কেবল একদিনের উচ্ছাস ! কেবল একদিনের উদ্দীপনা!
যেন ঐ এক দিনেই সকল চাওয়া পাওয়া গুলো পূর্ণতা পেয়ে গেলো ।
বাগদি পাড়ার নকুল বাগদির মেয়েটা ইস্কুল দেখেনি দু-বছর
দুটি ভাতের লোভে ইস্কুল যেত সে
ওকে শুধালাম– স্বাধীনতার মানে বুঝিস ?
ও শুকনো ঠোঁটে দাঁত মেলে দিয়ে বলল— আজ মা দুটি ভাত দেছে , আর বলল খেলগে যা মনসা …..
বুড়ো বটের তলায় দেখি নিতাই খুড়ো বিড়ি টানছে আকাশ পানে চেয়ে
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে শুধলাম– খুড়ো , আজকের দিনে দেশ স্বাধীন হয়েছিল , তোমার কি মনে পরে ?
খুড়ো বলেছিল– দাঙ্গায় ঘর ভিটা সব গেঞ্ছিল , মেয়েটর শরীল ছিঁড়ে খুঁড়ে খেঞ্ছল উরা ,
বৌটাকে লিয়ে কুনো মতে পলাইঞ্ছিলম ছোটো খুকাকে কে কাপড়ে বেঁন্ধে ।
এখন বেটার বৌ ভাত দেয় না , বৌটাও নাই ।
যদি উই আশমানের পঞ্ছি হতে পারতম …..
দাঁত বিহীন ঠোঁটের কস বেয়ে লালা ঝরে পরে মাটিতে কয়েক ফোটা
সিক্ত হলো কী স্বাধীনতার ভূমি ?
জানি না
দু-পা এগোতেই দেখি দুলে পাড়ার বাসন্তী বৌদি ঘরের বেড়া থেকে খুলে নিচ্ছে শুকনো খড়কুটো–
অসুস্থ স্বামীটার মুখে যদি দিতে পারে একমুঠো খুঁদকুড়ো আর শাক সেদ্ধ !
যাদের কাছে স্বাধীনতা মনে দুটি অন্নের সংস্থান —
সেখানে স্বাধীনতা নামের ঘুড়িটা ভোঁ কাট্টা হয় ।
আজ এত বছর পরেও সমাজের ছবিটা বদলালো কী ?
আজও গরিবের জন্য হাসপাতাল নেই , অসুধ নেই , নেই ডাক্তার।
আজও ওদের অন্ধকার ঘরে অভাব জমা হয় পরতে পরতে ।
অনাহার ক্লিষ্ট হাড় জিরজিরে শরীর গুলোর চলে বেঁচে থাকার লড়াই ।
স্বাধীনতা …. তুমি কী কুমারী কুন্তী পুত্রের মত অসহায় ?
এখনও বুঝে উঠতে পারনি ? ভারতবর্ষের এই কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গনে তুমি কার পক্ষ নেবে ?
রাজ যুদ্ধে না কি ফুটপাতে ঐ উলঙ্গ শিশু– যে রোজ ডাস্টবিনে জীবন খুঁজে চলে –!
স্বাধীনতা , তুমি কার পক্ষ নেবে ?
সুবিধাবাদী না কি নিতাই খুড়ো আর বাসন্তী বৌদির ?
এই স্বাধীনতাই কী ওরা চেয়েছিল ! যারা অনায়াসে হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিল
বারুদের মুখে বুক পেতে দিয়েছিল
স্বাধীনতা—- তুমি মঙ্গলকামী মানুষের জন্ম দাও