Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কিন্ডার ফুলমুন আকাশে বিলীন || Sankar Brahma

কিন্ডার ফুলমুন আকাশে বিলীন || Sankar Brahma

গোমতি নদির ধারে নৈমিষারণ্যে, এক দৈত্য বাস করত। তার নাম কশ্যপ। শক্ত গাছের গুঁড়ি দিয়ে একটি কুটির তৈরী করে সেখানে বাস করত তারা। তার সঙ্গে থাকত তার বৌ পাপিয়ো ও পাঁচ বছরের একটি শিশুপুত্র নাম কিন্ডা। কিন্ডার চোখদুটি কটা-কটা, মাথার চুলগুলি খয়েরি রঙের খাড়া খাড়া ধান কাটা মাঠের মতো।
প্রায়দিনই কশ্যপ সকালবেলায়, বারান্দায় কাঠের শক্ত সোফায বসে, যেটা তারই হাতে তৈরী করা, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখত গোমতি নদির বয়ে যাওয়া , আর তা দেখতে দেখতে মুগ্ধতা তার মনে ছড়িয়ে পড়ত। মনে হতো যেন তার ছোটবেলার দিনগুলি বয়ে যাচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। পাপিয়ো তখন তার পাশের সোফায় বসে, গাছের ছালের তন্তু বের করে, তা দিয়ে তৈরী করত সূতো। আর সেই সূতো দিয়ে সে সকলের জন্য তৈরী করত পোষাক।
তাদের পাঁচ বছরের ছেলে কিন্ডা তখন কুটিরের বাইরে পাইনবনে একা একা খেলা করত। তাদের জীবনে সুখের কমতি ছিল না। সংসার তাদের খুব গোছানো ও পরিপাটি ছিল। প্রত্যেকের থাকার জন্য তাদের আলাদা আলাদা কক্ষ ছিল। আলাদা আলাদা বিছানা ছিল প্রত্যেকের কক্ষে। বসার জন্য তাদের আলাদা আলাদা কাঠের সোফা ছিল। খাবারের জন্য ছিল প্রত্যেকের নিজস্ব পাত্র ও জলের গ্লাস।

কশ্যপের জিনিষগুলি ছিল একটু বড় আকারের, পাপিয়োর জিনিষগুলি ছিল মাঝারি আকারের আর কিন্ডার জন্য ছিল সব ছোট আকারের জিনিষপত্র।

আপেলের সুপ, গাজরের হালুয়া, আতার পায়েস খেতে ভালবাসত কশ্যপ আর কিন্ডা। পাপিয়ো তাদের জন্য তা তৈরী করত মাঝে মাঝেই।
কিন্ডার জন্মদিন ছিল সেদিন। সকালটা ছিল উজ্জ্বল মনোরম রোদের। সুমধুর সকালের মৃদু-মন্দ বাতাস বইছিল বাইরে। পাপিয়ো দ্রুত হাতে তাদের জন্য ওইসব লোভনীয় খাবার তৈরী করে, যার যার নির্দিষ্ট পাত্রে ঢেকে রেখে, খুব সুন্দর সব পোষাক পরে, কশ্যপের সঙ্গে কিন্ডাকে নিয়ে বনের মধ্যে ঘুরতে বেরোল।

এক পরি-বালিকা সেদিনই তার মায়ের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে , নৈমিষারণ্যের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি বনের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে, নদির দিকে উড়তে উড়তে এসে কশ্যপের ঘরটি দেখতে পেল, আর সেখানে উড়ে এসে নামল। ঘরের সামনে নেমে, কারও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে, সে সুন্দর কুটিরের ভিতর উঁকি মেরে দেখল। সেখানে কাউকে দেখতে না পেয়ে, অবাক হল। সংকোচ হল তার, কাউকে না বলে, কারও কুটিরের ভিতরে ঢুকতে। ঢোকা ঠিক হবে কিনা কয়েক মুহূর্ত ভাবল সে। তারপর দ্বিধা সংকোচ ত্যাগ করে, সাহসে ভর করে সে কুটিরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। ঢুকে দেখল ভিতরটা কী সুন্দর ! রান্নাঘর থেকে সুখাদ্যের সুন্দর ঘ্রাণ আসছিল। সে রান্না ঘরে ঢুকে দেখল, ছোট বড় মাঝারি সব পাত্রে ঢাকা দেওয়া সুগন্ধী সব খাবার সাজান আছে। মেয়েটির খুব খিদে পেয়েছিল। টেবিলে রাখা ছোট চামচটা নিয়ে সে সবগুলি পাত্র থেকে একটু একটু করে সব খাবারের স্বাদ গ্রহণ করবে কিনা সে ভাবল। তারপর তার মনে হল, এভাবে অন্যের খাবার খাওয়া কি তার পক্ষে উচিৎ হবে?
কিন্তু খিদের তাড়নায় একসময়, সে সব ভাবনা ভুলে, একটা পাত্রের ঢাকনা খুলে একসময়, ছোট চামচ দিয়ে সে তার থেকে খানিকটা তুলে খেয়ে দেখল। কী অপূর্ব স্বাদ। তারপর সে একই ভাবে সব পাত্রগুলি থেকেই সে একবার করে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করল ছোট চামচ দিয়ে। তারপর সব পাত্রগুলি আগের মতো ঢাকা দিয়ে রেখে, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখল বারান্দায় তিনটি সোফা পাতা। একটি বড়, একটি খুব ছোট, আর একটি মাঝারি আকারের।
সে প্রথম বড়টায় বসল। তেমন আরাম পেল না।
তারপর ছোটটায় বসতে গিয়ে দেখলো, বেশ আটোসাটো লাগছে। সেখান থেকে উঠে এসে মাঝারিটায় বসে, সে বেশ আরাম পেল। ভরা পেটে, আরামে তার চোখ বুজে আসছিল। চোখে ঘুম নেমে আসায়, সে ঘরের ভিতর ঢুকে দেখল, তিনটি কক্ষের ভিতর পরিপাটি করে তিনটে বিছানা পাতা।
একটি কক্ষে বড় বিছানা, একটি কক্ষে মাঝারি আর একটি কক্ষে ছোট বিছানা পরিপাটি করে পেতে রাখা আছে।
প্রথম বড় বিছানাটায় শুয়ে, গড়াগড়ি দিয়ে খানিকটা, তার বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগল নিজেকে। তখন সে ছোটটায় শুতে গিয়ে দেখল, বিছানা থেকে তার পা বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই সে মাঝারি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। শুয়ে পড়ার পর, কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছে, খেয়াল নেই তার, মোটেও টের পায়নি।

বৌ পাপিয়ো আর ছেলে কিন্ডাকে নিয়ে সারাদিন বনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কতকিছু দেখল কশ্যপ , দেখে তাদের সবারই খুব আনন্দ হল। দিন শেষ হয়ে আসছে দেখে, কশ্যপ সকলকে নিয়ে, ঘরে ফেরার উদ্যোগ করল। সারাদিন ঘুরে তারা সকলেই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। খিদেও পেয়েছিল খুব। ক্লান্তি আর একরাশ খিদে নিয়ে তারা নিজেদের ঘরে ফিরে এল।
কশ্যপ বারান্দায় পা দিয়েই, চিৎকার করে উঠল, আমার সোফায় কে বসেছে? সোফাটা কেমন লন্ডভন্ড করে কে রেখেছে? পাপিয়ো সেই একই কথা বলল। কিন্ডাও কান্না জুড়ে দিয়ে বলল, মা আমার আমার সোফাটাও দেখ কেমন এলোমেলো করে রেখে গেছে।
কশ্যপ রাগে চিৎকার করে উঠল, কে সে? কার এত সাহস?
পাপিয়ো বলল, তা আমি কি করে জানব? আমরা সবাই তো বাইরে বেড়াতে গেছিলাম।
এইকথা বলে পাপিয়ো রান্নাঘরে ঢুকে দেখল। সব পাত্র থেকেই কেউ একটু একটু খাবার তুলে খেয়েছে। সে কশ্যপকে রান্নাঘরে ডেকে এনে, তাকে সব পাত্রগুলির ঢাকনা খুলে তা দেখাল। কশ্যপ তো, তা দেখে রেগে আগুন। পাপিয়ো বলল, রাগলে আর কি হবে এখন? তার চেয়ে যা আছে, তাই এখন আমাদের ভাগ করে খেতে হবে। তাদের সকলেরই খুব খিদে পেয়েছিল, আর কোন উপায় ছিল না তাদের।
শেষে তাই করতে হল তাদের। বাকী খাবার যা ছিল, তা ভাগ করে তারা, তাদের পাত্রে নিয়ে পেট ভরে খেল। সারাদিন পর তা খেয়ে খুবই তৃপ্তি বোধ করল তারা সকলে। ঢেকুর তুলল কশ্যপ।
খাওয়া শেষ করে, কশ্যপ বারান্দায এসে সোফায় বসে, একটা চুরুট ধরাল। খাওয়ার পর পাপিয়ো, রান্নাঘরে এঁটো পাত্রগুলি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে, জায়গা মতো তুলে রাখছিল।
তাদের ছেলে কিন্ডা তখন তার কক্ষে চলে গেছে, বিছানায় শোবার জন্য। সে সেখান থেকে চিৎকার করে বলে উঠল, মা দেখে যাও, কে আমার বিছানা উলটপালট করে রেখে গেছে। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পাপিয়ো কিন্ডার কক্ষে গিয়ে দেখল, সত্যিই ছেলের বিছানাটা লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে। সে ঘর থেকে বাইরে ঘুরতে বের হবার সময় সকলের বিছানা পরিপাটি করে পেতে গুছিয়ে রেখে গেছিল। সে কশ্যপকে ডাকল তা দেখাবার জন্য। বলল, ওগো একবার এ ঘরে এসে দেখে যাও, কী কান্ড।
কশ্যপ তার ডাক শুনে বিরক্ত হযে, আধ খাওয়া চুরুটটা বাইরে ছুড়ে ফেলে দিল। সে শোবার কক্ষে কখনই ধুমপান করে না । কিন্ডার ঘরে গিয়ে বিছানার অবস্থা দেখে সেও অবাক না হয়ে পারল না। কে করল, পরিপাটি করে পাতা কিন্ডার বিছানার এমন অবস্থা?
পাপিয়ো আবার কিন্ডার বিছানা সুন্দর করে পেতে দিয়ে ছেলেকে বলল, যাও বাছা কিন্ডা, এবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড় গিয়ে।
কশ্যপ তখন কিন্ডার কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এসে, তার নিজের কক্ষে ঢুকল।
ঢুকে দেখল, তার বিছানাটাও কিন্ডার বিছানার মতো তছনছ করা। দেখেই বোঝা যায় কেউ বিছানায় উঠে বসেছিল। সে ভেবে পেল না, কে করতে পারে এসব কান্ড? কার এতো সাহস?
এমন সময় গিন্নি আবার ডাকল তাকে গিন্নির কক্ষ থেকে। একবার এসে দেখে যাও।
গিন্নির ডাক শুনে কশ্যপ ভাবল, গিন্নির বিছানাটাও নিশ্চয় এলোমেলো করে রেখেছে কেউ, তাই দেখতে ডাকছে। ফলে, বিরক্তির সুরে বলল, দেখবার কি আছে?
– আহা, একবার এসে দেখেই যাও না।
অগত্যা কশ্যপ পাপিয়োর কক্ষে গিয়ে যা দেখল, তা দেখে তাজ্জব হয়ে গেল সে। একটি পরি-বালিকা গিন্নির বিছানায় নিশ্চিন্তে শুয়ে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাকে দেখে দু’জনেই বিস্ময়ে হতবাক। পরস্পর পরস্পরের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
পরি মেয়েটির ঘুম ভাঙাতে তাদের ইচ্ছে হল না। পাপিয়ো বলল, একবার আমাদের কিন্ডাকে ডেকে এনে দেখাই এই দৃশ্য। তাহলেই সে বুঝতে পারবে, সবকিছু এলোমেলে করার মূলে, তার কারিগর কে ! কশ্যপ কিছু বলল না।
পাপিয়ো কিন্ডার কক্ষে গিয়ে দেখল, ছেলে তখনও ঘুমায়নি। সে বলল, কিন্ডা একটা জিনিষ দেখে যা, আমার সঙ্গে আমার কক্ষে এসে। কিন্ডা মায়ের কথা শুনে বিছানা ছেড়ে নেমে এসে, মায়ের পিছন পিছন তার কক্ষে গিয়ে দেখল, সোনালী চুলের একপরি মায়ের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। সে অবাক হয়ে বাবা মার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, মা ডাকি ওকে?
মা বলল, না ঘুমাচ্ছে, এখন থাক। পরে –
কিন্ডা তখন বায়না ধরে কশ্যপকে বলল, বাবা একবার ডাকি না ওকে?
কশ্যপ কিছু বলার আগেই, তাদের কথবার্তা শুনে, পরি-বালিকার ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙেই সে বিছানায় উঠে বসে, সামনে তিনজন দৈত্যকে দেখতে পেয়ে, খুব ঘাবড়ে গেল। কি করবে বুঝতে পারল না।
হাত জোড় করে বলল, আমাকে দয়া করুন আপনারা। আমি মায়ের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে এই বনের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম, তারপর উড়তে উড়তে আপনাদের কুটিরটা দেখতে পেয়ে, এখানে এসে হাজির হই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কারও দেখা না পেয়ে, খুব খিদে পেয়েছিল বলে, কুটিরের মধ্যে ঢুকি। খাবারের সুগন্ধে জিবে জলে এসে গেছিল আমার, রান্নাঘরে ঢুকে কিছুটা খাবারও তাই খেয়ে ফেলেছি। তারপর খুব ঘুম পেয়ে যাওয়ায়, এখানে এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। আমাকে ক্ষমা করুন।
কশ্যপ তার কথা শুনে বলল, ঠিক আছে। তোমার ভয়ের কিছু নেই। আমরা তোমার কোন ক্ষতি করব না।
পাপিয়ো দেখল, শঙ্কায় মেয়েটির চোখের মণিদুটো নীল জোনাকির আলোর মতো তিরতির করে কাঁপছে তখনও। সে তখন মেয়েটির কাছে এসে, তার পিঠে হাত রেখে বলল, তোমার কোন ভয় নেই মা। তুমি আমাদের কাছেই থাকবে, তোমার মা না আসা পর্যন্ত। পরি-বালিকা তার কথা শুনে কিছুটা ভরসা পেল।
কিন্ডা আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠল, হুররে কী মজা হবে তাহলে। আমি ওর সঙ্গে খেলব সারাদিন।
পরি-বালিকা সে রাতে পাপিয়োর পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে কাটালো সরারাত।

পরদিন ভোরেই পরির মা খুঁজতে খুঁজতে এসে নৈমিষারণ্যে হাজির হল। সেখানে এসে দেখল, তার মেয়ে এক খুদে দৈত্যর সাথে পাইনবনে ঘুরছে। সে সেখানে উড়ে গিয়ে, তাদের পিছন দিকে এসে নামল। মেয়েকে ডাকল, ফুলমুন।
চেনা কন্ঠস্বর শুনে, পিছনে তাকিয়ে মাকে দেখে পরি-বালিকা ফুলমুনের আনন্দ আর ধরে না বুকে। সে এক ছুটে এসে মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মা তাকে বুকে চেপে ধরে, মেয়েকে বলল, ওই খুদে দৈত্যটি কে?
– ওহ্ মা, সে অনেক কথা। সব তোমায় খুলে বলব, আগে তুমি চল আমার সঙ্গে।
– কোথায়?
– আগে চলোই না। গেলেই, তা দেখতে পাবে।
তারপর মায়ের হাত ধরে, তাকে নিয়ে কশ্যপদের কুটিরের দিকে হাঁটতে লাগল। কিন্ডা তাদের পিছনে পিছনে আসতে লাগল।

কশ্যপ সকালবেলায়, বারান্দায় সোফায বসেছিল। দু’জন পরিকে আসতে দেখে পাপিয়োকে ডাকল। সে তখন ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিল। এই সময় ডাকায় সে বিরক্ত হয়ে, স্বামীর ডাক শুনে সে বারান্দায় এসে দাঁড়াল, তারপর কশ্যপকে বলল, কি ডাকছ কেন এসময়?
– ওই দেখ কারা আসছে, সে আঙ্গুল তুলে ওদের দেখাল।
পাপিয়ো দেখল, পরি-বালিকা কার হাত ধরে এদিকেই আসছে।
কশ্যপ বলল, ওর মা বোধহয়?
– তাই হবে।

ওরা ততক্ষণে ওদের কাছে এসে পড়েছে। পরি-বালিকাটি পাপিয়োর দিকে তাকিয়ে, তার হাতে ধরা পরিকে দেখিয়ে বলল, এই আমার মা।
পাপিয়ো হাতজোড় করে তাকে নমস্কার করে বলল, আসুন, আসুন, ভিতরে আসুন।
ফুলমুনের মা, না না করছিল।
ফুলমুন তার মার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেল। তারপর তাদের সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল।
পাপিয়ো তার নিজের সোপাটা তার দিকে এগিয়ে দিল বসবার জন্য।
ফুলমুনের মা দ্বিধা ভরে, সংকোচে সেখানে বসল।
কশ্যপ নিজের সোফা ছেড়ে সেখান থেকে উঠে ভিতরের কক্ষে গেল। পাপিয়ো তাতে বসল, তারপর পাপিয়ো ফুলমুনের মার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, আপনার মেয়েটি ভারি সুন্দর।
ফুলমুন ছোট সোফাটায় কোন রকমে আটোসাটো হয়ে বসে, মাকে গতদিনের পুরো ঘটনাটা বিস্তারিত ভাবে গুছিয়ে বলছিল।
ততক্ষণে কিন্ডা এসে পড়েছে সেখানে। তারপর বারান্দায় উঠে সে ফুলমুনের বসা সোফার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, ফুলমুনের কথাগুলি শুনছিল।
‘আপনারা কথা বলুন, আমি আসছি’ বলে, পাপিয়ো সোফা ছেড়ে উঠে, রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।
এবার কিন্ডা সেখানে বসে, পরির মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল
– কি দেখছ?
– আন্টি আপনি খুব সুন্দর দেখতে
– তাই, বলে পরির মা হাসল।
ফুুলমুন তখন কিন্ডার দিকে তাকিয়ে বলল, আর আমি বুঝি সুন্দর না?
কিন্ডা এবার খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, তুমিও খুব সুন্দর।
ফুলমুন তার কথা শুনে হাসল।

ওরা কথা বলতে বলতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই পাপিয়ো ওদের জন্য আপেলের সুপ তৈরি করে এনে, ধোঁয়া ওঠা অবস্থায় পাত্রগুলি ওদের সামনে রাখল।
পরির মা দেখেই বিস্মিত কন্ঠে বলল, এ কী !
– আপনি প্রথম দিন এলেন, কিছু না খায়িয়ে ছাড়লে আমাদের অকল্যাণ হবে।
এরপর আর কোন কথা বলা চলে না। কি বলবে? কোন কথা খুঁজে পেল না পরির মা।
তখন ফুুলমুন বলল, মা খেয়ে দেখ আন্টি খুব ভাল রান্না করে।

খাওয়া শেষ হলে পরির মা বলল, খুব তৃপ্তি করে খেলাম। সত্যিই খুব ভাল ভাল রান্না করেন আপনি।
এমন সময়, কশ্যপ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে, হাসি মুখে বলল, ও কথা আর বলবেন না ম্যাডাম, তাহলে দেমাতে ওর পা আর মাটিতে পড়বে না।
শুনে পরির মা হি হি হি হি করে হেসে উঠল।
পাপিয়ো তা শুনে তীর্যকভাবে মুখ বেঁকিয়ে কশ্যপের দিকে তাকিয়ে বলল, আহা আমাকে যেন সব সময় তুমি শুধু উড়ে বেরাতেই দেখছ?

ওদের খাওয়ার পর কশ্যপরাও সকলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিল। তারপর সকলে মিলে নদির ধারে ঘুরতে বের হল। ঘুরতে ঘরতে খুব মজা হল ওদের নিজেদের মধ্যে। সকলেই খুব আনন্দ উপভোগ করল।
দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে দেখে, পরির মা ভাবল, এবার ফুলমুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সেকথা পাপিয়োদের জানাতেই, তাদের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। আর একদিন থেকে যাওযার অনুরোধ করল পাপিয়ো আর কশ্যপ। সে কথা রাখা সম্ভব হল না ফুলমুনদের।

‘আজকের দিনটা খুবই আনন্দে কাটল’, বলে পরির মা পাপিয়োদের বিদায় জানিয়ে, ওরা ডানা ঝেরে উড়ান দিল। কিন্ডা তাকিয়ে রইল সে দিকে। তাকিয়েই রইল, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা বিলীন হয়ে গেল আকাশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress