খেলা
উত্তেজনায় কাঁপছে সারা শরীর! ক্রমাগত বেড়ে চলেছে চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ! খেলেই চলেছে ছেলেটা । পায়ের কাছে মেঝেতে ইতস্ততঃ এখানে ওখানে কুকিজ,কেক,বিস্কুটের প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।গত দুদিন ধরে খেয়েছে।আজ খাবার ইচ্ছে নেই একটুও।
অনেকদিন ধরে ইচ্ছেটা থাকলেও ঘর ফাঁকা পায় নি।মা বাবা দুদিন ধরে নেই।বন্ধুর বাড়িতে থাকবে, এই কথা বলে কাজের মাসি কেও আসতে বারণ করে দিয়েছে।সন্তুর মা আর বাবা কিসের যেন একটা সেমিনারে গেছেন, আজ ফিরে আসবেন। সন্তু তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে।শেষ করতেই হবে খেলাটা।প্রথম দিকে অত উত্তেজনা ছিল না,চ্যালেঞ্জগুলো ও ছিল ছোটো ছোটো।একের পর এক পার হয়ে এসেছে সহজেই।
দুটো দিন এক মনে খেলে গেছে ভ্রূক্ষেপ নেই কোনদিকে। গতকাল রাত থেকে জল পর্যন্ত ছোঁয় নি সে।যেভাবেই হোক না কেন সব চ্যালেঞ্জ জিতে নিতে হবে আজকেই।
যত সময় পেরিয়েছে ততই বেড়েছে চ্যালেঞ্জ ।হাতের আঙ্গুল গুলো বেসামাল হয়ে উঠেছে, চোখ দুটো টকটকে লাল ,দু রাত জেগে থাকার জন্য নাকি খেলার উত্তেজনায় কে জানে!
গত দুদিন ক্রমাগত একের পর এক হার্ডল পার হয়েছে।যত পেরিয়ে যাচ্ছে ততই কঠিন হয়ে আসছে জয় লাভ।
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ,জিততেই হবে তাকে, যেমন করে হোক…
কিন্তু কি একী আর এগোতে পারছে না যে! কি রকম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে দেখ,দাঁত বের করে হাসছে না!
ওই তো ওরা ওকে উপহাস করছে।ওদের চোখ গুলো মুখগুলো টের পাচ্ছে বুকের ভেতর।ফিসফিসিয়ে বলছে কেমন !হার হলো কি না! পারলি না তো।সন্তু পাগলের মতো যত এলোপাথাড়ি খেলতে থাকে ততই ভুল হতে হতে হার নিশ্চিত হয়ে ওঠে।
যাঃ একী হলো! সবাই হাসছে, কুৎসিত বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গী গুলো অসহ্য লাগছে । তার দিকে চেয়ে কেমন হ্যা হ্যা করে হাসছে না! দু হাত দিয়ে চেপে ধরেছে কান মাথা!উফঃ মা গো!একটা মুহূর্ত মাত্র, তারপরই দিশাহারা ছেলেটা ……
এক দৌড়ে ছাতে।কার্নিশে উঠেই মরন ঝাঁপ….
গাড়ি থেকে নেমে সবে চাতালটায় এসেছে, কি একটা পড়ছে! মিঃ বোস চকিতে দেখেই যা বোঝার বুঝে গেছেন, মুহূর্তের মধ্যে সুদক্ষ গোল রক্ষকের ভূমিকায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে নিয়েছেন সন্তু কে।কিন্তু ভার সামলাতে পারলেন না।সন্তুকে নিয়েই সজোরে আছড়ে পড়লেন।জোর আঘাত পেলেন তিনি।
মা তো হতচকিত, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখে সন্তু বাবার বুকের ভেতর মুখ গুঁজে আছে।থরথর করে কাঁপছে ওর শরীরটা। জাপটে ধরে বাবা দিশেহারা। ততক্ষণে দৌড়ে এসেছেন অনেকেই। হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থায় তৎপর হয়ে উঠলেন ।প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় গোলটা
আটকে দিয়ে জীবনের খেলায় চরমতম জয়লাভ করেছেন মিঃ বোস।কিন্তু চোখে মুখে তার আনন্দের বদলে দুশ্চিন্তার ছাপটাই বড়ো বেশী স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।