এ কেমন স্বভাবের তিলক বেড়াচ্ছো বয়ে তুমি আশৈশব?
নইলে কেন দিন-দুপুরেই ঢ্যাঙা পাতাছুট গাছ
হঠাৎ তোমার চোখে পাতালবাসিনী কোনো মোহিনীর নাচ?
কেন বারংবার দ্যাখো তুমি
বেলা-অবেলায় চেনা চা-খানায় অন্তর্গত বিপুল বৈভব
নিয়ে ছারপোকা-ছাওয়া কাঠের চেয়ারে মৃদু ভিড়ে
তন্ময় আছেন বসে এক জালালউদ্দীন রুমী?
অস্তিত্ব কি অনস্তিত্ব বাজে তাঁর সত্তায় মরমী মীড়ে;
মাথার ভেতরে তাঁর ত্রিলোকী গুঞ্জন, যেন অন্য মসনভি
এ যুগ-সংকটে লিখবেন, তুমি ভাবো; নভশ্চারী প্রেরণায়
আঁকবেন জগচ্চিত্র মননে প্রোজ্বল সে তাপস-কবি।
তোমার পাড়ায়
আশপাশে বসতিতে আছে যারা, যাকে সাঁকো
বলে, তুমি তার নাম রাখো
নির্দ্বিধায় ছায়াপথ,
বাগানের নানা ফুল চোখের পলকে
অসুস্থ অনাথ বালকের টলটলে
চোখ আর মেঘপুঞ্জ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবির
হয়ে যায় বারবার তোমার দৃষ্টিতে। আগামীর
নৈরাজ্যে সংকট স্বর্ণরথ
ভেবে যাকে দ্রুত ছুটে যাও তুমি প্রত্যহ, বলো কে
তা সহজে মেনে নেবে তর্কাতীত? আর জ্বলজ্বলে
এ শহর পম্পেয়াই-নগরীর ধ্বংসস্তুপ বদলে যদি
হঠাৎ চিৎকার করে দশদিক ভীষণ কাঁপিয়ে তোলে, তবে
‘ওরা তোর কী হবে, কী হবে?
সেই যে আঁতুড় ঘরে ঢুকেছিলো ক্ষ্যাপা জিন অলক্ষ্যে সবার,
এখন অবধি
সওয়ার হয়ে সে আছে তোর কাঁধে হে বাছা আমার,’
বলে ফেলবেন এক নদী
ঝরঝর চোখের পানি জননী তোমার। তবু তুমি শেষ বাসে
ঘরে ফেরা প্রহরে হঠাৎ
দেখে ফেলো খোলা রাস্তা এভিন্যু ছাপিয়ে হেঁটে আসে
বহুদূর-দূরাস্তর থেকে মহাকাব্যের দীর্ঘাঙ্গ স্ফীতবক্ষ
নায়কের মতো
তৃতীয় বিশ্বের জনস্রোত। স্তব্ধ রাত
গানে গানে তরঙ্গিত সমুদ্রেরই সমকক্ষ।
কী বিশাল মানবিক স্থাপত্য চৌদিকে, অকস্মাৎ
ফুটপাথে ফুটপাথে বনরাজিনীলা আর আমাদের ভীষণ আহত
এ শতক মাথা নত
করে দেয় অগণিত পায়ের ধুলায়। কে কিরাত
কেউ-বা শিকার চরাচরব্যাপী মৃগয়ায় আজ
বলা মুশকিল আপাত। তোমার তৃতীয় চোখ
আছে, পাড়াপড়শীরা পরস্পর করে বলাবলি।
দৃশ্যাতীত নানা দৃশ্যাবলী দেখা তোমারই তো কাজ;
হে নবীন বন্ধু, দাও বলে দাও, এই জীবলোক
বিধ্বংসী ভয়াল নাট্যে কে হবে জল্লাদ, কে-বা বলি!