Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

টুশি যে-পরিবারটির সাথে থাকতে গেল তারা কীভাবে কীভাবে জানি টুশির আত্মীয় হয়। নানা ধরনের হিসাব করে সঠিক সম্পর্কটা বের করে ফেলা যায়, কিন্তু টুশি এত ঝামেলার মাঝে গেল না, ভদ্রলোককে ডাকল চাচা এবং তার স্ত্রীকে ডাকল চাচি। টুশির এই নূতন চাচা-চাচি যে খুব আগ্রহ নিয়ে টুশিকে নিজেদের কাছে এনে রেখেছেন সেটা ঠিক নয়। টুশির সাথে দুজনেই মোটামুটি একধরনের ভদ্রতা বজায় রেখেছেন, কিন্তু এর মাঝে কোনো আন্তরিকতা নেই–টুশি খুব সহজে সেটা ধরে ফেলল। টুশির যেন টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা না হয় সেজন্যে মারা যাবার আগে নানা একটা ট্রাস্ট খুলে ব্যবস্থা করে গেছেন–এরকম একটা ব্যবস্থা করা না হলে এই পরিবারটি তাকে বাসায় এনে রাখতে রাজি হত কি না সেটা নিয়ে টুশির মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।

টুশির নূতন চাচার নাম ইমতিয়াজ আহমেদ, মানুষটি মোটাসোটা গোলগাল, নাকের নিচে সিরাজদ্দৌলার মতো সরু গোঁফ। মোটাসোটা মানুষ সাধারণত হাসি খুশ হয়, কিন্তু ইমতিয়াজ আহমেদ গোমড়ামুখী মানুষ। কথা বলেন কম, হাসেন আরও কম। তাঁর স্ত্রী শায়লা আহমেদ মোটামুটি সুন্দরী মহিলা, হালকা পাতলা এবং একধরনের ধারালো চেহারা। ঠোঁট দুটো সরু বলে তাঁকে কেমন জানি অহংকারী দেখায়। তাঁদের একটামাত্র ছেলে, তার বয়স সাত এবং সে ক্লাস টুতে পড়ে। ছেলেটা মায়ের মতো ছিপছিপে, বড় বড় কৌতূহলী চোখ। প্রথম দিন চাচা-চাচি টুশিকে তাদের ছেলের ঘরে পরিচয় করিয়ে দিতে এনে বললেন, “তপু, এই যে তোমার নূতন আপু—“

তপু কোনো কথা না বলে কেমন জানি ভয়-পাওয়া চোখে একবার টুশির দিকে, একবার তার আব্ব আরেকবার তার আম্মুর দিকে তাকাল। ছেলেটার ভয় ভাঙানোর জন্যে টুশি একটু হাসার চেষ্টা করল, কিন্তু কোনো লাভ হল না। তখন তার আম্মু কঠিন একধরনের গলায় বললেন, “এই আপু তোমার ঘরে থাকবে। তুমি তোমার এই আপুকে বিরক্ত করবে না। ঠিক আছে?”

ছেলেটা সাথে সাথে মাথা নাড়ল, টুশি অবাক হয়ে বুঝতে পারল এই ছোট বাচ্চাটা তার বাবা-মাকে ভয় পায়। কী আশ্চর্য! টুশির যদি নিজের বাবা-মা থাকত তা হলে সে তাদের নিয়ে কী যে কাণ্ড করত সেটা কাউকে বোঝাতেও পারবে না। আর এই ছোট ছেলেটার নিজের বাবা-মা অথচ তাদেরকে ভয় পায়–কী অবিশ্বাস্য ব্যাপার!

টুশিকে তপুর ঘরে রেখে বাবা-মা বের হয়ে যাবার সাথে সাথে টুশি ছেলেটার সাথে ভাব করার চেষ্টা করল। বলল, “আমাকে তোমার ঘরে থাকতে দেবে?”

ছেলেটা মাথা নাড়ল।

“আমাকে তোমার ভয় করবে না তো?”

ছেলেটা মাথা নেড়ে জানাল যে ভয় করবে না।

“আমার নাম তুমি জান?”

ছেলেটা মাথা নেড়ে জানাল সে জানে না এবং নামটা জানার জন্যে সে চোখেমুখে একটু কৌতূহল দেখাল।

“আমার নাম হচ্ছে টুশি। কেন আমার নাম টুশি তুমি জান?”

ছেলেটা আবার মাথা নেড়ে জানাল যে সে জানে না।

টুশি কবিতার ছন্দ করে বলল,

“আমি একজনকে মেরেছিলাম ঘুসি–
সেই জন্যে আমার নাম টুশি!”

এই প্রথমবার ছেলেটার মুখে হালকা একটু হাসি দেখা গেল। টুশি এবারে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল “তোমার নাম কেন তপু জান?”

ছেলেটি মাথা নেড়ে জানাল সে জানে না কিন্তু কেন সেটা জানার আগ্রহ তার চোখে মুখে ফুটে উঠল। টুশি আবার কবিতার মতো ছন্দ করে বলল,

“তোমার বিশাল বপু–
সেই জন্যে তোমার নাম তপু।”

ছেলেটা ফিক করে একটু হেসে ফেলল, তারপর প্রথমবার মুখ খুলল, জিজ্ঞেস করল, “ব-ব-বপু মানে কী?”

ছেলেটা একটা কথাও না বলে কেন শুধু মাথা নেড়ে নেড়ে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল টুশি এবারে সেটা বুঝতে পারে। কথা বলার সময় তার নিশ্চয়ই একটু তোতলামো এসে যায় এবং সেটা নিয়ে লজ্জা পায়। টুশির খুব মায়া হল ছেলেটার জন্যে তাই ভান করল সে তোতলামোটুকু লক্ষই করেনি। বলল, “বপু মানে জানিস না? বপু মানে হচ্ছে শরীর।”

“আ-আ-আমার শরীর কি বিশাল?”

টুশি চোখ কপালে তুলে বলল, “ওমা! তোর শরীর যে বিশাল জানিস না? এই দ্যাখ তোর কত বড় ভুড়ি-তুই যখন হাঁটিস তখন তোর ভুঁড়ি থলথল করে। তোর হাত হচ্ছে থাম্বার মতো মোটা। তোর গালের পাশে চর্বি জমে আছে, তোর মুখ এত মোটা যে তোর চোখ দুটো দেখাই যায় না ছোট ছোট ইঁদুরের মতো কুকুতে চোখ”

তপু টুশির মুখে নিজের বর্ণনা শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল, তারপর বলল, “তু-তুমি একটা জোকার।”

“উঁহু।” টুশি মাথা নাড়ল, “ছেলেরা হয় জোকার। মেয়েরা হয় জোকারনি।”

তপু আবার হি হি করে হাসতে থাকে। তপুর হাসির শব্দ শুনে তার আম্মু ঘরে উঁকি দিলেন এবং সাথে সাথে তপু হাসি বন্ধ করে ফেলল, এই বাসায় হাসাহাসি করা মনে হয় নিষেধ। আম্মু ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে?”

তপু কথা বলার চেষ্টা করল কিন্তু হঠাৎ করে তার তোতলামোটা অনেক বেড়ে গেল, সে কথা শুরুই করতে পারল না, আম্মু মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “হোম-ওয়ার্ক করেছিস?”

তপু মাথা নেড়ে জানাল হোমওয়ার্ক করেনি। আম্মু কঠিন মুখে বললেন, “হোম-ওয়ার্ক না করে ইডিয়টের মতো হাসছিস যে বড়? হোম-ওয়ার্ক শেষ কর।”

তপু সাথে সাথে যন্ত্রের মতো উঠে গিয়ে টেবিল থেকে খাতা বই টানাটানি করতে থাকে। পুরো ব্যাপারটার মাঝে টুশি বাইরের একজন মানুষ হিসেবে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

তপুর ব্যাপারটা নিয়ে টুশির যে সন্দেহটা ছিল রাত্রে খাবার টেবিলে তার আব্ব আম্মু বাকিটা খোলাসা করে দিলেন। এই বাসায় কোনো কাজের মানুষ নেই, সব কাজ নিজেদের করতে হয় তাই রান্নার পরিশ্রম বাঁচানোর জন্যে সপ্তাহে একদিন রান্না। করে সেগুলো ফ্রিজ করে রাখা হয়–তারপর সারা সপ্তাহ সেগুলো বের করে গরম করে খাওয়া হয়। তপুর আম্মু রান্নাবান্না জানেন না–খাবার বিস্বাদ, তার উপর বাসি খাবার গরম করে খেতে গিয়ে টুশির নাড়ি উলটে আসে। খেতে খেতে টুশির মনে হয় একবেলা জমিলার মায়ের রান্না খাওয়ার জন্যে সে অর্ধেক পৃথিবী দান করে দেবে। টুশি কোনোমতে বিস্বাদ খাবার খাচ্ছে এবং তখন তপুর আম্মু সবজি নামের অত্যন্ত বিদঘুঁটে একটা জিনিস তপুর প্লেটে ধ্যাবড়া করে ছড়িয়ে দিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, “ভেজিটবল খা বেশি করে। তোর নিশ্চয়ই ভাইটামিন ডেফিসিয়েন্সি হচ্ছে।”

বেচারা তপু মুখ কালো করে সেই বিস্বাদ জিনিস গেলার চেষ্টা করতে থাকে। তপুর আম্মু টুশির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, “তুমি এতক্ষণে নিশ্চয়ই তপুর প্রবলেমটা টের পেয়েছ?”

টুশি বুঝতে না পেরে বলল, “কী প্রবলেম?”

“স্পিচ ডিজওর্ডার।”

“স্পিচ কী?”

“ডিজওর্ডার।”

টুশি ভয়ে ভয়ে বলল, “কী হয় এটা হলে?”

তপুর আব্ব হাত নেড়ে বললেন, “তপুর তোতলামোর কথা বলছে।”

“ও!” টুশি নিশ্বাস ছেড়ে বলল, “তা-ই বলেন! আমি ভাবলাম, কী না কী!”

তপুর আম্মা কঠিন মুখে বললেন, “এটা খুব সিরিয়াস ব্যাপার। একজন মানুষ কীভাবে কথা বলে সেটা হচ্ছে সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট। সে যদি কথাই না বলতে পারে”

তপুর সামনে এভাবে কথা বলাটা টুশির একেবারেই পছন্দ হল না, বাধা দিয়ে বলল, “কে বলছে পারে না! তপু কী সুন্দর কথা বলে”

চাচি মাথা নাড়লেন, “বেশির ভাগ সময়েই পারে না। আমার কথা বিশ্বাস না করলে এখনই পরীক্ষা করো।” চাচি কঠিন মুখে তপুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তপু বল দেখি পৃথিবীর এক ভাগ স্থল তিন ভাগ জল–”।

তপু একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। খুব করুণ চোখে তার মায়ের দিকে তাকাল, কিন্তু চাচির মন এতটুকু নরম হল না, হুংকার দিয়ে বললেন, “বল। পৃথিবীর এক ভাগ স্থল তিন ভাগ জল।”

চাচা প্লেটে বিস্বাদ ভাতের সাথে বিস্বাদ ডাল মাখাতে মাখাতে বললেন, “থাক ছেড়ে দাও এখন।”

“কেন ছেড়ে দেব? তোমার লাই পেয়ে পেয়েই তপুর এই দশা। ডাক্তার বলেছে প্র্যাকটিস করতে–এই পাজি ছেলে প্র্যাকটিস করে?”

চাচা কোনো কথা না বলে খেতে লাগলেন। এই বাসায় শুধুমাত্র চাচাই মনে হয় চাচির রান্না করা এই বিস্বাদ খাবারগুলো শখ করে খান! চাচি আবার চোখ গরম করে তপুর দিকে তাকালেন, হুংকার দিয়ে বললেন, “বল, পাজি ছেলে।”

তপুর চোখে পানি এসে গেল, তার মাঝে সে কথা বলার চেষ্টা করল, “পি পি-পি-পৃ–”

“স্পষ্ট করে বল হতভাগা ছেলে।”

তপু ভাঙা গলায় বলল, “থু-থ-থি”

তপুর কষ্ট দেখে টুশির চোখেই পানি এসে যাচ্ছিল কিন্তু চাচির মন একটুও নরম হল না। তপু অনেক কষ্ট করে পৃথিবীর এক ভাগ পর্যন্ত বলে স্থল’ শব্দটিতে আটকে গেল, কিছুতেই সেটা বলতে পারল না। চাচি হিংস্র চোখে তপুর দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং এক সময়ে মুখ ঘুরিয়ে টুশির দিকে তাকিয়ে যুদ্ধ জয় করার ভঙ্গি করে বললেন, “দেখেছ?”

টুশি কী বলবে বুঝতে পারল না, সে তপুর দিকে তাকাতে পারছিল না; দুর্বলভাবে বলল, “বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।”

“আর কত বড় হবে? সে কি চার বছরের খোকা? তার বয়স সাত। স্পিচ থেরাপিস্টরা কতরকম এক্সারসাইজ দিয়েছে, সকাল-বিকাল প্র্যাকটিস করার কথা, এই পাজি ছেলে কিছু করে? প্রবলেমটা কার? তার না আমার?”

টুশি বলল, “আপনি কিছু চিন্তা করবেন না চাচি। এখন তো আমি আছি, আমি তপুর সব এক্সারসাইজগুলি করিয়ে দেব।”

এই প্রথমবার চাচি একটু নরম হলেন, বললেন, “থ্যাংক ইউ। একটা অসুস্থ পঙ্গু ছেলে থাকা যে কী কষ্ট সেটা মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।” চাচি ফোঁৎ করে একটা নিশ্বাস নিয়ে গলায় কান্না-কান্না ভাব নিয়ে এলেন এবং এই পুরো নাটকের মাঝে চাচা বিস্বাদ কড়কড়ে ভাতের সাথে আঠালো সবজি আর ফ্যাকাশে দানা দানা ডাল মিশিয়ে কোঁৎ কোঁৎ করে খেতে লাগলেন। মনে হয় তাঁর চারপাশে কী হয় তিনি তার কিছু দেখেন না শোনেন না বা বোঝেন না।

রাত্রিবেলা যখন টুশি আর তপু তাদের ঘরে একা তখন টুশি তপুকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “তোর আম্মু যে এক্সারসাইজের কথা বলেছে সেগুলো কী?”

তপু মুখ কালো করে বলল, “মা-মা-মারবেলের মতো বল মু-মু-মুখে রেখে ক-ক-কথা বলতে হয়।”

টুশি মুখ কুঁচকে বলল, “ছি! খবরদার ওগুলো করবি না। যতসব পাগলামি!”

“আ-আ-আম্মু যে বকে।”

“আমি তোকে ঠিক করে দেব।”

তপু অবাক হয়ে বলল, “ঠি-ঠিক করে দেবে?”

“হ্যাঁ। আমাকে কী দিবি বল?”

“স-স-সবগুলো কমিক দিয়ে দেব।”

“ধুর তোর ঐ কমিক কে পড়ে!”

তপু চিন্তিত মুখে বলল, “তা-তা-তা-হলে আমার লে-লে-লেজার গান।”

“আমি মেয়েমানুষ তোর লেজার গান দিয়ে কী করব? ক্যাশ টাকা দিবি কি না বল!”

“টা-টা-টাকা?” তপু খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। “ক-ক-কত টাকা?”

“লাখখানেক।”

“লা-লা-লা “

টুশি এবারে হি হি করে হেসে ফেলল, বলল, “তোকে টাকা দিতে হবে না, আমি এমনিতেই ঠিক করে দেব। শুধু”

“শুধু কী?”

“শুধু সবসময় আমার পক্ষে থাকবি। তুই আর আমি সবসময় একদিকে। ঠিক আছে?”

তপু একগাল হেসে বলল, “ঠি-ঠিক আছে।”

“ছোট থাকা খুব সমস্যা। বড় মানুষেরা খুব জ্বালাতন করে। এইজন্যে যারা ছোট তাদের সবসময় একসাথে থাকতে হয়। এখন থেকে তুই থাকবি আমার পক্ষে–আমি থাকব তোর পক্ষে।”

তপুর মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করতে থাকে। সে কাছে এগিয়ে এসে বলল, “আ আ-আমাকে তুমি কে-কে-কেমন করে ঠিক করবে?”

“সেটা সিক্রেট। এখন বলা যাবে না।”

“ক-ক-কখন বলবে?”

“সময় হলেই বলব।”

এরকম সময় চাচি ঘরে মাথা ঢুকিয়ে বললেন–”এত রাতে এত কথা কিসের, ঘুমিয়ে পড় দুজনেই।”

“জি চাচি ঘুমাচ্ছি।” টুশি তাড়াতাড়ি উঠে ঘুমানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সুটকেস খুলে ঘুমের কাপড় বের করার সময় প্রথমে তার প্রিয় বইগুলো দেখতে পেল। সেগুলো যত্ন করে বের করে টেবিলে রাখাতেই তার সেই বিচিত্র বোতলটা চোখে পড়ল। টুশি সাবধানে বোতলটা বের করে টেবিলে রাখতেই তপু জিজ্ঞেস করল, “এ-এটা কী?”

টুশি মুখ গম্ভীর করে বলল, “কেউ জানে না এই বোতলের ভিতরে কী আছে।”

“খু-খুলে দ্যাখো না কেন?”

“কেমন করে খুলব? দেখিস না কীভাবে সিলগালা করে রেখেছে।”

“কে রেখেছে?”

“কেউ জানে না।” টুশি রহস্যময় গলায় বলল, “একটা বিশাল কালো সিন্দুকের মাঝে এটা লুকিয়ে রেখেছিল একশ বছর।”

“স-স-সত্যি?”

“আমি কি তোর সাথে মিথ্যা কথা বলব?”

তপু খুব কৌতূহল নিয়ে বোতলটা দেখল, টুশি বলল, “আমার কী মনে হয় জানিস?”

“কী?”

“এই বোতলটার মাঝে আনন্দ আর স্ফুর্তি ঠেসে বন্ধ করা আছে। এটা খুলতেই চারিদিকে আনন্দ হতে থাকবে।”

তপু চোখ বড় বড় করে বলল, “সত্যি?”

“আমার তা-ই মনে হয়। তা না হলে কেন মানুষ একটা বোতল একশ বছর এইভাবে ছিপি দিয়ে বন্ধ করে আটকে রাখবে?”

তপু বোতলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল, “বো-বো-বোতলটা খুলে দেখি!”

টুশি মাথা নাড়ল। বলল, “খুলব। যেদিন তোর আর আমার দুজনেরই কিছু নিয়ে মন খারাপ থাকবে সেদিন বোতলটা খুলব, সাথে সাথে দেখবি আমাদের মন ভালো হয়ে যাবে।”

তপু মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেল। টুশি একটা নিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তপু, তোর কি মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়?”

“আ-আ-আম্মু যখন বকে তখন মন খারাপ হয়।”

টুশি গম্ভীর গলায় বলল, “বকলে তো মন খারাপ হবেই। মন খারাপ করার জন্যেই তো বকে। কেউ কি মন ভালো করার জন্যে বকে? এমনি মন খারাপ হয়?”

“নাহ, হয় না।”

টুশি কোনো কথা বলল না, শুধু ছোট একটা নিশ্বাস ফেলল।

.

রাত্রিবেলা দুজনেই যখন শুয়েছে তখন টুশি তার বিছানা থেকে বলল, “তপু, ঘুমিয়ে গেছিস?”

“না।”

“তোকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি? সত্যি করে বলবি।”

“আচ্ছা।”

“আমাকে যখন প্রথম দেখেছিস তখন আমার চেহারাটা দেখে তোর কী মনে হয়েছিল? সত্যি সত্যি বলবি।”

তপু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ম-ম-মনে হয়েছিল, তোমার চেহারাটা বেশি ভা-ভালো না। এখন কিন্তু ভা-ভালোই মনে হচ্ছে।”

“ও।”

তপু জিজ্ঞেস করল, “কে-কেন আপু?”

টুশি একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “না, এমনি।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *