Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গ্রন্থসমালোচনা – ০৬

সিন্ধু-দূত। শ্রীনবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রণীত। মূল্য চার আনা মাত্র।

প্রকাশক সিন্ধুদূতের ছন্দ সম্বন্ধে বলিতেছেন — “সিন্ধুদূতের ছন্দঃ প্রচলিত ছন্দঃ-সকল হইতে একরূপ স্বতন্ত্র ও নূতন । এই নূতনত্ব হেতু অনেকেরই প্রথম প্রথম পড়িতে কিছু কষ্ট হইতে পারে।… বাংলা ছন্দের প্রাণগত ভাব কী, ও তাহার স্বাভাবিক গতি কোন্‌ দিকে, এবং কী প্রণালীতেই বা ইচ্ছামতে উহার সুন্দর বৈচিত্র্যসাধন করা যায়, ইহার নিগূঢ়ত্ত্ব সিন্ধুদূতের ছন্দঃ আলোচনা করিলে উপলব্ধ হইতে পারে। ”

আমাদের সমালোচ্য গ্রন্থের ছন্দ পড়িতে প্রথম প্রথম কষ্ট বোধ হয় সত্য কিন্তু ছন্দের নূতনত্ব তাহার কারণ নহে, ছত্র বিভাগের ব্যতিক্রমই তাহার একমাত্র কারণ । নিম্নে গ্রন্থ হইতে একটি শ্লোক উদ্‌ধৃত করিয়া দিতেছি ।

“একি এ,আগত সন্ধ্যা,এখনো রয়েছি ব’সে সাগরের তীরে?
দিবস হয়েছে গত না জানি ভেবেছি কত,
প্রভাত হইতে বসে র’য়েছি এখানে বাহ্য জগৎ পাশরে
ক্ষুধা তৃষ্ণা নিদ্রাহার কিছু নাহি মোর; সব ত্যেজেছে আমারে ।”

রীতিমতো ছত্র বিভাগ করিলে উপরি-উদ্‌ধৃত শ্লোকটি নিম্নলিখিত আকারে প্রকাশ পায় ।

“একি এ, আগত সন্ধ্যা,এখনো রয়েছি ব’সে
সাগরের তীরে?
দিবস হয়েছে গত,
না জানি ভেবেছি কত,
প্রভাত হইতে বসে রয়েছি এখানে বাহ্য
জগৎ পাশরে
ক্ষুধা তৃষ্ণা নিদ্রাহার কিছু নাহি মোর; সব
ত্যেজেছে আমারে ।”
মাইকেল-রচিত নিম্নলিখিত কবিতাটি যাঁহাদের মনে আছে তাঁহারাই বুঝিতে পারিবেন, সিন্ধুদূতের ছন্দ বাস্তবিক নূতন নহে ।

“আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু,হায়,
তাই ভাবি মনে ,
জীবনপ্রবাহ বহি কালসিন্ধু পানে ধায়
ফিরাব কেমনে?”
একটি ছত্রের মধ্যে দুইটি ছত্র পুরিয়া দিলে পর প্রথমত চোখে দেখিতে খারাপ হয়, দ্বিতীয়ত কোন্‌খানে হাঁফ ছাড়িতে হইবে পাঠকরা হঠাৎ ঠাহর পান না। এখানে-ওখানে হাতড়াইতে হাতড়াইতে অবশেষে ঠিক জায়গাটা বাহির করিতে হয়। প্রকাশক যে বলিয়াছেন, বাংলা ছন্দের প্রাণগত ভাব কী ও তাহার স্বাভাবিক গতি কোন্‌দিকে তাহা সিন্ধুদূতের ছন্দ আলোচনা করিলে উপলব্ধ হইতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের মতভেদ আছে। ভাষার উচ্চারণ অনুসারে ছন্দ নিয়মিত হইলে তাহাকেই স্বাভাবিক ছন্দ বলা যায়, কিন্তু বর্তমান কোনো কাব্যগ্রন্থে (এবং সিন্ধুদূতেও ) তদনুসারে ছন্দ নিয়মিত হয় নাই। আমাদের ভাষায় পদে পদে হসন্ত শব্দ দেখা যায়, কিন্তু আমরা ছন্দ পাঠ করিবার সময় তাহাদের হসন্ত উচ্চারণ লোপ করিয়া দিই এইজন্য যেখানে চোদ্দটা অক্ষর বিন্যস্ত হইয়াছে, বাস্তবিক বাংলার উচ্চারণ অনুসারে পড়িতে গেলে তাহা হয়তো আট বা নয় অক্ষরে পরিণত হয়।

রামপ্রসাদের নিম্নলিখিত ছন্দটি পাঠ করিয়া দেখো–

মন্‌ বেচারীর কি দোষ আছে,
তারে, যেমন নাচাও তেম্‌নি নাচে ।

দ্বিতীয় ছত্রের “তারে” নামক অতিরিক্ত শব্দটি ছাড়িয়া দিলে দুই ছত্রে ১১ টি করিয়া অক্ষর থাকে। কিন্তু উহাই আধুনিক ছন্দে পরিণত করিতে হইলে নিম্নলিখিতরূপ হয়–

মনের কি দোষ আছে,
যেমন নাচাও নাচে।

ইহাতে দুই ছত্রে আটটি অক্ষর হয়; তাল ঠিক সমান রহিয়াছে অথচ অক্ষর কম পড়িতেছে। তাহার কারণ,শেষোক্ত ছন্দে আমরা হসন্ত শব্দকে আমল দিই না। বাস্তবিক ধরিতে গেলে রামপ্রসাদের ছন্দেও আটটির অধিক অক্ষর নাই–

মন্বেচারী কি দোষাছে,
যেমন্নাচা তেম্নি নাচে।

দ্বিতীয় ছত্র হইতে “নাচাও” শব্দের “ও” অক্ষর ছাড়িয়া দিয়াছি; তাহার কারণ, এই “ও”টি হসন্ত ও, পরবর্তী “তে”-র সহিত ইহা যুক্ত।

উপরে দেখাইলাম বাংলা ভাষার স্বাভাবিক ছন্দ কী। আর,যদি কখনো স্বাভাবিক দিকে বাংলা ছন্দের গতি হয় তবে ভবিষ্যতের ছন্দ রামপ্রসাদের ছন্দের অনুযায়ী হইবে।

আমাদের সমালোচ্য কবিতার বিষয়টি– “জাতীয় স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃতপ্রাণ জনৈক নির্বাসিত ফরসীস্‌ সাধারণতান্ত্রিক বীরবর কর্তৃক স্বদেশে সমীপে সাগরদূত দ্বারা সংবাদ প্রেরণ।” এই গ্রন্থ সচরাচর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হইতে অনেক ভালো। তবে সত্য কথা বলিতে কী ইহাতে ভাষার অবিরাম প্রবাহ যেমন দেখিলাম কবিতার উচ্ছ্বাস তেমন দেখা গেল না।

রামধনু। — শিল্প বিজ্ঞান স্বাস্থ্য গৃহস্থালী বিষয়ক সরল বিজ্ঞান। ঢাকা কলেজের লেবরেটরি অ্যাসিস্‌টাণ্ট ও ঢাকা মেডিকেল স্কুলের কেমিকেল অ্যাসিস্টেন্ট শ্রীসূর্যনারায়ণ ঘোষ কর্তৃক সম্পাদিত। মূল্য এক টাকা চারি আনা।

এই বৃহদায়তন ১৯৩ পৃষ্ঠার অতি সুলভমূল্য গ্রন্থখানি পাঠকদিগের বিস্তর উপকারে লাগিবে সন্দেহ নাই। ইহার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ নিতান্ত সরল। কিন্তু ইহার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ অপেক্ষা ইহাতে যে- সকল গার্হস্থ্য প্রয়োজনীয় উল্লেখ আছে তাহা আবালবৃদ্ধবনিতার বিস্তর কাজে লাগিবে। দোষের মধ্যে, ইহাতে বিষয়গুলি ভালো সাজানো নাই, কেমন হিজিবিজি আকারে প্রকাশিত হইয়াছে। ইহার চিত্রগুলিও অতি কদর্য,কতকগুলা অনাবশ্যক চিত্র দিয়া ব্যয়বাহুল্য ও স্থানসংক্ষেপ করিবার আবশ্যক ছিল না, যেগুলি না দিলে নয় সেইগুলি মাত্র থাকিলেই ভালো ছিল। যাহা হউক, পাঠকেরা, বিশেষত গৃহিণীরা, এ গ্রন্থ পাঠ করিয়া উপকার প্রাপ্ত হইবেন।

ঝংকার। গীতিকাব্য। শ্রীসুরেন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত প্রণীত। মূল্য আট আনা।

এরূপ বিশৃঙ্খল কল্পনার কাব্যগ্রন্থ সচরাচর দেখা যায় না। স্থানে স্থানে এক-একটি ছত্র জ্বল্‌জ্বল্‌ করিতেছে, কিন্তু কাহার সহিত কাহার যোগ, কোথায় আগা কোথায় গোড়া কিছুই ঠিকানা পাওয়া যায় না। সমস্ত গ্রন্থথানির মধ্যে কেবল বরষণ নামক কবিতাটিতে উন্মাদ উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায় না।

উচ্ছ্বাস। শ্রীযুক্ত বিপিনবিহারী মিত্র কর্তৃক প্রকাশিত। মূল্য তিন আনা মাত্র।

লেখক কবিতা লিখিতে নূতন আরম্ভ করিয়াছেন বোধ হয়, কারণ তাঁহার ভাষা পরিপক্ব হইয়া উঠে নাই। বিশেষত গ্রন্থের আরম্ভ ভাগের ভাষা ও ভাববিন্যাস পরিষ্কার হয় নাই। কিন্তু গ্রন্থের শেষ ভাগে উল্লাস শীর্ষক কবিতায় কবিত্বের আভাস দেখা যায়। ইহাতে প্রাণের উদারতা, কল্পনার উচ্ছ্বাস ও হৃদয়ের বিকাশ প্রকাশ পাইয়াছে। এবং ইহাতে ভাষার জড়তাও দূর হইয়াছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *