Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কর্দম মেখলা || Rajshekhar Basu

কর্দম মেখলা || Rajshekhar Basu

পুষ্কর সরোবরের তীরে বিশ্বামিত্র আর মেনকা কাছাকাছি বসে এ আছেন। মেনকা তাঁর কেশপাশ আলুলায়িত করে কাঁকুই দিয়ে আঁচড়াচ্ছেন, বিশ্বামিত্র মুখ ফিরিয়ে আত্মচিন্তা করছেন।

অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর বিশ্বামিত্র কপাল কুঁচকে নাক ফুলিয়ে বললেন, মেনকা, তুমি সরে যাও, তোমার চুলের তেলচিটে গন্ধ আমি সইতে পারছি না।

ভ্রূভঙ্গী করে মেনকা বললেন, তা এখন পারবে কেন। অথচ এই সেদিন পর্যন্ত আমার চুলের মধ্যে মুখ গুঁজড়ে পড়ে থাকতে। চুলে কি মাখি জান? মলয়গিরিজাত নারিকেল তৈলে পঞ্চাশ রকম গন্ধদ্রব্য ভিজিয়ে ধন্বন্তরী আমার জন্যে এই কেশতৈল প্রস্তুত করেছেন। এর সৌরভে দেব দানব গন্ধব মানব মুগ্ধ হয়, আর তোমার তা সহ্য হচ্ছে না! মুখে হাঁড়ি করে রয়েছ কেন, মনের কথা খুলেই বল না।

বিশ্বামিত্র বললেন, তুমি মুখ অপ্সরা, দ্রব্যগুণ কিছুই জানি না। উত্তম গতৈলও আবায়ুর সংস্পর্শে বিকৃত হয়। প্রজাতির নাকের সাড় নেই, কিন্তু অন্য লোকে দুর্গন্ধ পায়।

—এতদিন তুমি দুর্গন্ধ পাও নি কেন?

–আমার বুদ্ধিভ্রংশ হয়েছিল, লুব্ধ কুক্কুরের ন্যায় পূতিগন্ধকে দিব্য সৌরভ মনে করতাম, তোমার কুটিল কালসর্প সম বেণী কুসুমদাম বলে ভ্রম হত, তোমার ক্লিন্ন অশুচি দেহের স্পর্শে আমার আপাদমস্তক হর্ষিত হত। সেই কদর্য মোহ এখন অপসত হয়েছে। মেনকা, তোমাকে আমার আর প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও।

মেনকা বললেন, ছ মাসেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল। আমি যখন প্রথমে তোমার এই আশ্রমে এসেছিলাম তখন আমাকে দেখেই তুমি সংযম হারিয়ে তপস্যায় জলাঞ্জলি দিয়ে লোলুপ হয়েছিলে। আমি কিন্তু নিষ্কামভাবে নির্বিকার চিত্তে অপ্সরার কর্তব্য পালন করেছি, তোমার কুৎসিত জটাশ্মশ্র, আর লোমশ বক্ষের স্পর্শ, তোমার দেহের উৎকট শার্দূলগন্ধ সবই ঘৃণা দমন করে সয়েছি। ওহে ভূতপূর্ব কান্যকুব্জরাজ মহাবল বিশ্বমিত্র, বশিষ্ঠের গরু চুরি করতে গিয়ে তুমি সসৈন্যে মার খেয়েছিলে। তখন তুমি বিলাপ করেছিলে–ধিগ বলং ক্ষত্রিয়বলং ব্ৰহয়তেজো বলং বলম্‌। তার পর তুমি ব্ৰহ্মর্ষি হবার জন্য কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলে। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে যেমনি আমি তোমার কাছে এলাম তখনই তোমার মুণ্ড ঘরে গেল, তপস্যা চুলোয় গেল, একটা অবলা অপ্সরার কাছেও আত্মরক্ষা করতে পারলে না। এখন হয়তো বুঝেছ যে, ব্রহ্মতেজের বলও অপ্সরার বলের কাছে তুচ্ছ, অনেক রাজর্ষি মহর্ষি ব্রহ্মর্ষি আমাদের পদানত হয়েছেন। যা বলি শোন-ব্রহ্মর্ষি হবার সঙ্কল্প ত্যাগ করে অপ্সরা হবার জন্যে তপস্যা কর।

বিশ্বামিত্র বললেন, কটুভাষিণী, তুমি দূর হও।

—ত হচ্ছি। আমার গড়ে তোমার যে সন্তান আছে তার ব্যবস্থা কি করবে?

স্বৰ্গবেশ্যার সন্তানের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে। যা করবার তুমি করবে।

–তুমি তো মহা বেদজ্ঞ আর পুরাণজ্ঞ। এ কথা কি জান না যে অপ্সরা কদাপি সন্তান পালন করে না? আমরা প্রসব করেই সরে পড়ি, এই হল সনাতন রীতি। অপত্যপালন জন্মদাতারই কর্তব্য, গর্ভধারিণী অপ্সরার নয়।

অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্র বললেন, তুমি আমার তপস্যা পণ্ড করেছ, বুদ্ধি মোহগ্রস্ত করেছ, চরিত্র কলুষিত করেছ। পাপিষ্ঠা, দূর হও এখান থেকে, তোমার গর্ভস্থ পাপও তোমার সঙ্গে দূর হয়ে যাক।

পুষ্কর সরোবরের ধার থেকে খানিকটা কাদা তুলে নিয়ে মেনকা দুই হাতে তাল পাকাতে লাগলেন।

বিশ্বামিত্র প্রশ্ন করলেন, ও আবার কি হচ্ছে?

কাদার পিণ্ড পাকিয়ে সাপের মতন লম্বা করে মেনকা বললেন, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র, তোমার সন্তান আমি চার মাস গর্ভে বহন করেছি, আরও প্রায় পাঁচ মাস বইতে হবে। তোমার কৃতকর্মের ফল শুধু আমিই বয়ে বেড়াব আর তুমি লঘুদেহে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করবে তা হতে পারে না। তোমাকেও ভার সইতে হবে। এই নাও।

মেনকা তাঁর হাতের লম্বা কাদার পিণ্ড সবেগে নিক্ষেপ করলেন। বিশ্বামিত্রের কটিদেশে তা মেখলার ন্যায় জড়িয়ে গেল।

চমকে উঠে মুখ বিকৃত করে বিশ্বামিত্র বললেন, আঃ! সেই কর্দম মেথলা টেনে খুলে ফেলবার জন্যে তিনি অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তখন পুষ্করের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধুয়ে ফেলবার জন্যে দুই হাত দিয়ে ঘুষতে লাগলেন, কিন্তু সেই কালসর্প তুল্য মেখলার ক্ষয় হল না, নাগপাশের ন্যায় বেষ্টন করে রইল।

হতাশ হয়ে বিশ্রাম জল থেকে তীরে উঠে এলেন। মেনকাকে আর দেখতে পেলেন না।

বিশ্বামিত্র পুনর্বার তপস্যায় নিরত হবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মনোনিবেশ করতে পারলেন না, কর্দম মেখলার নিরন্তর সংস্পর্শে তাঁর ধৈর্য নষ্ট হল, চিত্ত বিক্ষোভিত হল। তিনি আশ্রম ত্যাগ করে আকুল হয়ে পর্যটন করতে লাগলেন, হিমাচল থেকে দক্ষিণ সমুদ্র পর্যন্ত ভ্রমণ করলেন, নানা তীর্থসলিলে অবগাহন করলেন, কিন্তু মেখলা বিগলিত হল না। এই ভাবে সাড়ে পাঁচ বৎসর কেটে গেল।

ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি মালিনী নদীর তীরে উপস্থিত হলেন। নদীর কাকচক্ষু, তুল্য নির্মল জল দেখে তাঁর মনে একটু আশার উদয় হল। উত্তরীয় তীরে রেখে বিশ্বামিত্র জলে নামলেন এবং অনেকক্ষণ প্রক্ষালন করলেন, কিন্তু তাঁর মেখলা পূর্ববৎ অক্ষয় হয়ে রইল। অবশেষে তিনি বিষণ্ণ মনে জল থেকে তীরে উঠতে গেলেন, কিন্তু পারলেন না, পাঁকের মধ্যে তাঁর দুই পা প্রায় হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেল।

প্রাণভয়ে বিশ্বামিত্র চিৎকার করলেন। মালিনীর তটবর্তী বন ভূমিতে তিনটি মেয়ে খেলা করছিল, একটির বয়স পাঁচ, আর দুটির সাত-আট। বিশ্বামিত্রের আর্তনাদ শুনে তারা ছুটে এল এবং নিজেরাও চিৎকার করে ডাকতে লাগল—ও পিসীমা দৌড়ে এস, কে একজন ডুবে যাচ্ছে।

পিসীমা অর্থাৎ গৌতমী লম্বা আঁকশি দিয়ে একটি প্রকাণ্ড অম্রাতক বৃক্ষ থেকে পাকা আমড়া পাড়ছিলেন। মেয়েদের ডাক শুনে ছুটে এলেন। নদীর ধারে এসে বিশ্বামিত্রকে বললেন, নড়বেন না, তা হলে আরও ডুবে যাবেন। এই আঁকশিটা বেশ শক্ত, পাঁকের তলা পর্যন্ত পতে দিচ্ছি, এইটেতে ভর দিয়ে স্থির হয়ে থাকুন। এই অনু আর প্রিয়, তোরা দুজনে দৌড়ে যা, আমি যে চাঁচাড়ির চাটাই শই সেইটে নিয়ে আয়।

অনু আর প্রিয় অল্পক্ষণের মধ্যে ধরাধরি করে একটা চাটাই নিয়ে এল। গৌতমী সেটা পাঁকের উপর বিছিয়ে দিয়ে বললেন, এইবারে আস্তে আস্তে পা তুলে চাটাইএর উপর দিন, তাড়াতাড়ি করবেন না! আঁকশিটা পাঁক থেকে টেনে নিচ্ছি। এই এগিয়ে দিলাম, দু হাত দিয়ে ধরুন।

আঁকশির এক দিক বিশ্বামিত্র ধরলেন, অন্য দিক গৌতমী ধরে টানতে লাগলেন, মেয়েরা তার কোমর ধরে রইল। বিশ্বামিত্র ধীরে ধীরে তীরে উঠে এসে বললেন, ভদ্রে, আপনি আমার প্রাণরক্ষা করেছেন। কে আপনি দয়াময়ী? এই দেবকন্যার ন্যায় বালিকারা কারা?

গৌতমী বললেন, আমি মহর্ষি কণ্বের ভগিনী গৌতমী। এই অনু আর প্রিয় — অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা, এরা এই আশ্রমবাসী পিপ্পল আর শাল্মল ঋষির কন্যা। আর এই ছোটটি শকু–মহর্ষি কণ্বের পালিতা দুহিতা শকুন্তলা। আমার ভ্রাতার আশ্রম এই মালিনী নদীর তীরেই। সৌম্য, আপনি কে?

–আমি হতভাগ্য বিশ্বামিত্র।

–বলেন কি, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র! আপনার এমন দুর্দশা হল কেন?

অনু আর প্রিয় নাচতে নাচতে বলল, ওরে বিশ্বামিত্র মুনি এসেছে, শকুর বাবা এসেছে রে, এক্ষুনি শকুকে নিয়ে যাবে রে!

শকুন্তলা ভ্যাঁ করে কেঁদে গৌতমীকে জড়িয়ে ধরল।

অনুসয়া আর প্রিয়ংবদাকে ধমক দিয়ে গৌতমী বললেন, চুপ কর দষ্ট মেয়েরা, কেন ছেলেমানুষকে ভয় দেখাচ্ছিস!

বিশ্বামিত্র বললেন, খুকী, তোমার বাবা কে তা জান?

শকুন্তলা বলল, আমার বাবা ক মনি, আর মা এই পিসীমা।

অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা আবার নাচতে নাচতে বলল, দূর বোকা, সব্বাই জানে আর তুই কিচ্ছু জানিস না। তোর বাবা এই বিশ্বামিত্র মনি, আর মা–

গৌতমী দুই মেয়ের পিঠে কিল মেরে বললেন, দূর হ এখান থেকে। এই রাজর্ষির পরিধেয় ভিজে গেছে, তোদের বাবার কাছ থেকে শুখনো কাপড় চেয়ে নিয়ে আয়। আর তোদের মাকে বল, অতিথি এসেছেন, আমাদের আশ্রমেই আহার করবেন।

বিশ্বামিত্র বললেন, বস্ত্রের প্রয়োজন নেই, আমার অধোবাস আপনিই শুখিয়ে যাবে, আর আমার উত্তরীয় শঙ্কই আছে। আপনি আহারের আয়োজন করবেন না, আমার ক্ষুধা নেই। দেবী গৌতমী, এই বালিকাকে কোথায় পেলেন?

গৌতমী নিম্নকণ্ঠে জনান্তিকে বললেন, মেনকা প্রসব করেই মালিনী নদীর তটে একে ফেলে চলে যায়। মহর্ষি কশ্ব মান করতে গিয়ে দেখেন, এক ঝাঁক হংস সারস চকুবাকাদি শকুত পক্ষ বিস্তার করে চারদিকে ঘিরে সদ্যোজাত এই বালিকাকে রক্ষা করছে। দয়া হয়ে তিনি একে আশ্রমে নিয়ে আসেন। শকুন্ত কতৃক আরক্ষিতা, সেজন্য আমরা নাম দিয়েছি শকুন্তলা।

বিশ্বামিত্র বললেন, কন্যা, একবারটি আমার কোলে এস।

শকুন্তলা আবার কেঁদে উঠে বলল, না, যাব না, তুমি আমার বাবা নও, কণ্ব মুনি আমার বাবা।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিশ্বামিত্র বললেন, ঠিক কথা। আমি তোমার পিতা নই, মেনকাও তোমার মাতা নয়, যারা তোমাকে ত্যাগ করেছিল তাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক নেই। যাঁরা তোমাকে আজন্ম পালন করেছেন তাঁদেরই তুমি কন্যা। খুকী, তুমি কি খেলনা চাও বল, রুপোর রাজহাঁস, সোনার হরিণ, পান্না-নীলার ময়ূর–

অনসূয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ভারী তো। আমাদের আসল হাঁস হরিণ ময়ুর আছে।

প্রিয়ংবদা বলল, আমাদের হাঁস প্যাঁক প্যাঁক করে, হরিণ লাফায়, ময়ূর নাচে। তোমার হাঁস হরিণ ময়ূর তা পারে?

বিশ্বামিত্র বললেন, না, শুধু ঝকমক করে। শকুন্তলা, তুমি আমার সঙ্গে চল। শত রাজকন্যা তোমার সখী হবে, সহস্র দাসী তোমার সেবা করবে, স্বর্ণমণ্ডিত গজদন্তের পর্যঙ্কে তুমি শোবে, দেবদুর্লভ অন্ন ব্যঞ্জন মিষ্টান্ন পায়স তুমি খাবে, মণিময় চত্বরে সখীদের সঙ্গে খেলা করবে। তোমাকে আমি সুবিশাল রাজ্যের অধীশ্বরী করে দেব।

গৌতমী বললেন, কি করে করবেন? আপনার কান্যকুঞ্জ রাজ্য তো পুত্রদের দান করে তপস্বী হয়েছেন।

–তুচ্ছ কান্যকুঞ্জ রাজা আমার পুত্ররাই ভোগ করক, তা কেড়ে নিতে চাই না। বাহুবলে আর তপোবলে আমি সসাগরা ধরা জয় করে আমার কন্যাকে রাজরাজেশ্বরী করব। যত দিন কুমারী থাকে তত দিন আমিই এর প্রতিভূ হয়ে রাজ্যশাসন করব। তার পর অতুলনীয় রুপবান গণবান বলবান বিদ্যাবান কোনও রাজা বা রাজপুত্রের হাতে একে সম্প্রদান করে পনবার তপস্যায় নিরত হব।

গৌতমী বললেন, কি বলিস শকু, যাবি এই রাজর্ষির সঙ্গে? শকুন্তলা আবার কেঁদে উঠে বলল, না না যাব না।

গৌতমী বললেন, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র, জন্মের পূর্বেই যাকে বর্জন করেছিলেন তার প্রতি আবার আসক্তি কেন? আপনার সংযম কিছুমাত্র নেই। বশিষ্ঠের কামধেনুর লোভে আপনার ধর্মজ্ঞান লোপ পেয়েছিল, মেনকাকে দেখে আপনি উন্মত্ত হয়েছিলেন, এখন আবার তার কন্যাকে দেখে স্নেহে অভিভূত হয়েছেন। এই বালিকার কল্যাণই যদি আপনার অভীষ্ট হয় তবে একে আর উদ্বিগ্ন করছেন কেন, অব্যাহতি দিন, এর মায়া ত্যাগ করে প্রস্থান করুন।

বিশ্বামিত্র বললেন, শকুন্তলা, তোমার এই পিসীমাকে যদি সঙ্গে নিয়ে যাই তা হলে তুমি যাবে তো?

গৌতমী বললেন, কি যা তা বলছেন, আমি কেন আপনার সঙ্গে

–দেবী গৌতমী, আমি আপনার পাণিপ্রার্থী। আমাকে বিবাহ করে আপনি আমার কন্যার জননীর স্থান অধিকার করুন।

অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা আবার নাচতে নাচতে বলল, পিসীমার বর এসেছে রে!

গৌতমী সরোষে বললেন, বিশ্বামিত্র, আপনি উন্মাদ হয়েছেন, আপনার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। আর প্রলাপ বকবেন না, চলে যান এখান থেকে।

বিশ্বামিত্র কাতর স্বরে বললেন, শকুন্তলা, একবার আমার কোলে এস, তার পরেই আমি চলে যাব।

গৌতমী বললেন, যা না শকু, একবারটি ওঁর কোলে গিয়ে বস। ভয় কি, দেখছিস তো, তোকে কত ভালবাসেন।

শকুন্তলা ভয়ে ভয়ে বিশ্বামিত্রের কোলে বসল। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কন্যা, সরাসরি যক্ষ রক্ষ তোমাকে রক্ষা করুন, বসুগণ তোমাকে বসুমতীর ন্যায় বিত্তবতী করুন, ধী শ্রী কীর্তি ধৃতি ক্ষমা তোমাতে অধিষ্ঠান করুন্রর–

হঠাৎ শকুলা লাফিয়ে উঠে বলল, ওরে পিসীমা রে!

ব্যাকুল হয়ে গৌতমী বললেন, কি হল রে?

বিশ্বামিত্র উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর কর্দম মেখলা খসে গিয়ে মাটিতে পড়ে কিলবিল করতে লাগল।

প্রিয়ংবদা চিৎকার করে বলল, সাপ সাপ!

অনসূয়া বলল, ঢোঁড়া সাপ!

গৌতমী বললেন, জলডুণ্ডুভ। এই দেখ, সড়সড় করে নদীতে নেমে যাচ্ছে।

বিশ্বামিত্র বললেন সাপ নয়, মেনকার অভিশাপ, এতকাল পরে আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছে। কন্যা, তোমার পবিত্র স্পর্শে আমি শাপমুক্ত পাপমুক্ত সন্তাপমুক্ত হয়েছি। আশীর্বাদ করি, রাজেন্দ্রের রাজ্ঞী হও, রাজচক্রবতী সম্রাটের জননী হও। দেবী গৌতমী, আমি যাচ্ছি, আপনাদের মঙ্গল হক, আমার আগমনের স্মৃতি আপনাদের মন থেকে লুপ্ত হয়ে যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *