‘সে আজ বিষাদে আছে, আজ সে বিষাদে আছে খুব,
কিছুদিন থাকবে এমন’-লিখে কবি
জানলার বাইরে তাকায়
রাধাচূড়া গাছটির দিকে।
আজকের ভোরবেলা, কবি ভাবে, হৃদয়চারিণী
প্রিয়তমা গৌরীর মতোই সুলক্ষণা
পা ফেলে এসেছে, তারই দেহশ্রীর আভা
বিশদ ছড়ানো যেন কবিতার উৎসুক খাতায়।
আজ কি গৌরীর সঙ্গে দেখা হবে বিকেল ফুরালে?-
এই প্রশ্ন ব্যাকুল গুঞ্জন তোলে কবির হৃদয়ে;
তার বিষাদের মুখোমুখি
কী ভাবে দাঁড়াবে? হবে না কি কম্পমান
সত্তার কাঠামো? কবি তার অসমাপ্ত কবিতার
প্রতি চোখ রাখে, পঙক্তিগুলো
অসহায়, অপলক কাতর দৃষ্টিতে
স্রষ্টার বয়েসী মুখে তাকিয়ে রয়েছে।
কেউ কেউ নির্বাসনে যাবে, কারো কারো
সংস্কারের প্রয়োজন হবে হয়তো-বা
কোথায় সে মনোমুগ্ধকর অস্থিরতা, যার বিমূর্ত প্রভাবে
খুলে যায় অকস্মাৎ মস্তিষ্কের দক্ষিণ দুয়ার? শব্দ মৃগয়ায় কবি
সর্বদা অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত বাঘের মতো আর
আহরণে ক্ষিপ্র অগোচরে জাগরণে, এমনকী
নিদ্রাও নিষ্ফল নয় কখনো কখনো।
অবচেতনের স্তর ভেসে ওঠে; বারান্দার অন্ধকার থেকে
একটি কুকুর চলে আসে আদরের প্রত্যাশায়
কবির পায়ের কাছে, লালাসিক্ত জিভ, লেজ নাড়ে,
ঘুমায় কুণ্ডলী হ’য়ে, নাছোড় কুকুর
আলাভোলা প্রভুটির পায়ে পায়ে ঘোরে। কবি ওকে
অর্ফিয়ুস নামে ডাকে। মাথায় বুলিয়ে হাত আস্তে
ছন্দতাল ঠিক ক’রে নেয় মাঝে মাঝে।
প্রভু তাকে সেদ্ধ মাংস খেতে দেয় রোজ। ডাক শুনে
অর্ফিয়ুস কান খাড়া করে, ছুটে আসে ত্বরিৎ গতিতে।
‘সে আজ বিষাদে আছে’ শিরোনামা যে-পদ্যের,
এখনো হয়নি শেষ; কখনো হবে কি?
শেষ স্তবকটি রচনার আগে মৃত্যু হ’লে তার, তবে কার
কী এমন ক্ষতি হবে? নিথর থাকবে শুয়ে খাটে,
ঘুরবে সিলিং ফ্যান বন বন, হাওয়ায় উড়বে উদাসীন সাদা চুল।
লেখার টেবিলে রইবে প’ড়ে বই, নিস্তব্ধ কলম।
বেলা হ’লে কারো কারো ফোঁপানি হাওয়ায় খাবে পাক,
গহীন গাঙের ঢেউ হয়ে ঘরদোরে পড়বে আছড়ে
ক্রন্দনের রোল,
স্টাফ রিপোর্টার তথ্য সংগ্রহে তৎপর আর রোগাটে, একাকী
অফির্য়ুস শুধু বারান্দার এককোণে
প্রস্তর-মূর্তির মতো ব’সে রইবে স্থির।