Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 18

রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

বলিল সুগ্রীব রাজা করিয়া আহ্বান।
বানর কটক ঝাট আন হনুমান।।
হিমালয় সুমেরু মন্দর আদি করি।
বিন্ধ্যাচল রৈবত উদয় অস্তগিরি।।
সর্ব্বত্রে ঘোষণা দেহ আমার আজ্ঞায়।
যথা যে বানর থাকে, আইসে ত্বরায়।।
পাঠাও হে দূতগণে দেশ দেশান্তর।
দশদিন মধ্যে যেন আইসে সত্বর।।
ইহাতে বিলম্ব যেই করিবে বানরে।
প্রহারিয়া আনিবে তাহার চুলে ধরে।।
অন্যমত করিবে ইহাতে যেইজন।
আনিবে তাহারে করি নিগূঢ় বন্ধন।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালে আমার অধিকার।
কোথাও না থাকে যেন বানর সঞ্চার।।
সুগ্রীবের কোপেতে বানর সব কাঁপে।
কটক আনিতে চলে অতুল প্রতাপে।।
হনুমান বাহিরে হইয়া উপনীত।
ত্রিশ কোটি বানর পাঠায় চারিভিত।।
মেদিনী আকাশ যুড়ি চলে কপিসেনা।
যেন পঙ্গপাল যায়, না যায় গণনা।।
চলিল বানরগণ দেশ দেশান্তর।
পূর্ব্বদিকে চলি গেল নীল-নামধর।।
পশ্চিমে চলিয়া গেল নল মহামতি।
দক্ষিণ দিকেতে গেল আপনি সম্পাতি।।
হনুমান মহাবীর মহাপরাক্রম।
উত্তর দিকেতে যান করিয়া বিক্রম।।
একৈক জনার সঙ্গে চলে দশ লাখ।
মহাশব্দে চলে সবে, করে ডাক হাঁক।।
হুপহাপ লম্ফে ঝম্ফে কম্পে বসুমতী।
অতি কষ্টে ধরে ধরা কূর্ম্ম নাগপতি।।
তর্জ্জিয়া গর্জ্জিয়া বলে বালির কুমার।
যাত্রা কর কপিগণ আজ্ঞা অনুসার।।
দশ দিবসের মধ্যে আসিবে সকলে।
প্রাণদণ্ড করিব হে বিলম্ব হইলে।।
বাঁচিবে বলিয়া যদি সাধ থাকে মনে।
ত্বরা করি আসিবে সকল কপিগণ।।
পাঠাইল সকলেরে বালির নন্দন।
একেলা রহিল রাজবাটীর রক্ষণ।।
হইলেক দশ কোটি কপি আগুসার।
যারে পায় তারে আনে নাহিক বিচার।।
যুড়িয়া আকাশ ভূমি কপি ঝাঁকে ঝাঁকে।
দশ দিনে আইসে সকল থাকে থাকে।।
কিষ্কিন্ধ্যার মধ্যেতে লাগিল কোলাহল।
সুগ্রীবর ভেট আনি দিল ফুল ফল।।
সৈন্য দেখি সুগ্রীব ভাবেন মনে মনে।
কার্য্যসিদ্ধি হইবেক বুঝি অনুমানে।।
আইল কটক সব কিষ্কিন্ধ্যা ভিতর।
অসংখ্যক বানর দেখিতে ভয়ঙ্কর।।
কিষ্কিন্ধ্যায় প্রবেশ করিল কপিগণে।
চলিল সুগ্রীব রাজা মিত্র সম্ভাষণে।।
সুগ্রীব আপন ঠাটে বলিল বচন।
মিত্র-সম্ভাষণে আজি করিব গমন।।
সুগ্রীব করিতে যায় শ্রীরাম দর্শন।
লক্ষ্মণের প্রতি বলে বিনয় বচন।।
বিষ্ণু-অবতার তুমি রামের সোদর।
আপনি চড়হ প্রভু চতুর্দ্দোলোপর।।
তবে চতুর্দ্দোলে আমি চাপিবারে পারি।
মিত্র-দরশনে চল যাই ত্বরা করি।।
তোমার চরণে মোর এই নিবেদন।
শ্রীরাম লক্ষ্মণে যেন সদা থাকে মন।।
চতুর্দ্দোলে চড়েন তখন দুই জন।
চারিভিতে চামর ঢুলায় দাসগণ।।
পঞ্চশব্দ বাদ্য বাজে, করে শঙ্খধ্বনি।
কোলাহল করে সবে মহোৎসব গণি।।
কলরব শুনিয়া চিন্তেন রঘুমণি।
আমা সম্ভাষিতে আসে সুগ্রীব আপনি।।
নিকট হইল আসি সুগ্রীব রাজন।
মনে মনে ভাবে বীর মিত্র-দরশন।।
চতুর্দ্দোল হৈতে নামে রাম-বিদ্যমান।
চলি যায় সুগ্রীব পর্ব্বত মাল্যবান।।
রামের চরণ বন্দে করিয়া প্রণতি।
যোড়হাতে দাঁড়াইল সুগ্রীব ভূপতি।।
আদরে শ্রীরাম তারে করে আলিঙ্গন।
নিকটে বসিতে দিব্য দিলেন আসন।।
করিলেন মঙ্গল জিজ্ঞাসা রঘুবর।
সুগ্রীব বিনয়ে তার করিছে উত্তর।।
হরিয়াছ রাম মম বিপদ সকল।
তোমার প্রসাদে মিতা সকল মঙ্গল।।
বালিকে মারিয়া মোরে দিলে রাজ্যভার।
সত্যে বদ্ধ হইয়াছি, ধারি তার ধার।।
তোমার প্রসাদে পাইলাম রাজ্যখণ্ড।
সকল বানরগণ ধরে ছত্রখণ্ড।।
সীতা উদ্ধারিবে তুমি আপনার গুণে।
উপলক্ষ্য কেবল থাকিব তব সনে।।
যতেক বানর থাকে পৃথিবী উপরে।
যতেক বসতি থাকে পর্ব্বত শিখরে।।
সে সকল আসিয়াছে আমার সংবাদে।
কোটি কোটি বৃন্দ বৃন্দ অর্ব্বুদে অর্ব্বুদে।।
দুরন্ত বানরসৈন্য না হয় গণন।
ইহারা যে মনে করে, কে করে লঙ্ঘন।।
তিন কোটি যোজনের পথ ত্রিভুবন।
প্রবিশিবে সর্ব্বত্রে দুর্জ্জয় কপিগণ।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল সৃজন বিধাতার।
যেখানে থাকুক সীতা, করিব উদ্ধার।।
তোমার চরণে ভক্তি থাকিলে আমার।
কোন্ কার্য্য গণি আমি সীতার উদ্ধার।।
আমি কি বলিব প্রভু তোমার চরণে।
উদ্ধার আপনি সীতা আপনার গুণে।।
ইন্দ্র আদি দেবগণ তোমারে ধেয়ায়।
গগনে উদয় রবি তোমার আজ্ঞায়।।
তোমার সৃজন সৃষ্টি এ তিন ভুবন।
তোমার নিদ্রায় নিদ্রা, চেতনে চেতন।।
কত শত জন্ম ব্রহ্মা তপস্যা করিল।
তবু তব পাদপদ্ম দেখা না পাইল।।
হেন পাদপদ্ম দেখি প্রত্যক্ষ নয়নে।
আপনারে ধন্য করি মানি এত দিনে।।
আমি ত বানরজাতি, কি বলিতে পারি।
মিত্র বল আমারে সে দয়া আপনারি।।
যাবৎ না হয় প্রভু সীতা উদ্ধারণ।
তাবৎ আমার নাহি শয়ন ভোজন।।
সীতারে আনিয়া দিলে তোমার গোচরে।
তবে ত করিব রাজ্যে কিষ্কিন্ধ্যানগরে।।
সন্তুষ্ট হইয়া রাম কমললোচন।
সুগ্রীবের উঠিয়া দিলেন আলিঙ্গন।।
সুগ্রীবের ভাগ্যকথা কে বলিতে পারে।
শ্রীনাথ দিলেন কোল বনের বানরে।।
সবা হৈতে সুগ্রীবের অধিক কপাল।
যার প্রতি সদা রাম পরম দয়াল।।
শ্রীরাম বলেন, শুন সুগ্রীব সুহৃদ।
তোমা বিনা আমার কে করিবেক হিত।।
অপূর্ব্ব না মানি সূর্য্য হরে অন্ধকার।
অপূর্ব্ব না মানি আমি সীতার উদ্ধার।।
অপূর্ব্ব না গণি মেঘ বরিষয়ে জল।
তোমারে অপূর্ব্ব মিত্র মানি যে কেবল।।
দুই মিত্র পর্ব্বতে করেন সম্ভাষণ।
আকাশ মেদিনী যুড়ি আসে কপিগণ।।
সহস্র কোটি বানরে আইল শতবলী।
যার সৈন্য চলিলে গগনে লাগে ধূলি।।
গবাক্ষ শরভ গয় সে গন্ধমাদন।
বানর সহস্র কোটি সঙ্গে আগমন।।
অঞ্জনিয়া বড় ধূমা আইল ধূম্রাক্ষ।
ত্রিশ কোটি কপি লয়ে আইল নীলাক্ষ।।
বানর সহস্র কোটি সহিত প্রমাথী।
আইল আপন সৈন্য আচ্ছাদিয়া ক্ষিতি।।
প্রমাথী বানর বলী ক্ষণে যদি নড়ে।
দশ প্রহরের পথ সৈন্য আড়ে যোড়ে।।
সত্তর যোজন বীর আড়ে পরিমাণ।
সকলে করয়ে যার শরীর বাখান।।
হিঙ্গুলিয়া পর্ব্বতের হিঙ্গুলিয়া রঙ্গ।
বানর সহস্র কোটি সহিত বিভঙ্গ।।
বানর সত্তর কোটি লইয়া কেশরী।
যাহার বসতি স্থান সে মলয়গিরি।।
পূর্ব্ব হৈতে আইল বিনোদ সেনাপতি।
বানর সহস্র কোটি তাহার সংহতি।।
ধূম্রাক্ষ আইল ধূম্র সুগ্রীবের শালা।
গগন যুড়িয়া ঠাট যেন মেঘমালা।।
সম্পাতি বানর আইল গৌরবর্ণ ধরে।
দেখিলে বিপক্ষ যায় পলাইয়া ডরে।।
আইল সুষেণ বৈদ্য রাজার শ্বশুর।
তিন কোটি বৃন্দ ঠাট আইল প্রচুর।।
ভল্লগণ সহিত আইল জাম্বুবান।
দুর্জ্জয় আইল মহাবীর হনুমান।।
যুবরাজ আইল সে বালির কুমার।
বানর সহস্র কোটি যায় পরিবার।।
শত লক্ষ বানরেতে এক কোটি জানি।
শত কোটি বানরেতে এক বৃন্দ গণি।।
শত কোটি বৃন্দে এক অর্ব্বুদ গণন।
শত কোটি অর্ব্বুদেতে খর্ব্ব নিরূপণ।।
শত কোটি খর্ব্বে এক মহাখর্ব্ব জানি।
শত কোটি মহাখর্ব্বে এক শঙ্খ গণি।।
শত কোটি শঙ্খে মহাশঙ্খের গণন।
শত কোটি মহাশঙ্খে পদ্ম নিরূপণ।।
শত কোটি পদ্মে এক মহাপদ্ম গণি।
শত কোটি মহাপদ্মে সাগর বাখানি।।
শত কোটি সাগরে মহাসাগর জানি।
শত কোটি মহাসাগরে এক অক্ষৌহিণী।।
শত কোটি অক্ষৌহিণীতে এক অপার।
অপারের অধিক গণনা নাহি আর।।
নদ নদী বাপী ঠাট ভাঙ্গিল পর্ব্বত।
সর্ব্ব ঠাট যুড়ে গেল মাসেকের পথ।।
পৃথিবী যুড়িল সৈন্য নাহি দিশপাশ।
কটকের চাপ দেখি রামের উল্লাস।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress