Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ও নেগেটিভ || Samarpita Raha

ও নেগেটিভ || Samarpita Raha

আফুজা বিবি ও শাহাবুদ্দীনের একমাত্র মেয়ে সায়রার নিকা হয়েছে …..আব্বুর বন্ধুর ছেলে শামীমের সঙ্গে… প্রায় তিনমাস হলো ।

নিকার পর থেকে সায়রা আম্মুর কাছেই থাকে….দুলা মিঞা শামীম…. অফিসের কাজে বিয়ের পরদিন লন্ডনে গেছে।

শামীমের ছোটবেলায় আব্বা ও আম্মী গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়…..শামীমকে তারপর থেকেই শাহাবুদ্দীন হোস্টেলে রেখে পড়িয়েছেন।

শামীম বড় হতে জানিয়ে দিয়েছে শাহাবুদ্দীন…. তার মেয়ে সায়রাকে নিকা করতে হবে… তাই লন্ডনে যাবার আগে শাদী করিয়ে পাঠিয়েছেন।

শামীম শাহাবুদ্দীন চাচাকে জানিয়েছেন…. লন্ডন থেকে ফিরতে দেরী আছে…..রোজ চাচাকে ফোন করে বলে টাকা পাঠাও।

শামীম তুইতো অফিসের কাজে গেছিস??

তোর এত টাকা কিসের জন‍্য লাগে??

তখন শামীম বলে …..চাকরি ছেড়ে এম বি এ করছে…..মেয়ের মুখ চেয়ে জমানো পুঁজি শেষ পর্যায়ে দাঁড়ায়….তারপর শাহাবুদ্দীন একদিন হার্ট ফেল ক‍রে মারা যায়।

জামাই এর পড়ার জন্য এত টাকা লোন নিয়েছিলেন মিঞা…..আফুজা সেটা শোধ করলেন বাড়ি বেচে।

আফুজা ও সায়রা পাশের কাজীপাড়ায় ভাড়া যান……জামাই এর কোন খোঁজ নেই।যেখানে ভাড়া যায়…পাড়াটায় দুষ্ট লোকের আড্ডা…..সায়রাকে নানান টিটকারি করে ।

সায়রা মোক্তবে প্রাইমারি সেকশনে পড়ায়।

একদিন একটা ছেলে একটা চিঠি হাতে দিয়ে বলে…. ঐ দাদাগূলো তোমায় চিঠিটা দিয়েছেন….সায়রা চিঠিটা না পড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়….উড়ো কথা কানে আসে দেমাগ বেশি।
আপা চিঠিতে লেখা ছিল আপনি খুব সুন্দর….আমাদের মানুষ ভাবেন না….আমরা শিক্ষিত বেকার।
সায়রা একটু হেসে চলে যায়।

গরম ঘরে আম্মু থাকতে পারছে না….ঈদের দুদিন আগে হঠাৎআম্মুর শরীর খারাপ হয়….।
ডাক্তারের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি হন আফুজা…সায়রা দু বেলা হাসপাতালে ছুটছে।

পাড়ার ছেলেরা জিজ্ঞেস করেছে… আম্মু কেমন আছেন?
সায়রা ভাবে এরা কি করে জানল?
কিছু দরকার হলে বলবেন আপা।

হাসপাতালে গিয়ে শোনে মায়ের এক্ষুনি দুই বোতল রক্ত লাগবে…”ও নেগেটিভ” রক্ত।

সায়রা ছুটতে ছুটতে বাড়ি আসে …….তাড়াহুড়োতে টাকার ব‍্যাগ নিয়ে যায় নি।
ঐ ছেলেগুলো বলে কি হয়েছে?
হাঁপাতে হাঁপাতে সায়রা বলে টাকা লাগবে রক্ত কিনব….কেন হাসপাতালে রক্ত নেয়?জানি না “ও নেগেটিভ” তো?
আচ্ছা আসি।
টাকা নিয়ে রক্ত কিনতে যায় …দেরি হচ্ছিল দেখে ব্লাড কাউন্টারে সায়রা রাগারাগি করেছিল ….ইচ্ছে করে তিন ঘন্টা বাদে রক্ত পায়…. তাও একবোতল।

একটা বাসে উঠে ….যখন পোঁছায় হাসপাতালে…. রাতে দশটা বাজে।
ডাক্তার বললেন বড্ড দেরী করে আসলেন??

সায়রা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে…
রক্তের অভাবে আম্মু ছেড়ে চলে গেছে…. ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল সায়রা …তারপর সায়রা অনুভব করে… মাথায় কত হাত।

কেউ ঈদের দিনে কাঁদে।??
আপা আপনার চোখে জল??

সায়রা বিড়বিড় করে আম্মু চলে গেল ভাইজান।
কড়া ধমক দিয়ে বলে কে বলেছে ?
দেখো কে রক্ত দিচ্ছে??
আমাদের তো কারর “ও নেগেটিভ” নয়।
ও হিন্দুর ছেলে,আমাদের বন্ধু….ও দুই বোতল রক্ত দিয়েছে।
দোঁহা করো আল্লাকে।
সায়রা মনে মনে নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে বলে ….

“মোরা এক ই বৃন্তে দুটি কুসুম
হিন্দু মুসলমান”।

সবার রক্ত একই….ভাইয়া তোমরা আমার কাছেআল্লা— ঈশ্বর… তোমরাই এলে ঈদের চাঁদ হয়ে ।

ডাক্তার এসে বললেন আম্মু শরীরে রক্ত ছিল না….ঠিক সময়ে রক্ত পেয়ে বিপদ অনেকটা কেটেছে…..।

সায়রাকে ডাক্তার বলে….যান এই ভাইজানদের সাথে…. ঈদের আনন্দ করূন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress