Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কুলীন মহিলা বিলাপ || Hemchandra Bandyopadhyay

কুলীন মহিলা বিলাপ || Hemchandra Bandyopadhyay

“এই না, ইংলণ্ডেশ্বরি, রাজত্ব তোমার?
তবে যেন ক্রীতদাস হয় গো উদ্ধার
তোমার পরশ মাত্র—সরস অন্তরে
ছিঁড়িয়া শৃঙ্খলমালা স্বাধীনতা ধরে?
তবে যেন রাজ্যেশ্বরি রাজ্যেতে তোমার
সকলে সমান স্নেহ উৎসাহ সবার?
নাহি যেন ভিন্নভাব কন্যাসুত প্রতি?
নাহি যেন তব রাজ্যে নারীর দুর্গতি?

শুনেছি না বৃটনের শ্বেতাঙ্গী মহিলা
পুরুষের সহচরী সঙ্গে করে লীলা?
সন্তান ধরেছ গর্ভে তুমি মা আপনি,
সন্তানের কত মায়া জান ত জননী।
তবে কেন আমাদের দুর্গতি এমন,
এখনো মা ঘুচিল না অশ্রুবিসর্জ্জন!”

আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন;
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?
বিমুখ বান্ধব ধাতা, বিমুখ জনক ভ্রাতা,
বিমুখ নিষ্ঠুর তিনি পতি নাম যাঁর—
রাজ্যেশ্বরী বিনে ভবে কোথা যাব আর?
আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন;
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?

“সাতশতবর্ষ, মাতঃ, পৃথিবী ভিতরে
এই রূপে অহরহঃ অশ্রুধারা ঝরে
মাতা মাতামহী চক্ষে জন্ম জন্মকাল,
আমাদেরো সে দুর্দ্দশা হায় রে কপাল!
কত রাজ্য হলো গেলো, কত ইন্দ্রপাত,
নক্ষত্র খসিল কত, ভূধর নিপাত,

হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান ম্লেচ্ছ অধিকার,
শাস্ত্র ধর্ম্ম মতামত কতই প্রকার
উঠিল ভারতভূমে, হইল পতন,
আমাদের দুঃখ আর হলো না মোচন!
সেই সে দিনান্তে দুটী পরান্ন আহার
নিশিতে কাঁদিয়া স্বপ্ন দেখি অনিবার।’’

আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাহার কাছে দুঃখের রোদন;
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?
বিমুখ বান্ধব ধাতা, বিমুখ জনক ভ্রাতা,
বিমুখ নিষ্ঠুর তিনি পতি নাম যাঁর—
রাজ্যেশ্বরী বিনে ভবে কোথা যাব আর?
আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন—
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?

‘‘ডেকেছি মা বিধাতারে কত শত বার,
পূজেছি কতই দেব সংখ্যা নাহি তার,
তবুও মা খণ্ডিল না কপালের মূল,
অমরাবতীতে বুঝি নাহি দেবকুল!

বারেক বৃটনেশ্বরি আয় মা দেখাই
প্রাণের ভিতরে দাহ কি করে সদাই;
কাজ নাই দেখায়ে মা, তুমি রাজ্যেশ্বরী,
হৃদয়ে বাজিবে তব ব্যথা ভয়ঙ্করী।
ছিল ভাল বিধি যদি বিধবা করিত,
কাঁদিতে হতো না পতি থাকিতে জীবিত!
পতি, পিতা, ভ্রাতা, বন্ধু ঠেলিয়াছে পায়,
ঠেলো না মা, রাজমাতা, দুঃখী অনাথায়।”

আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন;
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?
বিমুখ বান্ধব ধাতা, বিমুখ জনক ভ্রাতা,
বিমুখ নিষ্ঠুর তিনি পতি নাম যাঁর—
রাজ্যেশ্বরী বিনে ভবে কোথা যাব আর?

“কি জানাব জননী গো হৃদয়ের ব্যথা—
কিঙ্করীরো হেন ভাগ্য না হয় সর্ব্বথা?
কি ষোড়শী বালা, আর প্রবীণারমণী,
প্রতিদিন কাঁদিছে মা দিন দণ্ড গণি।
কেহ কাঁদে অন্নাভাবে আপনার তরে,
শিশু কোলে কারো চক্ষে বারিধারা ঝরে।

কত পাপস্রোত মাতা প্রবাহিত হয়,
ভাবিতে রোমাঞ্চ দেহ, বিদরে হৃদয়।
হা নৃশংস অভিমান কৌলীন্য-আশ্রিত!
হা নৃশংস দেশাচার রাক্ষসপালিত!
আমাদের যা হবার হয়েছে, জননি—
কর রক্ষা এই ভিক্ষা এ সব নন্দিনী।”
আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন—
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?
বিমুখ বান্ধব ধাতা, বিমুখ জনক ভ্রাতা
বিমুখ নিষ্ঠুর তিনি পতি নাম যাঁর—
রাজ্যেশ্বরী বিনে ভবে কোথা যাব আর?
আয় আয় সহচরী, ধরি গে বৃটনেশ্বরী,
করি গে তাঁহার কাছে দুঃখের রোদন—
এ জগতে আমাদের কে আছে আপন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *