তুই কি ভাবিস , দিনরাত্তির খেলতে আমার মন ? কক্খনো তা সত্যি না মা — আমার কথা শোন্ । সেদিন ভোরে দেখি উঠে বৃষ্টিবাদল গেছে ছুটে , রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে বাঁশের ডালে ডালে ; ছুটির দিনে কেমন সুরে পুজোর সানাই বাজছে দূরে , তিনটে শালিখ ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালে — খেলনাগুলো সামনে মেলি কী যে খেলি , কী যে খেলি , সেই কথাটাই সমস্তখন ভাবনু আপন মনে । লাগল না ঠিক কোনো খেলাই , কেটে গেল সারাবেলাই , রেলিঙ ধরে রইনু বসে বারান্দাটার কোণে । খেলা - ভোলার দিন মা , আমার আসে মাঝে মাঝে । সেদিন আমার মনের ভিতর কেমনতরো বাজে । শীতের বেলায় দুই পহরে দূরে কাদের ছাদের ‘পরে ছোট্ট মেয়ে রোদদুরে দেয় বেগনি রঙের শাড়ি । চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই , তেপান্তরের পার বুঝি ঐ , মনে ভাবি ঐখানেতেই আছে রাজার বাড়ি । থাকত যদি মেঘে - ওড়া পক্ষিরাজের বাচ্ছা ঘোড়া তক্খুনি যে যেতেম তারে লাগাম দিয়ে কষে । যেতে যেতে নদীর তীরে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরে পথ শুধিয়ে নিতেম আমি গাছের তলায় বসে । এক - এক দিন যে দেখেছি , তুই বাবার চিঠি হাতে চুপ করে কী ভাবিস বসে ঠেস দিয়ে জানলাতে মনে হয় তোর মুখে চেয়ে তুই যেন কোন্ দেশের মেয়ে , যেন আমার অনেক কালের অনেক দূরের মা । কাছে গিয়ে হাতখানি ছুঁই হারিয়ে - ফেলা মা যেন তুই , মাঠ - পারে কোন্ বটের তলার বাঁশির সুরের মা । খেলার কথা যায় যে ভেসে , মনে ভাবি কোন্ কালে সে কোন্ দেশে তোর বাড়ি ছিল কোন্ সাগরের কূলে । ফিরে যেতে ইচ্ছে করে অজানা সেই দ্বীপের ঘরে তোমায় আমায় ভোরবেলাতে নৌকোতে পাল তুলে ।