কোনো কোনো দিন খুব ঝোঁক চাপে লোকটার মাথায় হঠাৎ
এঁদো গলি ছেড়েছুড়ে দূর দূর করে
কাক আর কুকুর তাড়িয়ে আঁস্তাকুড়,
ধোঁয়াটে চা-খানা, বোবা রেশনের তালাবন্ধ দোকান এবং
অন্ধ ডোবা অনেক পেছনে
ফেলে চলে যাবে
বহুদূরে যেখানে দাঁড়ালে দেখা যায়
মহাপুরুষের হৃদয়ের মতো দরাজ আকাশ, বুক ভরে
নেয় যায় শরীর চেতিয়ে-তোলা সতেজ বাতাস। মাঝে-মাঝে
লোকটার ভারি ইচ্ছে হয়
সেখানে একলা বসে চুষে চুষে খাবে পাকা আম।
গুমোট রাত্রির পর ভোর হ’লে লোকটা ঝুপড়ির
দোর খুলে পা বাড়ায় পথে।
পাড়াটা বেজায় চোখ পাকানো বাঁকানো শিঙ ষাঁড়ের মতন
মনে হয়। ক’কদম আগে বাড়তেই
ডালপুরি আর তেহারির তেলতেলে গন্ধ লাগে
নাকে, তাকে কেউ কি পেছন থেকে ডাকে?
পেরিয়ে মেথরপট্রি অন্য এক গলির ভেতর
ঢুকে ফের বেরিয়ে কী ভেবে
তাড়াতাড়ি পথ হাঁটে, জানালার ধারে
দাঁড়ানো, তরুণী, বারান্দায় ঝোলে জাফরানি শাড়ি। রাতে তাড়ি
গিলেছিল খুব, দিল বাগ বাগ ছিল,
মনে পড়ে। বেলা বাড়ে, সূর্য জ্বালা ধরায় চামড়ায়।
এ সময়, হাঁটতে হাঁটতে
একাকী লোকটা ভাবে ঠাণ্ডা কামরায় জিরোনো
ছিল ভালো। হাতের চেটোয় কপালের
ঘাম মুছে খোঁজে ছায়া, যেমন ফিল্মের
পোড়া-খাওয়া, ধনীর সুন্দরী দুলালীর ছ্যাঁক-খাওয়া
পথশ্রান্ত বেকার নায়ক।
ঝাঁ ঝাঁ ভাদুরে দুপুরে
লোকটার চোখে তাজা খোওয়াবের ফুলঝুরি ছড়িয়ে চকিতে
মেঘের আড়ালে চলে গেল
একজন জলপরী; সেও হলো অনুগামী
যে পাখাহীন পাখি, অথবা আস্তাবলের বেতো
ঘোড়া পক্ষীরাজ রূপান্তরে। মেঘ আর
মানুষের সখ্য এ রকম, ভাবেনি সে কোনও দিন
এর আগে। রঙিন বুদ্বুদ কত মুখ, চালচুলো, খড়কুটো,
সোনালি-রুপালি মাছ লাফায় চৌদিকে, কে কোথায়
চুমু খায় নিবিড় আশ্লেষে, বোঝা দায়।
কতকাল, কত হরতাল, কত পার্বণ ফুরাল,
ফেরেনি সে কখনো এখানে আর ভাড়াটে ঝুপড়িতে
এঁদো গলিটায় লাঠি ছোরা, স্টেনগান আর বোমার শহরে।
গৃহিণী পাথর তার, ভাগ্য খেলে কানামাছি। লোকটা কোথায়
আছে কোন হালে
মেঘে মেঘে, নির্জন গৃহায় নাকি মায়াবী গাছের ডালে ঝুলে
বাবুই পাখির মতো বাসা বেঁধে একা
কেউ তা জানে না।