বাতিস্তম্ভের বাতিগুলো একে একে নিভছে,
তেলের অভাব।
ঝড় নেই, কোনো ইশারাও নেই দুর্যোগের।
সন্ধ্যে হয়েছে সবে।
হা পিত্তেস করে বসে আছে শুন্যতা বুকে নিয়ে
কোনো এক জ্যৈষ্ঠের ফুটিফাটা মাঠ।
কোথাও ডাকেনা খা খা শব্দে পিপাসার্ত কাক।
সন্ধ্যে থেকে মধ্যরাতে নির্জনে কঁকিয়ে কঁকিয়ে সিগন্যাল না পেয়ে চেঁচাচ্ছে মালগাড়ি।
কুহু শব্দে ছুটে আসছে বাতাস।
দূর থেকে ভেসে আসে বাচ্চা শকুনের কান্না ,
যেন কোনো মানুষের কাতর আর্তনাদ ।
চাপ চাপ অন্ধকারে কত দৃশ্য ভেসে আসে ।
দুরন্ত যৌবন তখন।
দুচোখে আগুনের বর্ষার ফলক।
শরীর জুড়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নেশা।
পার্টির আদেশ__
সহায় সম্বলহীন শুধু ঠাকুরকে আকড়ে ধরা বিধবা মায়ের
বিশ্বাসের ঠাকুর আসন উল্টে দেওয়া।
খোকা__
মায়ের সেই আর্তনাদ
মিলিয়ে গিয়েছিল মহা শ্মশানে
বছর চারেক পরে।
পাথর প্রতিমা যেন
চোখে যেন তার বৃষ্টি বারো মাস।
বাইরে তখন প্রবল চিৎকার।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
তখন দুরন্ত ঝড়
মিশে যেতো চটির তলায়
বিপ্লবের ইশারায়।
দুচোখে সন্ধ্যে নামতো বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে
মুক্তির আশায়।
কাগজে লাল কালিতে লেখা স্লোগান গুলো এখনো চেঁচায়।
বড়ো নিস্তেজ গলায়।
মানব শূন্য জনসভায়।
চারটে কাঁধে চড়ে এবার আমার যাত্রা কি শুরু হবে?
সমাজতন্ত্র কমিউনিজমকে সঙ্গে নিয়ে
অনন্ত অমৃত পথে।
বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টিপাত।
দুচোখে তখন তুলসীর পাতা
ধূপের গন্ধ ভরা কত লোকের ভিড়ের মিছিলে
ধিক্কারের ভাষা ।
বহু দূরে হঠাৎ চোখে পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার মা,
অবিশ্বাসী ফ্যালফ্যালে চোখে।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও খাটিয়াতে আমার পাশে শুয়ে।
আমরা চলেছি এদেশ ওদেশ ঘুরে।
নিঃশব্দ ধিক্কার।
ঘোমটা খুলে আনত নয়নে
কাঁধের ওপরে হাত মুঠো করে
মৃদু হেসে মা বলে__
‘কমরেড্ লাল সেলাম’।
তুই ও তোর বিপ্লবের জন্য রেখেছিলাম।