গুল দিস না আর
সুরেন্দ্রনাথ কলেজে বি কম ফাস্ট ইয়ারের নবাগত ছেলে মেয়েদের জটলা।
সব বন্ধুদের নাম,আগে কোথায় পড়ত,এইসব নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে আলাপ চলছে।
হঠাৎ এক বন্ধু বলে ঐ দেখ “গুল “আসছে।আরেকজন বলে উচ্চ মাধ্যমিকে র্যাঙ্ক করেছে।
আমি রুপক,ভাবতে থাকি বেশ সুন্দরী তবে ওর নাম গুল!!
বাড়ির লোকেরা কি করে রাখল!
সবাই বলে চুপ,শুনে ফেলবে।যারা গুল কে চেনে আমাদের কাছে ডাকল।
তোর পরিচয় জানা সবাইকে,আগে কোথায় পড়েছিস বল?
তখন গুল বলল আমি কমলা গার্লস থেকে এসেছি,তবে ছোটতে পাঠভবনে পড়েছি,আমার নাম রুপালি বাসু।
আমি হঠাৎ বললাম আমি রুপক দাস।আচ্ছা তুমি পাঠভবনে ছোটতে পড়েছ?
আমিও পড়েছি।
আচ্ছা তুই রুপক—
মনে আছে তোর মা আমার মা কত বন্ধু ছিল–তোদের বাড়ি কত গেছি।
আচ্ছা রুপক তোদের গঙ্গার ধারের বাড়িটা জলে তলিয়ে গেল —মনে আছে আমার—কি বিশাল বাড়ি —জলের তলায় চলে গেল।
আমি শুনছি আর অবাক হচ্ছি,কোথায় আমাদের বাড়ি জলে চলে গেল।কিছু বলার আগে চোখটা একটু মেরে বলল ,আহা তোর মায়ের কি ভালো রান্না।
আন্টিকে নিয়ে আসিস।আমাদের এরকম গল্প করতে দেখে সব বন্ধুরা হাওয়া।
আমি বললাম আমি সেই রুপক নয়,রুপালি আরে চিনতে পেরেছি যে ক্লাসে হিসু করে দিয়েছিল,আমি বলি আমি সেই রুপক নয়।আচ্ছা একটা রুপক হবি।ওদের সরানোর জন্য বললাম।ওরা লেখাপড়ায় জিরো।আমি বললাম তুই তো র্যাঙ্ক করা মেয়ে।
রুপালি হাত বাড়িয়ে বলে আজ থেকে তুই আর আমি বন্ধু হলাম।
রুপালি তারপর বলে তুই অর্পিতা কাকিমার ছেলে তাই না?
আমি অবাক হয়ে বলি হ্যাঁ।তখন ও বলে মনে পড়ে বুলবুল কাকিমাকে।রুপকের মনে পড়ে।রুপালি বলে রুপক তোর নাকের তিলটা দেখে মনে পড়েছে।
এবার থেকে রুপক আর রুপালি সারাক্ষণ চিপকে থাকে বাবুলগামের মতো।
সব বন্ধুরা রুপকে বলে ও এত গুল দেয় সহ্য করিস কিভাবে।একজন বলে ওর হাবভাব দেখে মনে হয় জব চার্ণকের মেয়ে।সবাই বলে জব তো ষোলশ নব্বই সালে কলকাতা নগরী পত্তন করেছিলেন,তাহলে বল দশ পুরুষের দাদুর বাবা ছিলেন।সবাই হো হো করে হেসে উঠে।
রুপালি পড়াশোনাতে ভালো,আবার কষ্টিনের ক্লাস ও করে।রুপক ও রুপালির কথামতো কষ্টিনে ডর্তি হয়।রুপালি সব পড়া বুঝিয়েদেয়।রুপক ও ভালো ফল করেছে।সব রুপালির জন্য।ঐ জন্যে ও খুব খুশি।
রুপক একদিন জানায় পরপর কলেজ কয়েকদিন ছুটি,তোর বাড়িতে গিয়ে কষ্টিনের নোটস আনব।বুলবুল অ্যান্টিকে দেখার খুব ইচ্ছে।
কত বছর দেখি নি অ্যান্টিকে।
রুপালি বলে যাবি আমাদের বাড়ি!কখন যাবি ?
রুপক বলে ঐ সকাল দশটা নাগাদ.
কিন্তু তোর সাথে দেখা হবে সেই বিকেলে।
তাহলে বিকেলেই যাব।
রুপালি বলে আমাদের বাড়িটা কুড়ি বিঘা জমিতে,বুঝতেই পারছিস বাড়িটা কত বড়ো?
মা থাকে শেষ ঘরে,তাই সকালে গেলে রাতে দেখা পাবি।ফিরবি কি করে?
তাহলে তোর মাকে প্রথম ঘরে থাকতে বলিস।
না রে রুপক মা ও বাবার তো মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেছে,মা সামনের ঘরে আসবে না।
আচ্ছা তাহলে আজকেই তোর বাড়ি যায়,
কাল সকালে তাহলে তোর মা কে পাবো।
রুপালির গুল একটার বেশি নেওয়া যায় না।
এরপর ঠিক করলাম ভিক্টোরিয়ার সামনে কাল নোটস নিয়ে পড়াশুনা করব।
পড়াশোনা করতে করতে রুপালি বলে জানিস এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আমার দাদুর ঠাকুরদা কিনতে গেছিলেন,কিনতে পারেন নি
কেন রে?
এক টাকা ষাট পয়সা কম পড়েছিল।
আমি বলি ইস কিনলে কত ভালো হতো।এই মাঠে বসে পড়তে হতো না।ঐ “পরি”টার পাশে বসে পড়তাম।
ও তখন বলে তাইজন্য দাদু র দাদু ,তস্য দাদু কেনেন নি।যদি পরবর্তী জেনারেশন প্রেম করে এখানে।
বন্ধুরা বলে তুই গুলের গুল হজম করিস কি করে?
আরে আমি ওর সাথে থাকি।ওর যা পড়াশোনাতে জ্ঞান।প্রচন্ড মেধাবী।
আমার মনে হয় রুপালির ওটা অসুখ।হঠাৎ কাল্পনিক গল্প তৈরি করে ফেলে।
বেশ কয়েকদিন বাদে রুপালির সাথে দেখা।আমরা বন্ধুদের সাথে গল্প করছি,আমি বলি বন্ধুদের আমরাও আজগুবি গল্প বলব ওর সামনে।দেখবি ও আর এই রকম গুল গল্প শোনাবে না।
রুপালি কাছে আসতেই রুপক শুরু করে,আমাদের বাড়িতে রঙ চলছে ,রঙ করা শেষ হলে তোদেরকে একদিন ডাকব আমাদের বাড়ি।আমাদের বাড়িটা রঙ করতে এক বছর লাগবে।তোরা ভাবছিস থেমে থেমে করবে ,আসলে আমাদের বাড়িটা বিশাল।ছাদ থেকে তোদেরকে দেখি লিলিপুট লাগবে।আমাদের একটি মই আছে,যে তলায় কথা বলা দরকার,ঐ মইটা
নিয়ে এসে কথা বলি।।
রুপালিকে বলি শোন মইটা লাগলে বলিস,তোর তো কুড়ি বিঘার উপর বাড়ি।
না লাগবে না।আমাদের রাস্তার থেকে ডাকলে শুনতে পাওয়া যায়।
সবাই মাথা নেড়ে বলে ও ও ও ও
এইভাবে সারা কলেজ ওকে দেখলেই আজগুবি গল্প বলত।যেন গল্পের গরু গাছে ওঠে।
আমাদের কলেজের টপার মেয়েটি আর গুল দেয় না।