রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড – বালিকে মারিয়া সুগ্রীবকে রাজ্য দিতে শ্রীরামের প্রতিজ্ঞা
সুগ্রীবের কথা শুনি বলেন লক্ষ্মণ।
কোন্ কর্ম্মে তোমার প্রতীতি হয় মন।।
দেব দৈত্য গন্ধর্ব্ব কোথায় হেন বীর।
শ্রীরামের এক বাণে সে রহিবে স্থির।।
হেন রাম প্রতি তব না হয় প্রতীত।
কি কর্ম্ম করিলে তুমি হয় হরষিত।।
সুগ্রীব বলেন, দেখ দুন্দুভি-পাঁজর।
পায়ে করি ফেলাইল বালি কপীশ্বর।।
নেত্রনীরে সুগ্রীবের তিতিল বদন।
আশ্বাসিয়া তুষিলেন শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
সুগ্রীবের প্রত্যয় নিমিত্ত রঘুবর।
পদাঘাতে ফেলিলেন দুন্দুভি-পাঁজর।।
ফেলিয়াছিলেন বালি একটি যোজন।
ফেলেন যোজন শত কমললোচন।।
সুগ্রীব বলিল, শুন রাম রঘুবর।
যখন ফেলিয়াছিল বালি সে পাঁজর।।
রক্ত চর্ম্মে ছিল ভারি তুলিতে দুষ্কর।
এখন হয়েছে শুষ্ক, নহে তত ভার।।
ইহাতে কেমনে রাম করি অনুমান।
বালি রাজা হইতে যে তুমি বলবান।।
শুন প্রভু রঘুনাথ আমার বচন।
বালির বিক্রম শুন করি নিবেদন।।
দিগ্বিজয় করিতে চলিল দশানন।
বালির সহিত যুদ্ধ হইল ঘটন।।
সন্ধ্যা করে বালিরাজা সাগরের জলে।
হেনকাল দশানন চৌদিকে নেহালে।।
তপ করে বালিরাজা মুদ্রিত নয়ন।
পশ্চাতে ধরিতে যায় রাজা দশানন।।
যুদ্ধ নাহি করে বালি, তপ নাহি ত্যজে।
পৃষ্ঠদিকে রাবণেরে জড়াইল লেজে।।
লাঙ্গুলে বান্ধিয়া ফেলে সাগরের জলে।
একবার ডুবাইয়া আরবার তোলে।।
এইরূপে তপ করে চারি পারাবারে।
জল খাইয়া রাবণ বাঁচিতে না পারে।।
চারি সাগরেতে করি সন্ধ্যা সমাপন।
উঠিলেন বালি, লেজে বান্ধা দশানন।।
রজনী হইল, বালি চলি গেল ঘর।
কাতরে রাবণ বলে ক্ষম কপীশ্বর।।
বহু স্তবে ক্ষমে বালি তার অপরাধ।
রাবণ হইল মুক্ত পরম আহ্লাদ।।
এক যুক্তি শুন প্রভু কমললোচন।
বালি সঙ্গে মিলন করাহ এইক্ষণ।।
মিলন হইলে রাম দুই সহোদরে।
দোঁহে মিলি মারি গিয়া লঙ্কেশ্বরে।।
ভ্রাতা দুই জনে যদি করাহ মিলন।
কোন্ ছার গণি তবে রাজা দশানন।।
পৃথিবীর মধ্যে কেবা বালিরাজে আঁটে।
রাবণে আনিবে বালি ধরি তার জটে।।
এতেক বলিল যদি সুগ্রীব তখন।
শুনিয়া শ্রীরামচন্দ্র কহেন বচন।।
করিয়াছি প্রতিজ্ঞা যে অগ্নি সাক্ষী করি।
বালি বধি তোমারে করিব অধিকারী।।
আমার বচন কভু না হয় খণ্ডণ।
পিতৃ-বাক্যক্রমে কেন আইলাম বন।।
এতেক বলিল রাম কমললোচন।
সুগ্রীবের ডাক দিয়া বলেন লক্ষ্মণ।।
সাত তালগাছ আছে একই সোসর।
প্রত্যয়েতে তোমার বিন্ধেন রঘুবর।।
সুগ্রীব বলেন, তবে শুনে নরবর।
নখের চাপনে বিন্ধে তাহা কপীশ্বর।।
সাত তালগাছ যদি বিন্ধে এক শরে।
তবে সে বালিকে তুমি জিনিবে সমরে।।
হাসেন শ্রীরঘুনাথ, আলো দশদিকে।
তালগাছ বিন্ধি মাত্র, কোন্ কাজে লাগে।।
সুচিত্র বিচিত্র বাণ কনক রচিত।
তূণ হৈতে লইলেন শ্রীরাম ত্বরিত।।
দৃঢ়মুষ্টি করি নিল দক্ষিণ হস্তেতে।
ছুটিল রামের বাণ সে সাত তালেতে।।
সপ্ত তাল ভেদ করি বাণ হৈল পার।
ঋষ্যমূক পর্ব্বত বিন্ধিয়া আগুসার।।
এক বাণে শৈল বিন্ধে সপ্তগাছ তাল।
বজ্রাঘাত শব্দে বাণ সন্ধ্যায় পাতাল।।
রাজহংস মূর্ত্তিমান আসিবার কালে।
পুনর্ব্বার বাণ আইল শ্রীরামের কোলে।।
নিজমূর্ত্তি ধরি বাণ তূণমধ্যে ঢোকে।
রামের বিক্রমে সবে হাত দিল নাকে।।
সকল বানর নিল রামের পদধূলি।
তুমি পার মারিবারে শত শত বালি।।
সুগ্রীব বলেন, তব বিক্রমেতে জানি।
বৈকুণ্ঠ ছাড়িয়া প্রভু এসেছ আপনি।।
তোমা হেন মিত্র মোরে দিলেন বিধাতা।
তোমার প্রসাদে পাব রাজদণ্ড ছাতা।।