Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » খানদান || Khandan by Jasimuddin

খানদান || Khandan by Jasimuddin

ওধারের বেডে আসিল বালক, মটরের ধাক্কায়,
ক্ষতবিক্ষত, রক্তমাখান কচি তার দেহটায়।
চিৎকার করি কাঁদিত কেবল, আম্মাগো কোথা গেলে,
একেলা যে আমি থাকিতে পারি না তোমারে কাছে না পেলে?
কাঁচা মুখখানি মমতা জড়ানো, জননী স্নেহের ভরে,
যে-চুমায় তারে জাগায়েছে ভোরে আছে তা অধর ভরে।
ঘায়েতে তাহার ওষুধ মাখাতে, চীৎকারি কেঁদে ওঠে,
মায়ের আগেতে নালিশ জানায়, বোঝে না কিছুই মোটে।
আম্মাগো, তুই কোথা গেলি আজ, ওরা যে আমারে মারে,
ক্ষতবিক্ষত অঙ্গে আমার ব্যথা দেয় বারে বারে।
আমি বাড়ি যাব- আমি বাড়ি যাব, তোরে শুধু কাছে পেলে,
সব যন্ত্রণা জুড়াইবে মাগো তোর বুকে বুকে মেলে।

সারাদিন ভরি কতই সে কাঁদে, বড় ভাই তার আসে,
অশ্রুসিক্ত নয়নে বসিয়া রহে বিছানার পাশে।
ডাকিয়া সেদিন বলিলাম তারে, মায়েরে সঙ্গে করে,
আনেন না কেন? সারাদিন খোকা কাঁদে যে তাহার তরে।
ম্লান হাসি হেসে কহিল ভাইটি, আমরা যে খানদান,
আমাদের মেয়ে হেথায় আসিলে ভীষণ অসম্মান।
রাতের বেলায় সকল বেডের রোগীরা ঘুমায়ে পড়ে,
খোকাটি কেবল চীৎকারি কাঁদে মায়েরে তাহার স্মরে।
প্রহরের পর প্রহর চলেছে, আম্মাগো কাছে আয়,
এত ডাক ডাকি তবু না আসিস আমার যে জান যায়।
প্রহরের পর প্রহর চলেছে, আম্মাগো, মোর ঘুড়ি,
পূবের ঘরেতে রেখে দিস যেন কেউ নাহি করে চুরি।
মারবল আর পেন্সিল দুটো, কখানা টুকরো কাঁচ,
সাবধানে তুই রাখিস যেন না কেউ পায় তার আঁচ।
প্রহরের পর প্রহর চলেছে, আম্মাগো, কাছে আয়,
কে যেন আমারে ধরিতে আসিছে ভীষণ চেহারা হায়,
আম্মাগো কারা আমারে মারিছে। প্রহর চলেছে বেয়ে,
কাঁদিছে উতল রাতের পবন বড় যেন ব্যথা পেয়ে।

আমি দেখিতেছি বেঘুম শয়নে, সুদূর হেরেম কোণে,
জাগিছে জননী, নিশির প্রদীপ জাগিছে তাহার সনে।
জাগিছে জননী, রাত-জাগা পাখি, রহিয়া রহিয়া জাগে,
রাত কুসুমের উদাস গন্ধ চিরিতেছে বুকটাকে।
জাগিছে জননী, দুই হাতে যদি পারিত ছিড়িয়া দিতে,
ছেলে হতে তার কোন ব্যবধান রাখিত না ধরনীতে।
পরদা প্রথার যে মিথ্যা আজি দুলালের তার হায়,
এমনি করিয়া করেছে পৃথক ভাঙিত সে আজি তায়।

আহারে মায়ের দীরঘ নিশাস কোথায় নাহিক লাগে,
ঘুরিয়া ঘুরিয়া আপনারি বুকে আরও ব্যথা হয়ে দাগে।
ধীরে ধীরে দীপ নিবিয়া আসিল ম্লান হয়ে এল আলো,
নিবিড় নীরব নিথর পাথারে জড়ালো রাতের কালো।

সব অভিযোগ ব্যথাতুর সেই বালকের মুখ হতে,
ধীরে ধীরে ধীরে ভেসে গেল কোন মহানীরবতা স্রোতে।
কোথা সেই স্বর থামিল যাইয়া, বহু বহুযুগ আগে-
যারা মরিয়াছে কঠিন পীড়নে সমাজনীতির দাগে;
যারা সহিয়াছে সহস্র ব্যথা ভাষাহীন বেদনায়,
মূক বালকের বেদনা মিলিল সে মহা নীরবতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress