Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কহেন কবি কালিদাস – মিসির আলি || Humayun Ahmed » Page 3

কহেন কবি কালিদাস – মিসির আলি || Humayun Ahmed

বাবার ঘর অন্ধকার। দরজা-জানালা বন্ধ। ঘরের বাতি নেভানো। তবে জায়নামাজের পাশে মোমবাতি জ্বলছে। ঘরে আগরবাতির গন্ধ। আগরবাতি দেখা যাচ্ছে না। তবে জুলছে নিশ্চয়ই। তিনি মোমবাতির দিকে পেছন ফিরে তসবি টানছিলেন। আমি তার সামনে বসতেই তিনি আমার দিকে ফিরলেন। পেছন থেকে মোমবাতি এনে দুজনের সামনে রাখতে–রাখতে বললেন, যে জটিল কথাটা বলতে এসেছিস বলে ফেল। কী বলবি সেটা মনে হয় আমি জানি। মোমবাতির আলোতে বলতে অসুবিধা হলে মোমবাতি নিভিয়ে দিই।

আমি বললাম, বাতি নেভাতে হবে না। বাবা তসবি টানা বন্ধ করলেন না। আমার দিকে তাকালেনও না। তিনি তাকিয়ে রইলেন মোমবাতির দিকে। আমি কথা শেষ করলাম। তাঁর চেহারায়, চোখ-মুখের ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন হল না। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, মা, দেখি আতরের শিশিটা এনে দাও তো।

নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন ভয়াবহ কথা শোনার পর পৃথিবীর কোনো বাবা বলতে পারেন না-আতারের শিশিট দেখি।

গায়ে আন্তর মাখা তিনি সম্প্রতি শুরু করেছেন। এক সুফি মানুষ নাকি মেশকে আম্বর নামের এই শিশি দিয়েছেন। আতরের বৈশিষ্ট্য হল গন্ধ অতি কড়া, তবে কড়া গন্ধে মাথা ধরে না।

আমি বললাম, বাবা সত্যি আন্তর এনে দেব?

বাবা বললেন, হুঁ। ইবলিশ শয়তান সুগন্ধি সহ্য করতে পারে না। তার পছন্দ সালফার-পোড়া দুৰ্গন্ধ, সব সময় গায়ে আতর মাখবি।

আমি আতরদানি এনে বাবার সামনে রাখলাম। তিনি অনেক আয়োজন করে আন্তর দিলেন। প্রথমে তুলায় আন্তর মাখলেন। সেই তুলা হাতে ঘষলেন, নাকে ঘষলেন, শেষ পর্যায়ে কানোর ভাঁজে রেখে দিলেন।

আমি বললাম, তুমি কি ইথেন বিষয়ে কিছু বলবে? নাকি আমি চলে যাব? তুমি আরো চিন্তাভাবনা করবে?

বাবা বললেন, আমার মেয়েটির কোনো দোষ নাইরে মা। সব শয়তান করাচ্ছে। তাকে শয়তানের হাত থেকে বাচাতে হবে। প্রথম যে-কাজটা করতে হবে তার কাছে যেন শয়তান যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। তাকে পাক-পবিত্র থাকতে হবে। নাপাক শরীর শয়তানের পছন্দ। তার গায়ে সুগন্ধি থাকতে হবে। সে আতর মাখবে বলে মনে হয় না। তাকে সেন্ট মাখতে হবে। তাকে…

আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, বাবা তুমি মনে হয় মূল বিষয়টা ধরতে পারছ না। ইথেন বলছে–তার পেটে বাচ্চা। এটার কী করবে?

বাবা বললেন, আমার কী করা উচিত?

আমি বললাম, আমি তো বুঝতে পারছি না। বাবা! বিষয়টা আমার জন্য জটিল।

বাবা বললেন, যে-ছেলের কারণে ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে ইথেনের বিবাহ দিয়ে দেব ইনশাল্লাহ। যে-ছেলের কারণে ঘটনা ঘটেছে তার নাম-ঠিকানা এনে দে। আমি তাকে রাজি করব। প্রয়োজনে তার পায়ে ধরব।

আমি বললাম, যে-ছেলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে তো খারাপ ছেলে। তুমি তার সঙ্গে ইথেনের বিয়ে দেবে?

হ্যাঁ দেব। এতে ইথেনের সম্মান রক্ষা হবে। সম্মান অনেক বড় জিনিসরে মা। তুই ছেলেটার নাম-ঠিকানা এনে দে। আর শোন মা, আজ রাতে আমি কিছু খাব না। উপোস দেব। সারা রাত উপোস নিয়ে আল্লাহপাকের নাম জিগির করব।

বাবা মোমবাতি নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দিলেন। আমি গোলাম ইথেনের কাছে।

ইথেন খুবই স্বাভাবিক। কিটক্যাট চকোলেটের একটা প্যাকেট তার হাতে। সে খাটে বসে পা দোলাচ্ছে। আমি ঘরে ঢুকতেই সে বলল, আজ রাতে HBo-তে ভালো মুভি আছে আপা, দেখবি? Silence of the Lambs.

আমি বললাম, মুভি দেখব না। তোর সঙ্গে কথা আছে।

মুভি দেখার ফাঁকে-ফাকে কথা বলব। যখন অ্যাড হবে তখন কথা বলব। আপা চকোলেট খাবি?

আমি বললাম, বাবা ছেলেটার নাম-ঠিকানা চাচ্ছে।

কোন ছেলেটার?

যে-ছেলেটার সঙ্গে কাণ্ড ঘটিয়েছিস।

কী কাণ্ড ঘটিয়েছি?

আমার সঙ্গে ফাজলামি করিস না। তুই জানিস তুই কী ঘটিয়েছিস।

ইথেন হেসে ফেলল। হাসাতে-হাসতে সে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে এমন অবস্থা। আমি বললাম, হাসছিস কেন?

ইথেন বলল, তোকে বোকা বানিয়ে খুব মজা পেয়েছি। এই জন্য হাসছি। মন দিয়ে শোন, আমার কিছুই হয় নি। কারো সঙ্গে কিছু ঘটে নি। আমার ভয়ংকর কথা শুনে তুই কী করিস, বাবার কী রিঅ্যাকশান হয় এটা দেখার জন্যই আমি গল্প বানিয়েছি।

গল্প বানিয়েছিস?

হুঁ। ভালো কথা, আমাদের হুজুর তোর কাছে সব শুনে কী করল, মাথা ঘুরে পড়ে গেল?

আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম। ইথেন বলল, আপা এখন বল, ছবি দেখবি?

হ্যাঁ, দেখতে পারি।

থ্যাংক য়্যু। ভয়ের ছবি একা দেখে মজা নেই। ভয়ের ছবি সব সময় দুজন মিলে দেখতে হয়। হাসির ছবি দেখতে হয় চার-পাঁচ জন মিলে–ভয়ের ছবি শুধু দুই জন। আমি বললাম, তুই যে মিথ্যামিথ্যি ভয় দেখিয়েছিস এটা বাবাকে বলে আসি?

যা বলে আয়। আনন্দসংবাদ শুনে ট্যাবলেট হুজুর কী করে কে জানে। আমি বাবার ঘরে ঢুকলাম। মোমবাতি জ্বালিয়ে বাবার পাশে বসলাম। দেখলাম বাবার মুখ ছাইবৰ্ণ। কপালে ঘাম। তিনি সামান্য কাঁপছেন। তাঁর ঠোঁট নড়ছে। নিশ্চয়ই কোনো দোয়াদরূদ পড়ছেন। তিনি ইশারায় আমাকে চুপ করে থাকতে বললেন। তিনি বড় কোনো দোয়ার মাঝখানে আছেন। দোয়া শেষ না হওয়া পৰ্যন্ত তিনি কারো কথা শুনবেন না।

আমি অপেক্ষা করে আছি। একসময় তার দোয়া শেষ হল। তিনি আমার দিকে ফিরলেন এবং বললেন, মা, ইবলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ইবলিশ আমাকে বলেছে-তোমার মেয়ে বিষয়টা অস্বীকার করবে। ভাব করবে। ঠাট্টা। কিন্তু ঘটনা সত্য।

ইবলিশের সঙ্গে তোমার কখন কথা হয়েছে?

তুমি আমার এখান থেকে যাওয়ার পরেই। ইথেন কি তোমাকে এরকম কিছু বলেছে?

হুঁ।

তার কথা বিশ্বাস করবে না।

আমি বললাম, তার কথা বিশ্বাস করব না, ইবলিশ শয়তানের কথা বিশ্বাস করব?

বাবা বললেন, এই ক্ষেত্রে করবে। শয়তান সব সময় সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশায়। এমনভাবে মিশায় যে সত্য-মিথ্যা আলাদা করা যায় না।

আমি বললাম, মানুষও তো সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশায়।

বাবা বললেন, মানুষের মিশ্রণ ভালো হয় না। মানুষের মিশ্রণ হয় তেল-জলের মিশ্রণ। কিছুক্ষণ পরেই তেল-জল আলাদা হয়ে যায়। আর শয়তানের মিথ্যা হল দুধপানির মিশ্রণ, আলাদা করা যায় না।

আমি বললাম, এক ফোটা লেবুর রস দিলে দুধ-পানি আলাদা হয়ে যায়।

বাবা বললেন, সেই লেবুর পানি সবার কাছে থাকে না মা! এই বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে আর তর্ক করব না। তর্ক করার মতো মানসিক অবস্থা আমার না। তুমি এখন যাও। বোনের সঙ্গে তোমার ছবি দেখার কথা, ছবি দেখ।

ছবি দেখার কথাও কি ইবলিশ শয়তান আপনাকে বলেছে?

হ্যাঁ।

কী ছবি দেখব, সেটা বলেছে? ছবির নাম?

ছবির নাম বলে নাই, শুধু বলেছে ভয়ের ছবি।

আমি বাবার সামনে থেকে উঠে গেলাম, বাবা ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিলেন।

আমরা রাত দুটা পর্যন্ত ছবি দেখলাম। ছবি শেষ করে খেতে গেলাম। খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বাবাকে ডাকতে গোলাম, তিনি যদি মত বদলে খেতে আসেন। বাবার ঘরের দরজা বন্ধ। দরজায় অনেকবার ধাক্কা দেবার পরও তিনি দরজা খুললেন না।

ইথেন কিছু খেতে পারছে না। খাবার নাড়াচাড়া করছে।

আমি বললাম, কী হল, খাবি না?

ইথেন বলল, বমি-বমি আসছে আপা। এখন আমার খাবারের গন্ধ নাকে এলেই বমি আসে।

আমি তাকিয়ে আছি। ইথেন খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ল। তবে চলে গেল না। চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে রইল। আমি বললাম, আর কিছু বলবি?

ইথেন বলল, হুঁ। ছবি শুরু হবার আগে যে-ঘটনাকে আমি ঠাট্টা বলেছিলাম তা ঠাট্টা না। ঘটনা সত্যি। আমার পেটে বাচ্চা আছে। ফার্মেসি থেকে প্রোগনেসি টেষ্টের কিট এনে প্রোগনেন্সি টেস্ট করিয়েছি। টেস্ট পজিটিভ। সুন্দর রিং হয়।

আমি কিছুই বলছি না, তাকিয়ে আছি। আমার চোখে ভয় না বিস্ময় কী ছিল তা জানি না, তবে ইথেনের চোখে এই প্রথম দেখলাম হতাশা।

ইথেন বলল, আমি জানি তোমরা চাইবে ঐ ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে। সেটা সম্ভব না।

আমি বললাম, সম্ভব না কেন?

কেন সম্ভব না সেটা তোমাকে বলব না। সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারব না।

এই বলেই ইথেন চলে গেল। হঠাৎ প্রচণ্ড ভয়ে আমি অস্থির হয়ে গেলাম। আমার কাছে মনে হল ভয়াবহ দুঃসময় আমাদের ওপর চেপে বসতে যাচ্ছে।

(প্ৰথম অধ্যায় সমাপ্ত )

মিসির আলি খাতা বন্ধ করলেন। সিগারেট ধরলেন। রান্নাঘরে গেলেন। চুলা ধরিয়ে চায়ের কেটলি বসালেন। রাত বেশি হয় নি। নয়টা দশ। সাড়ে নয়টার দিকে হোটেল থেকে খাবার আসবে। দুই পিস রুটি, ভাজি, কোনোদিন ঘন ডাল! কোনোদিন মুরগির মাংস। তাঁর ঘরে কাজের লোক নেই। হোটেলের সঙ্গে ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তিন বেলাই হোটেল থেকে খাবার আসে। খাবার ভালো। বেশ ভালো। মিসির আলির ধারণা হোটেলওয়ালা তাঁর খাবার আলাদা রান্না করে। তার ধারণার পেছনের কারণ হল রাতের খাবারটা হোটেলের মালিক হারুন বেপারী, হটপটে করে নিজে নিয়ে আসে। খাওয়াদাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সামনে বসে থাকে। মিসির আলির সঙ্গে সে অতি আগ্রহের সঙ্গে নানান বিষয়ে গল্প করে। গল্পের কোনো বিশেষ ধারা নেই। একেক দিন একেকটা! যেমন গতকাল গল্পের বিষয়বস্তু ছিল—সাপের মণি শক্ত না নরম।

মিসির আলি বললেন, সাপের তো মণিই হয় না, শক্ত নরমের প্রশ্ন উঠছে না।

হারুন বেপারী বিস্মিত হয়ে বলল, মিসির আলি সাব, আপনি অনেক জ্ঞানী লোক। তার পরেও সব জ্ঞানী লোক সব বিষয় জানে না। আপনেও জানেন না। সাপের মণি অবশ্যই হয়-আমি নিজ চোখে দেখেছি। এখন বলেন আমি মিথ্যা দেখেছি।

মানুষের দেখার মধ্যেই ভুল থাকে। দড়ি দেখেও অনেকে মনে করে সাপ। এজন্যই বলা হয়। রজুতে সৰ্প ভ্রম।

হারুন বলল, যারা মালটাল খেয়ে হাঁটাইটি করে তারা দড়ি দেখে বলে সাপ। আমি জিন্দেগিতে মাল খাই নাই। কোনোদিন খাবও না ইনশাল্লাহ্। যদি কোনোদিন এক ফোটা মাল খাই আপনার কাছে এসে স্বীকার যাব। আপনি আমাকে পায়ের জুতা দিয়ে দুই গালে দুই বাড়ি দিবেন।

এই ধরনের মানুষের সঙ্গে কোনোরকম তর্কে যাওয়াই বিপজ্জনক। মিসির আলি তর্কে পারতপক্ষে যান না। লোকটি তাকে পছন্দ করে। মাত্রার বেশিই পছন্দ করে। সেই পছন্দকে তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেন না।

হারুন বেপারী গত সপ্তাহে তাঁকে একটা মোবাইল টেলিফোন গিফট করেছে। বাজার থেকে কিনে এনে যে গিফট করেছে তা না। কোনো এক কষ্টমার নাকি মোবাইল টেলিফোন তার দোকানে ফেলে গেছে। সে মোবাইল টেলিফোনের সিম কার্ড ফেলে নতুন সিম কার্ড ভরে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছে মিসির আলির জন্য।

মিসির আলি বলেছেন, ঐ কাষ্টমার নিশ্চয়ই মোবাইল টেলিফোনের খোঁজে আপনার রেস্টুরেন্টে আসবে।

হারুন বলেছে—সকালে ফালায়ে গেছে-দুপুরে আইস উপস্থিত। আমি বলেছি আমরা কিছু পাই নাই।

কাজটা কি ঠিক হল?

অবশ্যই ঠিক হইছে। তুই সাবধানে চলাফিরা করবি না? যেখানে সেখানে জিনিসপত্র ফালায়া চইল্যা যাবি?

মিসির আলি কাতর গলায় বললেন, ভাই আমি এই টেলিফোন রাখব না।

কেন রাখবেন না? আপনি তো চুরি করেন নাই। আমি আপনারে দিতেছি।

আমার টেলিফোনের দরকার নাই।

অবশ্যই দরকার আছে। এখন মোবাইলের জমান। আমি আপনার ছোট ভাই হিসেবে দিতেছি। আপনের রাখতে হবে।

ঝামেলা এড়াবার জন্য মিসির আলি টেলিফোন রেখে দিয়েছেন। তবে কখনো ব্যবহার করেন নি। ব্যবহার করার আসলেই কোনো প্রয়োজন পড়ে নি।

আজ ইচ্ছা করলে ব্যবহার করা যায়। সায়রা নামের মেয়েটিকে কয়েকটা প্রশ্ন করা সরকার।

১. সায়রার বাবা হাবিবুর রহমান সাহেব এখনো জীবিত কি না।

২. তাদের বাড়িতে দুই বোন এবং বাবা ছাড়া অন্য কেউ থাকে কি না।

৩. সায়রা যে লেখা লিখছে হুবহু সত্য কি না। তার লেখার ভঙ্গি উপন্যাসের ভঙ্গি। উপন্যাস-লেখক সত্য ঘটনা বর্ণনার সময়ও নানান রঙ ব্যবহার করেন। নানান রঙের মিশ্রণ থেকে সাদা-কালো সত্য বের করা বেশ কঠিন হয়ে যায়।

ইবলিশ শয়তান মেয়েদের বাবার সঙ্গে গল্পগুজব করছে, বাবাকে বলছে মেয়েরা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ভয়ের ছবি দেখবে এটা একেবারেই অসম্ভব। একজন কেউ মিথ্যা বলছে। হয় হাবিবুর রহমান সাহেব বলছেন অথবা সায়রা তার লেখা রহস্যময় করার জন্য বানিয়েছে।

মেয়েদের বাবার সঙ্গেও কথা বলা দরকার। তিনি কেন ইবলিশকে জিন বলছেন? সুরা বাকারাতে স্পষ্টই ইবলিশকে ফেরেশতা বলা হয়েছে। কোন আয়াতে বলা হয়েছে সেটা মনে নেই। অন্য কোনো আয়াতে কি ইবলিশকে জিন বলা হয়েছে?

ভদ্রলোককে পাওয়া গেলে আরো একটি প্রশ্ন করা যেত। তিনি কেন ইবলিশকে ইবলিশ শয়তান বলছেন? শয়তান শব্দটা এসেছে–শায়াতিন থেকে। শায়াতিন হল ইবলিশদের নেতা। তিনি কি জেনেশুনেই ইবলিশকে ইবলিশ শয়তান বলছেন নাকি এটা তার কথার কথা। নাকি সায়রার বর্ণনাভঙ্গিতেই ব্যাপারটা এসেছে।

সায়রার বর্ণনাতেও একটা খটকা তৈরি হয়েছে। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত সায়রা যে-সময়ের কথা বলছে সে-সময়ে Silence of the Lambs ছবিটি তৈরিই হয় নি।

মিসির আলি ছবি দেখেন না। তাঁর আগের বাড়িওয়ালা জোর করে এই ছবিটি তাকে দেখিয়েছেন কারণ এই ছবিতে একজন সাইকিয়াট্রিষ্টের কথা আছে। বাড়িওয়ালার ধারণা যেহেতু মিসির আলিও এই ধারার মানুষ তার ছবিটা দেখা উচিত।

সায়রা বলে গিয়েছিল কোনো খটকা লাগলে তাকে যেন টেলিফোন করা হয়। মিসির আলির কাছে যে চোরাই মোবাইল টেলিফোন আছে তিনি নীতিগতভাবে সেই টেলিফোন ব্যবহার করতে পারেন না।

Autobiography of an unknown young girl বইটির দ্বিতীয় চ্যাপ্টার পড়াও শুরু করলেন না। প্রথম চ্যাপ্টারের খটকা আগে কাটুক। তিনি অপেক্ষা করছেন সায়রার জন্য।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *