গেটুস দ্যা গ্রেট – 2
গাড়ি বাঁয়ে সমুদ্র কে রেখে ঢালের দিকে নামতে লাগল । একটু পরেই গাড়ি দাঁড়াল এক অট্টালিকা সমান বাড়ি তে । বাড়ির কারুকাজ পর্তুগাল ধাঁচের । মামার গলায় গেটুস শুনে বুঝলাম মামার বাড়ি তে এসে গেছি । সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি বিশাল জল রাশি! পৃথিবীর তিন ভাগ জল যদি হয়! বাব্বা ভয়াবহ ! ভাবতে পারিনা কত জল বিশ্বে !
বলডুইনের ধাক্কায় সার ফিরল ।—এই দাদা এটা মামার বাড়ি রে । এত বড় লোক মামা ! তবুও অমন জামা কাপড় কেন রে ?
বললাম—মামা কাকে ডাকছিল রে ?
বলডুইন—গেটুস কে। বাব্বা! অমন লিংপিং এ মামার গলা অমন বাজ পড়ার মতন শব্দ। আমি তো চমকে উঠেছিলাম।
বললাম—ঠিক বলেছিস। গেটুস হয়তো মামার ছেলে। পরিচয় করাতে ডাকছিল বুঝি ।
বলডুইন—বাব্বা, কি নাম ! এই দাদা ,মা ভেতরে ডাকছে।
ঘরের ভেতরে ঢুকে আমরা হাত পা ধুয়ে আমরা খাওয়ার ঘরে খেতে গেলাম । বিশাল একখানা ডাইনিং টেবিল তাতে বারো খানা চেয়ার সাজানো । বাড়ি তে কাজের লোক এর অভাব নেই। তবুও ঘরের ছিরিছাদ দেখে কেমন একটা গা গুলানো ভাব, ভাবলাম মামী টা হয়তো নোংরা নইলে এত লোক থাকা সত্বেও এমন অবস্থা । অথচ আমাদের মা সারাদিন ঘরের আসবাব পত্র এদিক ওদিক হলেই বকা ঝকা করেন । তাঁর ভাই এর এমন দশা !
কাজের লোক টেবল মুছে দেয়ার পর মা একখানা তোয়ালে দিয়ে আবার টেবল টা পরিস্কার করে মুছে দিলেন । বাবা আমার দিকে চেয়ে আছেন । দুবার মোছার কেন দরকার হল তা বুঝলাম না । বলডুইন কিছু বলতে যাচ্ছিল মা থামিয়ে দিলেন।
বললেন —আগে খেয়ে নাও পরে কথা হবে ।
মা কেন তাড়াহুড়ো করছেন তা বুঝলাম না । মনে হল মা ভয় পাচ্ছেন বুঝি কেউ এখন ই এসে পড়তে পারে । আর তা হলে আমাদের খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে । মায়ের কথা মতোই আমরা কথা না বলে ই খাওয়া শুরু করলাম । এখানকার রান্না খেয়ে বলডুইন দারুণ খুশি হলেও আমার ভাল লাগল না ।
সবারই খাওয়া প্রায় শেষ । এমন সময় মামার হুঙ্কার কানে এল—-গেটুস!! কাম হিয়ার।
আমরা দরজার দিকে ফিরলাম। দেখলাম বাঘের মত বিশাল একটা কুকুর ,আমাদের দিকেই ছুটে আসছে। ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম আমি । আর বলডুইন এক লাফে মা কে জড়িয়ে ধরল। মামা ও চিৎকার করছে–গেটুস স্টপ। আশ্চর্য ব্যাপার। ভাবলাম এই তাহলে গেটুস। মামার ছেলে না? কুকুরের নাম গেটুস! আরও আশ্চর্য ব্যাপার হল মামার ডাকে গেটুস থেমে গেল। তার এক পা রান্না ঘরের ভেতরে, তিন পা বারান্দায় । সেই অবস্থাতেই গেটুস নট নড়ন চড়ন ।
মামা ও এগিয়ে এসেছে । মা কে বলল—দিদি, ও কিছুই করবে না। তুমি এত ভয় পাও কেন ? তোমাদের সাথে ইনট্রোডিউস করে দিচ্ছি । জামাই বাবু হাত টা একটু বাড়ান ।
মা বললেন—আগে খেয়ে নিক । তুই ওকে সরা এখান থেকে ।
বাবা বললেন—আমার খাওয়া হয়ে গেছে ।
মায়ের মুখে রাজ্যের বিরক্তি । বাবা গেটুস এর দিকে হাত টা বাড়িয়ে দিলেন । মামা বলল—সেক হ্যান্ড গেটুস। বারান্দায় রাখা পা ভেতরে নিয়ে এল গেটুস । পেছনের দু’পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর সামনের দু’পায়ে বাবার হাত খানা ধরে তিন বার ঝাঁকালো । আমি বলডুইনের দিকে তাকালাম । বলডুইন জুল জুলে চোখে চেয়ে আছে গেটুস এর দিকে । এবার মামা আমাদের দিকে চেয়ে গেটুস কে বলল—গেটুস, মিট মাই সিস্টার। দিদি, মন্টু, বলডুইন । একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল। গেটুস তার সামনের পা দু’খানা জোড়া করে কপালে ঠোকালো নমস্কার এর ভঙ্গিতে। এবার মামা বলল—গেটুস, গো- টু-দ্য-গেট।
গেটুস সাথে সাথেই পিছন ফিরল। সোজা চলে গেল বাগানের গেট এর দিকে ।
এবার মামা মা কে বলল—তবুও তোমার ভয় গেল না দিদি? ওরা কিন্তু মানুষের থেকেও ভাল । মায়ের চোখে অবিশ্বাসের খেলা । মামার চোখে কষ্টের ছাপ ।
বাবা বললেন—বস শালাবাবু, এবার তোমার সাথে একটু কথা বলি ।
আমাদের দিকে ফিরে বাবা বললেন—মন্টু, বলডুইন তোমরা উঠে পড় ।
বলডুইন একটা দ্বিধা করছিল দেখে মামা বলল—
ভয় নেই , গেটুস তোদের কিচ্ছু করবে না ।
তখন বিকেল হয় হয় বলডুইন কোথা থেকে একটা বল নিয়ে এলো । বললাম—কোথায় পেলি বলটা ।
বলডুইন বলল—-কোথায় পেলাম তা দিয়ে কি হবে। চল না একটু খেলি।
বললাম—ক্রিকেট! চল খেলি ।
বাগানের চওড়া রাস্তায় আমরা খেলা শুরু করলাম । বলডুইন একটু ভয় পাচ্ছিল , কারণ বাগানের গেট এ দন্ডায়মান গেটুস । তার লকলকে জিব বেড়িয়ে আছে। তবুও আমরা খেলায় মত্ত হয়ে গেলাম। কখনও আমি,কখনও বলডুইন ব্যাট করছে । বলডুইন কে বেশ কষ্ট করেই বল আনতে হচ্ছিল। কারণ কমপাউন্ড টা বেশ বড় ।
আমি বললাম—দেখ, গেটুস আমাদের লক্ষ্য করছে।
বলডুইন—করুক, ছুটে এলেই স্টপ বলে দেব ।
আমি ব্যাট করতেই বল চলে গেল গেটুস এর মাথা তাক করে । ভয়ে আমরা সে দিকেই চেয়ে আছি । কিন্তু ভয়ের কিছুই ঘটল না । বরং আশ্চর্য হলাম গেটুস এর খেল দেখে । গেটুস চট করে ওর মাথাটা পিছিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। তারপর বলটা কে সামনের দু’ পায়ে লুফে নিল।
বলডুইন বলেই ফেলল—সাবাস্ গেটুস।
গেটুস তিন টে লাফে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। দেখে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু যখন দেখলাম বল টা আমার ব্যাটের দিকেই গড়িয়ে দিচ্ছে তখন থেমে গেলাম। অনেক ক্ষণ আমাদের খেলা চলল । কখনও আমি , কখনও বলডুইন ফিলডিং করছি । আমাদের সাথে গেটুস ও দৌড়াচ্ছে। বলডুইন টা হাড় -কুঁড়ে তাই যখন ই ওর ফিল্ডিং করতে হচ্ছে তখন গেটুস কে বেশি দৌড়তে হচ্ছে । গেটুস তার লক্ লকে জিভ বার করে বেদম ছুটছে ।
খেলা শেষ হতে বলডুইন বলল—দাদা, মা কে বলিস না যে আমরা গেটুস এর মুখের বল হাতে নিয়েছি ।
বললাম—ঠিক আছে । তবে পরিস্কার থাকাটা সব সময়েই ভাল । চল আমরা হাত মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে নিই ।
পরদিন সকালেই একটা মজার ব্যাপার হল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলাম । ইচ্ছে সমুদ্রের আশে পাশে একটু ঘুরে দেখব । কিন্তু গেট এর কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম । দেখলাম গেট এ এক বিষম বড় তালা ঝোলানো রয়েছে । কি করা যায় ! বলডুইন দমলো না । বলল—চল দাদা, রান্না ঘরে দেখি কিছু খাবার পাওয়া যায় কিনা ?
রান্নাঘরের কাছে গিয়ে মনে হল ভেতরে কেউ রয়েছে। ভেজানো দরজায় ঠেলা দিতেই তাজ্জব হলাম ।দেখি তাগড়াই তাগড়াই গোটা পনের বিড়াল ডাইনিং টেবল এ বসে আলাদা আলাদা গামলায় মুখ ডুবিয়ে দুধ খাচ্ছে । আমার পেছনে বলডুইন । বলল–দাদা, এ কি রে? ওর কথা শুনে সবগুলো বিড়াল এক সাথে আমাদের দিকে তাকালো । বলডুইন বলল—ঘন সর পড়া দুধ!দেখ ওদের গোঁফে লেগে আছে ।
বুঝলাম অমন সর পড়া দুধ দেখে বলডুইন এর লোভ হয়েছে । সামান্য সময় আমাদের দেখে আবার বিড়াল গুলো আবার খেতে শুরু করল। বুঝতে বাকি রইল না কেন এতদিন মা আমাদের কাছে মামার বাড়ির কথা বলেন নি । বুঝলাম যে এই ভয়েই মা আমাদের এখানে আসতে দিতে চান নি । আর এই কারণেই মামার জামা প্যান্ট এর এই হাল । তাই তো মামা কে স্করপিও গাড়ির ড্রাইভার ভেবেছিলাম ।
আমি বলডুইন কে সে কথা বলতেই বলডুইন হাসল । বলল—তার মানে মামী বলে কেউ নেই । কি বল? তবে মামার ছেলেটা কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমান। প্লেয়ার ও বটে । আমি বললাম—সে আবার কে? ছেলে কোথায় পেলি? বলডুইন বলল — কেন? গেটুস । তুই তো গেটুস কে বলেছিলি মামার ছেলে । ওর কথায় হাসতে হাসতেই বললাম—মা যদি জানতে পারে বিড়াল রা ঐ টেবল এ খায়? বলডুইন বলল—-তবে আমাদের ঐ টেবল এ খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে ।