহ এখন কোথায়?

দোকানেই পড়ে আছে। দোকানে পুলিস-প্রহরা বসানো হয়েছে। রথীন আমার অনেককালের বন্ধু। সে-ই দোকান থেকে আমাকে ফোন করায় তার থানায় আমি ছুটে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই আপনার কাছে ছুটে এসেছি সংবাদটা আপনাকে দিতে।

চল, একবার যাওয়া যাক সেখানে।…একটু অপেক্ষা কর বিকাশ, আমি এখুনি আসছি।

কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

এবং মিনিট কয়েক পরেই বিকাশের জীপেই কিরীটী ও সুব্রতকে নিয়ে বিকাশ রওনা হল।

গাড়িতেই বসে সুব্রত সব শুনল।

.

দোকানের মধ্যে তখনও রথীন ছিলেন।

তিনি নানাভাবে দারোয়ানটাকে প্রশ্ন করছেন তখন, অনেক কষ্টে তার জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। বেচারা কেবলই বলছে, দোহাই হুজুরের, সে কিছু জানে না। রাত সোয়া দুটো কি আড়াইটে নাগাদ তার মালিক এসে তাকে ডাকাডাকি করতেই সে ঘুম থেকে উঠে দোকানের গেট খুলে দেয়।

তারপর কি হল, বল?

আমি দরজা খুলে দিলাম, মালিক দোকানে এসে প্রবেশ করলেন।

তারপর?

তারপর তাজ্জব কি বাৎ! মালিক সহসা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার মাথায় একটা ভারী ডাণ্ডা দিয়ে আঘাত করতেই আমি পড়ে যাই—জ্ঞান হারাই। তারপর আর কিছু জানি না।

কিরীটী বললে, রথীনবাবু, কিছু চুরি বোধ হয় যায়নি?

ঠিক বলতে পারছি না, তবে কোন তালা বা আয়রন সেফের তালা তো ভাঙা দেখছি না।

হুঁ! মৃতদেহটা কোথায়?

ওই যে কাউন্টারের পেছনে।

হঠাৎ ওই সময় কিরীটীর নজরে পড়ে কাউন্টারের নিচে কি যেন একটা পড়ে আছে। ঝুঁকে জিনিসটা তুলে দেখেই চমকে ওঠে। কিন্তু সে কিছু না বলে সবার অলক্ষ্যে সেটা পকেটে রেখে দেয়।

অতঃপর সকলে উঁচু কাউন্টারের পেছনে এগিয়ে গেল।

মৃতদেহটা তখনও উপুড় হয়ে পড়ে আছে। রেশমী রুমালটা কেবল গলা থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে। গায়ে একটা শাল জড়ানো, পরনে ধুতি।

কিরীটী মুহূর্তকাল মৃতদেহটার দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গিয়ে আরও সামান্য একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে মৃতদেহটা উলটে দিতেই মৃতদেহটা চিৎ হয়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে কিরীটীর মুখ দিয়ে একটা বিস্ময়সূচক শব্দ বের হয়ে এল, এ কি!

কি হল? একই সঙ্গে রথীন, সুব্রত ও বিকাশ প্রশ্নটা করে।

না, কিছু না। কিরীটী বললে।

সুব্রত এতক্ষণে চিনতে পারে। কিছুদিন আগে শশধরের মৃত্যুর পরদিন শিবানন্দ বসু পরিচয়ে যে আতঙ্কিত খঞ্জ ভদ্রলোকটি কিরীটীর গৃহে গিয়েছিল এ সে লোক নয়।

সুব্রত বলে, তাই তো! এ কে তাহলে?

রথীনের মুখের দিকে তাকিয়ে কিরীটী শুধাল, আর ইউ সিওর রথীনবাবু, ইনিই শিবানন্দ বসু?

নিশ্চয়ই। দারোয়ান সনাক্ত করেছে, শিবানন্দর ছেলে একটু আগে এসেছিল, সেও তো সনাক্ত করে বলে গেছে, এ তারই বাপ। রথীন বললেন।

তবে, কিরীটী যেন মুহূর্তকাল কি চিন্তা করে। তারপর বলে, রথীনবাবু, এখুনি আমাদের বেরোতে হবে।

কোথায়?

হত্যাকারীকে ধরতে চান তো?

হত্যাকারী। সে কি আর এতক্ষণ ত্রিসীমানায় কোথাও আছে?

ত্রিসীমানায় না থাকলেও মহাশয় ব্যক্তিটি তার নিজস্ব ডেরায় সুস্থ বহাল তবিয়তেই নিশ্চিন্তে বসে বা শুয়ে আছে।

কি বলছেন?

হ্যাঁ, চলুন—আর দেরি নয়। চল বিকাশ।

রথীন জানতেন কিরীটীকে, তার শক্তির কথা জানতেন—ইতিপূর্বে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয়ের কোন সুযোগ না ঘটলেও। কাজেই তিনি আর দ্বিরুক্তি করেন না। সঙ্গের পুলিসপ্রহরীর জিম্মায় আপাতত দোকানঘর ও মৃতদেহ রেখে বাইরে এসে বিকাশেরই জীপেই উঠে বসল সকলে।

বিকাশই জীপ চালাচ্ছিল। শুধালে, কোন দিকে যাব?

বেলগাছিয়ায়।

বিকাশ বিনা বাক্যব্যয়ে জীপে স্টার্ট দিয়ে এগোতে লাগল।

সকাল নটা বাজে প্রায় তখন।

সুব্রতর কাছে তখন সমস্ত ব্যপারটা যেমন ঝাপসা, তেমনি অস্পষ্ট। সে বুঝতে পারছিল না, কিরীটী কেন বেলগাছিয়ায় চলেছে।

রাস্তায় আর কথা হল না। কেউ জিজ্ঞাসাও করে না, কেন তারা বেলগাছিয়ায় চলেছে!

সকালের দিকে রাস্তায় তখনও তেমন ভিড় জমে ওঠেনি।

বেলা পৌনে দশটা নাগাদ ওরা বেলগাছিয়া ব্রীজ ক্রস করে একটা সরু রাস্তার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে কিরীটীর নির্দেশে সকলে নামল।

রথীনবাবু, আপনার সঙ্গে পিস্তল আছে?

আছে। রথীন জবাব দেন।

চলুন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *