কানা মামুদের উড়ালকাব্য-৩
তোমার মুখতো কখনো মেঘাছন্ন ছিলো না। দৈব মেঘে
আমার দৃষ্টি হারিয়ে গেলে আমি তোমাকে এক ঝলক বৃষ্টির মত
আমার বুকে অনুভব করেছিলাম।
অন্ধের তো অনুভব শক্তি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। শুনেছি
পৃথিবীতে আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে চক্ষুম্মান প্রাণীর সংখ্যা
খুব বেশি নয়। অনেক জীবন আছে যাদের চোখ নেই। জীবন তো
থেমে থাকে না। তারা না দেখেও বাঁচে। হাতড়ে-হাতড়ে বাঁচে।
ধাক্কা খেতে খেতে বাঁচে। উবুড় হয়ে চিৎ হয়ে জীবনকে অতিক্রম
করে যায়। আয়ুকে নদীর ঢেউয়ের মতো বুকের উপর পেতে চায়।
আমি তোমাকে ঐভাবে পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চোখের ওপর
মরা প্রজাপতির ডানার গুঁড়ো এসে ঝাপটা মারলো। এখন
আমি কি করবো? আমি কি তোমার কল্পনা ছেড়ে
হাত গুটিয়ে বসে থাকবো?
আমি যখন চক্ষুষ্মন ছিলাম তখন যেমন মানুষের দুঃখ-কষ্ট
ও প্রতিবাদের সাথে এক হয়ে নিশান উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ভেবো
এখনও তেমনি আছি। কেবল চোখ না থাকায় তোমার মতো
লালমুখ নিয়ে বিচরণশীল পুঁজির দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে মিছিলে যেতে পারি না
মাঝে মাঝে ভাবি আমার যদি আরো কয়েকটি চোখ থাকতো তা
তোমার গলায় মালা করিয়ে পরিয়ে দিতাম।
আমি ভূমিকম্পের সঠিক খবর তোমাকে দিতে পারি। আমি
কম্পন যন্ত্রের মতো ভূ-গর্ভে গলিত লাভা স্রোত উগড়ে দেওয়ার খবর
তোমাকে জানাবো বলে ওঁৎ পেতে আছি। আমি ধ্বংসে বিশ্বাস
করি না বলে মানুষের উপর এখনও আশা ছাড়িনি। আশাকে
প্রজ্বলিত করতে জ্ঞানীদের দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন হয় না। আমি
কল্পনায় তোমার ক্রুদ্ধ লাল মুখের ওপর আরো একটি নয়ন বসিয়ে
দেব। তুমি হও পৃথিবীর প্রথম ত্রিনয়না নারী। তোমার বাড়তি
চোখ দিয়ে তুমি মানবকুল বিনাশী পুঁজির অধিপতিদের
আসল চেহারা ভালো করে দেখে নাও। দ্যাখো বিশ্বলুণ্ঠনকারীরা
বিশ্বশাসনে পায়তারা করছে। তারা জানে না তাদের কেয়ামত আসন্ন।
তারা কতদিকে হাত বাড়াবে? পিপড়ের সারির মতো মানুষের সন্তানেরা
পৃথিবীর পৃষ্ঠে উঠে আসার জন্য ঘড়ির কাঁটা গুনছে। আমি অন্ধ না হলে
তাদের মুখ নিশ্চয় দেখতে পেতাম। তুমি একটু কাছে এলে আমি তোমার
মুখের ওপর হাত বাড়িয়ে দেব। দেখব তোমার তিনটি চোখই মর্মভেদী
দৃষ্টি নিয়ে মানবজাতির শেষ লড়াইয়ের দিকে অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে।