কে যেন ডাকিল—“ওরে যাত্রী,
পুরাতন বত্সরের জীর্ণ ক্লান্ত রাত্রি
ওই কেটে গেল, এল নবীন প্রভাত!”
শুনিয়া জাগিনু অকস্মাৎ |
নববর্ষ আসিয়াছে ?—এলো কি সুন্দর ?
এলো রুদ্র, এলো ভয়ঙ্কর ?
দারুণ দুর্যোগ হানি’ এলো কি বৈশাখী ?
আকাশের ঝঞ্ঝা ফেরে ধরিত্রীর বন্যারে কি ডাকি ?
এলো কি প্রলয় ?
বনে বনে শুষ্ক পাতা ঝরিবার নাই আর বাকি ?
নিদারুণ প্রসব ব্যথায় এলো নব-সৃজনের জয় ?
আঁধারের কালো বুকে ঝলিলো কি আলোর কৃপাণ ?
তারই আগমনী
মানুষের দেহে মনে রূপে রসে উঠেছে কি রণি’ ?
হে দরদী, বল শুনি আজ—
মরুভূর তৃষাতুর তটে দৃষ্টিহীন আঁধারের মাঝ
প্রভাতের যত যাত্রী যুগে যুগে হারায়েছে পথ,
ধরণীর চোরাবালি গ্রাসিয়াছে যাহাদের রথ—
সার্থক হোলো কি আজ তাদের ব্যর্থ অভিযান ?
মানুষের নববর্ষ আসিলো কি নবীন জীবনে ?
মানুষের ললাটে আজ পড়িলো কি রাজটিকা ?
শেষ তার নিত্য পরাজয়
লভিতে অমৃত-ভাগ ভূবন-মন্থনে ?
কিম্বা বন্ধু, মানুষের নববর্ষ নয়,—
এ শুধু নূতন পাতা খুলিয়াছে প্রাচীন পঞ্জিকা ?
সম্মুখে চাহিয়া দেখি—দীনহীন মানুষের দল
চলিয়াছে রাজপথে ক্ষীণকণ্ঠে করি’ কোলাহল—
জীবনের ভিখারী তাহারা!
আজিকার এ প্রভাত দেয় নাই কিছুমাত্র সাড়া
তাহাদের পুরানো জীবনে ;
সাহারা পারায়ে তারা চলিয়াছে আক্লান্ত চরণে—
যেমন চলেছে কাল তারা |