জীবনের ছেঁড়া পাতা উল্টিয়ে দেখো-
আবর্জনার স্তুপে পরে আছে কত ত্যাগ ,কত আত্মবলিদান ।
যার রক্তাক্ত ফসল আজ –
আমরা আমোদে প্রমোদে করি আত্মসাৎ ।কেউ কথা রাখে নি –
কেউ ফেলেনি চোখের জল ,
দেউলিয়া মানবিকতার বৃথা শ্রম, বৃথা কর্মফল।
জীবনের সব কিছু হারিয়ে,দুই হাত বাড়িয়ে-
যে কজন সর্বস্বান্ত ,অস্তিত্বহীন, অসহায় –
যারা অবহেলিত হতে হতে আজ মৃত্যুর দিন গোনে,কে রাখে খবর তার ,?
অবজ্ঞার আড়ালে- শেষেরদিনের অপেক্ষায় ,শূন্য থালা হাতে –
বেদনার রাজপথে হেঁটে যায় ক্লান্ত পায় ।
গোপালের মা চোখে দেখে না –
আলোহীন চোখ ,রক্তাক্ত হৃদয় আকুল আর্তনাদে-
অন্ধকারে একাকী যার সুখ দুঃখ একাকার।
সবাইকে ভাবে তার প্রসব যন্ত্রণার ফসল কোলের গোপাল।
অন্ধকার জগতে , স্থবিরতার মাঝে –
যেন কার পদধবনিকে জাপটে ধরে কেটে যায় মৌনতার প্রহর ,
অপেক্ষায় অধীর-
শূন্যে দুইহাত মেলে আনন্দ বিহবল,বলে-
” ও মোর গুপাল , ঘরকে এলি …”?
খান খান হয় রাত্রি , গুমরে ওঠে বাতাস।
জীবহাটের বন্ধ দরজায় আছড়ে পড়ে দীর্ঘশ্বাস ।
অবাক পৃথিবীর দুঃসহ যন্ত্রনায় –
চোখের নোনা জলে স্নান করে বুড়ো বাপটা ,
এখন বয়স যার নব্বই ,
চোখের তারায় ছানির আচ্ছাদন,
খিদেয় খেয়েছে শরীর , বুক এখন যক্ষ্মার দখলে ।
সেই কেবল জানে গোপাল ফিরবে না আর কোনদিনও ,কোনখানে,
যাকে অভিশপ্ত তরঙ্গে দিয়েছে বিসর্জন ।
অবুঝ মাতৃত্ব ,দিনরাত যার অপেক্ষায় একাকার –
অন্ধ বিশ্বাস অবলম্বনে ।
বুকচাপা স্বপনরা এসে চুপি চুপি বলে –
গোপাল গেছে শহরে ,
বড় চাকুরি করে বড়লোক হয়ে –
সুখের বোঝা বয়ে এনে তুলে দেবে তোমাদের দুঃখের ঝাঁপিতে ।
জমি-বাড়ী বেচার টাকায়,অনেক সুখ-দুঃখ, চোখের জলের বিনিময়ে –
গোপাল অনেকগুলো পাশ দিয়েছে ……।
স্বপ্নের চাদরে মুরী দিয়ে –
আজও মৃত্যুকে কাছে ঘেষতে দেয়নি গোপালের মা ।
বারো বছর ধরে দুঃখের পৃথিবীটা যেন এক আনন্দ আশ্রম ।
অপেক্ষা এখনো কথা বলে অশক্ত বুকে,
ভগ্ন ঘরের জীর্ণ দেওয়াল ধরে হেঁটে যায় গোপন আশারা।
আর গোপালের অনাহার ক্লিষ্ট বাপটা-
জীবনের চোরাস্রোতে হাবুডুবু খেতে খেতে-
কখনও ডুবতে ডুবতে,
অভুক্ত দোমড়ান শরীরে যে নিজেকেই দুইবেলা অভিশাপ দেয় ,পাষানে মাথা কোটে ,
সেই একমাত্র জানে –
গোপাল ভুখা মানুষের স্বপ্ন আর অধিকার আনতে –
শহরে গিয়ে চক্রব্রুহে শহীদ হয়েছে।
শহরের রাজপথের শহীদ বেদিতে আজও ফুল পড়ে,
শতকন্ঠে স্লোগান ওঠে –
জীবনে মরনে