গল্পের খোঁজে
আমি যখনই সময় পাই অণু কবিতা,পদ্য,গদ্য কবিতা,আঞ্চলিক কবিতা,অণুগল্প লিখতে চেষ্টা করি।
আমি কবি সমর্পিতা রাহা ।বর্তমানের স্বনামধন্যা কবি।আমি আবার ঘরে বসে গল্প লিখতে পারি না।
রোজ বার হচ্ছে বিভিন্ন খবরের কাগজে আমার লেখা উপন্যাসের নাম,লেখার গুনাগুন।চারদিকে সমর্পিতার লেখার চর্চা।
প্রকৃতির সৌন্দর্যের টানে আমি সর্বত্র ঘুরে বেড়াই। ঘুরতে ঘুরতে গল্পের মাল মশলা জোগাড় করি।
এবার পুরুলিয়া গেছি গল্প লিখব বলে—বাহ কি সুন্দর সারি সারি লাল ফুলে ভরা পলাশ গাছ—-গাছের তলায় বসে বদ অভ্যেসের কারণে পেনটা চিবাতে চিবাতে ভাবছি— “কি লিখব” ?
ঘুম ঘুম পাচ্ছিল—জোর করে জেগে অনুভব করছিলাম—- কেউ যেন বিরক্ত হয়ে কিছু বলছে—–আঃ ওঠ ।
তু যিখখানে বসসে আছছিস—-মুরা আছছি রে—-পল্লাশ গাছছের তল্লায় আছছি —মুর লাগছেক তো।
কে কে করে আমি চমকে ওঠি???
ভাবতে থাকি পলাশ গাছের তলে মৃদু হাওয়ায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি হয়তো—
আমার গায়ে কত পলাশ ফুল পড়েছে—
সেগুলো নিয়ে খু্শি মনে খেলা করতে করতে ভাবছি ——না না মনোসংযোগ করে— কিছু লিখি—-লেখার জন্য তো এতোদূর আসা।।
আমি একটু ওঠে দাঁড়িয়ে একটু এগিয়ে হাঁটাচলা করছি —যেন শুনতে পেলাম “বাববা বাঁচচালি মুদেরকে কববি দিদ্দিমনি”।
আমি ভাবতে থাকি অবচেতন মনেই নারীর কন্ঠস্বর ,খিলখিল শব্দ ভেসে আসছে—
সন্ধ্যার প্রাকলগ্নে পলাশের মনোরম শোভায় একটা ঠান্ডা স্পর্শ—
“কিছছু ভাইবছিস”??
হ্যাঁ, গল্প লিখব—–তাই ভাবছি—–কে কার সঙ্গে কথা বলছেন আমি কিছুই জানিনা।
“ভাইলোবাস্যার গইলপ লিখবিক”??
তব্বে এট্টা লিখখে ফেইল ক্যানে— শুন তব্বেক মুর জন্নমটো এইই পুরুল্যা গেররামেই—মানভূম মুদ্দের ভাষ্ষাটো—
মুদ্দের বাড়ির পাইশটোতে ঝুমমরু থাইকত—-সাঁঝের বেলায় উহার লাইগ্যে দিখখাটা হততো উইইইই ঢিববিটায়—-চুপপি চুপপি ভাইলোবাস্যার কথ্থাটা হতক—-ঐ খানট্টোতে মুরা চুখখান বন্ধ কইরে–লা দিদ্দিমনি শরমটো লাগগে।
ও তোরা গান করতিস??
হ্যাঁ রে, গুন গুণায়ে গান কইরতাম।আবার খিলখিল হাসি।
আমি হঠাৎ জিজ্ঞেস করি—তোমার নাম কি?
দিদ্দিমনি —“ফুলমুনিয়া মুর নামটো আচ্ছেক”।।
জাননিস দিদ্দিমনি— ঝুমমরু বলতক— পলাশ গাছটোতে লাল ফুললে ভইরে গেইলে ওর পেররেমটো জাগতক।
মুর মাথথায় ফুল গুঁজ্জে দিতক—মু শরমটোতে মুখখান ঢেইকে লিতাম।
গেররমের মোইড়লটো এক দিন মুদ্দের ধইরে উই পললাশটোতে যিখখানে
বইসে ছিল্লিস মেইরে পুঁত্তে দিল্লেক।মুদের বিইয়া হততে দিললক লা।
দেইখ দিদ্দি পল্লাশ ফুইল ঠিকই ফুটছেক।
পূরলিমার দিনে মুরা কত্তক কইষট পেইয়ে মইরে গিলাম।মুদের আত্মাটো শান্তিটো পাই লাই ।
মুরা লা কঙ্কালটো হইয়েক যিখখানে বইসে ছিলিক এখখনো আছিক ।
দেখ ক্যানে কত্তো পললাশের ফুল ফুঁটে আছ্ছেক।মু আর ঝুমমরু পেররেমটো করবক।
তারপর খিলখিল হাসি।তারপর এক ছেলের কান্না।
যা কব্বি দি —চইলে যা ক্যানে—মুদ্দের একখন শরীলের মিলনটো হববেক।
হ্যাঁ যাচ্ছি তো—-আমার লেখা শেষ—আমার বয়স হয়েছে —-এত তাড়াহুড়ো করলে পেনের ঢাকনাটা লাগাব কি করে??
আমি হোটেলে ফিরে আসি।
তারপর হোটেলের মালিককে বলি ঘটনাটা।মালিক জানান ঘটনাটি সত্য। ওখানে কোনো গাছের তলায় মোড়ল মেরে ওদেরকে পুঁতে দিয়েছিল।
হোটেলের মালিক চমকে ওঠে বলেন— আজকের দিনে দশ বছর আগে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।তা আপনি গল্প ভাবছিলেন,ওরাই ওদের গল্প আপনাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল।
সত্যি মাথায় কিছু আসছিল না।আমাকে তো লিখতেই হবে। তাছাড়া লকডাউন চলছে আমি কলকাতা থেকে পুরুলিয়া এসেছিপক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে।
হোটেলের মালিক বলে আপনিতো ভূতের সাথে দেখা করলেন,কেমন দেখতে বলুন তো?
আমিও—হিঁ হিঁ হিঁ কঁরে বঁললাম ঠিঁক আঁমার মঁতো।
হোটেলের মালিক অজ্ঞান।
আমার ও ঘুম ভাঙল পরদিন সকাল দশটায়।
লাগবেক তো বট্টে,পকখিঘুড়ড়াতে ফিইরলাম তো–শররমটো লাগছেক মু এত্ত বড় কব্বি ভেববেছিক।
আমার বিবেক বলল স্বপ্নে সব ভাবা যায়।দূর ওঠ বেলা হয়েছে রান্না করতে হবে না।লকডাউনে সবাই বাড়িতে।প্রচুর কাজ।
বুঝলাম কাল রাতে মাংসভাত খেয়ে পেট গরম হয়েছে আমার—অবাস্তব ” কিছু বাঁধন হারা ভাবনা-“—স্বপ্নে যা ধরা দিয়েছিল তা অকপটে লিখে ফেললাম পেন চেবাতে চেবাতে।