রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড – সুগ্রীবের সহিত লক্ষ্মণের কথোপকথন
সুগন্ধি পুষ্পের মালা সুগ্রীবের গলে।
সেই মাল্য সুগ্রীব ফেলিল ভূমিতলে।।
সিংহাসন ছাড়িয়া উঠিল ততক্ষণ।
যোড়হাতে লক্ষ্মণেরে করিছে স্তবন।।
হারাইয়া রাজ্য পাই রামের প্রসাদে।
তোমার প্রসাদেতে বাড়িলাম সম্পদে।।
হেন রঘুনাথ স্বয়ং বিষ্ণু অবতার।
কার শক্তি শোধিবেক শ্রীরামের ধার।।
সীতা উদ্ধারিবেন রাম আপন শক্তিতে।
যাইব কেবল আমি তাঁহার সহিতে।।
না করিয়া রামকার্য্য বসে আছি ঘরে।
বানর জাতির দোষ লাগে ক্ষমিবারে।।
পশুজাতি কপি আমি, যত করি দোষ।
সেবক বৎসল রাম না করেন রোষ।।
লক্ষ্মণ বলেন, শুন সুগ্রীব রাজন।
রামকার্য্য করি কর পুণ্য উপার্জ্জন।।
রামকার্য্য করিলে সর্ব্বত্র হয় জয়।
না করিলে ধর্ম্মলোপ, অধর্ম্ম সঞ্চয়।।
সত্যবাদী হৈলে করে সত্যের পালন।
মনে কর করিয়াছ সত্য দুই জন।।
শ্রীরাম আপনি সত্যে হৈয়াছেন পার।
তুমি সত্যে বদ্ধ আছ, অধর্ম্ম অপার।।
রামেরে কাতর দেখি বলেছি কর্কশ।
তোমারে বিরূপ বলা আমার অযশ।।
ক্ষমা কর কপীশ্বর, দুঃখ পরিহার।
তোমারে দুর্ব্বাক্য বলা অতি দুরাচার।।
মান্য লোকে মন্দ কথা নহে উপযুক্ত।
মান্যসহ আলাপ করিবে ধর্ম্মযুক্ত।।
ধর্ম্ম রাখ কর্ম্ম কর যে হয় বিদিত।
রামকার্য্য করিলে হইবে সব হিত।।
সাগর অপার, কে হইবে পার,
তার মাঝে লঙ্কাপুরী।
কে যাবে তথায়, কি করে কথায়,
উপায় তাহে না হেরি।।
সুগ্রীব রাজন, কর আগমন,
শ্রীরামের সন্নিধান।
করিয়া নির্দ্ধায্য, কর মিত্রকার্য্য,
কর রামে ধৈর্য্যবান।।
রাবণ সংহার, জানকী উদ্ধার,
কর এই উপকার।
তোমার উদযোগ, নহিল দুর্য্যোগ,
কে লইবে হেন ভার।।
রাবণ দুরন্ত, কর তার অন্ত,
অনন্ত যশঃ প্রকাশ।
গীত রামায়ণ, করিল রচন,
ভাষা করি কৃত্তিবাস।।