ঘাটশিলার বুকে কয়েকদিন
ঘাটশিলার পথে ঘাটে
আনন্দটা বহাল তবিয়তে।
সকাল ৬-২০ মিনিটে জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে হাওড়া ষ্টেশন ছেড়ে ৯-১৫ মিনিটে ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলায় পৌছুলাম।আমরা (মোট ১৩ জন) সেখান থেকে ২ কিমি দূরে রামকৃষ্ণ মঠে এলাম। ঐ মঠের নিয়মানুযায়ী সকাল ৭-৩০মিনিট থেকে ৮-০০টা অব্দি প্রাতরাশ মেলে।কিন্তু যেহেতু পৌছুতে ১০টা বেজে যায়, আমরা প্রাতরাশের পরিবর্তে মঠের পুজোর ফলমূল পেলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। দুপুরে ১২-৩০-১-০০ মধ্যাহ্নভোজনের ঘন্টা পরে।এরপর সেখানে এক মহারাজের মন্ত্রোচ্চারণের পর খাওয়া-দাওয়ার শুরু। ডান হাতের কাজের পর আমরা দুটি বড় অটোয় ঘাটশিলার কয়েকটি দ্রষ্টব্য স্থান পরিদর্শন করি। প্রথমেই যাই ১২কিমি দূরে বুরুডি লেক।ঐখানে নৌকোবিহারের ব্যাবস্থা আছে।লেকের চারপাশে নাতিউচ্চ পাহাড়শৃঙ্গের সমাবেশ।মনোমুগ্ধ হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতন।এমন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে পেখম মেলে উড়ু-উড়ু মানসিকতায় বেশ কিছুটা সময় কাটালাম।তবে সেখানে যাওয়ার রাস্তা প্রথমে মসৃণ হলেও পরে ভীষণ এবড়ো-খেবড়ো। লেকের ধারে সুস্বাদু আহারের বন্দোবস্ত আছে।সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা ১৫কিমি দূরে ধারাগিরির উদ্দেশে রওনা হলাম।অটো যেখানে আমাদের নামায়, সেখান থেকে বেশ কিছুটা কষ্ট করেই আমরা ভাঙাচোরা পথে হেঁটে অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাতের সম্মুখীন হলাম।ঐ জলধারা যেন উচ্ছল কিশোরীর মতন ঝাঁপিয়ে পড়ছে কামোদ্ধত প্রেমিকের বুকে।ঐখানে অনেকক্ষণ কাটিয়ে আমরা ফুলডুংরী পাহাড় দর্শনে এলাম। ঐ জায়গাটি প্রথিতযশা লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।চড়াই বেয়ে বেশ কিছুটা উঠলেই মনটা সত্যি এক অজানা উল্লাসে ভরপুর হবেই।আশেপাশে নানা গাছগাছালি বেষ্টিত পরিবেশে মনটা রোমাঞ্চিত হবেই।ঐখান থেকে আমরা রামকৃষ্ণ মঠে ফিরে যথারীতি টিফিন এবং পরবর্তী সময়ে নৈশ আহার গ্রহণ করি।প্রসঙ্গতঃ জানাই, ঘাটশিলায় বৃষ্টি আমাদের পিছু ছাড়ে নি।আর যা না বললেই নয়। ঘাটশিলা এসে বিভূতিভূষনের বাড়ী ‘গৌরীকুঞ্জ’ না দেখলে এই ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।মঠ থেকে সামান্য দূরে অপুর পথ ধরে কিছুটা হাঁটলেই ডহিগোড়াতে ‘গৌরকুঞ্জে’র সাক্ষাৎ মেলে। বিভূতিভূষণের মহান সৃষ্টির স্মৃতি হিসাবে এখানে তাঁর একটা প্রদর্শনশালা আছে।সেসব দেখে কিছুক্ষণ বাদে একই পথে কিছুটা এগোলেই আরেক সাহিত্যিক গজেন্দ্রকুমার মিত্রর বাড়ি ‘শান্তিনিকেতনের’ দর্শন মেলে।এমন অভিজ্ঞতা মনে দীর্ঘকাল অম্লান হয়ে থাকবে। সেইদিন দুপুরে অটোয় চড়ে প্রথমেই চিত্রকূট পাহাড়ের ৪৫-টি সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষদেশে পৌছুলাম।ওখানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শিবমন্দির দেখলাম।চারপাশে গাছেদের আরণ্যক শোভায় পাহাড়ের শোভাও অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।এরপর আমাইনগরের ডেম আমাদের আকর্ষণ করে।ওখানে সুবর্ণরেখা নদী কুলুকুলু ধারায় প্রবাহমান।সেখান থেকে গুটিগুটি পায়ে অটো নিয়ে যাই রাতমোহনায়।বিভূতিভূষণের গল্পে তাও অমর হয়ে আছে।তবে সুবর্ণরেখা ওখানে খুব খরস্রোতা।অনেকে মাছ ধরছে। দুটো কলরোলমুখর জলপ্রপাত উচ্ছল মুখরতায় আরোও কাছে।HINDUSTAAN COPPER LIMITED-এর ধার ঘেঁষেই নদীর অবিরল স্রোতধারা।সেতুর ওপর থেকে নদীর গতিপথটা সত্যিই মুগ্ধতায় প্রাণ ভরায়। এরপর সিদ্ধেশ্বরী পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌছুলাম।২০০০ ফুট ওপরে শিবমন্দিরের অবস্থান।বয়স্কমানুষের পক্ষে এবড়ো-খেবড়ো পাত্থরে পথটা বেয়ে ওপরে পৌছুনো ভীষণ কষ্টকর।মন্দির ঘুরে এসে আমরা গেলাম যাদুগোড়ার রঙ্কিনী মন্দির।সমতলে ঐ মন্দিরটি খুব আকর্ষণীয়। সবশেষে গেলাম গালুডি ডেম দেখতে।
তবে যাত্রার শেষদিনে আমরা ২২কিমি দূরে পশ্চিমবঙ্গের ‘দুয়ারসিনি’ অরণ্য পরিদর্শন করলাম। খুব শান্ত নিরিবিলি সেই অরণ্য-পরিবেশ।
তথ্যঃ রামকৃষ্ণ মঠে থাকতে হলে এখান থেকেই যোগাযোগ করা যায়।A/c Room: 700/- এবং Non-A/C Room-500/-(খাই খরচা সমেত)।