খেজুর রস
ছেলেবেলায় গ্রামে যাওয়ার পথে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। এই শীতে গাছের আগা চাঁচা থাকতো। দুটো পা বেঁধে গাছের ডগায় উঠে কলসি লাগানো হতো। শীতের কুয়াশামাখা ভোরে ওই কলসি খেজুর রসে পূর্ণ হয়ে থাকতো। একবার সারারাত বাসে করে রাতের অন্ধকারে দীঘা পৌঁছানো গিয়েছিল। সমুদ্রের ধারে হাওয়ায় কাঁপুনি দিচ্ছিল। কয়েকজন পাতা জ্বালিয়ে হাত সেঁক ছিল। আমরা শেষ রাতে সবাই আগুনে গা গরম করছি,একজন খেজুর রসের হাঁড়ি আমাদের কাছে নিয়ে এল। খাঁটি রস।সে আজও মনে আছে।জয়দার বাড়ি থেকে আসত আসল খেজুর গুড়।কী সুগন্ধ! তখন বাজার গুড় আর মাছিতে ভরে উঠত।গ্রামের বাড়ি গুলোতে দেখতাম খেজুর রস জ্বাল দেওয়া হচ্ছে।মোটা দানা,কখনো ঘন অথচ নরম গুড় গরম রুটির ওপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি এঁকে রোল বানিয়ে খেতাম।মা উননের ধারে বসে রাতে রুটি সেঁকত।পায়েস,দুধপুলি বাসি খেতাম- কাঁসার বাটিতে নিয়ে।আটপৌরে শাড়ি পরা মায়ের গা ঘেঁষে বসা ,জোর করে একটা রুটি থালায় দেওয়াবড্ড মনে পড়ে। আকাশের সিঁড়ি বেয়ে মা যদি একবার চলে আসতকিছুক্ষণ’ মা মা ‘ বলে ডাকতাম। শীতের দিনে মা ছাড়া পিঠে পুলি সম্ভব নয়। নারকেল কোরানো ,চাল শিলে বাটাকত পুলি হতো।সিদ্ধ পিঠে নরম তুলতুলে,ঝোলা খেজুর রসে ভিজিয়ে খাওয়া।যদি এমন হতো মা এসে খাইয়ে যেতখুবব মজা হত।একটা বড়ো হা করতাম,মা এসে কখন খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত,চোখ খুলে দেখতাম ভোর। কী মজা, খেজুর গাছে তখন প্রথম সূর্যের আলো।